প্রতীক্ষার প্রহর তো অতিক্রম করা মৃত্যুর প্রহর অতিক্রম করার চেয়েও কষ্টকর।

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:৫১:০৩ সন্ধ্যা

প্রতীক্ষার প্রহর তো অতিক্রম করা মৃত্যুর প্রহর অতিক্রম করার চেয়েও কষ্টকর।



বাসার সবাই প্রোগ্রাম থেকে সন্ধ্যার পরও আসতে দেরী হলে খুব চিন্তা শুরু করে।কারন বর্তমান সরকারের সোনার ছেলেরা মানে আমার আওয়ামী সন্ত্রাসী ভাইরা দুই বার খুব সন্মানের সাথে আমাকে আমার ৩ চাকার রিক্সা থেকে ওনাদের ৪ চাকার কালো গ্লাসের সাদা মাইক্রোতে তোলার জন্য খুব প্রানপন চেষ্টা করে আল্লাহর অশেষ রহমতে ব্যর্থ হয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।তাই এখন সন্ধ্যার আগেই প্রোগ্রাম শেষ করে বোনদের বাসায় গিয়ে মাগরিব পড়তে বলি। গত কাল আমি আপাদের মনের অবস্থ্যা বুঝেও জোর করেই ওনাদের বিদায় দিয়ে বাসায় এসে দরজা খুলে সালাম দিয়ে ঘরে ডুকেই দেখি বাসাইয় একেক জনের এতো সুন্দর হাস্যুজ্জোল চেহারা গুলো শরতের খন্ড খন্ড কালো মেঘের মত দেখাচ্ছিল।খারাপ কোন সংবাদ তা বুঝতে পেরেছ.।

নিরবতার কারন ৪র্থ ছেলে বলল, “আম্মু, আজ রাত ৮ টার মধ্যে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার পরিবার কে দেখা করতে বলেছেন কারাকতৃপক্ষ।রাত ১২ টায় ফাসি কার্যকর করা হবে । দেশ টিভি তে বার বার হেড লাইনে দেখাচ্ছে”।আম্মার মৃত্যু সংবাদ শুনে যেমন অধিক কষ্ট আর প্রিয়জন হারানো ব্যাথায় অবুঝ শিশুর মত কেদেছিলাম ।কাল ঠিক তেমন কষ্ট আর সেই বুকের সেই হেচকি টান উঠা কান্না অঝর ধারায় চলছে।বার বার মন থেকে ধৈর্য্যের বালি দিয়ে বাধ দিতে যাই আর বার বার আমার দ্বীনি বোনদের ফোনের বাধ ভাঙ্গা জোয়ার এর মত কান্না স্রোতের তোড়ে আমার সেই ধৈর্য্যের বালির বাধ ভেসে যায়।আমার নাতনি বার বার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর গালে চুমু দিতে দিতে বলছে “আম্মু ন ন ন হাফ ফা”। বাসার বেশি ভাগ সবাই আমাকে আম্মু বলে তাই সেও আম্মু বলে।তাই ছোট দুইটা নাতি (বয়স ৫ মাস)নাতনীর(১বছর ৭ মাস)সাথে মনের অনেক ব্যাথা আর নীলাভ কষ্ট গুলোকে জোর করে চেপে ধরে তাদের নিষ্পাপ হাসির সাথে নিজেও একটু শুষ্ক হাসি দিতে চেষ্টা করলাম।

পরে একা একা চিন্তা করলাম আমরা তো আল্লাহর সৃষ্টি মাখলুকার কত কিছুকে ভালবাসি। দুনিয়া কত কিছুর সাথে ভালবাসার মোহে আবদ্ধ হয়ে যাই । স্রষ্টার সৃষ্টির সব কিছুতে ভালবাসা খুজতে চেষ্টা করি ।তবুও কেন এক দূর্বলতার দিকে মন টা চুম্বকের আকর্ষনের মত বার বার একই মেরুতে অবস্থ্যান করে। আল্লাহমাফ করুন , তা হলে কি আমাদের আত্মার মাঝে আল্লাহ রহমতের নেক ভালবাসা সৃস্টি করে দিলেন নাকি? আজও কেউ কাউকে বুঝতে পারিনি আমরা একে অন্যকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কত ভালবাসি।আমার ধারনা অন্যরা হয়ত আমার চেয়েও বেশি ভালভাসে দ্বীনি বাই বোন্দের নদী যেমন সাগরকে ভালবেসে বলে সব বাধা বিপত্তি মাড়িয়ে তার কাছে ছুটে হাজির হয় , পাহাড় যেমন ঝর্ণাকে ভালবাসে বলে তার বুক ক্ষয় করেও ঝর্নার চলার পথ সৃষ্টি করে দেয়।আমাদের ভালবাসাও তাদের চেয়ে কম না। যা রাসুল সাঃ সময় থেকে চলে এসেছে।

কাফির কতৃক হযরত উসমান (রাঃ) কে আটক করা হয় এবং খবর ছড়িয়ে দেয়া হয় যে উসমানকে হত্যা করা হয়েছে।এই খবর শুনামাত্র রাসুল (সাঃ) চিৎকার দিয়ে বলেন “হে গাছের নিচে অবস্থানরত সাহাবীরা তোমরা কে কোথায় আছ এদিকে আস আমার উসমানকে হত্যা করা হয়েছে”। রাসুল (সাঃ) এর ডাক শুনে দৌড়ে ছুটে আসে সাহাবিরা। রাসুল (সাঃ) নিজের দুই হাত রেখে বলেন এই হচ্ছে আমার হাত এই হচ্ছে উসমানের হাত।তোমরা আমার হাতে হাত রেখে ওয়াদা কর উসমান হত্যার বদলা না নিয়ে কেউ বাড়ি ফিরবেনা। হয়ত শহীদ হব নয়ত উসমান হত্যার বদলা নিব।এরপর সাহাবীরা রাসুল (সাঃ) এর হাতে হাত রেখে বাইয়াত দেন।এক এক করে সবাই রাসুলের হাতে হাত রেখে প্রতুশ্রুতি দেন উসমান হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে কেউ বাড়ি ফিরবে না।আসলে উসমান (রাঃ) কে সেদিন হত্যা করা হয়নি। মুসলমানদের ঐক্য এবং শক্তি বোঝার জন্য এই মিথ্যা খবরটি কাফেররা ছড়িয়ে দেয়।মুসলমানদের সীসা ঢালা প্রাচীরের মত ঐক্য আর প্রতিশোধের সুদৃঢ় স্পৃহা দেখে কাফিররা ভয় পেয়ে যায়। তৎক্ষণাত হযরত উসমান রাঃ কে ছেড়ে দেয়।ামাদের কেও সেই ভাবে ঐক্য বদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।বাঘের মত হুংকার ছেড়ে থাবা দিয়ে শয়তানদের ছিন্নবিন্ন করে ফেলতে হবে।সব নেতাদের মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য চেয়ে ময়দান ছাড়া যাবে না।ইনশাল্লাহ।

আল্লামা সাঈদী সাহেবের রায় শুনে ২৮ ফ্রেব্রুয়ারী ১৫০ জনের বেশি নরনারী হাসি মুখে কোরান সুন্নাহ কে ভালবেসে ফুলের পাপড়ির মত কোমল হৃদয় টা দিয়ে দিলেন।এই ভালবাসা আল্লাহ ভীতি আর প্রীতি মিশনো ভালবাসা ।আহতরা বাসা বা হসপিটালে চটপট করা যন্তনার মাঝেও ভাইদের হাসতে দেখে মনে হয় যেন অনারা জান্নাতি সুখ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে।এই সব নেতারা ইসলামের একটা সোনালী সমাজ উপহার দেবার জন্য অনেক লগ্ন হারায়ে অনেক সময় ধরে অনেক বন্ধুর আর মরুপথ পাড়ি দিয়ে আল্লাহকে ভালবাসে ইমানের দীপ শিখা জ্বালালেন অনেক অন্ধকার বন বাধাড় হৃদয়ে । জনার কাদের মোল্লার জন্য শুধু আমি না দেশে বিদেশে সব মুসলিম ভাই বোনেরা নীলিমার সব নীল আর গোধূলীর সব রং নিয়ে মনের মাধুরীর তুলি দিয়ে ওনার জন্য ভালবাসা একটা স্বচ্ছ রুপ মনে দর্পনে একে নিয়েছে।আমার বিশ্বাস এই ভালবাসায় দুনিয়াবি স্বার্থ জড়িত না থাকায় তা দুনয়নে অনেক লোনা জল ঝরায়ে বেদনার মেঘে ভেসে ভেসে আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবার আশায় স্বপ্নের জান্নাতে চলে যাই ।

দেশের বিদেশের বা বিশ্বের অনেক মুমিন মুত্তাকিন ভাই বোন্দের আমি দেখিনি বা সাক্ষাত হয় নি কিন্তু মনের গভীর ভালবাসার অনুভুতি দিয়ে তাদের সুখ দুঃখ গভীর ভাবে অনুভব করি । ভালবাসা মানেই সেস্ক্রিপাইজ আর কম্প্রোমাইজ থাকা উচিত । যত বাধাই আসুক না কেন এই দুইটি শর্তমেনে নিতেই হবে।ভাল কাজের উদ্দেশ্যে ভালবাসা আল্লাহ্র রহমত স্বরূপ আর খারাপ কাজের প্রতি ভালবাসা শয়তানের ওসওয়াস।শাহবাগ চত্তরের লাকীইমরানদের ভালবাসা শয়তানের অসওয়াস। আর শাপলা চত্তর সহ সকল মুসলমান মুমিন মুমেনাদেরদের ভালবাসা আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে আরশের নীচে স্থান পাবার জন্য ভালবাসার ভেলা ভাসিয়েদেন।

ঘড়ির কাটা ঘন ঘন ঘুরতে লাগল।রাত যত বাড়তে লাগল হৃদয়ের কম্পন ভুমিকম্পনের চেয়েও বেড়েই চলল।যত দোয়া চেয়ে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যাবে সব চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম।পেয়ারী আপাদের নিয়ে গাড়ি মনে হচ্ছে আমার বুকের উপর দিয়ে জেল গেটের ভিতরে যাচ্ছে।স্বামী স্ত্রীর শেষ বিদায়ের মুহুর্তে কথা মনে করে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। তাও মহিলাদের হররোজ কাজ গুলো করছিলাম।এমন সময় আমার বউ মা আমাকে বলল,“মামনি,আমি ১২ টা বাজে কোন দিকে গিয়ে লুকাবো,যেন আমাকে কিছু দেখতে বা শুনতে না হয়?”আমি অবাক হয়ে গেলাম।কারন মাত্র ২মাস হলো াআলহামদুলিল্লাহ কর্মী হয়েছে।আমি তাকে সাহস দেও্যার জন্য মাত্র বলছিলাম,”আল্লাহ অন্তরসমুহের পরিবর্তনকারী!উনার রহমত আসে শেষ সময়, যেমন এসেছিলেন ্মাওলানা মওদুদী রহ জন্য।

হঠাত সাহেব দশর্কের টান টান উত্তেজনায় বিপক্ষ দলের খেলোয়ার এর গোল পোস্টের ভিতরে এসেও গোল না দিতে পারলে যেমন খুশিতে চিতকার দিয়ে উঠে তেমন করে চিতকার দিয়ে উঠলেন।অনাকাঙ্গিত আনন্দের সময়ও খুশিতে কাদে।আমি সেজদায় সেই ভাবে কেদে ফেললাম।কিন্তু দুচিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারলাম না।তাই আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েই যাচ্ছি।

আজ আবার এই দুইটা চিঠি পড়ে আর রিভিউ টা খারিজ হওয়াতে আবার হৃদয়ের আকাশের কালো মেঘেরা বারিধারার মত মুষলধারে চোখের পানি ঝরায়ে একটু হালকা মনে হলো নিশ্বাস ফেলতে ।কিন্তু আবার অনেক অজানা কথার প্রশ্ন গুলো শ্রাবনের খন্ড মেঘের মত ঝমা হতে লাগল। মনে হচ্ছে প্রতীক্ষার প্রহর তো অতিক্রম করা মৃত্যুর প্রহর অতিক্রম করার চেয়েও কষ্টকর।প্রভুর কাছে কায়মনো বাক্যে ক্ষমা চাই ামাদের কোন ভাই বোন কে যেন জালিমদের জুলুমের কারনে আর কাউকে যেন না হারাইতে হয় । এই বিশ্বাস আছে যে আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউই তার মনের কোন ভাসনা পূর্ণ করতে পারে না । কারন আল্লাহ সর্বশক্তিমান । তাই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত যেন আল্লাহ্র বিধান মেনে সকল পাপাচার থেকে দূরে থাকতে পারি তার জন্য মানুষের মালিক ও বাদশার নিকট সাহায্য চেয়েই যাব।

‘‘হে আমাদের রব!যখন তুমি আমাদের সোজা পথে চালিয়েছো তখন আর আমাদের অন্তরকে বক্রতায় আচ্ছন্ন করে দিয়ো না, তোমার দান ভাণ্ডার থেকে আমাদের জন্য রহমত দান করো কেননা তুমিই আসল দাতা। হে আমার প্রতিপালক আপনে আমাদের ক্ষমা করে দিন, আমার স্বরণ শক্তি বাডিয়ে দিন, আমারা যাহাতে তোমার পথে চলতে পারি হে আল্লাহ !তুমিই প্রথম, তোমার পূর্বে কিছু নেই। তুমিই সর্বশেষ, তোমার পরে কিছু নেই। তুমি প্রকাশ্য, তোমার উপরে কিছুই নেই। তুমি অপ্রকাশ্য, তোমার চেয়ে নিকটবর্তী কিছুই নেই;তুমিই আমাদের একমাত্র নিয়ন্ত্রনকারী । হে প্রভু তুমি আমাদের জন্য তাই করো যা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।হে আল্লাহ ! তুমি আমাদের লাঞ্ছিত ও বিপর্যস্ত না করে সৎকর্মশীলদের সাথে সম্পৃক্ত কর। তুমি ঈমানকে আমাদের নিকট সুপ্রিয় করে দাও, এবং তা আমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দাও। কুফর, অবাধ্যতা ও পাপাচারকে আমাদের অন্তরে ঘৃণিত করে দাও, আর আমাদেরকে হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও এবং ক্ষমা করে আমাদের মদ্ধে একতা বৃদ্ধি করে দাও ।

বিষয়: বিবিধ

২১২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File