আমার পিয়ারী আপা( আব্দুল কাদের মোল্লা ভাবী)কেমন আছেন?

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:০০:২৭ রাত

আমার পিয়ারী আপা( আব্দুল কাদের মোল্লা ভাবী)কেমন আছেন



দীর্ঘ সময় ফাহমিদা আপার সাথে ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করেছিলাম ।হঠাত আপা জানালেন,"আজ বিকালে নতুন এক জায়গায় নতুন কয়েক জন বোন সহ নতুন এক বোনের বাসায় নতুন এক মেহমানের সাথে আমরা সবাই প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরিচিত হব ।আমি এত নতুনের মাঝে নিজেই ভয়ে নতুন করে হারিয়ে যাতে লাগলাম। নতুনের সামনে গিয়ে নিজেকে বিকশিত করে তুলে ধরা অনেক কঠিন কাজ ।আমার মনে হল আমার আত্নায় জোয়ার বাটার মত পানি আসে আর শুকিয়ে যায় ।আপা আমাকে নিতে আসবে বিকাল ৩ টায় ।দুপুরে ছোট দুই ছেলে কে দুধ খাও্যাতে খাওয়াতে সাহেবকে জানালাম প্রোগ্রামের কথা আর এলাকার নাম বললাম।ভেবেছি তিনি হয়ত নতুন এলাকা শুনে আর যেতে দিবেন না বা ছোট ছোট ছেলেদের রাখতে রাজি হবেন না তা হলে আপাকে অজুহাত হিসাবে বলা যাবে যে, আপা ৫ ছেলেকে কিভাবে রেখে কিভাবে যাব? তা হলে আপা আর যেতে বলবেন না।আশায় গুড়ো বালি দিয়ে সাহেব বলে উঠলেন,”ঐ এলাকাটা অনেক হাইপাই এলাকা ।আজ তোমাদের সেখানে নতুন ইউনিট খোলা হবে। আব্দুল কাদের মোল্লা ভাবী আসবেন ।তিনি অনেক বড় যাজরাল নেত্রী।ঠিক ঠাক মত কথা বলিও।ভাই আর আমি একসাথে আব্বাস আলী খান সাহেবের সাথে একই রুমে জেলে ছিলাম।ভাইও অনেক বড় মাপের নেতা ।"আর কত সুনাম করলেন মোল্লা ভাই আর আপাকে নিয়ে।

সাহেবের যাজরাল নেত্রীর কথা শুনে ভয়ে আমার সমস্ত শরীর চৈত্রের তাপে রুক্ষ শুস্ক গাছের মত আধ মরা অবস্থা হয়ে গেল। যথা সময়ের ১০ মিনিট আগেই আপা হাজির । আমার মনের ব্যাগাচ্যাগা অবস্থা আপা বুঝতে আর বাকি রয় নাই । কারন ফাহমিদা আপা ছিল আমার মনের ডাক্তার। আপা যাওয়ার সময় বার বার রিকসায় জিজ্ঞাসা করল মন খারাপ কেন? কিছু না আপা ।রিকসায় আপাকে ঝড়ায়ে ধরে কেদে দিলাম আপা আমি আপনার সাথে ছাড়া আর কার সাথে ইকামতে দ্বীনের কাজ করব না । আপা অনেক নরম হৃদয়ের মানুষ তাই সান্তনা দিয়ে বললেন" পারভীন আপা আপনি কি পড়েন নাই? নেতৃত্ব পরিবর্তন হবে কিন্তু আনুগত্য পরিবর্তন হবে না একই থাকবে বা বাড়বে তবে কমবে না । আনুগত্য করা ওয়য়াজিব "

আপার সাথেই প্রোগ্রামে বসলাম ।সেখানে আমার কাছে আমাকে মশা মাছির মত মনে হল ।পরিচয়ের পর্ব শুরু ।মোল্লা ভাবীর সময় হল তখন ফাহমিদা আপা নিজেই বললেন, ইনি আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইর স্ত্রী ,অনেক বড় নেত্রী সানোয়ারা জাহান পেয়ারী আপা।আমার কানে সবার পরিচয়ের কথা ও পেয়ারী আপার কথার প্রতি অনেক চেষ্টা করেও মন দিতেই পারছিলাম না। কারন ফাহমিদা আপাকে আর পাব না কাছে সেই বিদায়ের করুন বিউগল সুর বার বার বাজছে আর আমার মনের অগোচরেই দুই নয়ন থেকে ফোটা ফোটা লোনা পানি বাধ ভেঙ্গে আসতে চাচ্ছিল কিন্তু নিজের এলাকায় পেয়ারী আপাকে পেয়ে মনা আপার আনন্দ দেখে আমি অনেকটাই শান্তনা পেলাম যেনা উনিও খুব ভাল আপা হবেন।আল্লাহু আকবার কোরানের আলো যেখানে যায় তাই আলোকিত হয়ে যায় । সেই দিন পেয়ারী আপা এই এলাকার দ্বীনি কাজের দায়িত্বশীলা হিসাবে আমাকে নিযুক্ত করেন। নতুন এলাকার নতুন দায়িত্ব পালনের ভয়ে আমার কান্না দেখে আপা আমার সাথে থাকবেন বলে আমাকে আশ্বাস দেন। সত্যি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপার সাথে চলা ও পরামর্শ করে চলতে গিয়ে দেখি সুবহানাল্লাহ এক অসাধারন বোন পেয়ারী আপা ।আমি যত টা ভয় পেয়েছি আপা হল তার উলটা ।কত সুন্দর ব্যবহার । আপার এডমিনিস্টেসান ছিল অনেক কড়া ।একটুও ফাকি দেওয়ার উপায় নেই ।

কম্পিউটারের মাদার বোর্ড এর মত আপার মাথায় অসাধারন স্মরন শক্তি । সপ্তাহের বুধবার টা মনে হত একসপ্তাহে বার বার আসে । বুধবার হলে মনে হত আল্লাহ আজ পড়া শিখি নাই আজ যেন আপা না আসে । বিকালে বৃষ্টি হলে কি খুশি হতাম আজ মনে হয় আপা আসতে পারবে না । আপা এসে হাজির । একদিন কি কুয়াশা আর শীতের ঠান্ডার মাঝে বৃষ্টি ।আপা আসবে না মনে করে আমি ঘুমিয়ে পড়ি । সময়ের থেকে ১০ মিনিট দেরী ।মনে মনে ভয় , আপা তো আজ বকা দিবেন ? আপা বলেন “ কম্বলের নীচের থেকে আসতে দেরী করলেন “ আর আমি রিকসা না পেয়ে এই অবস্থায় এত দূর থেকে হেটে এসেছি । এখন ঐ দিনের কথা মনে হলে পেয়ারী আপার জন্য কান্না আসে । এখন মনে হয় সাহেব আর ফাহমিদা আপা ঠিকই বলেছেন আপা অনেক বড় মানের নেত্রী ছিলেন । এত কাছাকাছি ছিলাম যে,আজ আপার কথা মনে হলে কান্না ধরে রাখতে পারি না । এখন জানি আপা কি কষ্টে এই কঠিন অবস্থায় কেমন আসেন ওনার আদরের ছেলে মেয়েদের নিয়ে ।

আমি মহিলা সাহাবীদের দেখি নাই কিন্তু এই বোনদের দেখে হৃদয় ভরে যায়। মহিলা জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস এবং ইসলামী ছাত্রীসংস্হার কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়েছে অথচ

পিয়ারী আপা কে চেনেনা এমন দ্বীনি বোন খুব কম আছেন ।সদা হাস্যোজ্জল, অমায়িক ব্যবহার , সদাআলাপি, পরোপকারী ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য নিবেদিত প্রানের ।তার প্রমান পাই মহিলা অফিসে টি সি বা টি এস হলে দ্বায়িত্বশীলা বা কর্মীদের কার কি প্রয়োজন তা বলার আগেই আপা মনোবিজ্ঞানীর মত বুঝে যেতেন এবং ঝটপট সমাধান করে ফেলতেন । কখনো দূর থেকে অফিসে আসা বোনদের খাবার নেই উনি সাথে সাথে বাসা থেকে নিয়ে আসতেন ; কাপড় , কাঁথা, মশারী থেকে শুরু করে যে কোন জিনিস সরবরাহ করতেন হাসিমুখে । এমনকি রাতে এসেও খোজ-খবর নিতেন কেউ মশারী না টানিয়ে ঘুমালে তিনি টানিয়ে দিতেন । ছেলে ও মেয়ের বিয়ের অনুষ্টানে আপা শামসুন্নাহার নিজামী আপা থেকে শুরু করে সকল উধ্বতন দায়িত্বশীলাদের কে যে ভাবে সমাধর করলেন ঠিক একই আন্তরিক ভাবে একজন সাধারন কর্মীকে একই সমাধর করলেন।

আপার ছেলে মেয়ে গুলো ছিল অমায়িক ব্যবহারের ।মেয়ে গুলো আমার বাসায় আসলে আমার মনে হত তারা আমারই মেয়ে।

আজ সন্ধ্যায় প্রোগ্রাম করে আসার সময় পথে একদ্বীনি বোন বলল ,পারভীন আপা ইসলামী আন্দোলনের এমন এক নিবেদিত পরিবারের উপর এমন জুলুম-নির্যাতন-নির্মমতা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলংকময় অধ্যায় হয়ে থাকবে নাকি। শুনেছি তার পরিবারের সাথে আজ তাকে দেখা করতে দেয়া হয়েছে । তার মানে অত্যন্ত স্পষ্ট”।আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।স্মৃতির পাতায় আপার সাথের সময় গুলো বার বার ঝড় তুলে হৃদয়ের ভালবাসার সাগরে সাইক্লোন বইতে শুরু করল। গত কাল থেকে হৃদয়ের দুয়ারে বার বার কড়া নাড়ছে আর বলছে , আমার সন্মানিত পিয়ারী আপা কেমন আছেন?আমার কেন এত কষ্ট লাগছে?

আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্প্র্ক জান্নাতী সম্পর্ক ।আমাদের শ্রেষ্ট সম্পদ, শ্রেষ্ট বন্ধ্ ও ভালবাসার খনি আমাদের শ্রদ্ধেয় স্বামী। কিছু ক্ষনের জন্য কাছে না পেলে মনে হয় এক যুগ থেকে দেখা হচ্ছে না আর সেই বিরহ ব্যাথায় বার বার কলিংবেলের আওয়াজ শুনলে মনের ভালবাসার দুয়ার আর ঘরের দুয়ার খোলে অপেক্ষা করতে থাকি । কিভাবে আমার বোনেরা সেই আদরের স্বামীকে কারাগারে রেখে এতো বছর কাটালো?আবার এখন সেই স্বামীকে যদি বিনা অপরাধে হৃদয়ের ভালবাসার রশি কেটে ফাসির রশিতে ঝালানো হয় তা কিভাবে একজন স্ত্রী বা ওনার রিবার তা সহ্য করবেন।

যে মুমিন বা ইমানদার হিসাবে অনেকেই নিজেকে দাবি করেন কিন্তু আল্লাহ কোরান এর জীবন্ত সৈনিক হিসাবে জিহাদের ময়দানে বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার মত ফরজ কাজে সবাইকে মনোনয়ন দেন না । আবার যত জন মনোনয়ন পান সবাই বিজয়ী হতে পারেন না । এখানে আবার যার জান মাল সহ জীবনের সমস্ত আমল ডোনেসান হিসাবে আল্লাহর কাছে কবুল করে নেন তাকেই আল্লাহ মুহসিনিন হিসাবে যানমালের সহ বিভিন্ন কিছুর উপর দিয়ে ঈমানের পরীক্ষা নেন । আর এই পরীক্ষা ইসলামের সুচনা লগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নারী পুরুষ অনেকেই দিয়েছেন ।

গ্রীণভ্যালী অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থিত ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যালয় থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ১৯ শিক্ষার্থী ও পেয়ারী আপাকে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক আচরণ করছে পুলিশ। আমি ২০ জন ছাত্রীর কে কেমন আমি তা জানি না ।তবে ছাত্রীদের সাথে যেই অভিভাবক সানয়ারা জাহান অরফে আমার প্রান প্রিয় পেয়ারী আপা কে আমি খুব কাছের থেকে চিনেছি । তবে আল্লাহর এত প্রিয় বান্দী যে আপা হয়ে গেছেন তা এত বেশি ঠাহর করতে পারিনি , টের পেয়েছি কিছুটা । এই বার পেয়ারী আপাকে কাছে পেলে বলব পেয়ারী আপা কত ডোনেসান আল্লাহকে দিয়ে এই মনোনয়ন পত্র পেয়েছেন ? আমি কি আপার মত আল্লাহর প্রিয় হতে পারব ?

বাংলাদেশের অনেক ভাইরাও এই ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সারি অনেক দীর্ঘ করেছেন । আল্লাহর কাছে লাখো শুক্রিয়া তিনি এই স্বৈরাচার সরকারের সময় বার বার আমাদের হাজার হাজার মজলুম ভাই বোন দের মাঝে থেকে এই নেক্কার বোনকে পছন্দ করেছেন । তাই ইসলাম কে তথা কোরান সুন্নাহ কে ভালবাসার কারনে এই সরকার অনেক পরিবার কে জেল জুলুম অপমান ও রিমান্ডের নামে অন্যায় ভাবে তাদের অমানবিক কষ্ট দিচ্ছে । কিন্তু বিনা অপরাধে মিথ্যা স্বাক্ষী হাজির করে এই ভাবে ফাসির রায় দেওয়া রায় গনতান্ত্রিক দেশের অগনতান্ত্রিক কাজ ।যা শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের আলোচনার এক মাত্র বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে ।

এই জালিম স্বৈরাচার সরকার কাদের ভয় দেখায় ?যারা ফাঁসির দড়িকে জুতার ফিতার সমানও মনে করেনা, তাই একজন আব্দুল কাদের মোল্লা নির্ভয়ে, নির্দ্বিধায়

এই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য বলেছেন,

"নবুওয়্যাতের দরজা বন্ধ হলেও,

শাহাদাতের দরজা খোলা আছে।"

কেননা মৃত্যুর মধ্য দিয়েই মূলত মুসলিমদের জীবন শুরু হয়। কেননা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেওয়াতেই তো দ্বীনের সৈনিকদের সার্থকতা।

হে আল্লাহ ! এই মজলুম পরিবারকে তুমি ধৈর্য দাও ।এইঅন্যয়ের প্রতিবাদের প্রতিপদক্ষেপে তুমি সহায় হও।আমার প্রান প্রিয় বোন পেয়ারী আপা কে এই ত্যাগ আমাদের বাকীদের সিরাতুল মুস্তাকিমের চলার পথের আলোবর্তিকা হিসাবে আমাদের আর কয়েক দাপ এগিয়ে যেতে প্রেরণা দান করুন।



বিষয়: বিবিধ

৩৭১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File