☼ আগুনের এই তাপ তুচ্ছ ☼
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৭ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:১৪:১৪ রাত
ক্বারী মুহাম্মদ কাইয়্যাম (র) বর্ণনা করেছেন যে, ভারত-পাকিস্তান বিভাগের আগেই ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন, এক ধনাঢ্য ব্যক্তির অতীব রূপসী কন্যা তার এক আত্নীয়ের (খালা/ফুফু) বাড়ীতে বেড়াতে যাচ্ছিল। আত্নীয়ের বাড়ী
ছিল বেশ করেক রাস্তা পরে। অর্ধেক রাস্তা যাবার পরেই সে দেখল ভয়াবহ এক দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটি পাশেই একটি মসজিদ দেখতে পেল এবং দ্রুত মসজিতে প্রবেশ করে মহিলাদের জায়গায় গিয়ে বসল। দাঙ্গা গভীর রাত পর্যন্ত চলেছিল এবং মেয়েটি বুঝতে পারছিল না যে সে কি করবে।
মসজিদের তত্তাবধায়ক ছিল একজন অল্পবয়স্ক যুবক, সে যখন মসজিদ বন্ধ করতে এল তখন এই রূপসী মেয়েটিকে দেখতে পেল। সে ছিল খুবই মর্যাদা সম্পন্ন যুবক এবং তার মধ্যে আল্লাহর ভয় ছিল প্রবল, আর একারনে সে ভদ্রভাবে মেয়েটিকে মসজিদ ছেড়ে চলে যেতে বলল। সে বলল কেউ যদি তাকে এখানে দেখে তবে তাদের দুজনের জন্যই তা কলঙ্কের এবং সমাজচ্যুতির কারণ হবে। মেয়েটি তার কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করেতাকে বলল যে, বাইরে ভীষণ দাঙ্গা চলছে, তার জন্য বাইরে বের হওয়া ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ হতে পারে। সব শুনে যুবকটি মেয়েটিকে মসজিদে থাকতে দিতে রাজি হয় এবং মসজিদের অপর প্রান্তে পড়তে বসেযায়।
মেয়েটি সারাদিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর কারনে ঘুমেতে পারছিলনা তাই মসজিদের অপের প্রান্ত থেক মোম জ্বালিয়ে পাঠরত ছেলেটিকে সে দেখছিল। একটা ব্যাপারে খুবই অবাক হল।কিছুক্ষণ পর পর ছেলেটি মোমের উপরে হাতছড়িয়ে দিচ্ছিল এবং আগুনের আঁচ অসহ্য না হওয়া পর্যন্ত সরাচ্ছিল না। তারপর আবার পড়তে বসছিল। এভাবেই ভোর পর্যন্ত চলল।
এরপর ছেলেটি আযান দিল এবং মেয়েটিকে বলল যে, যেহেতু সবকিছু শান্ত হয়ে গেছে সেহেতু জামাতশুরু হবার আগেই যেন সে চলে যায়। মেয়েটি রাজী হলেও শর্ত দিল যে, সারারাত ধরে একটু পর পর ছেলেটি কেন বার বার মোমের উপর হাত দিচ্ছিল-এর কারণ তাকে বলতে হবে। ছেলেটি বলল এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যপার, কিন্তু মেয়েটি উত্তর না জেনে যেতে রাজী হল না। আমি একজন যুবক যার প্রবৃত্তির তাড়না তীব্র। আমরা একা ছিলামএবং আমার আকাংক্ষা বেড়ে যাচ্ছিল এবং যদিওআমি পড়াশোনা করছিলাম তবুও শয়তান থেকে থেকে আমার মনে লোভ সৃষ্টি করছিল। একারনে যতবার আমার মনে এমন কিছু সৃষ্টি হচ্ছিল ততবার আমি আগুনের উপর হাত দিচ্ছিলাম এবং আমার হাত পুড়ে যাচ্ছিল। আমিনিজেকে বলছিলাম, জাহান্নামের আগুনের কাছে এই আগুনের তাপ তুচ্ছ।
মেয়েটি মসজিদ থেকে বেরিয়ে বাড়িতে গেল এবংবাবা মাকে সব ঘটনা বলে তাদের দুশ্চিন্তা করল। সে তার মাকে বলল যে ,সে ঐ মসজিদের তত্তাবধায়ককে বিয়ে করতে চায়।সে ওই রাতের ঘটনা তার বাবা মাকে খুলে বলল এবং সেই সাথে এও বল যে , একমাত্র এ রকম আল্লাহ ভীরু লোকই তার স্ত্রীর কাছে সৎ থাকতে পারে।এমন মানুষ যার অন্তরে আল্লাহর ভয়আছে সেই পারে স্ত্রীর হক পরিপুর্ণরূপে আদায় করতে।
আর এভাবেই একজন দরিদ্রমসজিদ রক্ষক একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের রুপুসী কন্যাকে অর্জন করল।সে এই মর্যাদা তারচেহারার জন্য পায়নি বরং পেয়েছিল তার উত্তমচরিত্রের জন্য। সবকিছুই ধুলোয় মিশে যায় কিন্তু উত্তম চরিত্র থাকে দৃঢ। সুন্দর কাপড় চোপড় কিংবা অলংকার সম্মান আনতে পারেনা বরং একজন মানুষের মনে যা আছে তাই তার মর্যাদা নিরুপণ করে।
জ্ঞান মানুষের উপকারে আসে তখনই যখন তাকে কেবল পুস্তকে ধারণ না করে অন্তরেও ধারণ করা হয়।
(সংগ্রহিত)
বিষয়: বিবিধ
১৬৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন