নাস্তিক বাদশা ও তৌহিদী বালক এর গল্প
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:৩৭:০৪ সকাল
নাস্তিক বাদশা ও তৌহিদী বালক এর গল্প
**********
বহুকাল পূর্বে একজন রাজা ছিলেন। সেই রাজার ছিল একজন যাদুকর। ঐ যাদুকর বৃদ্ধ হ’লে একদিন সে রাজাকে বলল, ‘আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। সুতরাং আমার নিকট একটি ছেলে পাঠান, যাকে আমি ভালভাবে যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিব’। বাদশাহ তার নিকটএকটি বালককে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তাকে যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিতে লাগলেন। বালকটি যাদুকরের নিকট যে পথ দিয়ে যাতায়াত করত, সে পথে ছিল এক সন্ন্যাসীর আস্তানা। সন্ন্যাসী ঐখানে বসে কখনো ইবাদাত করতেন, আবার কখনো লোকদের নিকট ওয়াজ-নসিহাত করতেন। বালকটিও পথের পাসে দাঁড়িয়ে তার ওয়াজ নসীহত শুনত। ফলে যাদুকরের নিকট পৌছাতে বালকটির দেরী হ’ত বলে যাদুকর তাকে প্রহার করত। বালকটি সন্ন্যাসীর নিকট এ কথা জানালে তিনি বালককে শিখিয়ে দেন যে, তুমি যদি যাদুকর কে ভয় কর তাহ’লে বলবে, বাড়ীর লোকজন আমাকে পাঠাতে বিলম্ব করেছে এবং বাড়ীর লোকজনকে ভয় পেলে বলবে, যাদুকরই আমাকে ছুটি দিতে বিলম্ব করেছে।
বালকটি এভাবে একদিকে যাদু বিদ্যা অন্যদিকে ধর্মীয় বিদ্যা শিক্ষা করতে লাগলো। একদিন পথে সে দেখল, একটি বৃহদাকার প্রাণী মানুষের চলাচলের পথ রোধ করে বসে আছে। বালকটি ভাবল, আজ পরীক্ষা করে দেখব যে আল্লাহর কাছে যাদুকরের ধর্ম শ্রেষ্ঠ, না সন্ন্যাসীর ধর্ম শ্রেষ্ঠ ? অতঃপর সে একটি পাথর নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ্! যাদুকরের কার্যকলাপ অপেক্ষা সন্ন্যাসীর কার্যকলাপ যদি তোমার নিকট অধিকতর প্রিয় হয়, তবে এই প্রাণীটিকে এই পাথরের আঘাতে মেরে ফেল। যেন লোকজন যাতায়াত করতে পারে’। এই বলে প্রাণীটিকে লক্ষ্য করে সে পাথরটি ছুঁড়ে মারল এবং প্রাণীটি মারা গেল ও লোক চলাচল শুরু হ'ল। এরপর বালকটি সন্ন্যাসীর নিকট গিয়ে তাকে ঘটনাটি জানালে তিনি তাকে বললেন, ‘বৎস! তুমি এখনই আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছ। তোমার প্রকৃত স্বরূপ আমি বুঝতে পারছি। শীঘ্রই তোমাকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। যদি তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হও তাহ’লে যেন আমার কথা প্রকাশ করে দিও না’।
তারপ বালকটির দো‘আয় জন্মান্ধ ব্যক্তি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতে লাগলো , কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি নিরাময় হ’তে লাগল এবং লোকজন অন্যান্য রোগ হ’তেও আরোগ্য লাভ করতে লাগল।
এদিকে রাজার একজন সহচর অন্ধ হয়েছিল। সে বহু উপঢৌকনসহ বালকটির নিকট গিয়ে বলল, ‘তুমি যদি আমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দাও, তাহ’লে এ সবই তোমার’। বালকটি বলল, ‘আমিতো কাউকে আরোগ্য করতে পারি না । বরং রোগ ভাল করেন আল্লাহ্। অতএব আপনি যদি আল্লাহ্ প্রতি ঈমান আনেন, তাহ’লে আমি আপনার রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহ্ নিকটে দো‘আ করতে পারি। তাতে তিনি হয়ত আপনাকে আরোগ্য দান করতে পারেন’। ফলে লোকটি আল্লাহ্ প্রতি ঈমান আনল। আল্লাহ্ তাকে আরোগ্য দান করলেন।
পূর্বের ন্যায় তিনি রাজার নিকটে গিয়ে বসলে রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে তোমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিল’? সে বলল, ‘আমার রব’। রাজা বললেন, আমি ছাড়া তোমার রব আছে কি’? সে বলল, ‘আমার ও আপনার উভয়ের রব আল্লাহ্’। এতে রাজা তাকে ধরে তার উপর নির্যাতন চালাতে থাকে। অবশেষে সে বালকটির নাম প্রকাশ করে দিল। অতঃপর বালকটিকে রাজদরবারে আনা হ’ল। রাজা তাকে বললেন, ‘বৎস! আমি জানতে পারলাম যে, তুমি তোমার যাদুর গুণে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠব্যাধিগ্রস্ত লোকদের রোগ নিরাময় করছ এবং অন্যান্য কঠিন রোগও নিরাময় করে চলেছ। বালকটি বলল, আমি কাউকে রোগ মুক্ত করি না। রোগ মুক্ত করেন আল্লাহ্’। তখন রাজা তাকে পাকড়াও করে তার উপর উৎপীড়ন চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে সে সন্ন্যাসীর কথা প্রকাশ করে দিল। তখন সন্ন্যাসীকে ধরে আনা হ’ল এবং তাঁকে বলা হ’ল, তুমি তোমার ধর্ম পরিত্যাগ কর। কিন্তু সে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করল। তখন রাজার আদেশক্রমে করাত নিয়ে আসা হ’লে তিনি তা তার মাথার মাঝখানে বসালেন এবং তাঁর মাথা ও শরীর চিরে দ্বিখণ্ডিত করে ফেললেন। তারপর রাজার সহচরকে আনা হ’ল এবং তাকেও তার ধর্ম ত্যাগ করতে বলা হ’ল। কিন্তু সেও অস্বীকৃতি জানালে তাকেও করাত দিয়ে চিরে দ্বিখণ্ডিত করা হ’ল।
তারপর বালকটিকে হাযির করে তার ধর্ম পরিত্যাগ করতে বলা হ’ল। বালকটিও নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করল। তখন রাজা তাকে তার লোকজনের নিকট দিয়ে বললেন, ‘তোমরা একে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তাকে সঙ্গে করে পাহাড়ে আরোহণ করতে থাক। যখন তোমরা পাহাড়ের উচ্চশৃঙ্গে পৌঁছবে, তখন তাকে তার ধর্ম পরিত্যাগ করতে বলবে। সে যদি অস্বীকার করে, তাহ’লে তোমরা তাকে সেখান থেকে নীচে ছুঁড়ে ফেলে দিবে’। তারা বালকটিকে নিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠলে বালকটি দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ্! তোমার যেভাবে ইচ্ছা হয়, সেভাবে তুমি আমাকে এদের কাছ থেকে রক্ষা কর’। তৎক্ষণাৎ পাহাড়টি কম্পিত হয়ে উঠল এবং তারা নীচে পড়ে মারা গেল। আর বালকটি (সুস্থ দেহে) রাজার নিকট এসে উপস্থিত হ’ল। রাজা তখন তাকে বললেন, ‘তোমার সঙ্গীদের কি হ’ল’? তখন সে বলল, আল্লাহ্ই আমাকে তাদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।
তারপর রাজা তাকে তার একদল লোকের নিকট সোপর্দ করে আদেশ দিলেন, ‘একে একটি বড় নৌকায় উঠিয়ে নদীর মাঝখানে নিয়ে যাও। যদি সে নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করে, তো ভাল। নচেৎ তাকে নদীতে নিক্ষেপ কর’। তারা বালকটিকে নিয়ে মাঝ নদীতে পৌঁছলে বালকটি পূর্বের ন্যায় দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ্! তোমার যেভাবে ইচ্ছা হয়, সেভাবে তুমি আমাকে এদের হাত থেকে রক্ষা কর’। এতে নৌকা ভীষণভাবে কাত হয়ে পড়ল। ফলে রাজার লোকজন নদীতে ডুবে মারা গেল। আর বালকটি (সুস্ত দেহে) রাজার নিকটে আসলে রাজা তাকে বললেন, তোমার সঙ্গীদের কি অবস্থা? সে বলল, আল্লাহ্ই আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। এরপর সে রাজাকে বলল, ‘আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন আমাকে কোনভাবেই হত্যা করতে পারবেন না। যতক্ষণ না আমি যা বলব, আপনি তা করবেন। রাজা বললেন, ‘সেটা কি’? বালকটি বলল, ‘আপনি একটি বিস্তীর্ণ মাঠে সকল লোককে হাযির করুন এবং সেই মাঠে খেজুরের একটি গুঁড়ি পুঁতে তার উপরিভাগে আমাকে বেঁধে রাখুন। তারপর আমার তূণীর হ’তে একটি তীর নিয়ে ধনুকে সংযোজিত করুন। তারপর (بسم الله الرحمن الرحيم ) "বালকটির রব আল্লাহ্ নামে" বলে আমার দিকে তীরটি নিক্ষেপ করুন।
আপনি যদি এ পন্থা অবলম্বন করেন, তবেই আমাকে হত্যা করতে পারবেন। বালকের কথামত এক বিস্তীর্ণ মাঠে রাজা সকল লোককে সমবেত করলেন এবং বালকটিকে একটি খেজুর গাছের গুঁড়ির উপরে বাঁধলেন। তারপর রাজা বালকটির তূণীর হ’তে একটি তীর নিয়ে ধনুকের মধ্যভাগে সংযোজিত করলেন। তারপর বলে বালকটির দিকে তীর নিক্ষেপ করলেন। তীরটি বালকের চোখ ও কানের মধ্যভাগে বিদ্ধ হ’ল। বালকটি এক হাতে তীর-বিদ্ধ স্থানটি চেপে ধরল। অতঃপর সে মারা গেল।
এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত জনগণ বলে উঠল, ‘আমরা বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। আমরা বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। আমরা বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম’। তারপর রাজার লোকজন তাঁর নিকট গিয়ে বলল, ‘আপনি যা আশঙ্কা করছিলেন তাই শেষ পর্যন্ত ঘটে গেল। সব লোক বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনল’। তখন রাজা রাস্তা গুলির চৌমাথায় প্রকাণ্ড গর্ত খনন করার নির্দেশ দিলেন। তার কথা মতো গর্ত খনন করে তাতে আগুন প্রজ্বলিত করা হ’ল। তারপর রাজা হুকুম দিলেন, ‘যে ব্যক্তি বালকের ধর্ম পরিত্যাগ করবে না, তাকে ঐ আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মার। অথবা তাকে বলবে, তুমি এই আগুনে ঝাঁপ দাও। রাজার লোকেরা তার হুকম পালন করতে লাগল। ইতিমধ্যে একজন রমণীকে তার শিশুসন্তান সহ উপস্থিত করা হ’ল। রমণীটি আগুনে ঝাঁপ দিতে ইতস্ততঃ করতে থাকলে শিশুটি বলে উঠল, ‘মা ছবর অবলম্বন করে আগুনে প্রবেশ করুন। কেননা আপনি হক পথে আছেন’।
ইসলাম হলো আলো । আর আলো সেখানে থাকবে সেখানে অন্ধকার থাকতে পারে না ।
সেই আলোকে অন্ধকারে থাকা পোকা মাকড় এসে ঘিরে ফেলবেই । তার জন্য জীবন দিতেও তারা কুন্ঠিত হবে না ।
ইসলামের তাওহিদের ঘোষনা ব্যক্তি কে কোন তাগুতি শক্তিই ধমন করতে পারে না । এটাই ইসলামের শক্তি ।
বিষয়: বিবিধ
২৭৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন