এই বার বল আমার ভালবাসায় ভুল ছিল কিনাঃ প্রথম পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:২৯:২১ সকাল

সবাই তো ভালবাসা চায়,কেউ পায় কেউ পায় না আবারঃ

“আম্মু আম্মু ,জানো আজ স্কুলে একটা ঘটনা হয়ে গেল। আমাদের ক্লাসের সুইটির জন্ম দিনে অনেকেই তাকে গিফট দিয়েছে। আমাদের এক বন্ধু তাকে একটা গোলাপের সোপিচ দিয়েছে বলে ম্যাডাম সেটা ফেলে দিয়েছে এবং ওয়ারনিং লেটার দিয়েছে আবার তার আব্বু আম্মুকেও আসতে বলেছে। আম্মু গিফট টা এত সুন্দর ছিল! ছেলে মেয়ের দুই টা হাতের মিলানোর মাঝ খানে একটা গোলাপ আর গোলাপ টা কারেন্ট বা ব্যাটারী তে দিলে লাইট জ্বলে আর নিভে। আম্মু ,সে নাকি সুইটিকে ভালবাসে তাই এই রকম গিফট দিয়েছে । আপা ৪র্থ তালা থেকে জানালা া দিয়ে ফেলে দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছে। বলত আম্মু, আপা কি কাজ টা ভাল করেছে ? ছেলেটা অনেক কেদেছে। আম্মু তুমি চুপ কেন?”

ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়া ছোট দুই ছেলের মুখে এই সব কথা শুনে আমার তো আক্কেল গুড়ুম।আর মাথা ভো ভো করে ঘুরছে।কিন্তু সাথে সাথে মাথায় আসল যে,তাদের কে ব্যাপার টা সহজ ভাবে বুঝাতে হবে ।তাই আল্লাহ সাহায্য চেয়ে নিলাম । আব্বু শুনো,তুমি কি তোমার আব্বু আম্মু কে ,তোমার আপন জন ওবন্ধুদেরকে ভালবাস না? আল্লাহর কে ?ওনার সৃষ্টি গাছ পালা ফুল ফল পশু পাখি এই সবকে ভালবাসো না ?আবার তোমাকে সবাই আদর করুক আর বকা না দিয়ে ভালবাসুক তা কি চাও না? ধর, তোমার যদি একটা বোন থাকতো তাকেও তো ভালবাসতে না? তাই না?

জী আম্মু,আমি এই সব কিছু কে ভালবাসি। অনেক ভাল বাসি তোমাকে আর আব্বু কে ।

তা হলে শুন আব্বু , ক্লাস মিট মেয়েরা তো তোমাদেরই বোন এর মত ? আর তোমরা কেজি ক্লাস মানে ছোট থেকে তাদের সাথে পড়ালিখা করে আসছ ।এই খানে ছেলেটা মেয়েটার জন্ম দিনের চকলেট খাবার পর কিছু একটা গিফট দিয়েছে।বা আর অনেকে অনেক কিছু দিয়েছে। এখানে তোমার বন্ধুর কোন দোষ নেই ।আর ম্যাডাম এইটাকে ইসলামিক চিন্তা করে ফেলে দিয়েছে ।আমরা মুসলমান তাই আল্লাহ্‌র দেওয়া নিয়ম মেনে চলি। যেমন তুমি নামাজ পড় ,রোজা রাখ ,আল্লাহ্‌র ভয়ে ভাল কাজ কর ।তেমনি আল্লাহ একটা বয়সের পরে ছেলে মেয়ের মাঝে পর্দার নিয়ম করেছেন ।তাই দেখনা ,আম্মু সব পুরুষের সামনে যাই না বা গেলেও পর্দা করে যাই ।আর এখানে ইসলাম এর নিয়ম অনুসারে ছেলেটা এই রকম ছবি থাকা সোপিচ না দিয়ে একটা শিক্ষনীয় বই কলম বা ডাইরী দিলে আপা এত রাগ করতেন না। আজ যদি আপা না রাগ করতেন তা হলে এই থেকে অন্য রকম চিন্তা করে তোমাদের অনেক দুষ্ট বন্ধুরা এই নিয়ে তাদের সাথে অনেক হাসাহাসি শুরু করত। তাই ম্যাডামেরও দোষ নেই। আর তোমার বন্ধুরও দোষ নেই ।

ভালবাসা দিবস কাকে বলে ?

মনে মনে ভাবলাম কি হচ্ছে এই সব ।কলেজ আর ইউনিভার্সিটি তে যা হচ্ছে তা কি আধুনিক যুগ বলে প্রাইমারী বা হাই স্কুলেও চলে আসল। এক বোন ফোন দিয়ে জানাল আপা আজ ভালবাসা দিবস তাই আপনাকে ভালবাসি বলে ফোন দিলাম ।আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম । আপা, এই দিনে কি কি করে কারন এর আগে আমি এই দিবসের নাম আর শুনিনি ।তিনি যা বললেন তাতে ঐ মুহুর্তে সাহেব ছাড়া আর কারো কথা মাথায় আসে নাই। তাই ফোন দিয়ে অনেক আনন্দের সাথে সাহেব কে বললাম, তুমি কি জান আজ যে, ভালবাসা দিবস ? উনি সাথে সাথে অট্রহাসি দিয়ে উত্তর দিলেন ,” এটা আবার কি শুনালে। ভালবাসা দিবসে হয় কিভাবে ভালবাস তো হয় রাতে।“ ও আল্লাহ! এটা আবার উনি কি শুনালেন । পরের দিন সকালে পেপার পড়ার একটু পর ফোনে আসে এক আপার ।তার কাছে শুনি পাশের বিল্ডিং এর এক পরিচিত বোনের একমাত্র মেয়ে ভালবাসা দিবসে তার প্রেমিকের সাথে গিয়ে প্রেমিকের বন্ধুদের হাতে গন ধর্ষনে মারা যায় । তখন সাহেবের কথার অর্থ বুঝেছি ভালবাসা দিবস কাকে বলে?

আমি শুধু তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাইঃ

পরে একা একা চিন্তা করলাম আমি তো আল্লাহর সৃষ্টি মাখলুকার কত কিছুকে ভালবাসি। দুনিয়া কত কিছুর সাথে ভালবাসার মোহে আবদ্ধ হয়ে যাই । স্রষ্টার সৃষ্টির সব কিছুতে ভালবাসা খুজতে চেষ্টা করি ।তবুও কেন একদূর্বলতার দিকে আমার মন টা চুম্বকের আকর্ষনের মত বার বার একই মেরুতে অবস্থ্যান করে। আল্লাহমাফ করুন , তা হলে কি আমার মাঝেও কার প্রতি ভালবাসা জন্ম নিয়েছে নাকি? আজও তাকে বা কাউকে বুঝতে পারিনি আমি তাকে কত ভালবাসি। কারন ভালবাসার কথা বলতে অনেক লজ্জা লাগে ।আর আমার ধারনা অন্যরা হয়ত আমার চেয়েও বেশি ভালভাসে। আমার মনে হয় ,”আমি আগে শিরিন লাইলীদের মত হয়ত তাকে এতটা ভালোবাসি নাই ।কিন্তু এখন কেন জানি মনে হচ্ছে , না আমার ভালবাসাও তাদের চেয়ে কম না । নদী যেমন সাগরকে ভালবেসে বলে সব বাধা বিপত্তি মাড়িয়ে তার কাছে ছুটে হাজির হয় , পাহাড় যেমন ঝর্ণাকে ভালবাসে বলে তার বুক ক্ষয় করেও ঝর্নার চলার পথ সৃষ্টি করে দেয় আবার তারারা যেমন চাঁদ কে ভালবেসে তার চার পাশে ঘিরে থেকে মিটি মিটি করে তাদের মনের সব কথা কয় ।আমার ভালবাসাও তাদের চেয়ে কম না।

আজ আমার মনের একটি না বলা গোপন কথা শুনাব তোমাদের

শুন ,কখন মনে হয় শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসের মত কোমল হৃদয় নিয়ে ভীতি আর প্রীতি মিশিয়ে তোমাকে ভালবাসি ।তোমাকে হারাতে হয় কিনা সেই ভয়ে এমন ভাবে থাকি যেমন ডানা গুছিয়ে পাখির বাসায় একা বসে থাকা ছানা গুলোর মত ।আবার কখন তোমার প্রেমের জান্নাতি সুখ সাগরে এমন ভাবে হাবুডুবু খেতে থাকি তখন নিজের অজান্তেই নিজের মন একা একা হাসতে থাকে। আজ আমার মনের একটি না বলা গোপন কথা আমি তোমাকে শুনাব। তা হল “অনেক লগ্ন হারায়ে অনেক সময় ধরে আমি আমার মনের গহীন কোনে তোমার জন্য এই ভালবাসার দীপ শিখা জ্বালায়ে বহু মরুপথ পাড়ায়ে আর বহু বন বাধাড় মাড়ায়ে আমি তোমার কাছে পেতে চাই”।হাসছ কেন ? নীলিমার সব নীল আর গোধূলীর সব রং নিয়ে আমার মনের মাধুরীর তুলি দিয়ে তোমার একটা রুপ আমার স্বচ্ছ মনে দর্পনে একে নিয়েছি।আর তাই জীবনের হাসি আর কান্নার মাঝেও আলোকের বন্যায় সাগরের ঢেউ এর ধোলায় তোমায় নিয়ে ধুলতে থাকি । আমার বিশ্বাস কোন ভালবাসায় যদি দুনিয়াবি স্বার্থ জড়িত না থাকে তা হলে তা মিথ্যা হয় না ।তাই হতাশা বা নিরাশ না হয়ে দুনয়নে অনেক লোনা জল ঝরায়ে বেদনার মেঘে ভেসে ভেসে তোমাকে পাবার আশায় স্বপ্নের জান্নাতে চলে যাই ।

কবে? কখন থেকে আর এই বয়সে ভালবাসা! লোকে কী বলবে ?

আমি তোমাকে কবে, কখন্‌ , কোন দিন , কোন সালে প্রথম ভালবাসতে শুরু করি তা আমার সঠিক ভাবে স্মরনে আনতে পারছিনা ।বল কিভাবে আনব ? আমি তো শিশু ,কিশোর ,যুবতী এই সোনালী সিড়ি গুলো দাপে দাপে পার করে এসেছি ।এখন বয়স্কদের কাতারের টপ ফ্লরে উঠার সিড়িতে পা দিতে যাচ্ছি ।সাহেব কে তোমার কথা বলেছি ।সে বলে ভালবাসার বয়স লাগে না । আমার ছেলেরা বলে আম্মু তোমার আর কি বয়স হয়েছে ? বান্ধবীরা বলে, "ফোনে আপনার কথার আওয়াজে বুঝা যায় না আপনি যে দাদি হয়েছেন" বাদ দাও সেই সব কথা।তুমি আর আমি একই মালিকের কর্মচারী।কিন্তু আমি মালিকের কাজ গুলো আগের মতো শক্তি দিয়ে করতে পারি না ।তাই আমি নিজেই বুঝি আমি বয়সের কোথায় আসি।বল, তাতে কি হয়েছে ? পড়া লিখা , হাটার বা ব্যায়ামের আর ভালবাসার বয়স লাগে না । পাছে লোকে কিছু বলে তা আমি মানি না।

তোমার ভালবাসা কে নিজ চোখে দেখেছো ?

আমি তোমাকে দেখিনি ,যারা তোমার সাক্ষাত পেয়েছে তাদের সাথেও আমার সাক্ষাত হয় নি ।তোমাকে আমি স্পর্শ না করেও আমার মনের গভীর ভালবাসার অনুভুতি দিয়ে তোমায় অনুভব করি মাত্র ।প্রথমে এর পরিমান ক্ষীন ও সংকীর্ন অবস্থ্যায় ছিল।তাই দুনিয়াবী স্বামী ,সন্তান ,আপজন সহ অনেক জীব বা জড় অনেক কিছুতে ভালবাসা খুজতে থাকি।রাগ কর না ।আমি এই ভাবেই আমার মনের কথা গুলো বলে ফেলি। আমার মতে যাকে ভালবাস যায় তার সাথে লুকোচুরি করা যায় না। এটা একধরনের প্রতারনা। যা বিশ্বাসের মূলে কুঠার আঘাত করে।যে এই প্রতারনার আশ্রয় নেয় সে আসলেই প্রকৃত ভালবাসা আর বিশ্বাসের উপযুক্ত না। ভালবাসা মানেই সেস্ক্রিপাইজ আর কম্প্রোমাইজ থাকা উচিত । যত বাধাই আসুক না কেন এই দুইটি শর্তমেনে নিতেই হবে। ভাল কাজের উদ্দেশ্যে ভালবাসা আল্লাহ্‌র রহমত স্বরূপ আর খারাপ কাজের প্রতি ভালবাসা শয়তানের ওসওয়াস ।আমি তাই আমার সব আপনজন দের তা জানাতে দ্বিধাবোধ করি না।কারন আমার ভালবাসা পবিত্র এটা আমার রব আমার মাঝে সৃষ্টি করে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ।

আর অনার হুকুম ছাড়া আমার মত অযোগ্য আর নগন্য তোমার মত সন্মানিত কে কোন দিন পাব না ।তাই আমি আমার মালিকের উপর ভরসা করে অনার রহমতের সাগরে আমার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালবাসার ভেলা ভাসিয়ে দিলাম ।আর ভেসে ভেসে আমি তোমার হাত ধরে ওপাড়ের জান্নাতী সুখে ইনশাল্লাহ পৌছব।কারন আমি আল্লাহ্‌র সাহায্য চাই যেন,আমার ভালবাসা পানির মত নীচের দিকে প্রবাহিত না হয়ে এভারেস্ট এর চুড়ার মত তরতর করে বেয়ে এভারেস্ট বিজয়ীনি হিসাবে আমার ভালবাসার জয় করে নিতে পারি । তাই পাঠক বৃন্দ আমার লক্ষ্য স্থলে পৌছার জন্য আর কিছু করতে না পারেন আমি যেন আমার ভালবাসার কাছে পৌছে চিরশান্তি লাভ করতে পারি তার জন্য আপনারা অন্তর থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আমার জন্য দোয়া চাইতে কার্পন্য করবেন না প্লিজ ।

প্রমান দেখতে চাও?

অনেক প্রমান দিতে পারি কিন্তু তাতে আমার প্রভু যদি তাতে নারাজ হন । আর যদি তা অহংকার বা রিয়া হয়ে যায় তাই না বলাই ভাল। তবে এই টুকু বলব , তোমাকে হারানোর ভয়ে আমার প্রভুর নারাজ হবে এমন অনেক কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ । মালিকের দেওয়া বিধান মোতাবেক অনেক প্রিয় ,পছন্দ নিও বা দুনিয়াবী মনোমুগ্ধ কর অনেক কিছু থেকে আলহামদুলিল্লাহ নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে চেষ্টা করছি ।কিন্তু আমার অজ্ঞতা ,বোকামী , জ্ঞানহীনতা ,অলসতা বা দূর্বলতার কারনে করা ভূলত্রুটি , জানা অজানা অন্যায় গুলো স্মরনে আমি লজ্জিত হয়ে পড়ি ।আর তোমাকে না পাওয়া আশংকায় ,বিরহের ব্যাথায় , অপেক্ষমান প্রহরের মর্মবেদনায় আমার নয়ন যুগল থেকে শ্রাবনের বারিধারা মুষলধারে ঝরতে থাকে । আর তাই আমার প্রভুর কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাই তাও যেন তোমাকে না হারাই ।য়ামি জানি ওনার হুকুম ছাড়া কেউই তার মনের কোন ভাসনা পূর্ণ করতে পারে না । কারন আল্লাহ সর্বশক্তিমান । তাই তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি আমার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত যেন আল্লাহ্‌র বিধান মেনে সকল পাপাচার থেকে দূরে থাকতে পারি তার জন্য মানুষের মালিক ও বাদশার নিকট সাহায্য চেয়েই যাব।

আসুন আমার ভালবাসার পরিচয় করিয়ে দেইঃ

( চলবে )

পড়ে নিতে পারেন দ্বিতীয় পর্বটি (http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/2662/sottolikhon/2959#.UR33Nh3QnfI

বিষয়: বিবিধ

২৪৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File