“সুখ বিক্রেতা এক মাত্র রাজাধিরাজ একজন আর আমরা সবাই সুখের ক্রেতা”।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২০ অক্টোবর, ২০১৩, ১০:৪২:১৯ সকাল
“সুখ বিক্রেতা এক মাত্র রাজাধিরাজ একজন আর আমরা সবাই সুখের ক্রেতা”।
ভরা নদী হঠাত খালি হলে তা কি তার জন্য দেখতে মানায়। আমার বাসা এই ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনে এমন খালি আর কখন হয় নাই ।এক সময় দীর্ঘ ১৫ বছর ছিল যৌথ সংসার। এর মাঝে সন্তানরা বড় হয়ে আলহামদুলিল্লাহ নাতি নাতনী নিয়ে বাসা ভরা ছিল। ঈদের পর সবাঈ একসাথে বেড়াতে চলে যায়। একা বাসায় আমরা বুড়ো বুড়ি দুই জন ।যখন কপোত-কপোতী একটু রোমাঞ্চ সময় কাটানোর জন্য খুজেছি। তখন এতো ব্যাস্ত ছিলাম যে রসিক পুরুষটার চোখে চোখ পড়লে চোখের ভাষা আর ঠোটের ভাষা বুঝে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে দৌড়ে পালাতে ছিলাম হয়রান।কারন এতো কাজের মাঝে শ্বাশুড়ি ননদী জা রা দেখে এই নিয়ে তামাশা করত শত।
শুক্রবার খুব একটা অলস সময় কাটাতে হয় না।কারন একদিকে ইবাদতের দিন আবার বাসায় সবাই সেই দিন একসাথে থাকে।এই শুক্রুবার সাহেব তার প্রোগ্রাম থাকাতে একা বাসায় কবরের একাকীত্বের মত লাগছিল ।আর সেই শুন্য জায়গাইয় এসে ভর করল অতীতের হাজার স্মৃতিগুলো।কিছু হাসাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হল দুঃখের স্মৃতি গুলো বেশি জোরালো ভুমিকা রাখল।বেশ সময় স্মৃতিচারন করে দেখলাম আমার মাথার পেইন আর বুকের ব্যাথাটাই তারা বাড়াচ্ছে ।তাই সবাইকে ঝেড়ে পেলে নেটে বসলাম।কিছু লিখালেখি করার মন পাচ্ছিলাম না।যখন ব্যাস্ত থাকি তখন সাহিত্য কনিকা গুলো কত সুন্দর সাহিত্য রচনা করে যায় হৃদয়ের পাতায় ।আর অবসর সময় একটূও খূজ়ে পাই না।মেমোরি কার্ডের জিবি খুব কম।
নিচের ইন্টারকোম এ ফোন আসল ।ধরতে গার্ড জানালেন,খালাম্মা , যশোর থেকে সুমনের আম্মা এসেছেন”।পুরান ঢাকায় এই আপার অনেক স্মৃতির সাথে ২০ বছর বান্ধবী ছিলাম। সেই খান থেকে আমি সরলেও আপার হৃদয় থেকে সরান নাই।আলহামদুলিল্লাহ।তাই আপাকে আসার অনুমতি দিয়ে ভাবছিলাম কিভাবে আজ আপাকে আগের মত হাজার দুঃখের সান্তনা দেব।মাঝে দিয়ে অনেক সময় দেখা না হওয়াতে ভেবেছি ,আপার মনে হয় দুঃখের দিন গুলো মেঘের মত সরে গিয়ে একটা সোনালী রোদেলা দুপুরের সন্ধান পেয়েছে।
মনের দরজা আর ঘরের দরজা দুইটাই খুলে আপার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।আপার শরীলের অবস্থ্যা দেখে সালাম দিয়ে ঝড়ায়ে ধরতেই আপা, অনেকক্ষন বুকে মাথা রেখে কাদলেন।আমি ভেবেছি আপার মনে হয় আমাদের আগের ভালবাসা ও আন্তরিকতার কথা দীর্ঘ সময় পরে আবার অসুস্থ্য হয়ে মনে পড়াতে কান্দছেন।
আপার জীবনী থেকে আমাদের অনেক শিখার আছে ।কারন এই আপা ,অনেক বড় গার্মেন্টস মালিকের স্ত্রী ছিলেন।াপার সংসারে সুখের পায়রা গুলো সারাক্ষন মনের আনন্দে ঊড়ে বেড়াত।সেই সংসারে কোল ঝুড়ে আসে সুমন আর সোহাগ নামের দুই ছেলে।সোহাগের জন্মের সময় আপা নিজের ও বাচ্চাদের সেবাযত্নের জন্য এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় থাকা নিজের বোনের মেয়েকে আনেন। হসপিটাল আর বাসায় মিলিয়ে আপা বেশ কিছু দিন অসুস্থ্য থাকে।এই সুবাধে চরিত্রহীন লোম্পট স্বামী ঐ বোনের মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে।আপা টের পেয়ে যখন ঐ মেয়েকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তার দুই দিন পর একসকালে ভোরে উঠে দেখেন ঐ মেয়েও নেই আর তার স্বামীও নেই। উনার বুঝতে আর বাকী রয় নাই যে উনার সাজানো সোনার সংসারে আগুন ধরেছে।সেই আগুনে আজ আপা পুড়ে পুড়ে চাই হয়ে যাচ্ছে।
সুমনের বাবা আবার ফিরে আসবে আসায় কয়েক মাস নিজে ধারকর্য করে বাসা ভাড়া সহ সব খরচ চালিয়ে যান। কিন্তু সময় মত টাকা না দিতে পারার কারনে বাসার মালিক দুই বাচ্ছা সহ আপাকে বের করে দেন।এর মাঝে আপা , জানতে পারেন সুমনের বাবা, ঐ মেয়েটাকে নিয়ে মিরপুরে এক আলিশান এপার্ট্মেন্টে সুখে আছেন।আর কখন ফিরে আসবেন না এইটা নিশ্চিত হয়ে বোনটা যখন অকূল সাগরে ভাসছিলেন আর একটুকরা খড় কুটা ধরার জন্য ব্যাকুল হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন তখন আল্লাহর অশেষ নিয়ামত হিসাবে ইসলামী আন্দোলনের দ্বীনি বোনদের খুজে পান।বোনদের দেওয়া ভালবাসা মিশ্রিত মনোবল আর আর্থিক সহযোগীতায় আপা ছেলেদের পড়ালেখা সহ বড় করতে থাকেন।াল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস আর ভরসা করে দ্বীনি আন্দোলনে নিজেকে সপে দেন।
আপা যখন ক্লান্ত শরীল আর মন নিয়ে আসতেন তখন বার বার বুঝাতাম , যে ছেলেরা বড় হলে আপনার সব দুঃখ চলে যাবে।কিন্তু না সেখানেও আপার ঠাই হলো না।বড় ছেলের
বউ আপাকে রাখা অনেক বড় ঝামেলা মনে করছে।তাই খেয়ে না খেয়ে গ্রামে থাকেন।কারন অন্ধের যষ্টির মত ছোট ছেলেটা এখন পড়া শেষ করে উঠতে পারে নাই।টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ আর মায়ের চিকিতসা করান।আজ আপা খুব সুন্দর করে হেসে হেসে বললেন “ডাক্তার বলেছেন উনার দুইটা কিডনির মধ্যে একটা একেবারে শেষ আর একটা অর্ধেক ভাল আছেন”।আপার হাসির মাঝে আমি খুজে পেলাম যে বোনটা মনে হয় এই বার পালাবার একটা পথ খুজে পেয়েছে। উনার শরীল আর চেহারা দেখে নিজের সব মনের কষ্ট ভুলে আল্লাহর কাছে অশ্রু বির্সন দিয়ে উনার নেয়ামতের শুকরিয়া জানালাম।
দুই জনের অশ্রু সিক্ত নয়নে আপা কে বিদায় দিলাম। হয়ত আমার এই বোনটাকে আবার দেখব বা দেখব না। কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন কি ছিল আমার বোনটার অপরাধ? একসময় টেবিল টেনিস খেলার বলের মত টিন এইজ ছিল।লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছেন।এরপর ক্রিকেট খেলার বলের মত টসটসা ভরা যৌবন ছিল।স্বামীর সংসারে স্বামী মন জয় করে এবং পরিবারের অন্যান্য দর্শকদের মন পাবার জন্য চার আর ছক্কা কম তো দেন নাই । তার পর ফুটবল খেলার বল হিসাবে এসে পড়ে জীবনের এমন এক মাঠে।যেখানে তাকে নিয়ে খেলে স্বামী বনাম সন্তান ।দুই দলই চায় দুই দলের লক্ষ স্থল গোল পোস্টে বল থাকুক।একপক্ষের দর্শক হাতে তালি দিলে আরেক পক্ষ মুখ বার করে রাখে।কি বিচিত্র জীবন।কাহিল হলে বা নেতিয়ে পড়লে আবার চাপ প্রয়োগ করে বাতাস ডুকানোর নামে আরো তাদের আরো নানান দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয় ।ক্লান্ত পরিশ্রান্ত জীর্ন শীর্ন বলটি বার বার তাকায় জীবন খেলার মাঠের নিয়ন্ত্রক রেফারি নামের মহান রাব্বুল আলামিনের দিকে ।কখন সময় শেষ হবে বলে রেফারির বাশীটা বেজ়ে উঠবে আর সেই বল নামের মেয়েটি দুনিয়ার এই মাঠ ছেড়ে চলে গিয়ে উঠবে রেফারির হাতে আর এতে রেফারি থাকবে বলের উপর সন্তুষ্ট আর বল চিরসুখের ঠিকানা গিয়ে নিস্তার পাবার জন্য বল রেফারির উপর সন্তুষ্ট থাকবে।
আমার মনে হয় ,এই দুনিয়ার রংবেঙ্গের হাটে বাজারে এবং রাস্তা খাটে সবাই সুখ কিনার জন্য ব্যতি ব্যাস্ত হয়ে আনা ঘোনা করছি। কিন্তু আমরা অনেকেই সুখ বিক্রেতা কে চিনতে পারছি না।তাই য়ামরা যেখানে সেখানে যার তার কাছে সুখ কিনতে গিয়ে মরিচিকার পিছনেই ছুটে বেড়াচ্ছি।আর যারা বুঝতে পারেন যে দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ বিক্রেতা আসলেই শুধু একজন । আর দুনিয়ায়াতে আমরা সবাই শুধু ক্রেতা ।আর এই সুখের খোজ দুনিয়ার জন্য খূজলে আপনার চেয়ে কষ্টে যে আছে তার কথা ভাবুন।আমার এই বোনটার কথা ভেবে আমার মনে হল পৃথিবীতে কোন সুখি ব্যাক্তি থাকলে আলহামদুলিল্লাহ সেই ব্যাক্তি আমি।এটা আমার মনের তৃপ্তি থেকে আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। কারন অনেকের যা নেই আল্লাহ আমাকে তার চেয়ে অনেক বেশি দান করেছেন।সারা জীবন সেজদায় পড়ে কান্দলেও এই সকল নিয়ামতের হিসাব দেওয়া থেকে মুক্তি পাব কিনা জানি না ।
আলহামদুলিল্লাহ।আখিয়ারাতের সুখের জন্য আমার চেয়ে যিনি বেশি আমল করছেন ।আমাকে সেই কাজ গুলো কোরান সুন্নাহর আলোকে করে যেতে হবে ইনশাল্লাহ।তা হলে আসুন , আপনি আমি আমরা সবাই সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলে হুদাল্লিন মুত্তাকিন হয়ে চলি আর এই কথা সারা জীবন মনে রাখি যে “সুখ বিক্রেতা এক মাত্র রাজাধিরাজ একজন আর আমরা সবাই সুখের ক্রেতা”।তাই আমরা কায়মনোবাক্যে বলি“হে আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে শান্তি ও সমস্ত কল্যান দান করুন আর আখিরাতেও আমাদের ক্ষমা করে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি দিন”।
বিষয়: বিবিধ
৩১২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন