কোরবানীর পশু গুলো আর আমাদের মধ্যে প্রার্থক্য কোথায় ?
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৫৩:২৫ রাত
কোরবানীর পশু গুলো আর আমাদের মধ্যে প্রার্থক্য কোথায় ?
নোয়াখালীর ঐতিয্য চালের গুড়ার রুটি আর ঈদের মাংস ।
নামাজে যেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি করে রুটির কাজ সেরে জাতীয় ঈদগাহে নামাজে শরীক হলাম ।
গরুর মাংস আসতে একটু সময় লাগবে বলল সাহেব তাই অবসর সময়টা কাজে লাগাতে লিখতে বসে গেলাম ।মন ভাল লাগছিল না । একদিকে দুই নয়ন মনি প্রবাসে মার মুখ না দেখে ঈদ করার কষ্ট গত কাল মাকে জানালো আর মা কান্দছে বাবারা জানি কার হাতের রান্না ঈদের থেকে ঘরে ডুকেই খাবার জন্য চাইবে । প্রিয় জন ছাড়া কোন আনন্দই আনন্দের মত লাগে না ।
অন্য দিকে গত বছর ঈদ পর্যন্ত যেই সন্মানিত মহীয়ষী কে মা এর আসনে বসায়ে ১২ বছর বয়সে বধু হয়ে এসে যার থেকে সংসার করার ট্রেনিং নিয়েছিলাম। সেই শ্বাশুড়িও গত ঈদে ছিল আর এই ঈদে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন । তাও আল্লাহর কাছে আমার আদরের সন্তান সহ সব মায়ের প্রবাসী সন্তান দের জন্য সাহায্য চেয়ে নিলাম ।আর আমার মা বাবা সহ সকল মা বাবার জন্য ক্ষমা ও জ়ান্নাত চেয়েনিলাম ।
বাসায় আসতে পথেই একটু দাড়ায়ে থাকতে চরন দুই টি চাইল আর কিছুক্ষনের মধ্যে হৃদয় টা ধুক ধুক করে কম্পন শুরু করে দিলে আর দাড়াতে পারলাম না । কারন প্রথম দেখা থেকেই কেন জানি , বার বার মনে হচ্ছিল কোরবানীর পশু গুলো আর আমাদের মধ্যে প্রার্থক্য কোথায় ? যেমন
প্রথমতঃ
আমি দেখি কিছু গৃহপালিত পশু জোর জবরদস্তি করে কোরবানীর জন্য জবাই হচ্ছে আর কিছু আগেই হয়ে গেছে । কিছু পশুর চামড়া ছাড়ানো হচ্ছে । আরেকটির মাংস টুকরা করা শুরু হয়ে গেছে । আবার বেশীর ভাগ গরু ছাগল গুলো দাড়ায়ে সামনে রাখা পানি বা ঘাস খাচ্ছে । আবার মনের আনন্দে লেজ দিয়ে মশাও তাড়াচ্ছে । আবার দিব্বি আরামে খাচ্ছে । সেখানের বাকী পশু গুলো কিন্তু তাদের জাতি ভাইয়ের করুন পরিনতি দেখছে ।একটু পরেই যে সিরিয়ালে তার গলায়ও একই ছোরা চালানো হবে তা সে একবার চিন্তা কয়ারার জ্ঞান বা বিবেক নেই । মৃত্যুর ভয় বা এর পর তার এই বিশাল দেহ যে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে আর আগুনে সেই শরীল ঝলসানো হয়ে অন্য আরেক জীবের উদর ভর্তি হবে সেই দিকেও একটু চিন্তা নেই ।
আমার মনে হল, আমরা তো এই পশু গুলো মত আমাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তার বাড়িতে যাই আবার মৃত ব্যক্তির লাশের সাথে গোসল জানাজা দাফন সহ অনেক আনুষ্টানিকতায় অংশ গ্রহন করি । কিন্তু সেই খান থেকে এসেই আমরা আমাদের কে স্বাধীন ভাবে দুনিয়াতে শুধু খাও দাও আর ফুর্তি কর । সমাজের অন্যায় ,অবিচার , শোষন ,জুলুম ইত্যাদি অপরাধ কচুরি ফেনার মত বিস্তার ঘটাচ্ছি আমরাই ।আমরা আল্লাহর দাসত্ব ভুলে গিয়ে তাগুতশক্তির দাসত্ব মেনে নেয় ।যা শুধু পশু নয় কোন সৃষ্টি তার স্রষ্টার বিরুদ্ধে করে না। এর ভয়াবহ পরিনতি বা মৃত্যুর পরের অনন্ত জীবনের কথা এবং এর ফলাফল কি হবে তা মোটেই ভাবি না । তা হলে ঐ পশুটার আর আমার মাঝে তফাত কোথায় ।
“জিন ও মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব করবে৷”সুরা যারিয়াত
আমাদের ঈমান(বিশ্বাস) বা আকীদা যদি ১। তাওহিদ (আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্বের) উপর ২ ।রিসালাত (রাসুল সাঃ মক্কী ও মাদানী জীবন কার্যক্রম ) উপর ৩। আখিরাত (মৃত্যুর পরবর্তি জীবন ও এর ফলাফল স্বরুপ জান্নাত বা জাহান্নামের ) উপর দৃড় বিশ্বাস এনে সেই অনুসারে কাজ করতে হবে। আর সেই কাজ হতে হবে কোরান ও সুন্নাহ মোতাবেক করতে হবে ।
দ্বিতীয়তঃ
একটা গরু সকালে মাঠে যায় ,সারাদিন খায় ,যাবর কাটে ,মলমুত্র ত্যাগ করে । এটাই তার প্রতিদিনের কাজ ।আর যদি মানুষও খাওয়া ,ঘুম আর ত্যাগ করা এই জৈবিক চক্রের মধ্যে আবদ্দ্ব থাকে তাহলে মানুষ আর গরুর মধ্যে প্রার্থক্য কোথায় ?বরং কুশিক্ষিত মানুষকে লোভ –লালসা স্বার্থবাদিতা ,কামান্দ্বতা , নেশাখোরী ,নীচতা ,ক্রোধ ইত্যাদি বদ অভ্যাস গুলো পেয়ে বসে ।পশু তার মালিককে খুশি করার জন্য মালিকের আদেশ নিষেধ মেনে চলার মত জ্ঞান রাখে ।কিন্তু মানুষ নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তার মালিকের আদেশ নিষেধ প্রতি খেয়াল না করে নৈতিক মানবিক দিক দিয়ে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যায় ।পশু তার ক্ষুদা নিবারনের জন্য খাদ্য যোগার করতে গিয়ে নখ ও দাঁত ব্যবহার করছে ।কিন্তু মানুষ ক্ষুদা নিবারনের পরও লোভ লালসা হিংসা ইত্যাদির কারনে নিজ ধর্মের লোকদের হত্যা করছে । কারন কোরান সুন্নাহর আলোকে নিজের জ্ঞান না থাকার ফলে আমরাও ঐ পশুর মত নির্বোধ রয়ে গেছি । তাই শিক্ষা যে কোন একটা জাতির মেরুদন্ড ।শিক্ষা ছাড়া জাতি বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে।বিশ্বের কোন দরবারে সে জাতি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। কোরআনের নাযিল করা প্রথম শব্দ হল “ইকর” মানে পড় ।
““পড়ো ( হে নবী ) , তোমার রবের নামে ৷ যিনি সৃষ্টি করেছেন৷ জমাট বাঁধা রক্তের দলা থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন৷পড়ো,এবং তোমার রব বড় মেহেরবান,যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন৷ মানুষকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন , যা সে জানতো না৷কখনই নয় , মানুষ সীমালংঘন করে৷ কারণ সে নিজেকে দেখে অভাবমুক্ত৷” সুরা আলাক
. ইসলামে আরও বলা হয়েছে
“জ্ঞান অর্জন শ্রেষ্ঠ ইবাদত”-আল হাদিস।
“বিদ্বান ব্যক্তিরা নবীদের ওয়ারিস”-আল হাদিস।
এখানে ছেলে মেয়ে আলাদা করে কিছু বলা হয় নাই ।জ্ঞান অর্জনের জন্য ইসলাম দুই জনকেই সমর্থন করেছেন ।
তৃতীয়তঃ
আমি দেখলাম জাতীয় ঈদগাহে পুরুষ মহিলা সহ প্রায় লক্ষ মুসল্লি নামাজ পড়েছেন। এই নামাজ হল ওয়াজীব ।তার জন্য কত সুন্দর আয়োজন আর কত মুসলমানের সমাগম ।তাও আবার সরকারী খরচে । সরকারের গন্য মান্যরা প্রথম কাতারে স্থান পেয়েছেন । আমি অনেক কষ্টে মহিলাদের মধ্যে ২য় কাতারে আলহামদুলিল্লাহ কড়া নিরাপত্তা ও চেকিং এর মধ্যে দিয়ে উপস্থিত হয়েছি ।
আমার কথা হল যেখানে সরকারী কর্মকর্তা সহ অনেকেই মুসলমান । আবার বিশ্বের মুসলিম দেশের তালিকায়্ আমরা অনেকটা উপরেই আছি । আল্লাহর জমীনে আল্লাহর বিধান বা দীন কায়েমের কাজ সকল ফরজের বড় ফরজ হওয়া শর্তেও সেখানে এতো বাধা কেন ?আজকে আমার মত অনেকেই দেখেছেন বাংলাদেশে বা আমাদের সমাজে বহু দীন্দার লোক আছেন যারা নামাজ রোজা হজ্জ যাকাত পালনে অনেক নিষ্টাবান । অনেক কল্যান মুলক কাজ সহ অনেক সামাজিক কাজ করে থাকেন ।
কিন্তু যখনই আপনি কোরানের বা আল্লাহর হুকুম কায়েমের কথা বলবেন তখন আর তাদের আগ্রহ নেই বা খুজে পাওয়া যায় না ।বরং আরো নিষ্টুর ভাবে বিরোধিতা করে। কিন্তু একটা সমাজে আল্লাহর বিধানের সব দিক গুলো কায়েম না থাকলে নিজেও মুসলমান থাকা জায় না । আর এই ইসলামী সমাজ গড়ার কাজ অন্য কেউ নয় এই সমাজের সবাই মিলে দলবন্ধ ভাবে কায়েম করতে হবে । নবীরাও কেউ এই কাজ একা করতে পারেন নি । কোরান হাদীসের সঠিক আলো যদি এই মুসল্লিদের মাঝে থাকত তা হলে তারা এই দীন কায়েমের কাজে প্রেরনা ও জান মাল ত্যাগ করে সোনালী সমাজ গড়ার কাজে ঝাপিয়ে পড়ত । শয়তানের দালালরা আর ইসলামের বিরুদ্ধাচারন কয়ার সাহস পেত না । তাই আসুন আমরা সবাই মিলে সংঘবদ্ধ ভাবে একসাথে আল্লাহর দেওয়া বিধান আকড়ায়ে ধরি । মুসল্মান হয়ে আর আমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন ভাবে মারামারি বা কোন রকম সমাজ ধ্বংসাত্নক কাজে নিজেদের জড়াব না । আসুন আমরা তাওবা করে আবার কোরাবানীর শিক্ষায় নিজেকে উতজীবিত হই।
“তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না৷ আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো৷” আলে ইমরান
তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে৷ যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে ৷ আলে ইমরান
“এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য ৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷” আলে ইমরান
তাওবা করে আল্লাহ কাছে বলি “ হে আল্াহ আমরা োমার খাটি বান্দা হিসাবে হাজির হাজির ।তুমি আমাদেরকে তোমার প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল করে নাও । আ্মরা দোষে আর ভুলে ভরা ত্রুটি যুক্ত মানুষ আর তুমি ক্ষমা কারী ও পবিত্র । আমাদেরকে নফসের দাসত্ব করা থেকে মুক্তি দাও ।আর তোমার প্রকৃত দাস হিসাবে আমাদের সাহায্য কর । তোমার রহমানুর রাহিম নামের গুনে তুমি যেমন আদম হাওয়ার গুনাহ ক্ষমা করেছ , মুসা আঃ কে দিয়েছে নীল নদের মাঝখান দিয়ে রহমতের রাস্তা করে ,আইউব আঃ রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন , ইউনুস আঃ কঠিন বিপদে মাছের পেটের থেকে মুক্তি পেয়েছেন তেমনি ভাবে আমরাও তোমার সান্নিধ্য দুনিয়া ও আখিরাতে সকল প্রকার কল্যান লাভ করতে চাই । আমিন সুম্মা আমিন ইয়া রাহমানুর রাহিম ।
বিষয়: বিবিধ
৩০৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন