কী দু’আ করব, কেমন করে কবুল হবে
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০১ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:১১:৪৪ রাত
কী দু’আ করব, কেমন করে কবুল হবে
#[রিয়াদুস সলিহীন : ১৪৬৫]
নু’মান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “দু’আ হচ্ছে ইবাদাত।” [আবু দাউদ, তিরমিযি]
ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযি একে হাসান ও সহীহ হাদিস অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
* * *
#[রিয়াদুস সলিহীন : ১৪৬৭]
আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময়ে এই দু’আ করতেনঃ ‘আল্লাহুম্মা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান নার।” (হে আল্লাহ! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ ও আখিরাতে কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আযাব থেকে আমাকে বাঁচাও) [বুখারী, মুসলিম]
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
ইমাম মুসলিমের বর্ণনাতে আরো আছেঃ হযরত আনাস (রা) যখন কোন দু’আ করতে চাইতেন তখন এই দু’আটিই করতেন এবং যখন অন্য দু’আ করতে চাইতেন তখন এ দু’আটিও তার মধ্যে শামিল করতেন।
* * *
[রিয়াদুস সলিহীন : ১৪৬৮]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।” ( হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাচ্ছি হিদায়াহ, তাকওয়া, সচ্চরিত্রতা, স্বয়ংসম্পূর্ণতা বা স্বনির্ভরতা) [মুসলিম]
* * *
[রিয়াদুস সলিহীন : ১৪৯৮]
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন তার রবের সবচাইতে নিকটবর্তী হয়। কাজেই তোমরা (সিজদায় গিয়ে) বেশি করে দু’আ কর।”[মুসলিম]
* * *
[রিয়াদুস সলিহীন : ১৫০০]
আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলা হলোঃ কোন দু’আ বেশি কবুল হয়? তিনি বলেনঃ শেষ রাতের মধ্যকালের ও ফরয নামাজের পরের দু’আ।” [তিরমিযি]
ইমাম তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান হাদিস বলেছেন।
* * * *
[রিয়াদুস সলিহীন : ১৪৯৯]
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“তোমাদের কারো দু’আ কবুল করা হয় যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে। সে বলতে থাকেঃ আমি আমার রবের কাছে দু’আ করেছিলাম কিন্তু তিনি আমার দু’আ কবুল করেননি” [বুখারী, মুসলিম]
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তবে, মুসলিমের এক বর্ণনাতে বলা হয়েছেঃ বান্দার দু’আ বরাবর কবুল করা হয় যতক্ষণ না সে গুনাহ করার বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছেদ করার দু’আ না করে এবং যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহ রাসূল! তাড়াহুড়া কি? তিনি বলেনঃ দু’আকারী বলতে থাকে, আমি অনেক দু’আ করেছি, (আমি বারবার দু’আ করছি) কিন্তু আমার দু’আ কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয়ে আফসোস করে এবং দু’আ করা ত্যাগ করে।
* * *
[রিয়াদুস সলিহীন : ১৫০১]
উবাদা ইবনুস সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“পৃথিবীর যে কোন মুসলিম ব্যক্তি মহান আল্লাহর কাছে কোন দু’আ করলে তিনি তাকে তা দান করেন অথবা তদনুরূপ অনিষ্ট তার থেকে দূর করেন, যতক্ষণ না সে কোন গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দু’আ করে।”
উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললো, এখন থেকে তাহলে তো আমরা বেশি করে দু’আ করবো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আল্লাহও বেশি করে কবুল করবেন।*[তিরমিজি]
ইমাম তিরমিজি এ হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান ও সহীহ বলেছেন। আর ইমাম হাকেম হাদিসটি আবু সাইদ (রা)-র সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং তাতে আরো আছেঃ অথবা তার জন্য দু’আর সমান প্রতিদান জমা করে রাখেন।
** দু’আ সংক্রান্ত কিছু আলোচনা **
দু’আ চাওয়ার জন্য এক ধরণের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। অন্য কথায় এক ধরণের শারীরিক ও মানসিক পরিবেশ সৃষ্টি দু’আর জন্য পূর্বশর্ত। একে বলা হয় দু’আর আদব। হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে দু’আর এই আদবসমূহের বিক্ষিপ্ত বর্ণনা এসেছে। এইসব বর্ণনা একত্রে করলে এরূপ দাঁড়ায়ঃ
লেবাস-পোশাক,
আহার-পানীয়,
উপার্জনের ক্ষেত্রে হারাম পরিহার করা এবং একমাত্র আল্লাহর কাছে দু’আ করা।
উযু ও প্রয়োজন হলে গোসল করে পাক-পবিত্র হওয়া ও
কিবলার দিকে মুখ করা এবং
দু’আর প্রথমে ও শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা ও রাসূলের (সা) উপর দরূদ পড়া।
হাত দু’টি কান বরাবর উঁচু করা ও সামনের দিকে খুলে ছড়িয়ে রাখা এবং
খুশু ও খুযু সহকারে বিনীতভাবে আল্লাহর দরবারে নিজের দরখাস্ত পেশ করা।
রাসূল (সা) আল্লাহর বিভিন্ন নাম ও গুণাবলী সহকারে যেসব দু’আ করেছেন সেই দু’আসমূহ বেশি করে করা।
প্রতিটি দু’আ অন্তত তিনবার করা।
এই সঙ্গে উপরে উল্লেখিত হাদিসগুলোয় যেসব শর্ত বিবৃত হয়েছে সেগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে যখন আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দু’আ করা হয় তখন আল্লাহ অবশ্যি তা কবুল করেন।
* * * *
আবুদদারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেনঃ “ভাইয়ের অসাক্ষাতে কোন মুসলমান ব্যক্তির দু’আ তার জন্য কবুল হয়। তার মাথার কাছে একজন দায়িত্বশীল ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন। যখন ঐ ব্যক্তি তার ভাইয়ের কল্যাণের জন্য কোন দু’আ করে তখনই ঐ নিযুক্ত দায়িত্বশীল ফেরেশতা বলেনঃ আমীন, তোমার জন্যও অনুরূপ।”[মুসলিম]
# রিয়াদুস সলিহীন : ১৪৯৫
* * * *
হযরত উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,
আমি উমরাহ করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অনুমতি চাই।তিনি আমাকে অনুমতি দিয়ে বললেন,
“হে প্রিয় ভাইটি আমার! তোমার দু’আয় আমাদের কথা ভুলে যেও না!”
তাঁর উচ্চারিত বাক্যটি আমার জন্য এমন ছিলো যার বিনিময়ে সমগ্র দুনিয়া প্রাপ্ত হলেও আমার কাছে অধিক আনন্দদায়ক হতো না।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে।তিনি বলেছেন: “হে প্রিয় ভাই! তোমার দু’আয় আমাদের শরীক রেখো।”
[আবু দাউদ ,তিরমিযী]
ইমাম তিরমিযী বলেছেন এটি হাসান হাদীস।
#রিয়াদুস সলিহীন:৭১৫
* * *
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
তোমাদের কেউ যেন কষ্টে পতিত হওয়ার কারণে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে।যদি সে একান্ত বাধ্য-ই হয় তাহলে যেন এভাবে বলে, “হে আল্লাহ! আমাকে ওই সময় পর্যন্ত জীবিত রাখুন,যতক্ষণ পর্যন্ত জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয়।আর আমাকে মৃত্যু দান করুন,যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয়”
(বুখারী ও মুসলিম)
#রিয়াদুস সলিহীন:৫৮৭
* * *
আবু মুসা আশ-আরি (রা) বর্ণনা করেন, রাসুল আকরাম (সা) যখন কোন ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর থেকে ক্ষতির ভয় করতেন তখন তিনি বলতেন,
“আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফী নুহুরিহিম ওয়া নাঊযুবিকা মিন শুরুরিহিম” অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমরা ওদের মুকাবিলায় তোমার শরনাপন্ন হচ্ছি এবং ওদের অনিষ্ট থেকে তোমারই কাছে পানাহ চাচ্ছি” [আবু দাউদ ও নাসায়ী বিশুদ্ধ সনদসহ হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন]
#রিয়াদুস সলিহীনঃ ৯৮১
বিষয়: বিবিধ
৪৫৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন