একজন আদর্শ স্বামীর গল্প
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:৫৪:২৭ বিকাল
একজন আদর্শ স্বামীর গল্প
আমার জীবনের প্রথম লেখা আমার জীবন সাথীকে নিয়ে ......প্রথম পর্ব
একটি ছেলেকে শিশু ,শৈশব,কিশোর, যুবক এই ধাপ গুলো অতিক্রম করতে হয় ।ইসলামের নিয়ম অনুসারে তখন তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ব হতে হয়। এই সময় থেকে শুরু হয় তার নতুন অধ্যায় ।
আমার পরিচিত একজনের কথা বলব ।তিনি H.S.C. পরীক্ষার পর বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বন্ধুর বোন কে পছন্দ করেন। তখন থেকে ইসলামি আকিদায় বিশ্বাসি ছিল বলে কাউকে নিজের পছন্দের কথা বলেন নাই। মনের বীজ তলায় ভালবাসার বীজ রোপন করে অংকুরোদগম হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। কারন উনি যাকে পছন্দ করতেন তিনি তখন ৮ বছরের কুমারী আর ক্লাস ফোর এপড়ে। তাই এখানেও ওনাকে ভালবাসার চরম এক ধৈর্যেরর পরীক্ষা দিতে হয় ।তিনি অনেক ধৈর্যশীল হওয়াতে এর মাঝে চিঠি ,টেলিফোন, মেসেজ তো দূরে থাক মেয়েটিকে দেখার চিন্তাও মাথায় আনেন নাই। কারন তিনি ছিলেন ইসলামী আদর্শে লালিত পালিত একজন মুসলিম।
অবুঝ মন কি আর বারন শুনে ?
অবশ্য মেয়েটি CLASS SIX এ পড়ার সময় ছোট একটা চিরকুটু মেয়ের ভাই/উনার বন্ধুর হাতে পাঠিয়েছিলেন । দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল শুধু এতিম মেয়ে মা ছাড়া নানার বাড়িতে থেকে বড় হওয়ার মাঝে যেন ইসলামের আদর্শে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য দুনিয়াবী ও আখিরাত মুখী পড়ালেখা করে যান। অনেক দুর থেকে মেয়েটির প্রতি তীক্ষন দৃষ্টি রাখতেন সব সময় । অষ্টম শ্রেনীতে ঐ মেয়েটি স্কলারশীপ পরীক্ষা দেওয়ার পর খরব পেলেন বাবা হারা মেয়েটির দায়িত্ব আর কেউ না নেওয়াতে বিয়ে হয়ে যাবে । এর মাঝে বন্ধু শীপের CAPTAIN হিসাবে দেশের বাহিরে ছিল ।মেয়েটি CLASS EIGHT পাস করার পর বন্ধু দেশে আসে ।এরপর ওনাকে অনেক অসাধ্য সাধন করার মত কষ্ট ও ধর্য ধরে বন্ধুকে রাজি করাতে হয়।
কারন আমাদের সমাজে বেকার যুবকের কাছে মেয়ে বিবাহ দিতে অনেকে চান না। তাই বন্ধু বেকার ছেলের কাছে নিজের এতিম আদরের বোনটিকে দিতে রাজি ছিল না। কিনতু ছেলেটির ঈমানের জোর ছিল অনেক বেশি।আর এটাই ছিল ওনার মূল্যবান সম্পদ ।মেয়ের মায়ের এই ভাল দিকটা নজরে পড়েছিল ।তিনি ছোট বেলায় বাবা হারা মেয়েটির জন্য এই তাকওয়াবান বেকার ছেলেটিকে বেছে নিলেন । মানুষ সুন্দর পছন্দের জন্য ও যে কত দোয়া পায় তা আমি আগে জানতাম না। ঐ বেকার ছেলেটি অনেক ছড়াই উৎ রাই পার হয়ে এখন শ্বশুর হয়েও মেয়েটির মৃত মায়ের জন্য প্রতি ওয়াক্ত নামাজে দোয়া করতে ভুলেন না।
মেয়ের পরিবারের কাছে ওনার চাওয়ার বা পাওয়ার কিছুই ছিল না । শুধু অনার আকাংখিত বুক ভরা ভালবাসা নিয়ে তিনি বিয়ের আসরে হাজির হন । আর যার কাছে এই অমূল্য ধন থাকে তার কি আর পকেট ভরা টাকা লাগে ।বিয়ের পূবে একবার মেয়ে দেখারও চিন্তা মাথায় আনেন নাই। কারন হিসাবে তিনি পরে ওনার গল্পের ছলে বলেছেন হৃদয়ে ফ্রেমে ভালবাসার জিনিসের ছবি আকাঁ থাকলে তা নাকি আর বার বার বাহিরের চোখ দিয়ে দেখতে হয় না । বেচারা !ভাল মানুষ আর কাকে বলে ? মেহমানের ঝামেলা থাকায় তিন দিন পরে ভাসর ঘরে গেলেন তাতেও কোনো আপত্তি ছিল না ।কারন ফুলের মত পবিত্র যার ভালবাসা সে শুধু ত্যাগেই পান পরম আনন্দ আর শান্তি । শান্ত বা ধৈর্যের পরীক্ষা দিতেই ওনার আনন্দ ।
বিবাহের মাধ্যমে ওনার দীর্ঘ ৫ বছরের তিলে তিলে করে জমানো ভালবাসার চারা গাছটি লালিত পালিত ফুলের কলি দেখা দিল ।সেই কলি টিকে তিনি অতি যত্নে ওনার হৃদয়ের বাগানে আন্তরিক উষ্ণতা আর আক্লান্ত পরিচর্যা দিয়ে শতদলে বিকশিত করতে থাকে । তিনি মেয়েটির CLASS EIGHT পাস করার পর বিয়ে করলেও তাকে উচচ শিক্ষায় শিক্ষিত করার চিন্তায় ছিল ওনার মনে। তাই তিনি বিয়ের পঞ্চম দিনে মেয়েটির নবম শ্রেনীর উচচতর গনিত নিয়ে ৭৫ টা অঙ্ক করালেন। পড়ার বেঘাত হবে এমন কিছু কখনও করতে চাইতেন না ।উনি নিজেই তখন ঢাকা উইনিভার্সিটির মাস্টার্স এর ছাএ । টিউসনির টাকা দিয়ে নিজের খরচ ও বউয়ের খরচ সহ সংসার চালাতেন ।
পরিবারের ভাইবোন দের পড়ার প্রতিও ছিলেন অনেক সচেতন ।তাই ঢাকা একটা বাসা নিয়ে ওনার সংসার জীবন শুরু করেন । এর মাঝে ওনার wifer S.S.C পরীক্ষা শেষ ।তাই যৌথ সংসারে আদরের ছোট্ট বউটাকে আনতে ভুল করেন নাই।সবাই কে নিয়ে সংসার শুরু করলেও ওনার তখনও ছাএ জীবন শেষ হয় নাই । ওনার আল্লাহর উপর বিশ্বাস ছিল অনেক বেশী। তাই হতাশ হন নাই বা ভয়ও পান নাই।
এরই মাঝে ওনাদের জান্নাতি সুখের সংসারে ভালবাসার সেতুবন্ধনে কোল জুরে আসে এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান । পকেটে টাকা না থাকলেও বাবা হওয়ার আনন্দে তিনি আত্নহারা । বউয়ের বয়স কম তাই বাচ্চা পালার দায়িত্ব বেশী সময় নিজেই পালন করতেন ।পরপর তিন সন্তানের বাবা হন ।তাতে তিনি বিন্দু পরিমান বিরক্ত হলেন না। মনে হল ওনার দায়িত্বের পরিমান শুধু বেড়েছে। রাতে তিনি বাচ্চাদের নাসিং করতেন ।যদি কখন ওনার বউ বলতেন ‘এবার তুমি ঘুমাও আমি ওদের দেখব তিনি বলতেন না তোমার রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে’ । আমি জানি না আল্লাহ ওনাকে উত্তম পুরস্কার কি দিবেন ?
একবারের কথা শুনবেন । ওনার বউ ছোট হওয়ার কারনে ভাত উপুড় করার জন্য নামানোর সময় ভাতের পাতিলের ভিতর ডুকে যায় ।কারন যৌথ সংসারের পাতিল গুলো অনেক বড় বড় হয় ।তখন তৃতীয় বাচ্চাটা একমাস বয়সের । তিনি ঢাকা মেডিকেলে একদিকে আদরের বউয়ের সেবা আবার তিনটা বাচ্চার দেখা শুনা একাই করেছেন । গভীর রাতে বউকে খাওয়ায়ে ঘুম পাড়ায়ে আবার বাচ্চাদের কাছে চলে যেতেন।আবার কাক ডাকা ভোরে বউয়ের কাছে হাজির হতেন। আল্লাহ্ ভাল মানুষ রেখেছেন বলে পৃথিবীটা এখনও সুন্দর লাগছে ।
আরও মজার কথা শুনবেন ।বউ বর্ষা কালে স্কুলে যাওয়ার সময় ভিজে গেছে মনে করে শুকনা জামা কাপড় নিয়ে স্কুলেই হাজির হতেন। ভিজা গুলা নিয়ে বাড়ি পিরে আসতেন । প্লিজ হাসবেন না । আরেক বার বাচ্ছা প্রসব হওয়াতে মা ফল খেলে বাচ্ছার ক্ষতি হবে বলে উনাকে একা বউ রেখে গাছের পাকা কাথাল খেতে হয়েছে অনেক কষ্ট করে । সবাইকে বুঝায়ে বলেও লাভ হয় নাই তাই তিনি অনেক রাতে বউকে কাঠাল খাওয়ানোর জন্য ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে গাছে উঠে কাঠালের কোষা নিয়ে হাজির হলেন বউয়ের সামনে এবং নিজ হাতে খাওয়ালেন । পায়ে কাদা লাগবে বউয়ের তাই পুকুর পাড় থেকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে আসতেন । আল্লাহ ওনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক ।
প্লিজ কেউ হাসবেন না, ঐ মেয়েটির যখন বিয়ে হয় তখনো মেয়েটি হাতের বুড়ো আঙ্গুল চুষতে চুষতে ঘুমাতে । প্রথম কয় দিনেই তা উনার চোখে ধরা পড়ে । তারপরে উনার সামনে লজ্জায় চটপট করতাম ঘুম আসত না । নিজেই হাতটা তুলে এনে আঙ্গুল টা মুখে দিয়ে দিতেন । প্রথম ছেলে হবার পরেও একই অভ্যাস থেকে যায় । তখন উনার কাজ ছিল মা ছেলের মুখে আঙ্গুল টা তুলে দিয়ে রাতে ঘুম পাড়ানো । এখনো উনার স্ত্রী উনার কাছে ছোট।
ওনার শখ হল বউকে উচচ শিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন । আল্লাহ ওনার মনের আসা পুরন করলেন । তাই ৩ ছেলে নিজে রাখতেন আর বউকে পরীক্ষার সময় নিজে এনে রোকেয়া হলের গেতে দিয়ে যেতেন । ২০/২৫ দিন থাকলেও কোনো মানা ছিল না । অন্য দশ টা ছেলে যেমন তাদের প্রেমিকার জন্য মেইন গেটের বাহিরে রোধে দাড়ায়ে অপেক্ষা করত তিনিও তেমনি খাওয়া নিয়ে অপেক্ষা করতেন বউয়ের জন্য । পরীক্ষার হলে দিয়ে আসা আবার শেষ হবার আগে দূরে বটতলায় দাঁড়িয়ে থাকা সবই উনি করেছেন উত্তম বন্ধুর মত ।
বউয়ের একেকটা অপারেশনের সময় বাচ্চার মতো কানতেন আর পেরেশান হয়ে যেতেন । বউয়ের বাবার বাড়ি থেকে কিছু পায় নাই বলে কোনো দিন বউকে কিছুই বলে ছোট করেন নাই ।এখনও বুড়া বয়সেও ওনার বউয়ের প্রতি দায়িত্ব পালনে কোনো কমতি হয় নাই । কোনো দিন পরিবারের অন্যদের কাছে নিজের বউকে ছোট করতেন না ।ছেলে দের কাছে মায়ের মর্যাদা রাখতেন অনেক উপরে ।
বিয়ের পরপরই বউকে ইসলামি আনন্দলনের দাওয়াত দেন। কোরআন হাদিসের জ্ঞান অর্জনে সহযোগীতা করেন ।আবার এই পথের পথিকদের সাথে চলতে সহযোগীতা করেন।ইসলামী জ্ঞান অ র্জনের মাহফিলে ওনার বউ কে পাঠায়ে দিতেন আর বাচ্চা গুলো নিজে রাখতেন ।বউয়ের শরয়ী পদার ব্যাপারে ছিলেন অনেক সচতেন। আজও আছেন আলহামদুলিল্লাহ ।
মায়ের কাছে ছেলে প্রিয় ,বোনের কাছে ভাই প্রিয় হওয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু বউয়ের চাওয়া পাওয়া শেষ করে বউএর কাছে স্বামী প্রিয় হয় অনেক দেরীতে ।তাই ইসলামের নিয়ম যে তার স্ত্রীর এর কাছে ভাল সে এক মাত্র উত্তম বা আদর্শ পুরুষ বা স্বামী ।উপরের আলোচনা থেকে ামি যা বুঝলাম সেই অনুসারে এই গল্পের নাম দিয়েছি একজন আদর্শ স্বামীর গল্প ।
এই গলপ লেখার পিছনে আমার উদ্দেশ্য ছিল যে এর থেকে আমাদের বর্তমান ছেলেরা ,ভাইরা ও অনেক কিছু শিক্ষা পাবে । আমাদের অনেক বোনেরা স্বামীর অনাদর ,অবহেলা ,কথার আঘাত থেকে রেহাই পাবে । হয়তবা যৌতকের স্বীকার হবে না অনেকে ।হাতের টকটকে লাল মেহেদী না শুকাতেই জীবন দিতে হবে না কোনো নববধু কে ।বাচ্চা , সংসার সব সামলানোর পরও দেখতে হয় আনাকাংখিত স্বামীর কাল বৈশাখী মেঘের মতো কালো মুখ আর নিরেট পাথরের মত একটা কঠিন অন্তর ।যা জাহান্নামের আযাবের চেয়েও বড় যন্তনা ধায়ক মনে হয় একটা মেয়ের জীবনে । যদি স্বামী সারাদিন খাওয়া না যোগাতে পারে বা ছিড়া কাপড় পরতে হয় , না হলে তার পরিবারের অন্য দের থেকে গালমন্দ শুনতে হয় তাতেও কোনো দুঃখ নেই যদি স্বামীর মুখে থাকে এক ফালি চাঁদের হাসি ।
আল্লাহ আমার লেখার উদ্দেশ্য সফল করে মুসলিম ভাইবোন দের দাম্পত্ত্য জীবনে এনে দিক জান্নাতের অনাবিল শান্তির বন্যা । আর বয়ে হৃদয়ে শান্তির দক্ষিনা বাতাস ।আমার জীবনের প্রথম লিখা আর এই ক্ষুদ্র চেষ্টার ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে আল্লাহ কবুল করে নিক। আমাদের স্বামী সন্তান দেরকে নয়ন জুড়ানো আর মুত্তাকিন্দের ইমাম বানিয়ে আমাদের অন্তর শিতোল করে দিক । আমিন সুম্মা আমিন ইয়া রাহমানুর রাহিম ।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন