একজন মুসলমানের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের ফলে ভয়ানক এক যুদ্ধের আশঙ্কা কেটে গেল।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৫ আগস্ট, ২০১৩, ১২:০০:৪৩ রাত
দুরন্ত সাহসী এক সাহাবী। অত্যন্ত মেধাবী ও অসাধারণ জ্ঞানী ছিলেন তিনি। তবে স্বভাবে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও উদার। তিনি অতি সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন। তাঁর জীবন চলায় বাহুল্য বলতে কিছু ছিল না। জাঁকজমক ও চাকচিক্য তিনি মোটেও পছন্দ করতেন না। কোন রকমে চলতে পারলেই তিনি খুশি হতেন।নাম হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল।
হযরত মুয়াজের (রাঃ) বুদ্ধিমত্তা পরিচয় ও
একদিনের এক ঘটনা।
শাম দেশের ফাহলে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলো। খ্রিস্টান রোমনরা ছিল মুসলমানদের প্রতিপক্ষ। তারা মুসলিম বাহিনীর রণ-প্রস্তুতির কথা শুনে ঘাবড়ে গেল। রোমানরা ভাবল মুসলমানদের সাথে এখনই যুদ্ধ করা সমীচীন হবে না। তাই রোমান সেনাপতি সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এলো।
মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি হযরত আবু উবাইদা (রাঃ)। অত্যন্ত দক্ষ ও কুশলী সেনাপতি তিনি। সুনিপুণ যুদ্ধবিশারদ হিসেবে আবু উবাইদার নাম সর্বত্র আলোচিত হতো। আর হযরত মুয়াজ? তিনিও একজন দক্ষ সৈনিক ও পারদর্শী কূটনীতি হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। জ্ঞান, বুদ্ধি ও পরিকল্পনা রচনায় তিনি ছিলেন অনন্য।
তাই সেনাপতি উবাইদা রোমানদের সাথে আলোচনার জন্য হযরত মুয়াজের নাম ঠিক করলেন। সন্ধি স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে কারোর পক্ষে সমাধা করা সম্ভব নয়। তার জন্য চাই জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ কূটনীতিক। এ কাজে হযরত মুয়াজ ছাড়া বিকল্প নেই। সিদ্ধান্ত মুতাবিক মুয়াজ ইবনে জাবাল সময়মত রোমান সেনাছাউনিতে গিয়ে হাজির হলেন। দুঃসাহসী মুয়াজ বীরদর্পে ছাউনিতে পা রেখেই অবাক হলেন। তাঁবুটি রোমানরা অত্যন্ত জাঁকজমক ও চাকচিক্যময় করে সাজিয়েছে। তাঁবুতে বিছানো হয়েছে সোনালি কারুকাজ করা গালিচা। দেখে মনে হলো, এটা যেন এক বাদশাহী বালাখানা।
একজন পদস্থ রোমান সৈনিক তাঁবুর গেটে হযরত মুয়াজকে সম্ভাষণ জানাল। তারপর রীতি অনুযায়ী তাঁকে তাঁবুর ভেতর নিয়ে গেল। একটি অনিন্দ্য সুন্দর আসনে নিয়ে মুসলিম দূতকে বসানো হলো। এসব বিলাসী আয়োজন হযরত মুয়াজের মোটেও পছন্দ হলো না। তাই তিনি খানিকটা বিরক্ত হলেন। আর তিনি বললেন,
: দেখুন ভাই, আমি এসব রাজকীয় ব্যবস্থা পছন্দ করি না। কারণ, দরিদ্র মানুষকে শোষণ ও বঞ্চিত করে এসব দামি আসন বানানো হয়েছে।
একথা বলেই হযরত মুয়াজ (রাঃ) মাটির ওপর বসে পড়লেন। মুয়াজের অবস্থা দেখে খ্রিস্টানরা তো হতবাক। তারা বলল,
: আপনি একজন মহান ব্যক্তি, দেশের নামিদামি লোক। চারিদিকে আপনার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আপনাকে সবাই যথেষ্ট সম্মান করে। আর আমরাও আপনাকে অসম্ভব সম্মান করি। তাই সম্মানজনক স্থানেই আমরা আপনাকে বসাতে চাই। অথচ আপনি তা পরিহার করলেন?
খ্রিস্টান সৈন্যের কথা শুনে মুয়াজ (রাঃ) মুচকি হাসলেন। তারপর তিনি বললেন,
: শোন সেনারা! তোমরা আমাকে অনেক বড় বলে জানলেও আমি কিন্তু মোটেও তা নই। আমি অতি সাধারণ ও নগণ্য মানুষ মাত্র। অত সম্মান ও চাকচিক্য আমার প্রয়োজন নেই। আর তাই মাটিতে বসতেও আমার অসুবিধা নেই।
হযরত মুয়াজের কথা শুনে খ্রিস্টানরা আরেকবার বিস্মিত হলো। তারা বলল,
: কী অবাক কথা বলেছেন আপনি! আপনি তো অনেক বড় মাপের মানুষ। আপনি মোটেও সাধারণ নন। তাই মাটিতে বসা আপনাকে মানায় না। মাটিতে তো বসবে দাসেরা।
খ্রিস্টানদের কথায় মুয়াজ আরেকবার হাসলেন। তিনি মনে মনে বললেন, তোমরা জান না, এ মুয়াজই আল্লাহর দাস। আর এ দাসের কোনো বিলাসিতা নেই। এবার হযরত মুয়াজ দৃঢ়ভাবে বললেন,
: হ্যাঁ ভাই, তোমরা ঠিকই বলেছ। মাটিতে বসা দাস শ্রেণীর লোকদেরই কাজ। সমাজে ওরা ছোট, তাই ওরা মাটিতে বসে। আমিও যে খুবই নগণ্য আল্লাহর এক দাস। তাই মাটিতে বসতে পারায় আমি ধন্য হয়েছি।
মুয়াজের মুখে নিজেদের দাস বলে স্বীকৃতি দেয়ায় খ্রিস্টানরা হতবাক হলো। তাই তারা অবাক বিস্ময়ে হযরত মুয়াজের মুখের দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইল। তাদের বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটে না। মুয়াজের প্রতি তাদের কৌতূহল আরো বেড়ে গেল।
: আপনার চেয়েও বড় ও মর্যাদাবান ব্যক্তি কী আপনাদের মধ্যে আরো কেউ আছে? - জিজ্ঞেস করল খ্রিস্টানদের একজন।
: কী বলছ তোমরা? আমি মর্যাদাবান? কে বলল তোমাদের? -বিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন মুয়াজ।
: মুসলমানদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আমার মতো অধম আর কেউ নেই। হযরত মুয়াজ আবারো জানালেন।
এবার খ্রিস্টানদের বিস্ময় আরো একবার বেড়ে গেল। হযরত মুয়াজের কথাবার্তা শুনে তারা বেশ ভাবনায় পড়ে গেল। মুসলমানদের শক্তি ও সামর্থ নিয়ে তারা চিন্তিত হলো। মুসলমানদের আচরণ, ঐতিহ্য ও উদারতা তাদের মনকে নাড়া দিলো। তারা আরো ভাবনায় পড়ল মুসলমানদের সাহস ও বীরত্ব নিয়ে। ফলে রোমানদের মনে ভয়ের উদ্রেক হলো। তারা ভাবল, মুয়াজ যদি একজন সাধারণ মানুষ হন, তাহলে মুসলমানদের না জানি আরো কত অসাধারণ মানুষ আছেন! এমন অসাধারণ ও খোদাভীরু মুসলিম বাহিনীর সাথে লড়াই মানে সাক্ষাৎ মৃত্যু। এদের সাথে যুদ্ধে জয়লাভের চিন্তা করাও বোকামী। তাই রোমানরা হযরত মুয়াজের সাথে সন্ধি স্থাপন করাকেই শ্রেয় বলে মনে করল। ফলে ভয়ানক যুদ্ধের আশঙ্কা কেটে গেল।
হযরত মুয়াজের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের কাছে হেরে গেল রোমান খ্রিস্টানরা।
এখন কোথায় পাব সেই মুসলমান ?
হে প্রভু তুমি রাসুল দিবে না জানি কিন্তু তোমার রহমত পাবার জন্য হেরাগুহায় ধ্যান করার মত ধৈর্য আর রাসুল সাঃ এর আদর্শ গ্রহন করার মত ঈমানী শক্তি দাও। সাহাবাদের মত তাকয়াবান শাসক দাও যারা এই জাহিলয়াত যুগের বদলোতে সোনালী যুগ উপহার দিবে আমাদের কে ? তার সাথে সাথে আমাদের ঈমানী এলেমী আমোলি যোগ্যতা বাড়িয়ে দাও।আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২৬৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন