মনির ইন্টারনেট জগতে আসার উদ্দেশ্য
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১২ আগস্ট, ২০১৩, ১০:২৮:৪৬ সকাল
মনির ইন্টারনেট জগতে আসার উদ্দেশ্যঃ আল্লাহর দেওয়া আমানত সন্তানদের নিয়ে মনি সব সময় মনের মাঝে স্বপ্নের জাল বুনত । তাদের কে কিভাবে সুশিক্ষা আর স্বশিক্ষা দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানে সদগায়ে জারিয়া হিসাবে রেখে যেতে পারবেন ।যা হয়ত দুনিয়ার সব মা ভাবেন । সন্তান রা যতই বড় হচ্ছিল ততই মনির জীবনের পরিধি বেড়েযাচ্ছিল । বাচ্ছাদের মানুষের মত মানুষ করার জন্য জীবন যুদ্ধের সঙ্গী হিসাবে প্রবাসী স্বামীকে কাছে পাওয়ার জন্য মনির মনটা ব্যাকুল হয়ে ঊঠল । সবার জীবনেই উপড়ে উঠার সিঁড়ির পাশে রেলিং দরকার হয় । না হলে সাইডে পড়ে যাওয়ার আতংকে থাকতে হয় । তদ্রুপ একজন স্বামীও একজন স্ত্রীর নিকট সর্বচেষ্ট বন্ধু হিসাবে পাশে থাকতে হয় । একজন স্বামী একজন স্ত্রীর নিকট কত যে আপন তা প্রবাসী স্বামীর স্ত্রী ছাড়া আর অন্য কেউই বুঝবে না ।
যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে মনির হাতের মুঠে ধরে রাখা সন্তানরা একদিন বায়না ধরল তাদের কম্পিউটার কিনে দিতে । তাদের বাবা তাদের কে খুব বেশি ভালবাসেন তাই সাতপাঁচ না ভেবে অনেক কিছুতে সহজেই রাজি হয়ে যান । মনি হল তার উলটা । মনি চিন্তা করে জীবনের মান উন্নয়নের জন্য দুনিয়াতে অনেক কিছুর প্রয়োজন আছে তা ঠিক আছে । কিন্তু তাই জীবনের মানটা উপরে তোলার জন্য লিফটে না উঠে সিঁড়িতে একদাপ একদাপ দিয়ে হারাম হালাল বেছে চলে আস্তে আস্তে উঠা অনেক নিরাপধ । আর তাতে আল্লাহর রহমত থাকে বলে ধুপধুপ করে নীচে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। তাই পারিবারিক বৈঠকে মনিকে স্বামী আর সন্তানদের অনেক কথা শুনতে হয় যেমন “ তোমার জন্য অনেক জায়গায় স্টেটাস অনুযায়ি চলা যায় না। গাড়ি কিনতে চাইলাম তখন বল আস্তে আস্তে উপরে উঠ না হলে হঠাৎ পড়ে গেলে ব্যাথা পাবে আবার বল গাড়ি রাখা আর হাতি পালা একসমান । এ সি কিনতে চাইলাম তখন বল এর সুফল আর কুফল আছে অনেক । আবার বল ,বাচ্ছা দের কষ্ট করতে শিখাও আর দুনিয়াবি ভোগ বিলাসের পিছনে জাহান্নাম আর দুঃখ কষ্টের আড়ালে জান্নাত তাই জান্নাতেই এ সি পাবা ইনশাল্লাহ” ।
সন্তানরা অনার্স এ পড়ছে তাই তাদের পড়া লিখার সুবিধার কথা চিন্তা করে মনি কম্পিউটার কিনে দিল। কখন কিভাবে তা ব্যবহার করছে তা মনিটরিং করছে মনি নিজেই । সন্তানরা একসময় মনির জানার আগ্রহ দেখে কম্পিউটার ব্যবহার করার নিয়ম শিখিয়ে দেয় । বিজ্ঞানের এই জয়যাত্রার ফলে মনি তার হৃদয়ে লুকিয়ে রাখা হিরা মানিক মুক্তার চেয়েও মুল্যবান একজোড়া বিদেশে থাকা সন্তানদের সাথে কথা বলা ও খবর নেওয়ার সুবিধা হয়ে যাওয়াতে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করল ।আর এই ভাবে এক সময় মনি নেট জগতে ফেসবুকে ডুকে যান ।
ফেসবুকের নামটা কখনো শুনে নাই সে । স্বামীর যৌথ সংসার , ছোট ছোট বাচ্ছা আর হৃদয় কেড়ে নেওয়ার মত কিছু প্রান প্রিয় দ্বীনি বোন নিয়েই ছিল মনির জীবনের পরিধি । পরিধির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আর ব্যাস ছিল আল্লাহর রাসুল সাঃ । অল্পতে তুষ্ট মনি আলহামদুলিল্লাহ তাতে অনেক সুখি ছিল । কারন সে নীচের দিকে তাকায়ে দেখতে পেত তার চেয়ে কষ্টে অনেক মেয়েরা জীবন কাটাচ্ছে হাসি মুখে । উপরে তাকায়ে দেখতে পেত অনেক দ্বীনি বোন রা তার চেয়ে বেশি আমল করে জান্নাতের দিকে দৌড়ে চলে যাচ্ছে ।
Yahoo তে আইডি খোলার মাধ্যমে সে হাজার মাইল দূরে থাকা ছেলেদের সাথে ঘরে বসে কথা বলতে পারছে এবং তাদের চেহারাও দেখতে পারছে । কিছুক্ষনের জন্য হলেও মায়ের তৃষ্ণার্থ হৃদয় শান্তি খুজে পাচ্ছে । মনির হৃদয়ের ভালবাসা আর সীমিত গণ্ডির মাঝে বন্দি রইল না । তা ছড়িয়ে পড়ল সদ্য ফোটা ফুলের ঘ্রানের মত দেশি বিদেশি থাকা অনেক ইসলাম প্রিয় ছেলে মেয়ে ভাই বোনদের হৃদয়ের আঙ্গিনায় । যারা অনেকেই মনির ছেলেদের বয়সের । কিন্তু এখানে এসে দেখতে পান এমন অনেক ভাই বোন ছেলে মেয়ে দের যারা ইমানী আমলী দিক থেকে অনেক তাকওয়াবান । যাদের হৃদয়ে আছে সাগরের চেয়েও গভীর মায়া মমতা ভালবাসা আর অন্তর হল পদ্ম পাতার চেয়েও কোমল । চরিত্র হল ফুলের পাপড়ির চেয়েও পবিত্র। যাদের মাঝে ইসলামি জ্ঞান আছে প্রশান্ত মহাসাগর থেকেও বিস্তৃত । আর ওনাদের থেকে জানার বা শিখার আছে অনেক কিছু ।
নতুন নতুন অনেক কিছু দেখে মনি অবাক হয়ে ভাবতে থাকে আর বার বার বলতে থাকে সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবার । সে এই কোন বিস্ময় করা অচেনা অজানা জগতে প্রবেশ করল । এই তথ্যজগতটি ঈমান আখলাক এমন কী বিবেক-বুদ্ধি পরীক্ষা করার একটি বিশাল মিলন মেলা । যার পরিনতি শুভ আর কল্যাণকরও হতে পারে আবার হতে পারে অশুভ-অকল্যাণকর। এখানে যে কেউই তার মনকে ইচ্ছা করলে লাগাম ছাড়া ঘুড়ির মত নির্বোধ ভাবে ছেড়ে দিতে পারে, এতে সে পৃথিবীর যেখানে ইচ্ছা সেখানেই উড়ে উড়ে ঘুরতে পারে, সে তার হাত দিয়ে যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারে। তাকে বাধা দেবার কেউ নেই, তাকে ধমক দেওয়ারও কেউ নেই, না আছে কেউ থামিয়ে দেয়ার। আকাশের নীল দিগন্তে যেমন হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা তেমনি এখানেও নেই মানা । যার যেমন ইচ্ছা , রুচি অভিব্যক্তি তেমনি ভাবে সে তার ভাব প্রকাশ করতে পারে ।
তবে যার আল্লাহর ভয় বা বিশ্বাস থাকে যে, তাকে আর কেউই না দেখুক , সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেখছেন তাই আমি যা কিছু করি না কেন এর পরিণাম আমাকেই ভোগ করতে হবে ।তা হলে অনেক খারাপ দিক থেকে আমরা রক্ষা পাব । আর যদি নিজের মন কে লাগাম ছাড়া ঘুড়ির মত ছেড়ে দেই তা হলে তা অন্যের মনের আকাশের ঘুড়ির সাথে প্যাচ খেয়ে যাবে ।আর সয়তান এসে সেই ঘুড়ির নাঠাই ঘুরাতে থাকবে । এর ফলে অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হল অপদস্ততা, শালীনতার মৃত্যু, নিকৃষ্টতা ও পঙ্কিলতায় নিজেই ডুবে যেতে হবে ।
যদিও অনেকে মনে করেন এই জগতটা যুবক যুবতী ছেলে মেয়েদের জন্য । এখানে মনির মত বয়সের মানুষদের আসার কথা নয় । কিন্তু আমার মনে হয় ,স্কুল কলেজ বা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ থেকে ছাত্রছাত্রীদের যখন শিক্ষা সফরে নেওয়া হয় তখন তাদের কে সঠিক ভাবে গাইড করার জন্য দুই /চার জন শিক্ষক সাথে দেওয়া হয় । কারন তারা যেন ভুল পথে গিয়ে কোন দুর্ঘটনা না ঘটাতে পারে । তাই মনি যখন প্রথম ফেসবুকে আসে তখন তার প্রবাসী ছেলে দুঃখের সাথে বলল “আম্মু তোমার জন্য দেশেও শান্তি মতে কিছু করতে পারি নাই । বিদেশে এসে একটু অবসর সময় নেটে কিছু করতে চাইলে এখনও তোমার চোখের দৃষ্টির আড়ালে গিয়ে কিছু করতে পারি না। তুমি এখানেও চলে এসেছ ? কে তোমাকে এই জগতে আনল ?”।
মনি যখন প্রথম এই জগতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করল। তখন তার মেঝে ছেলে বলল," আম্মু এইটা খুব খারাপ জগত ।পারবেন না এদের মাঝে টিকে থাকতে।"তখন সে উত্তরে বলেছিল, ইসলামের কাজ তো খারাপের মাঝে আলো ছড়ানো। তা হলে এই খানেই সেই কাজটা করলে কেমন হয় ।ছেলে বলল ,"আম্মু এখানে যারা ইসলামের কাজ করেন ওনারা অনেক ইসলামের জ্ঞানার্জন করে আসেন।"এই কথা শুনে মনি তো মহা খুশী কারন তা হলে তো ওনাদের থেকে ইসলামের অনেক কিছু জানা ও মানা যাবে।সত্যি তাই হয়েছে মনির বেলায়। জানতে পেরেছেন অনেক কিছু আবার তা অন্যদের মাঝে পৌছে দিতে চেষ্টা করেছেন ।কারন হাদিসে আছে "তোমার কাছে একটি সত্য থাকলেও তা অন্যের কাছে পৌছে দাও"। সেই হিসাবে এখানে অল্প সময়ের মধ্যে দাওয়াতি কাজ চলে খুব সুন্দর ভাবে ।
আমিও মনির সাথে একমত । সত্যি হাজার কাজের মাঝে ক্লান্ত অবসন্ন দেহটা বিছানায় না ফেলে পিসির সামনের চেয়ারে ফেলে একটু হোম টাইয় ফ্রেন্ডদের পোস্ট করা কোরান হাদিসের বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ইমেজ পোস্ট পড়লে দেখলে নিমিশেই মনটা আলহামদুলিল্লাহ ভাল হয়ে যায় ।আবার নতুন করে কাজের শক্তি ও অনুপ্রেরনা চলে আসে। অনেকটা ব্যাটারীতে চার্জ হয়ার মত। আমি এই জগত থেকে অনেক ইসলামের জ্ঞানার্জন করার মত মাধ্যম ও ফ্রেন্ড খুজে পেয়েছি ।তাই এটাকে আমার কাছে জ্ঞানার্জনের ইউনিভার্সিটি মনে হয়। তাই এই খানে পাওয়া মার্কসিট আল্লাহ আখিরাতের জন্য কবুল করে নিক ।
আমাদের সবার চেষ্টার বিনিময়ে নেটলাইন্টা পাপমুক্ত দুনিয়া ও াখিরাতের একটা উমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে কবুল করে নিক।
আমিন ।
আমিন ।
বিষয়: বিবিধ
২৯৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন