গনেশ উল্টে গেল ওগনেশ পাল্টে গেল ! গনেশ উল্টে গেল ওগনেশ পাল্টে গেল !! গনেশ উল্টে গেল ওগনেশ পাল্টে গেল !!!

লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ ৩০ মার্চ, ২০১৩, ০৪:০২:৩৭ বিকাল



হাইকোর্টের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে রুলিং দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদই এখন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদে বসে বিচারপতি মানিককে এবার হাইকোর্ট বিভাগ থেকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ দিলেন। আইনজীবীদের প্রশ্ন বিচারপতি মানিকের বিষয়ে অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের কোন পদক্ষেপটি সঠিক।

জাতীয় সংসদ ও স্পিকারকে নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের মন্তব্যের পর গত বছরের ১৮ জুন স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট সংসদে রুলিং দেন। রুলিংয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে সংসদ সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন তা কোনো বিবেকবান মানুষ উচ্চারণ করতে পারেন কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেছেন, আমার বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। আমার বক্তব্যের কোনটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে তা আমার বোধগম্য নয়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ উত্থাপনের আগে রাষ্ট্রদ্রোহিতা কি, কোন কাজ রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে, রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিষয়টি কে নির্ধারণ করতে পারেন এসব বিষয় গভীরভাবে চিন্তা করলে বিজ্ঞ বিচারপতি তার বিজ্ঞতার পরিচয় দিতেন।

রুলিংয়ে ওই বিচারপতিকে অপসারণে সংসদ সদস্যরা সুপ্রিম জুড়িশিয়াল কাউন্সিল গঠনে সংসদে প্রস্তাব গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর যে প্রস্তাব করেন স্পিকার তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, গত ৫ জুন (২০১২) সংসদ সদস্যরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশের এক পর্যায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনপূর্বক উক্ত বিচারপতিকে অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে একটি রেজ্যুলেশন গ্রহণ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রেরণের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। আপনাদের (সংসদ সদস্যদের) প্রস্তাবকে আমি সমর্থন করে বলতে চাই একজন বিচারকের অশোভন আচরণ রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ককে ব্যাহত করতে পারে না। আমরা ষোল কোটি জনগণের প্রতিনিধিরা একজন ব্যক্তিবিশেষের আচরণ দিয়ে পুরো বিচার বিভাগকে মূল্যায়ন করতে পারি না। আপনারা সবাই সিদ্ধান্ত নিলে আমার জন্য তা নরহফরহমং হয়ে যায়। সার্বিক বিবেচনায় যেহেতু এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না, তাই আমি অনুরোধ করব সংসদে আপনাদের উত্থাপিত প্রস্তাবটি আপনারা আমার সঙ্গে একমত হয়ে প্রত্যাহার করবেন। একই সঙ্গে বলব, আদালতের এ ধরনের আচরণে কি করণীয় থাকতে পারে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সে বিষয়টি ভেবে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তাতে আমাদের সমর্থন থাকবে। এর ফলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হয়তো সম্ভব হবে।

স্পিকার বলেন, আমার জ্ঞান, মেধা, যোগ্যতা ও আইনজীবী হিসেবে আমার সনদ নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। আমি প্রায়শই বলি—আমি কম লেখাপড়া জানা মানুষ। রাজনীতির পাশাপাশি আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘ ৩৭ বছর কাজ করেছি। সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য হিসেবে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেছি। সাবেক মাননীয় প্রধান বিচারপতি এমএম রুহুল আমিন, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বর্তমান প্রধান বিচারপতির আদালতে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বড় বড় বই হয়তো পড়িনি কিন্তু সাধারণ মানুষের মনের কথাটি বিগত ৫৪ বছর ধরে পড়ে আসছি। অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষের কাছ থেকেও আমি সারাজীবন অনেক কিছু শিখেছি। তাদের মনের কথাটি পড়তে পারি বলেই হয়তো তাদের মনে ঠাঁই পেয়েছি। সংসদ আমাকে সর্বসম্মতিক্রমে স্পিকার নির্বাচিত করেছেন। আমার জ্ঞান, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তা সংসদের সব সদস্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ ধরনের উক্তি করার আগে বিজ্ঞ বিচারক আরও গভীরভাবে চিন্তা করলে ভালো করতেন। বিজ্ঞ বিচারক আরও অনেক বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, যা আমি এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছি না।

উল্লেখ্য, গত ২৯ মে সড়কভবন নিয়ে কয়েকজন সদস্যের পয়েন্ট অব অর্ডারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার বলেন, সরকারও স্বৈরাচারী হয়ে গেলে জনগণ তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। তেমনি সংসদ যদি জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করে, তবে এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি জনগণ কোর্টের রায়ের ওপরে ক্ষুব্ধ হলে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে।

পরে ৫ জুন হাইকোর্টে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্পিকারের ওই বক্তব্যকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল’ বলে আখ্যা দেন। স্পিকারের বক্তব্য সম্পর্কে ওই আদালত আরও বলেন, স্পিকার আদালতের বিরুদ্ধে জনগণকে লেলিয়ে দিয়েছেন। সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দিয়েছেন। তার এই বক্তব্য আদালত অবমনানার শামিল। স্পিকার সংসদের দায়মুক্তির অপব্যবহার করেছেন। তার পদের মর্যাদার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ওই পদে থাকার অধিকার তার নেই। আদালত বলেন, স্পিকার তার অজ্ঞতা দেখিয়েছেন। একজন স্পিকার এত অজ্ঞ হতে পারেন তা আমরা ভাবতে পারি না।

এরপর ওই দিনই জাতীয় সংসদে বিচারপতির ওই বক্তব্যকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তিন দিনের মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করা না হলে সংসদে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতি অপসারণের বিধান পুনর্বহাল করবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন। সিনিয়র সদস্য তোফায়েল আহমেদ বিচারপতিকে ‘স্যাডিস্ট’ বলে অভিহিত করেন। জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’।

বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের বিরুদ্ধে দেয়া স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের ওই রুলিং জাতীয় সংসদ থেকে যথাযথ বিধিবিধান মেনে তাত্ক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের ইন্তেকালের পর স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গভবনের দ্বিতীয় কার্যদিবসে তিনি গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি মানিকসহ হাইকোর্টের চারজন বিচারপতিকে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেন।

এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে জাতীয় সংসদে মানসিক বিকারগ্রস্ত ও স্যাডিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। স্পিকার আবদুল হামিদও রুলিং দিয়ে বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেছেন। স্পিকার আবদুল হামিদ নিজেই এখন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হয়ে সেই বিচারপতিকে আপিল বিভাগে নিয়োগ দিলেন। এটা করে রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগকে কলঙ্কিতই করেননি, ধ্বংস করে দিয়েছেন।

সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর মানিকের স্থিতি ও মানসিক অবস্থা নিয়ে সব আইনজীবীর প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয় সংসদও তাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে চিহ্নিত করেছে। স্পিকার আবদুল হামিদই তার বিরুদ্ধে রুলিং দিলেন। সেই আবদুল হামিদই এখন মানসিক বিকারগ্রস্ত বিচারপতিকে আপিল বিভাগে নিয়োগ দিয়ে বিচার ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায়ের সৃষ্টি করলেন। বিচার বিভাগকে ধ্বংসের ক্ষেত্রে এটিই হচ্ছে শেষ পেরেক। যেটি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বিচারপতি মানিকের মাধ্যমে চূড়ান্ত করলেন।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীকে প্রায় ৫০ বিচারককে ডিঙিয়ে আপিল বিভাগে নিয়োগ দিয়ে বিচার বিভাগের ওপর কালিমা লেপন করা হয়েছে। যিনি বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে রুলিং দিলেন তিনিই এখন তাকে আপিল বিভাগে নিয়োগ দিয়ে বড় প্রশ্নের জন্ম দিলেন। এটি বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার।

বিষয়: রাজনীতি

১৫৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File