সারা দেশে পুলিশ ও আওয়ামীলীগ এর রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গনপ্রতিরোধ শুরু হয়ে গেছে !! যেখানেই রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস সেখানেই প্রতিরোধ !!! সালাম বীর জনতা সালাম !!!
লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ ৩০ মার্চ, ২০১৩, ১০:৫২:২০ সকাল
বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে হরতালের সময় সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি গ্রেফতারের নামে শিবগঞ্জের শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালনগর এলাকায় অভিযানে নামে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। তাদের সঙ্গে একজন ম্যাজিস্ট্রেটও ছিল। তারা গ্রামের নিরীহ কিছু লোককে আটকের চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাদের অবরুদ্ধে করে। অবরুদ্ধ থাকার একপর্যায়ে রাত ৩টার দিকে পুলিশ ও বিজিবি নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে রাতেই তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়।
নিহতরা হলেন উমরপুর গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে স্থানীয় স্বরূপনগর দাখিল মাদরাসার দশম শ্রেণীর ছাত্রশিবির কর্মী অলিউল্লাহ (১৭), শ্যামপুর গ্রামের ভদু আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম রবু (২৫) ও শ্যামপুর চামাবাজার এলাকার জিল্লুর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান (২৫)। নিহত মতিউর ও রবিউল পেশায় কৃষক বলে জনিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্য। এছাড়াও আরও অন্তত ৬০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যার জন্যই ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযানে নেমেছে। সহিংসতায় জড়িত ছিল না এমন ব্যক্তিদেরকেও আটকের চেষ্টা করে পুলিশ। ফলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাদের প্রতিরোধ করে।
এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খবর পেয়ে ভোরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে কানসার্টে নিয়ে যান। গতকাল সকাল ১১টার দিকে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা আবারও শ্যামপুরে অভিযানে নামে। অভিযানের আগেই একরকম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে এলাকা। গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল শ্যামপুর এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে পুলিশের নির্মমতার চিহ্ন। গ্রামের অনেক লোক কুড়িয়ে পাওয়া গুলির খোসা, গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি সাংবাদিকদের দেখান। নিহতদের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। নিহত মাদরাসা ছাত্র অলিউল্লার বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি করতে দেখা যায়। তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা কারও ছিল। উপস্থিত সবাই অলিউল্লার জন্য ফেলেছেন চোখের পানি। অলিউল্লার বাবা আবদুল হাকিম জানান, রাত আড়াইটার দিকে হঠাত্ গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে তার। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুলেটের শব্দে আশপাশের লোকজনের সঙ্গে সে ও তার ছেলে বাড়ির বাইরে বের হয়। সামনে এগুতেই একটি গুলি অলিউল্লার ডান চোয়ালে ঢুকে বাঁদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ছটফট করতে করতে ইন্তেকাল করেন অলিউল্লাহ। তাকে হাসপাতালেও নেয়ার সময় পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, নিহত ও আহত অধিকাংশই আতঙ্কে দৌড়াদড়ি করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একই অবস্থা বিরাজ করছে নিহত মতিউর ও রবিউলের বাড়িতে। রবিউলের বৃদ্ধ বাবা বদু আলী ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ। রবিউলের চাচাতো ভাই মনিরুজ্জামান মনির জানান, কেন তাদের গ্রামে পুলিশ গুলি ছুড়ল তা তারা জানেন না। তিনি বলেন, পুলিশের গুলির শব্দে এলাকাবাসীর ঘুম ভেঙেছে। ওই সময় পরিস্থিতি বোঝার জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়ামাত্র অনেকের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হন রবিউল।
নিহত অলিউল্লার চাচা স্থানীয় মাদরাসার সুপার আবদুল মালেক বলেন, পুলিশের সঙ্গে ওই অভিযানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররাও অংশ নেয়। তিনি বলেন, এমন বিভীষিকাময় রাত তারা জীবনে কখনও দেখেননি। গুলির সময় নারী-পুরুষের চিত্কার আর আহাজারিতে পুরো এলাকায় তখন ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আর বিদ্যুত্ না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী করে বলেন, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এলাকা পরিদর্শন করে যাওয়ার পরই পুলিশ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ঘটনার পর গতকাল সকাল থেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলের শত শত নেতাকর্মী রাস্তায় নামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর মহাসড়কের অন্তত ১৫টি পয়েন্টে গাছের গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খাম্বা ফেলে তারা সড়ক অবরোধ করে। এতে সকাল ৭টার পর থেকেই সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু এলাকায় ব্যারিকেড দেয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে। একই সময় শহরের সিসিডিবি মোড় এলাকায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে শহরের পাঠানপাড়া বিএনপি কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ১৮ দলের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে ১৮ দলীয় জোটের জেলা সমন্বয়কারী ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া অভিযোগ করেন, আসামি ধরার নামে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা শ্যামপুর গ্রামে গিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। শতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এর প্রতিবাদে আগামী রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে ১৮ দল। এছাড়া শনিবার বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি, গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির রফিকুল ইসলাম, জামায়াতের সাবেক এমপি লতিফুর রহমানসহ জোটের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন