"মামলার বাদী কি, তার কাজ কি, তাও আমি বুঝি না। আমি আওয়ামীলীগ নেতা ও পূজা কমিটির লোকজনের চাপের মুখে মামলার বাদী হতে বাধ্য হই" --বাদী কিশোর, ইহাকেই আওয়ামীলীগ বলা হয় !!!!
লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০৩:৩৪:২৭ দুপুর
ঘটনাটি ছিল খুবই সাধারণ। সরস্বতী পূজা উত্সবে নাচতে চেয়েছিল কয়েকজন কিশোর। কিন্তু তাতে বাধা দেয়ায় তারা ক্ষোভে-অভিমানে গোপনে একটি মূর্তি ভাংচুর করে। আর যায় কোথায়! মওকা পেয়ে যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা একে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে প্রচার শুরু করে। তাদের প্রচারণায় সুর মেলায় আওয়ামীপন্থী কয়েকটি গণমাধ্যমও। গ্রেফতার করা হয় ৬ কিশোরকে, যারা এবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী। অথচ কথিত ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৬ কিশোর দেড় মাস ধরে জেলহাজতে রয়েছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বেগমাবাদ গ্রামের রাতুল চক্রবর্তীর বাড়ির উঠানে আয়োজিত সরস্বতী পূজাকে ঘিরে ঘটে এ ঘটনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দাঙ্গায় উসকানিদাতা এবং শিশু-কিশোর নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলার মূল হোতা স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি তপন সাহা।
মামলার বাদী রাতুল ও তার পরিবারের কথা : বাদী রাতুল চক্রবর্তী এবার দেবীদ্বার এসএ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা। মামলা করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রাতুল বলে, ‘গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে কে বা কারা আমাদের বাড়ির উঠানে অস্থায়ী সরস্বতী পূজার মূর্তি ভাংচুর করে। মূর্তি ভাংচুরের ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে বহু লোক আমাদের বাড়িতে জড়ো হয়। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এবং পূজা কমিটির লোকজন সন্দেহভাজন মনিরুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। আওয়ামী লীগ নেতা ও পূজা কমিটির সভাপতি তপন সাহা আমাকে থানায় নিয়ে যান এবং মূর্তি ভাংচুরের ঘটনার মামলার বাদী হতে বলেন। তখন আমি মামলার বাদী হতে অপারগতা প্রকাশ করি; কারণ মামলার বাদী কি, তার কাজ কি—তাও আমি বুঝি না। আমি আওয়ামী লীগ নেতা ও পূজা কমিটির লোকজনের চাপের মুখে মামলার বাদী হতে বাধ্য হই।’
রাতুল বলে, ‘আমি এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মামলার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪ বার আদালতে যেতে হয়েছে। এতে করে আমার লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। তাছাড়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আদালতে দৌড়-ঝাঁপ করতে। এগুলো আমি চাই না। এগুলো রাজনৈতিক সহিংসতা নয়।’
রাতুলের আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা এবং মামলার ব্যাপারে কোনো ধারণা বা জ্ঞান না থাকার পরও তাকে কেন বাদী করা হলো জানতে চাইলে রাতুলের বাবা রতন চক্রবর্তী আমার দেশকে বলেন, ‘এসব ব্যাপার আমি বুঝি না। এগুলো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব এবং তপনরা ভালো বলতে পারবেন। আপনারা তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন।’
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার ওসি বদিউল আলম জানান, এটি কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক সহিংসতা নয়। ঘটনাটি ঘটেছে সরস্বতী পূজার নাচ-গানকে কেন্দ্র করে। মূর্তি ভাংচুরের সংবাদ পেয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে সন্দেহভাজন ৬ কিশোরকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। বাদী-বিবাদীপক্ষ মীমাংসার লক্ষ্যে আদালতে এফিডেভিট দিয়েছে কিন্তু আদালত আটক কিশোরদের জামিন দেয়নি। এ ধরনের ঘটনা জেনেও কেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উল্লেখ করে মামলা নিয়েছে পুলিশ—জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা আমার দেশকে বলেন, মামলার বাদী যেভাবে অভিযোগ করবে, আমরা সেভাবেই অভিযোগ নিতে বাধ্য।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন