৭১'এর পর কেন সাঈদীর ধর্ষন প্রবনতা বন্ধ হয়ে গেল ?? সাঈদীর নাম এর আড়ালে আসল অপরাধী কারা !!!
লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৫৪:০৪ সন্ধ্যা
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আদালতে সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন সাক্ষী তাদের জবানবন্দীতে ভানু সাহাকে ধর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ধর্ষণের বিষয়ে তিনজন সম্পূর্ণ তিন রকম কথা বলেছেন। একজন সাক্ষী বলেছেন, শান্তি কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন মাওলানা, যিনি এখন পিরোজপুর ওলামা লীগের নেতা, তিনি ভানু সাহাকে নিয়ে ভানু সাহার বাড়িতে বাস করতেন। অপর আরেক সাক্ষী বলেছেন, ভানু সাহাকে মাওলানা সাঈদী নিয়মিত ধর্ষণ করতেন। আরেক সাক্ষী বলেছেন, পাক আর্মি তাকে আটকে রেখে মাসের পর মাস ধর্ষণ করত। তিন সাক্ষীর এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের ফলে প্রশ্ন উঠেছে ভানু সাহা সত্যিকার অর্থে কার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
গত ২৭ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পঞ্চম সাক্ষী মাহতাব উদ্দিন হাওলাদার জেরার সময় জানান, পারেরহাটে বিপদ সাহার মেয়েকে নিয়ে বিপদ সাহার বাড়িতেই বাস করতেন পিস কমিটির নেতা মোসলেম উদ্দিন মাওলানা। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাকে প্রশ্ন করেন, ভানু সাহাকে মোসলেম মাওলানা বিয়ে করে জামাই হিসেবে থাকতেন কি না। তখন মাহতাব উদ্দিন বলেন, বিয়ে করেছিল কি না বলতে পারব না। তবে গণ্ডগোলের সময় ভানু সাহাকে নিয়ে মোসলেম মাওলানা থাকতেন বিপদ সাহার বাড়িতে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী সাক্ষীকে উদ্দেশ করে বলেন, মোসলেম উদ্দিন মাওলানা বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং তিনি পিরোজপুর ওলামা লীগের সভাপতি এ বিষয়টি জানেন কি না। সাক্ষী ‘সত্য নয়’ বলে জবাব দেন।
এর আগে ৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ভানু সাহা ও ছবি রায়সহ আরো অনেক মেয়েকে পাক আমির্, শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের সাথে নিয়ে ধর্ষণ করত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। ভানু সাহাকে দীর্ঘ কয়েক মাস আটকে রেখে পাক আর্মি উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।
এ দুইজন সাক্ষী ভানু সাহাকে ধর্ষণ বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর নাম বলেননি। কিন' ২১ ডিসেম্বর চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমদ হাওলাদার আদালতে ভানু সাহা প্রসঙ্গে বলেন, ‘মাওলানা সাঈদী ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষণ করত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে’।
মোসলেম মাওলানার খপ্পরে ভানু সাহা : পারেরহাট সূত্র জানায়, মোসলেম মাওলানা একটি লাঠি হাতে নিয়ে পারেরহাট বাজারে ঘোরাফেরা করতেন। বাজারে মাতব্বরি, খবরদারি করতেন। উর্দু ভাষা ভালো জানায় তিনি পাক আর্মিদের সাথে সব রকম যোগাযোগ করতেন এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। পারেরহাটে পিস কমিটি গঠনে ভূমিকা পালন এবং পাক আর্মির সাথে সম্পর্কের কারণে তখন পারেরহাটের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন তিনি।
পারেরহাট বাজারে নিয়মিত যাতায়াতের সুবাদে মোসলেম মাওলানার চোখ পড়ে বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহার ওপর। মোসলেম মাওলানা ভানু সাহাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় বিপদ সাহার ওপর। বিপদ সাহা তখন মোসলেম মাওলানাকে তার বাড়িতে উঠাতে বাধ্য হন তার প্রভাবের কারণে। সেই সুযোগে মোসলেম মাওলানা ভানু সাহার সাথে একত্রে বাস করেন। মোসলেম মাওলানার প্রভাবে ও পাক আর্মির হাত থেকে রক্ষার জন্য বিপদ সাহা ও তার ছেলেরা তখন মাথায় টুপি পরে বাজারে যাতায়াত করতেন। মাঝে মধ্যে মসজিদে গিয়ে নামাজও পড়তেন। বাজারের লোকজন তখন মনে করতেন মোসলেম মাওলানা ভানু সাহা ও তার পরিবারের সবাইকে মুসলমান বানিয়েছেন এবং ভানু সাহাকে বিয়ে করে তার সাথে বাস করছেন। তবে বিয়ে হয়েছিল কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা ভানু সাহাকে উদ্ধার করেন। এরপর তারা সবাই আবার নিজ ধর্মে ফিরে গিয়ে ভারতে চলে যান।
মোসলেম মাওলানার একচ্ছত্র প্রভাবের কারণে এবং পারেরহাট বাজার তার নিয়ন্ত্রণে থাকায় তখন ভানু সাহার সাথে বসবাস নিয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার সাহস পাননি। সবাই তখন তাকে ভয় করে চলতেন।
কে এই মোসলেম মাওলানা? : পিরোজপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বইয়ের ৪১২ পৃষ্ঠায় স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মোসলেম মাওলানার অপকর্মের বিষয়ে উল্লেখ আছে। মোসলেম মাওলানা ১৯৬৯ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি এলাকায় চলে আসেন। তার গ্রাম বাদুরায়। পারেরহাটে পাক আর্মি আসার আগেই মোসলেম মাওলানার নেতৃত্বে সেখানে পিস কমিটি গঠন করা হয়। পিস কমিটির সভাপতি করা হয় রাজলক্ষ্মী স্কুলের সাবেক শিক্ষক ও পরে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দানেশ মোল্লাকে। সেক্রেটারি করা হয় সেকেন্দার শিকদারকে। তবে পিস কমিটি পরিচালনার কাজ করেন মোসলেম মাওলানা।
স্বাধীনতার পরপরই এলাকা থেকে পালিয়ে যান মোসলেম মাওলানা। এরপর এরশাদের সময় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আশ্রয় নেন জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের ছায়াতলে। পরে জড়িত হন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ওলামা লীগের সাথে।
মোসলেম মাওলানার অপকর্মের দায়ভার মাওলানা সাঈদীর? : যে ভানু সাহার সাথে বাস করতেন মোসলেম মাওলানা সেই ভানু সাহাকে জড়িয়েই মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছেন সাক্ষীরা।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পারেরহাট বাজারে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ বিষয়ে আদালতে এ পর্যন্ত যতজন সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের সবাই বলেছেন, মাওলানা সাঈদী আরবি ও উর্দু ভালো জানায় তিনি পারেরহাট বাজারে পাক সেনাক্যাম্পের ক্যাপটেন এজাজের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষার কাজ করতেন। তিনিসহ অন্য পিস কমিটির নেতারা পারেরহাট বাজারে পাক আর্মি আসার পর অভ্যর্থনা জানান। মাওলানা সাঈদীর নামের সাথে প্রায় সব ঘটনায় মোসলেম মাওলানার নাম উল্লেখ করেছেন।
সাক্ষীরা। কিন' সব ক্ষেত্রে তারা বলেছেন, মাওলানা সাঈদী উর্দু ভাষায় পাকসেনাদের সাথে কথাবার্তা বলতেন ও সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষা করতেন। মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে ও নেতৃত্বে পাক আর্মি সেখানে সব অপকর্ম পরিচালনা করত।
কিন' অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মোসলেম মাওলানা উর্দু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন এবং তিনিই পাক আর্মিদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। কিন' মোসলেম মাওলানার বিরুদ্ধে অভিযোগের স'লে এখন বসিয়ে দেয়া হয়েছে মাওলানা সাঈদীর নাম।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আরেকটি আলোচিত ঘটনা ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা মামলা। মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে ইব্রাহিম কুট্টিকে পারেরহাট বাজারে পাক আর্মি মে মাসে হত্যা করেছে বলে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন' ইব্রাহিমের স্ত্রী মমতাজ বেগম দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে স্বামী হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেন। সে মামলায় আসামি করা হয় মোসলেম মাওলানাকে; মাওলানা সাঈদী নন। তা ছাড়া স্ত্রীর করা মামলার এজাহারে ইব্রাহিমকে হত্যার ঘটনাস'ল উল্লেখ করা হয়েছে ইব্রাহিমের শ্বশুরবাড়ি নলবুনিয়া গ্রাম। পারেরহাট বাজার নয়। ঘটনার তারিখ অক্টোবর মাস, মে মাস নয়। মমতাজ বেগমের মামলায় মাওলানা সাঈদীর নাম আসামির তালিকায় না থাকা সত্ত্বেও এবং ঘটনাস'ল ও ঘটনার তারিখ সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়ার পরও ইব্রাহিম হত্যার জন্য মাওলানা সাঈদীকে জড়িয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাক্ষীরা।
মোসলেম মাওলানার সাথে যোগাযোগের জন্য মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়: বিবিধ
১২১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন