সকাল ১১ টায় বায়তুল মোকাররমে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ !! সারা দেশে পুলিশের তান্ডব ও বাড়াবাড়ি !!!

লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:০৬:২৮ বিকাল

রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসংলগ্ন জামে মসজিদের মুসল্লিরা তখনো নামাজ শেষ করেননি। এমন সময় হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে মসজিদে ঢুকে পড়ে একদল পুলিশ। শুরু করে মুসল্লিদের ওপর বেধড়ক লাঠিপেটা। অনেকে নামাজ ছেড়ে জীবন নিয়ে কোনোভাবে দৌড়ে পালান। মুহূর্তের মধ্যে রক্তে লাল হয়ে যায় মসজিদের মেঝে। কিছুক্ষণ পরে বেলা সোয়া ২টায় পুলিশ বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয় লক্ষ্য করে বিনা কারণে গুলি ছোড়ে। সেখানে আহত হন এক সাংবাদিক। গতকাল এভাবেই দেখা যায় পুলিশের বাড়াবাড়ি। সরকারদলীয় মাস্তানদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ জুমার নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের এমন বাড়াবাড়ি তারা আগে কোনো দিন দেখেননি। মহানবী সা: ইসলামের অবমাননার প্রতিবাদে গতকাল ইসলামি দলগুলো বাদ জুমা রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। সকাল থেকেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিল মারমুখো। বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকাসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে মোতায়েন করা হয় বিপুল পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য। কোনো কোনো মসজিদে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোশাররফ নামে এক মুসল্লি জানান, আজানের পর তিনি বায়তুল মোকাররমে গেলে পুলিশ তাকে মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়। এতে অনেক মুসল্লি বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রবেশ করতে পারেননি। পুলিশ তাদের নিজ এলাকার মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের পরামর্শ দেয়। বাধ্য হয়ে এসব মুসল্লি অনেকে আশপাশের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতেও কড়া নজরদারি ছিল পুলিশ ও গোয়েন্দাদের। এরপরেও বিভিন্ন ইসলামি দলের ব্যানারে মুসল্লিরা বাদ জুমা বিভিন্ন মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। প্রায় সব মিছিলে কম-বেশি হামলা করেছে পুলিশ। বায়তুল মোকাররম এলাকায় মিছিল বের হওয়ার পর পুলিশ হামলা চালালে মিছিলকারীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে ওই মসজিদের ভেতরে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ নামাজরত মুসল্লিদের ওপরও হামলা চালায়। পিটিয়ে অনেক মুসল্লিকে মসজিদের ভেতরেই শুইয়ে দেয়। পিটিয়ে অনেকের হাত-পা গুঁড়িয়ে দেয়া হয় এবং মাথা ফাটিয়ে ফেলা হয়। বেশ কয়েকজন মুসল্লিকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের সাথে সরকার সমর্থকেরাও হামলায় অংশ নেন।

গতকাল বিভিন্ন এলাকায় মানুষের বাসাবাড়িতেও পুলিশ গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। সেগুন বাগিচা, পল্টন, তোপখানা রোড, নয়াপল্টন, চানখাঁরপুল, নবাব কাটরা, নিমতলী আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ অলি-গলিতে ঢুকে গুলি বর্ষণ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। অনেক বাড়িতে বিনা কারণে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে বাড়িতে অবস্থানকারী লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে জটিল সমস্যায় পড়তে হয় আত্মীয়স্বজনকে। তল্লাশির নামে পুলিশ দোকানপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঢুকেও হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় দাড়ি-টুপিওয়ালাদের ওপর নির্মম নির্যাতন করেছে। মিছিলে অংশ নেননি এমন অনেক মানুষও পুলিশের এই হামলার শিকার হয়েছেন। প্রেস কাব এলাকায় দেখা গেছে পুলিশ দাড়ি-টুপিওয়ালা কয়েকজনকে ধরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছে।

বেলা সোয়া ২টার ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের সামনের রাস্তা দিয়ে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান সেগুনবাগিচা এলাকায় প্রবেশ করে। এ সময় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসাসিয়েশনের সামনে দাঁড়িয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম সাবুসহ কয়েকজন সাংবাদিক কথা বলছিলেন। সাঁজোয়া যানটি তাদের কয়েক গজ দূরে এসে ক্র্যাব কার্যালয় লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ক্র্যাবের সিনিয়র সদস্য ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আপ্যায়ন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ভূইয়া আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল পুলিশের গুলিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

মুসল্লিরা রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার পরে পুলিশ বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মিছিলে অংশ নেননি এমন অনেক মানুষকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে জানা যায়। পুলিশ বলেছে, রাজধানী থেকে গ্রেফতারের সংখ্যা ১৭২ জন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গ্রেফতারের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি হবে। বায়তুল মোকাররম এলাকাতেই গ্রেফতার হয়েছেন শতাধিক মানুষ। সন্ধ্যার পরেও পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে বলে জানা যায়। আহতরা হাসপাতালেও ভর্তি হতে পারেননি। অনেক মানুষ আহত হওয়ার পরেও বিনা চিকিৎসায় বাসায় চলে গেছেন। পুলিশের মারধর এবং গ্রেফতারের ভয়ে তারা হাসপাতালে যাননি।

বিষয়: রাজনীতি

১১০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File