সারা দেশে পুলিশী তান্ডব !! ঢাকার ওসিরা বেপরোয়া, ৫ বছরে অধিকাংশ ওসি শত কোটি টাকার মালিক !!!

লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:০৬:৩৪ দুপুর

বাসাজুড়ে ভাঙা আসবাবের টুকরা। পরিধেয় কাপড়, বইপত্র, ফ্রিজ, কম্পিউটার, আলমারি, ঘড়িসহ নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য—সবকিছু তছনছ, ওলট-পালট। ছড়ানো-ছিটানো কাচের কাপ-প্লেটের অসংখ্য টুকরা। চুরমার বাথরুমের কমোডও।

দেখে মনে হবে, সন্ত্রাসী বা ডাকাত দল এমন কাণ্ড করেছে। আসলে অভিযানের নামে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুরের কয়েকটি বাসায় ভাঙচুর চালিয়েছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এ অভিযানের সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছেন। তাঁরা ধরে নিয়ে গেছেন কলেজপড়ুয়া মেয়ে, গৃহবধূ এমনকি শিশুকেও।

অভিযোগের বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও ওসি সালাউদ্দিন ফোন ধরেননি। তবে ঊর্ধ্বতন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাসায় ভাঙচুরের বিষয়টি পুলিশের পেশাগত কাজের সম্পূর্ণ বিরোধী।

রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, পরোয়ানাভুক্ত আসামি, অস্ত্রধারীসহ অপরাধীদের ধরতে ওই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তবে বাসায় ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শুধু মিরপুর নয়, ওই রাতে দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নেমে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মিরপুর বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১৩২ জনকে ধরপাকড় করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সব মিলিয়ে ঢাকা ও সারা দেশে আটকের সংখ্যা এক রাতে ২৪১।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, ধরপাকড়ের শিকার হওয়া অনেকেই নিরীহ। তাঁদের ছাড়াতে গতকাল মিরপুর থানার চারপাশে ভিড় জমান তাঁরা।

এলাকার লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে ২০-৩০ জনের পুলিশ দল মিরপুর মধ্য মনিপুরের একটি পাঁচতলা বাড়ির তিনতলার ফ্ল্যাটে অভিযান চালায়। ফ্ল্যাটটি ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের সভাপতি মামুন হাসানের। তখন বাসায় কেউ ছিল না। পুলিশ ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে ভাঙচুর চালায়। ঘণ্টা দেড়েক পর সেখান থেকে কিছুটা দূরে মামুন হাসানের বড় ভাই মাহবুব হাসানের বাসায় যায় পুলিশ। ভেতরে ঢুকে মাহবুব, তাঁর বৃদ্ধ মা হাজেরা বেগম ও শিশুসন্তান মেহেদী হাসানকে একটি কক্ষে আটকে রেখে বাসায় আসবাবপত্র ভাঙচুর করে পুলিশ দল। এরপর মাহবুবের স্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বড় মেয়ে ও কলেজপড়ুয়া ছোট মেয়েকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

যুবদল নেতা মামুনের ফ্ল্যাটে গিয়ে গতকাল দরজা খোলা পাওয়া যায়। দরজার সিটকিনি ভাঙা। ভেতরের প্রতিটি কক্ষে খাট, চেয়ার-টেবিল, আলমারিসহ আসবাবপত্রের ভাঙা অংশ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে মামুনের তোলা অসংখ্য ছবির ভাঙা ফ্রেম। আঘাতে বাঁকা হয়ে পড়ে আছে ফ্রিজ, সিপিইউ। ভেঙে পড়ে আছে কম্পিউটারসহ অসংখ্য ব্যবহার্য সামগ্রী। বাথরুমের কমোডও ভাঙা অবস্থায় দেখা যায়। মামুনের ভাই মাহবুবের বাসায়ও একই দৃশ্য পাওয়া যায়।

মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ বছর ধরে তিনি প্যারালাইসিসের রোগী। পরিবার নিয়ে নিজের একতলা বাসায় থাকেন। রাত তিনটার দিকে বাসার সামনে শব্দ শুনতে পেয়ে তিনি জেগে ওঠেন এবং বাইরে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চান। তাঁরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলেন। দরজা খুলে দিতেই ওসি সালাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন পোশাকধারী পুলিশ সদস্য ভেতরে ঢুকে পড়েন। ওসি পরিবারের সবাইকে ডেকে আনতে বলেন। তিনি (মাহবুব) মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে ঘুম থেকে জেগে তোলেন। সালাউদ্দিন সবার কাছ থেকে পাঁচটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে থানায় যাওয়ার কথা বলেন।

মাহবুব বলেন, ‘আমি ওসিকে বললাম, আমার স্ত্রী কেন যাবে? এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ওসি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দেন। আমার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে গাড়িতে তোলেন। এরপর আমাকে, আমার বাচ্চা মেহেদী ও মাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে বাসাজুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।’ তিনি বলেন, তাঁর ভাই রাজনীতি করেন, তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। বিষয়টি পুলিশকে বারবার বলা হয়েছে। পুলিশ শোনেনি।

গতকাল বিকেলে মিরপুর থানার সামনে রোকেয়া আহমেদ নামের এক নারী সাংবাদিকদের জানান, রাতে আহমেদনগর পাইকপাড়ায় তাঁর বোন সাবেক কমিশনার রুনু আক্তারের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। তাঁকে না পেয়ে তাঁর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ১৩ বছরের সন্তান আমিন মোহাম্মদ ও চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টন্স-পড়ুয়া মেয়ে শারমিনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সারা দিন আটকে রেখে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বাসার তত্ত্বাবধায়ক সামিউরকে আটক করা হলেও তাঁকে ছাড়া হয়নি।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থানার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি মা মাসুদা বেগম। তিনি বলেন, গতকাল তাঁর ছেলে মাসুদুর রহমানের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে কল্যাণপুরের একটি মেস থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির জন্য শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে পাঁচ মাস আগে ঢাকায় আসেন মাসুদুর।

দেবাশীষ দাস নামের একজন জানান, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র তাঁর ভাই সৌরভ ভদ্র। পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে কল্যাণপুরের একটি মেস থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে এসেছে।

সারা দেশে আটক ১০৯: চট্টগ্রাম শহরে শিবিরের ২২ নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন। কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) নেজাম উদ্দিন জানান, তাঁরা সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের নেতা-কর্মী। সীতাকুণ্ডে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের আরও পাঁচ নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন। পুলিশ জানায়, গাড়িতে আগুন, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন নাশকতার মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ফেনীতে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সাত নেতা-কর্মীকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। তাঁদের মধ্যে সদর উপজেলায় পাঁচজন ও পরশুরামে দুজন।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় গত ১১ আগস্ট গাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলায় শিবিরের এক কর্মীকে আটক করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। লাকসাম উপজেলার পেরুল (দক্ষিণ) ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন জামায়াতের সহকারী আমীর নূর উদ্দিনসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিষয়: বিবিধ

১০৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File