প্রশ্ন বানে জর্জরিত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম !!
লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ ২৩ জুলাই, ২০১৩, ০২:৩৯:২০ দুপুর
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া প্রদত্ত যাবজ্জীবন কারাদাণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির সময় গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আসামি পক্ষের যুক্তির জবাব প্রদানের সময় সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের একের পর এক প্রশ্নের মুখোমুখি হন। প্রশ্নের জবাব প্রদানে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সহায়তা না করায় কোর্টে উপস্থিত অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলদের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত।আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায়ের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও দুর্বল দিক তুলে ধরে অনেক অভিযোগ উত্থাপন করেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে এসব অভিযোগের জবাব দাবি করেন কোর্ট। অ্যাটর্নি জেনারেল কোর্টের বিভিন্ন প্রশ্নের এবং আসামিপক্ষের অভিযোগের জবাব প্রদানের সময় রায়ের কপি, ফরমাল চার্জসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকে পাতা উল্টিয়ে রেফারেন্স দেয়ার চেষ্টা করেন। সামনের সারিতে তখন তিনজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও আরো কয়েকজন ডেপুটি অ্যাটর্র্র্নি জেনারেলসহ অ্যাটর্র্নি জেনারেল অফিসের ছয় থেকে সাতজন আইন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্নের জবাব প্রদানে কোনো সহায়তা করছিলেন না। তখন প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ বিচারপতিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাদের প্রতি। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ওনারা তো সব জেনারেল, ওনারা কী সহায়তা করবেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে সহায়তা করতে হলে ব্রিগেডিয়ার, কর্নেল, লে. কর্নেল ও ক্যাপ্টেন লাগবে। তিনি অ্যাটর্র্র্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, জবাব দিতে এত সময় লাগলে তো চলবে না। কেউ তো আপনাকে কোনো রেফারেন্স দিয়ে হেল্প করে না। আপনাকে আমরা এত সময় দেব কেন? তিনি অন্যান্য সরকারি আইন কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, শুধু ম্যাটেরিয়াল এক্সিবিট হয়ে লাভ নেই।বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আপনার টিম এসব কালেক্ট না করে এলে কেমনে হবে?
বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব যখন সাবমিশন রাখেন তখন তার জুনিয়রেরা তার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে একের পর পাতা উল্টাতে থাকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকে। তাকে রেফারেন্স দিয়ে সহায়তা করেন। ভুল হলে কানে কানে আবার বলে দেন। আপনারা এ রকম পারেন না?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সময় বলেছিলেন, এইডিং, এ্যাবেটিং এবং কমপ্লিসিটি বিষয়ে কাউকে সাজা দিতে হলে রাষ্ট্রপক্ষকে প্রমাণ করতে হবে যে, অপরাধ সঙ্ঘটনের ক্ষেত্রে আসামি আব্দুল কাদের মোল্লার সাবসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন ছিল। তিনি বলেন, অপরাধ সঙ্ঘটনের ক্ষেত্রে আব্দুল কাদের মোল্লার সহযোগিতা এবং সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। অপরাধ সঙ্ঘটনের ক্ষেত্রে সাবসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন না থাকলে এইডিং, এ্যাবেটিং বা কমপ্লিসিটির অভিযোগে সাজা দেয়া যায় না।এইডিং, এ্যাবেটিং, কমপ্লিসিটি ও সাবসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন কি সে বিষয়ে রেফারেন্স হিসেবে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রুয়ান্ডার লরেন স্যামেঞ্জার মামলার রেফারেন্স দেন।
গতকাল যুক্তি পেশের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম লরেন স্যামেঞ্জা মামলার বেশ বড় একটি বাঁধাই করা ডকুমেন্ট বিচারপতিদের সরবরাহ করেন।এরপর বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেন, এটি আপনি কেন দিলেন সে বিষয়ে তো কিছু বললেন না। এটি দিয়ে আপনি কী বোঝাতে চান? এটা কেন দিলেন আমরা তো তা কিছু বুঝলাম না। ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব এ বিষয়ে কী সাবমিশন রেখেছিলেন এবং কী বলতে চেয়েছিলেন?তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওনারা যে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন তা আমিও বুঝিনি। তখন বিচারপতি এবং কোর্টে উপস্থিত অনেকের মধ্যে হাসির সৃষ্টি হয়।বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, আমি আপনাকে হেল্প করছি মি. অ্যাটর্নি জেনারেল। ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব বলতে চেয়েছিলেন, অপরাধ সঙ্ঘটনের ক্ষেত্রে আব্দুল কাদের মোল্লার সাবসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন ছিল না। সাবসটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউশন না থাকলে কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়া যাবে না এই ছিল তার সাবমিশন। এখন আপনি এর জবাব দেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আসামিপক্ষে যুক্তি পেশের সময় রাষ্ট্রপক্ষের চার নম্বর সাক্ষী কাজী রোজীর সাক্ষ্য বিষয়ে নানা অসঙ্গতি এবং বৈপরীত্য তুলে ধরে বলেছিলেন, তার সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।অ্যাটর্নি জেনারেল গতকাল যুক্তি পেশের সময় বলেন, কাজী রোজীর সাক্ষ্য অবশ্যই বিশ্বাস যোগ্য। সে একজন ন্যাচারাল সাক্ষী। এ সময় বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী প্রশ্ন করেন, আসামিপক্ষ বলেছেন, সাক্ষী শোনা কথা বলেছেন। সাক্ষী কার কাছ থেকে শুনেছেন তা প্রকাশ করা হয়নি। সাক্ষী কার কাছ থেকে শুনেছে সে সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য কি না?অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অবশ্যই সাক্ষী সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নন।বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, তা ছাড়া আসামিপক্ষের অভিযোগÑ একটি শোনা কথা আরেকটি শোনা কথাকে সহায়তা করতে পারে না। কবি মেহেরুন্নিসা ছিলেন অ্যাকশন কিমিটির সেক্রেটারি। আর কাজী রোজী ছিলেন সভানেত্রী। তাই কাজী রোজী কবি মেহেরকে নিয়ে যে বই লিখেছেন তাতে তো সবকিছু বিস্তারিতভাবে থাকা দরকার ছিল। আব্দুল কাদের মোল্লার নাম সেখানে নেই কেন?এ সময় একাধিক বিচারপতি মন্তব্য করেন আব্দুল কাদের মোল্লার নাম তার বইয়ে নেইÑ এটি ছিল আসামিপক্ষের দাবি।অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বইতে উল্লেখ করলে লেখকের জীবনের হুমকি ছিল।বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসব বলেননি কেন তিনি?তখন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কবি মেহেরকে নিয়ে কাজী রোজীর বইটি ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে এবং তখন আব্দুল কাদের মোল্লা জেলে। কাজেই লেখকের প্রতি হুমকির অজুহাত নিতান্তই অমূলক।ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক যুক্তি পেশের সময় বলেছিলেন আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় চার্জ গঠন এবং বিচার শুরুর পরও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে, যা আইনবিরোধী। তারা তিনজন সাক্ষী পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ বিষয়ে আদালত জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনের ৯(৪) এবং রুলের ৪৬ (এ) অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল অতিরিক্ত তিনজন সাক্ষী অন্তর্ভুক্ত করেছে।প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।আসামিপক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সাথে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির, অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন