যেদিন এই বাচ্ছাটা বড় হয়ে জানবে পুলিশ তাকে ১ দিন বয়সেই মেরে ফেলতে চেয়েছে সেইদিন সে কেন পুলিশকে মারতে উদ্ধত হবে না !!!
লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:৫২:৫২ দুপুর
মালয়েশিয়া প্রবাসী আবু বকরের স্ত্রী ফারজানা গত ২৭ মার্চ একটি ছেলেসন্তান জন্ম দেন। নতুন অতিথির আগমনে বাড়ির সবাই খুশিতে আত্মহারা। এবাড়ি-ওবাড়ি আর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে মিষ্টি-নাড়ু পাঠানোর ধুম পড়ে। কিন্তু পরদিন ২৮ মার্চ তাদের সেই খুশিকে দুঃস্বপ্নের কালো রাতে পরিণত করে একটি পুলিশি অভিযান। ওই রাতে হরতালে গাড়ি ভাংচুরের মামলার আসামি ধরার নামে মাত্র এক দিন বয়সী শিশুকে খাটের ওপর থেকে ফেলে দেয় পুলিশ। শিশুটির ফুফাতো দাদি মমতাজ বেগম জাপটে ধরে শিশুটিকে রক্ষা করেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মমতাজ বেগম বলেন, ‘হাতে-পায়ে ধরে অনেক অনুরোধ করেছি। বলেছি, মিয়াছাব, ঘরে পোয়াতি মহিলা, কোনো আসামি নাই। হেরপরও হেরা কোনো কথা হুনে নাই, বাচ্চার মশারি লাঠি দিয়ে গুতাইয়া দেখছে, একজন সিপাই (কনস্টেবল) বিছনার চাঁদর ধইরা হেঁচকা টান মারে। বাচ্চাটি ছিটকাইয়া পড়ে যাইতে লাগে। মাটিতে পড়ার আগেই আমি বুকের লগে জড়াইয়া ধরি।’
এভাবেই পুলিশি অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বর্বরতা বর্ণনা করছিলেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মুরাদনগর মধ্যপাড়ার ওমর আলীর বাড়ির বাসিন্দা মমতাজ বেগম।
ওই বাড়িটি মুরাদনগর বণিক সমিতির সহ-সভাপতি ওমর আলীর। তিনি জানান, গত ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে কিছু ব্যক্তি মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর রোডে পিকেটিং করে। ওই সময় দুই-তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাংচুর করে পিকেটাররা। এ ঘটনায় পুলিশ তাকে ৪ নম্বর আসামি, তার দাখিল শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে নাজমুল আহসান ও ভাতিজাকে এজহার-নামীয় আসামি করে। অথচ তারা ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। রাতে ওমর আলী, তার ছেলে ও ভাতিজাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালায় পুলিশ। তারা ওমর আলীর ঘরে প্রবেশ করে তল্লাশির নামে শোকেস, স্টিলের আলমারি ও ফ্রিজ ভাংচুর করে। ছেলের ঘরে প্রবেশ করে তার খাট ভেঙে ফেলে। আসবাবপত্র তছনছ করে। ওই ঘর থেকে ওমর আলীর ভাতিজা মালয়েশিয়া প্রবাসী আবু বকরের ঘরে যায় পুলিশ। ঘরে সন্তান প্রসব করা নারী থাকার বিষয়টি জানানোর পরও নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে পুলিশ। এক দিন বয়সী এ শিশুটির নাম রাখা হয়েছে মো. আবু ছাইদ।
আবু ছাইদের মা ফারজানা জানান, পুলিশি অভিযানকালে তার এক দিন বয়সী শিশুটি খুব ভয় পেয়েছে। সে এখন ঠিকমতো খেতে চায় না।
ওমর আলী জানান, এখানেই শেষ নয়; এরপরও পোশাকে ও সাদা পোশাকে দু-একদিন পরপরই অভিযান চালাচ্ছে। নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। কারও কারও কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরও জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দিচ্ছে।
পুলিশি অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ও বর্বরতার চিহ্ন মুরাদনগরজুড়েই দেখা যায়। উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন শ্রীকাইল, আকুবপুর, আন্দিকোট, পূর্বধইর (পূর্ব), পূর্বধইর (পশ্চিম), বাংগরা (পূর্ব), বাংগরা (পশ্চিম), চাপিতলা, কামাল্লা, যাত্রাপুর, রামচন্দ্রপুর (দক্ষিণ), রামচন্দ্রপুর (উত্তর), মুরাদনগর, নবীপুর (পূর্ব), নবীপুর (পশ্চিম), ধামঘর, জাহাপুর, ছালিয়াকান্দি, দারোরা, পাহাড়পুর, বাবুটিপাড়া, টনকী সরেজমিনে দেখা গেছে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আতঙ্ক। পুলিশের হয়রানি, গ্রেফতার-বাণিজ্য ও সরকারি দল আশ্রিত ক্যাডার-মাস্তানদের তাণ্ডবে দিশেহারা এলাকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা।
বণিক সমিতির নেতা ওমর আলীর সঙ্গে একই মামলার আসামি মুরাদনগর রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মাহবুব। তার বাবার নাম মুরশিদ, মা নারগিস বেগম। মামলার এজাহারে মাহবুবের বয়স ১৮। সে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও ভাংচুরের মতো জামিন-অযোগ্য ধারার মামলায় আসামি। মাহবুবের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা বেগম প্রত্যয়নপত্র দিয়ে বলেন, তার জন্মতারিখ ২০০০ সালের ২০ মে। অথচ তাকে ১৮ বছর বয়সী দেখিয়ে বিস্ফোরক মামলার আসামি করা হয়েছে। মাহবুবের বাবা সবজিবিক্রেতা মুরশিদ মিয়া জানান, তিনি মূর্খ মানুষ। জমিতে কাজ করেন। ছেলে স্কুলে যায় ও তার কাজে সহযোগিতা করে। ককটেল বা বোমা পাবে কোথায়? ঘটনার পুরোটাই পুলিশের সাজানো বলে দাবি করেন তিনি।
মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর রোডে যে মফিজ উদ্দিন ও রুস্তম আলীর দোকানের সামনে বিস্ফোরণের ঘটনার কথা উল্লেখ করে পুলিশ মামলা দিয়েছে, সেই মফিজ উদ্দিন ও রুস্তম আলী জানান, তাদের দোকানের সামনে ওইদিন কোনো বিস্ফোরণই হয়নি। কেউ গাড়িও ভাংচুর করেনি। পুলিশ বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্যই সাজানো মামলা দায়ের করেছে। মামলাটির বাদী মুরাদনগর থানার এসআই আবুল হাসান মিয়া। তিনি জানান, সঙ্গীয় ফোর্সসহ কর্তব্যরত অবস্থায় মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর রোডে সিএনজি অটোরিকশা ভাংচুর করতে দেখে তিনি মামলা দেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিস্ফোরিত স্পিল্গন্টার, স্কচটেপ মোড়ানো টিন, দুটি লাঠি ও ভাঙা কাচের গুঁড়া উদ্ধার করে।
মুরাদনগর উত্তর পাড়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি হাফেজ আবদুল কুদ্দুসের ছেলে মাসুদ রানা। তিনি জানান, কয়েকজন আওয়ামী লীগ ক্যাডার মোটরসাইকেলে এসে তার বাড়িতে হামলা চালায়। ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় যখন সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে হামলা করে, তার আশি বছর বয়সী বাবা হাফেজ আবদুল কুদ্দুস এশার নামাজ আদায় করছিলেন। বিকট শব্দে জানালার কাচ ভেঙে ফেলে সন্ত্রাসীরা। গ্লাসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন হাফেজ আবদুল কুদ্দুস। এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। স্থানীয় আওয়ামী লীগকর্মী মোস্তাক আহমেদ, মাসুদ চেয়ারম্যান, আক্তার মেম্বারের নির্দেশে হাসান, মোতালেব ও হেলানসহ কয়েকজন তার বাড়িতে হামলা করে। গত ৪ এপ্রিল ওই বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, খাটের ওপর জানালার ভাঙা কাচ পড়ে আছে। পাশেই একটি জায়নামাজ বিছানো। মাসুদ আরও জানান, তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। বিএনপির রাজনীতি না ছাড়লে তাকে ক্রসফায়ারের হুমকিও দেয়া হয়েছে। ওই বাড়ির মহিলারা জানান, পুলিশের হয়রানিতে তাদের বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।
মুরাদনগরের সিদ্ধেশ্বরী গ্রামের সরকার বাড়ির হাবীবুর রহমান জানান, পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই তার ছেলে আতিককে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। শুধু হয়রানির জন্যই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন