দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ !! থাবাবাবা বেঁচে থাকলে এখন কোথায় থাকতেন বলুনতো সবাই !!!

লিখেছেন লিখেছেন সোহাগ ০৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:২৬:৩৬ বিকাল



কথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আহমেদ রাজীব হায়দারের ‘শহীদ’ খেতাবের এখন কী হবে? জীবিত থাকলে তিনি কি এখন ধর্মদ্রোহের অপরাধে গ্রেফতার হয়ে শাস্তির মুখোমুখি হতেন? আল্লাহ, রাসুল (সা.), পবিত্র কোরআন ও ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে নিহত শাহবাগি ব্লগার রাজীব যে কুিসত ভাষায় কটাক্ষ ও বিষোদ্গার করেছেন তার দায়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সময়মত বিচারের মুখোমুুখি করা হয়নি বলেই কি তাকে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে? রাজীবকে যারা অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন এবং মৃত্যুর পর তার বাড়িতে গিয়ে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তারাইবা এখন কি জবাব দেবেন? এসব প্রশ্ন উঠছে সরকারের বিলম্বিত বোধোদয় এবং হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের আগে কিছু ব্লগারকে গ্রেফতারের প্রেক্ষা-পটে। গতকাল পর্যন্ত ইসলামবিদ্বেষী কুখ্যাত ব্লগার আসিফসহ যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের তুলনায় রাজীব হায়দারের ইসলাম-বিরোধী লেখা ছিল অনেক বেশি আক্রমণাত্মক, অশ্লীল ও ধৃষ্টতাপূর্ণ।

‘থাবা বাবা’খ্যাত রাজীব খুনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাসায় গিয়ে সমবেদনা জানানোর সময় আবেগের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন। শাহবাগে রাজীবের জানাজায় ছুটে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারা।

১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে নিজ বাসার কাছে অজ্ঞাত ঘাতকের অস্ত্রের আঘাতে খুন হন কাপাসিয়া আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকার ছেলে রাজীব হায়দার। পরদিন নিহত ব্লগার রাজীবের বাসায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম শহীদ রাজীব। রাজীবসহ তরুণরা যখন উন্মেষ ঘটাল তখনই এ ঘটনা ঘটে গেল। সবাই ধরে নিতে পারেন এটা কারা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, রাজীবের খুনিদের আমরা ছাড়ব না। জামায়াত-শিবিরের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে। তরুণদের পাশে সবাইকে দাঁড়াতে বলব।

এ সময় রাজীবের মাকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বজন হারানোর ব্যথা আমি জানি। তরুণ সমাজ শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে একটা উন্মেষ ঘটাতে পেরেছে। আমরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।

রাজীব হত্যার পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৪ দলের পদযাত্রা কর্মসূচি পালনকালে টঙ্গীতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ব্লগার রাজীব হায়দার ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ’। রাজীব চলে গেছে কিন্তু তার রক্ত দিয়ে রঞ্জিত করে গেছে তরুণ প্রজন্মকে। আমরা রাজীবকে আর পাব না। কিন্তু রাজীব যে যুদ্ধ শুরু করেছে তার শেষ হবেই। এ যুদ্ধে রাজীবদের বিজয় হবেই। তোফায়েল আহমেদ বলেন, শাহবাগ আজ সারাবাংলার মোহনা। কারও সাধ্য নেই তরুণ প্রজন্মের এই উত্থানকে দাবিয়ে রাখতে পারে।’

একই কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, রাজীবের রক্তের বদলা আমরা নেবই নেব। তিনি একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে তুলনা করেন রাজীব হত্যাকে।

একই দিন রাজধানীর ধোলাইপাড়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের কণ্ঠেও রাজীবের জন্য বিলাপ শোনা যায়। তিনি বলেন, শাহবাগ আন্দোলনকে দমাতে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা রাজীবকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজীব হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবি করেন।

রাজীব খুন হওয়ার পর এক বিবৃতিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শহীদ রাজীব ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এক সম্ভাবনাময় তরুণ। তাকে হত্যা করে জামায়াত-শিবির তাদের পুরনো রাজাকারি চরিত্র নতুন করে উন্মোচন করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মতে, রাজীবের ব্লগের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়েছে। একটি পত্রিকার কাছে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আরেফিন সিদ্দিক বলেন, রাজীব খুন হওয়ার ঘটনা আমাদের একাত্তরের কথা মনে করিয়ে দেয়। রাজীবের মৃত্যুর শোক কি সহ্য করা যায়?

আওয়ামীপন্থী ঘাদানিক নেতা শাহরিয়ার কবির একই পত্রিকাকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে আমার দুই ভাইকেও হারিয়েছি। সর্বশেষ গেল রাজীব।

এছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে বক্তৃতায় বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি, তখন আমার বয়স ছিল আট। যারা যুদ্ধের বিভীষিকাময় দিনগুলো দেখতে পারেনি, তারা আজ শাহবাগে আরেকটি যুদ্ধ দেখার সুযোগ পেয়েছে। নতুন প্রজন্ম শাহবাগে আজ ডিজিটাল মুক্তিযুদ্ধ করছে।’

একই দিন সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি বহুদিন আনন্দিত হই না, তবে শাহবাগের ঘটনায় আমি আনন্দিত। আমি তরুণদের কাছে মাথানত করে বলব-তরুণরা তোমরা এগিয়ে যাও।’

এছাড়া রাজীব খুনের পর তার জন্য সারাদেশে মসজিদসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে দোয়ার কর্মসূচি দিয়ে তা পালনে সরকারিভাবে বাধ্য করা হয়। রাজধানীর মিরপুরে সরকারদলীয় এমপি রাজীবের জন্য দোয়া ও কালোপতাকা উত্তোলন না করায় একটি মাদরাসা বন্ধ করে দেন।

এদিকে শাহবাগ আন্দোলন চলবে কি চলবে না, সে বিষয়ে সরকার ও আন্দোলনের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আসছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহবাগ আন্দোলন বন্ধ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় শাহবাগি নেতা ডা. ইমরান সরকার বলেছেন, কারও নির্দেশে শাহবাগ আন্দোলন বন্ধ হবে না। প্রসঙ্গত; শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের আগের অবস্থান স্মরণ করা যেতে পারে।

১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে শাহবাগ নিয়ে বক্তব্য রাখেন সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন মহাজোটের ৩২ জন সংসদ সদস্য। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহবাগের বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিচারের রায় দেবেন ট্রাইব্যুনাল। আইন দেখেই তারা চলবে। তার পরও তাদের অনুরোধ করব, মানুষের আকাঙ্ক্ষা যেন তারা বিবেচনায় নেন। দেশের মানুষ কী চায়, সেটা বিবেচনায় নিতে এই মহান সংসদ থেকে তাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।

আদালতকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধপরাধীদের বিচারে রায় একটা হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিচারের রায়ের পর তরুণসমাজ জেগে উঠল। তারা এভাবে জেগে না উঠলে সারাদেশের মানুষ এভাবে সোচ্চার হয়ে উঠত না। অভূতপূর্ব জাগরণ তারা সৃষ্টি করেছে। এই জাগরণ সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। জেলার পর জেলা, প্রতিটি উপজেলায় জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামেগঞ্জে প্রতিটি জায়গায় মানুষ সোচ্চার হয়েছে, জাগ্রত হয়েছে। নারী, শিশু, তরুণ, তরুণী—সবাই জাগ্রত হয়েছে। এটা কোনো দল নয়, কোনো গোষ্ঠী নয়। দল-মতনির্বিশেষে নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার চেতনায় জেগে উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, টেলিভিশনে যখন দেখি, স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত এসব তরুণ, দেখে মনে পড়ে আমাদের কথা। ৬ দফা, ’৬৬, ’৬৯ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৭ মার্চের ভাষণ—প্রতিটি জিনিস দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে। আমারও মনটা ছুটে যায়। মনে হয় আমিও ওখানে ছুটে যাই। ওই তরুণ কণ্ঠের সঙ্গে এই বৃদ্ধ বয়সে আমরাও কণ্ঠ মেলাই।

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File