ট্রাইব্যুনালের স্কাইপে ঘটনায় নিজেদের ভূমিকা প্রকাশ করলো আমেরিকার বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা
লিখেছেন লিখেছেন মেজর জলিল ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০৩:৫৭:৪৪ দুপুর
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত তাদের লোকেরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারক নিজামুল হক এবং বেলজিয়ামভিত্তিক বাংলাদেশি আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপে এবং ই-মেইল আলাপের কপি সংগ্রহ করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ‘অপকর্মের ব্যাপারে নজর রাখার’ জন্যই তাদের ভাড়া করা হয়েছিল বলে জানায়। এক্ষেত্রে সংস্থাটির জন্য যারা কাজ করেছে বা তথ্য সংগ্রহ করেছে তাদের কেউই কোনো আইন লঙ্ঘন করেনি বলেও দাবি করেছে ওই গোয়েন্দা ফার্মটি।
গোয়েন্দা সংস্থা ‘গার্ডিয়ান কনসাল্টিং এলএলসি’র একজন পরিচালক জেমস মুলভ্যানি বলেন, ‘আমাদের কর্মী ও তথ্য সংগ্রহকারী এবং দায়িত্বে থাকা লোকদের কেউই কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি।’ তিনি বলেন, কাজটি করার জন্য তার কোম্পানিটি ‘তুলনামূলকভাবে কম’ ফি পেয়েছে। এজন্য কোম্পানিটি ১ লাখ ডলারেরও কম পায় বলে জানান মুলভ্রানি।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক গার্ডিয়ান কনসাল্টিং নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের একটি ‘পূর্ণ তদন্ত সেবাদানকারী, নিরাপত্তা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক আন্তর্জাতিক এজেন্সি’ বলে দাবি করেন। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য এবং সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। প্রতিষ্ঠানটি তার মক্কেলদের মূলত তারা ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত বিষয়ে কোনো ‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’য় উপদেশ এবং সহায়তা করে থাকে।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে ওই স্কাইপে আলাপের তথ্য দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ হলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নিজামুল হক ‘ব্যাক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
এরপরপরই এই ব্যাপারে একটি নিবন্ধ ছাপে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্ট। নিবন্ধে তারা বলে যে, ওই স্কাইপে আলাপ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে খুবই মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ট্রাইব্যুনাল অবশ্য এ ঘটনার পরপরই একটি রুল জারি করে বলে যে, ওই স্কাইপে এবং ই-মেইল আলাপের বিষয়বস্তু তারা আমলে নেবে না। কারণ তা অবৈধভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতা- মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং গোলাম আযমের মামলার বাদী পক্ষ এ ঘটনার জের ধরে তাদের মামলার বিচার প্রক্রিয়ার পুনর্গঠনের যে আবেদন জানায়, ট্রাইব্যুনাল তাও বাতিল করে।
মুলভ্যানি বলেন, ২০১২ সালের এপ্রিলে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন’ এক ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে তিনি তার ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য সরবরাহ করতে অস্বীকার করেন। তিনি শুধু তাকে একজন ‘আন্তর্জাতিক মানের বিচার’ দাবিকারী হিসেবে আখ্যা করেন।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মীদের যারা ওই আলাপের কপিটি সরবরাহ করেন, তারা কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি। কারণ যে হার্ডডিস্কে ওই তথ্য সংরক্ষিত ছিল, তাতে যাদের আইনগতভাবে প্রবেশাধিকার রয়েছে তারাই আমাদের এ তথ্য সরবরাহ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তার কম্পিউটার হ্যাক করিনি’। মুলভ্যানি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম তার কম্পিউটার থেকে সব তথ্য অন্য কম্পিউটারে স্থানান্তর করেন। হয়তো একইসঙ্গে অন্য একটা কম্পিউটারে নয়; তার কম্পিউটার থেকে এক কম্পিউটারে, সেখান থেকে আরেকটা কম্পিটারে- এভাবে। তিনি ভেবেছিলেন যে, তিনি শুধু নির্দিষ্ট কিছু তথ্যই পাঠাচ্ছেন কিন্তু তিনি আসলে পুরো হার্ডডিস্ক’ই স্থানান্তর করেছিলেন।
তিনি বিশেষভাবে দাবি করেন, নাসিম আইন মন্ত্রণালয়ে তথ্য স্থানান্তর করেছিলেন। আমাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা হয়তো যা পেয়েছে তা শেয়ার করে নৈতিকতার লঙ্ঘন করেছে, কিন্তু তারা কোনো অপরাধ করেননি।
মুলভ্যানির ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায় যে, নাসিমের কম্পিউটারে এমন কোনো সফটওয়্যার ছিল যা ওই স্কাইপি আলাপ তার কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে রেকর্ড করে রেখেছে।
তবে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, তিনি ওই কোম্পানিকে চেনেন না। তিনি চেয়ারম্যান নাসিমের কম্পিউটার থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে কোনো তথ্য গ্রহণ করার কথাও পুরোপুরি অস্বীকার করেন। মন্ত্রী বলেন, আইন মন্ত্রণালয় সরকারের একটি নির্বাহী দপ্তর। আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে এর কোনো যোগ নেই। বিচার বিভাগ সরকার থেকে পুরোপুরি স্বাধীন।
নিজামুল হক নাসিমের ই-মেইলের ব্যাপারে মুলভ্যানি কৌতুক করে বলেন, ওই বিচারকের পাসওয়ার্ড সবারই জানা ছিল। ঢাকার বিলবোর্ডগুলোতেই তার পাসওয়ার্ড আছে। আমার ধারণা যে, ওই বিচারক তার একাউন্টে নিজে ঢুকতে পারতেন না। এ ব্যাপারে তাকে অন্য কেউ সাহায্য করতো। অনেকের কাছ থেকেই তিনি এ রকম সহায়তা নিয়ে থাকেন।
মুলভ্যানি এও অস্বীকার করেন, তার কর্মীদের কেউ ওই বিচারকের ই-মেইল একাউন্টে প্রবেশ করছে। তিনি আরও বলেন, ইকোনমিস্ট বা আমার দেশকে এসব তথ্য তার কোম্পানি দেয়নি।
মুলভ্যানি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউজডে ম্যাগাজিনের এশিয়া করেসপন্ডেন্ট ছিলেন এবং এরপরই কেপিএমজির করপোরেট ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি বলেন, আমরা ইকোনমিস্টে এ তথ্য প্রকাশ করতাম না। আমরা বরং যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকাগুলোতে এ তথ্য প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। আমার দেশ এ তথ্য প্রকাশ করার পর আমি পত্রিকাটির সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানতেন যে, আমি এর সঙ্গে জড়িত আছি কিন্তু আমি জানিনি যে, আমার কাছে যে কপিগুলো আছে সেগুলো’ই তার সাইটে রয়েছে কি না।
মুলভ্যানি মনে করেন, তার কোম্পানিই এ তথ্য বের করার ব্যাপারে মূল ভূমিকা পালন করে। তবে ইকোনমিস্টকে এ তথ্য আমরা দেইনি। তবে এ তথ্য পাওয়ার পর আমাদের মক্কেল তা নিয়ে কি করেছে তা আমরা জানি না। ‘টাইমিং দেখে মনে হয় ইকোনমিস্ট আমাদের মক্কেলের কাছ থেকে অন্য কারও মাধ্যমে এ তথ্য পেয়ে থাকতে পারে। অথবা আরও কয়েক হাত ঘুরে এ তথ্য তাদের কাছে গেছে। অথবা এমনও হতে পারে যে, আমরা যে সোর্স থেকে এ তথ্য নিয়েছি তারা হয়তো আরও অনেকের কাছেই এ তথ্য পাচার করেছে। আর ওই বিচারকের কম্পিউটারে যেহেতু অনেকেই ঢুকতো তার মানে একাধিক সূত্রও তথ্য পাচারের ব্যাপারে কাজ করে থাকতে পারে।’
এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর বিদেশি উপদেষ্টাদের একজন টবি ক্যাডম্যান বলেন, মুলভ্যানি ওই স্কাইপি এবং ই-মেইল আলাপের কোনো তথ্য তাকে দেননি। তিনি বলেন, জেমস বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আমার কোনো উদ্বেগ আছে কিনা তা জানার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ইকোনমিস্টের নিবন্ধ প্রকাশের পর তিনি এ ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চান। তবে আমি তার মক্কেলের পরিচয় জানতে চাইনি।
বিষয়: বিবিধ
১০৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন