লন্ডনে আলোচনা সভায় যোগ দেয়নি সরকারের কোনো প্রতিনিধি ত্রচটিপূর্ণ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম স্থগিত করতে ইংল্যান্ডের বার হিউম্যান রাইটস কমিটির আহবান

লিখেছেন লিখেছেন মেজর জলিল ২৩ মার্চ, ২০১৩, ১২:২০:২৮ দুপুর

যুক্তরাজ্যের আইনজীবীদের সংগঠন বার হিউম্যান রাইটস কমিটি অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের পক্ষ থেকে অবিলম্বে বাংলাদেশে ত্রচটিপূর্ণ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম স্থগিত করার আহবান জানানো হয়। বলা হয়, এই প্রক্রিয়াকে ন্যায়বিচারের মানদন্ডে উন্নীত করতে চাইলে বাংলাদেশের উচিত আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে স্কাইপি কেলেঙ্কারির নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়। হাউস অব কমন্সের একটি কমিটির কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়। এতে অংশ নিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিফেন জে র‌্যাপ বিচার কার্যক্রমে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়ায় যেসব ত্রচটি ঘটেছে, সেগুলো সংশোধনের সময় এখনো ফুরিয়ে যায় নি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইতোমধ্যে যেসব মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে, সেগুলোর দুর্বলতাগুলো সুপ্রিম কোর্ট সংশোধন করতে সক্ষম হবেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাভবেরি বলেন, এই বিচারের বিষয়টিকে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ করা হলে তা হবে একটি ঘৃণ্য কাজ।

গত সোমবার রাতে বার হিউম্যান রাইটস কমিটি অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের আয়োজনে হাউস অব কমন্সের একটি কমিটির কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওপর আলোকপাত’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাভবেরি। বক্তব্য দেন বার হিউম্যান রাইটস কমিটি অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের প্রধান কার্স্টি ব্রিমলো কিউ সি, ওই সংগঠনের কর্মকর্তা সোনা জলি, অভিযুক্ত ও দন্ডপ্রাপ্তদের ব্রিটিশ আইনজীবীদের অন্যতম জন ম্যাককিনন, মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মকর্তা ক্লাইভ বাল্ডউইন এবং লর্ডসভার সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যারনেস মঞ্জিলা পলাউদ্দিন।

বক্তারা সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার সংঘটিত নিষ্ঠুরতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রতি তাঁদের সমর্থনের কথা জানালেও বিচার-প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচারের মানদন্ড অনুসৃত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।

লর্ড অ্যাভবেরি জানান, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি, হাইকমিশনার ও সরকারের প্রতিনিধিদের সভায় আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁরা আসেননি। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সভায় একটি লিখিত বিবৃতি পাঠানো হয় এবং একজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তা সভায় উপস্থিত হয়ে সেখানে উত্থাপিত প্রশ্ন ও উদ্বেগের বিষয়গুলোর বিবরণ লিখে নেন। হাইকমিশনের পাঠানো বিবৃতিতে ইংলিশ বার এসোসিয়েশন ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর কোনো জবাব দেয়া হয়নি জানিয়ে কার্স্টি ব্রিমলো ও লর্ড অ্যাভবেরি জানান যে এটি মূলত একটি রাজনৈতিক বক্তব্য।

রাষ্ট্রদূত স্টিফেন র‌্যাপ বলেন, এই বিচারের বিষয়ে দেশটির প্রধান দুই দল বা সব দলের মধ্যে আগে থেকে একটি সমঝোতায় পেঁŠছানো সম্ভব হলে রায়-পরবর্তী প্রতিবাদ ও বিতর্ক এড়ানো সম্ভব হতো। তিনি মন্তব্য করেন, দন্ডপ্রাপ্তরা পরবর্তী সময়ে ছাড়া পেয়ে যাবেন এই আশঙ্কার কারণেই শাহবাগে মৃত্যুদন্ডের দাবিতে আন্দোলন শুরচ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও অতীতে অনেক মামলার ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ডের দাবি জানাতে দেখা গেছে। এর কারণ হলো, যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া আসামী এক সময় মুক্তি পেয়ে ভুক্তভোগীকে আবারও হয়রানি করতে পারেন। বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বহুদলীয় রাজনৈতিক সমঝোতা হলে এ ধরনের শঙ্কা তৈরি হতো না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের অপরাধের বিচারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের চলমান বিচার-প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরচত্বারোপ করেন স্টিফেন র‌্যাপ।

একাধিকবার নিজে বাংলাদেশ সফরের কথা উলে­খ করে রাষ্ট্রদূত র‌্যাপ বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়াকে ন্যায়বিচারের মানসম্পন্ন করার লক্ষ্যে তিনি যেসব সুপারিশ করেছিলেন, তার ৫০ শতাংশ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। আর যেসব বিষয় উপেক্ষা করেছে, সেসব বিষয়ে তিনি তাঁর হতাশার কথা ২০১১ সালের নভেম্বরেই দেশটির সরকারকে জানিয়েছিলেন বলে উলে­খ করেন।

র‌্যাপের বক্তব্য সমর্থন করলেও বার হিউম্যান রাইটস কমিটি অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের পক্ষ থেকে অবিলম্বে ওই বিচারকার্যক্রম স্থগিত করার আহবান জানানো হয়। বলা হয়, এই প্রক্রিয়াকে ন্যায়বিচারের মানদন্ডে উন্নীত করতে চাইলে বাংলাদেশের উচিত আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া। সংগঠনটির কর্মকর্তা কার্স্টি ব্রিমলো ও সোনা জুলি উভয়েই বলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেয়া হয়নি। তারা স্কাইপ কেলেঙ্কারির উলে­খ করে বলেন, এতে বিচারক, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও রাজনীতিকদের যোগসাজশ ফাঁস হওয়ার পরও পুনর্বিচারের ব্যবস্থা না করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হয়েছে। সোনা জুলি বলেন, স্কাইপগেট হিসেবে কথিত কেলেঙ্কারির নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের আইনজীবী জন ম্যাককিনন বলেন, শাহবাগের আন্দোলন না হলে আওয়ামী লীগ সরকার পার্লামেন্টে ফেরত গিয়ে আইন সংশোধন করত না এবং সে কারণে সরকার মৃত্যুদন্ডের জন্য যে আপিল করেছে, তা কোনোভাবেই ন্যায়বিচার হতে পারে না। ম্যাককিনন বলেন, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন লড়বে এই বিচারের ইস্যু নিয়ে। তারা কয়েকজনের রায় ও মৃত্যুদন্ডের বিষয়টিকে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ করে এই বিচার-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ দেয়ার জন্য ভোট চাইবে।

লর্ড অ্যাভবেরি বলেন, এই বিচারের বিষয়টিকে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ করা হলে তা হবে একটি ঘৃণ্য কাজ।

ব্যারনেস পলাউদ্দিন বলেন, এই বিচার বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরচত্বপূর্ণ। তবে মানবাধিকার সংগঠকদের উদ্বেগের বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তিনি ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর ও সংসদীয় সহযোগিতা ফোরামে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন।

বিষয়: বিবিধ

৯৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File