ভারত আন্তঃসংযোগ প্রকল্পের নামে ৩৭ নদীর পানি সরিয়ে নিচ্ছে

লিখেছেন লিখেছেন মেজর জলিল ২৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:১০:১৮ দুপুর

আন্তঃসংযোগ প্রকল্পের নামে ভারত ৩৭টি নদীর পানি সরিয়ে নিচ্ছে বলে উদ্বেগজনক খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীই পানিশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি আবারো আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে ভারতের বহুল আলোচিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প। ভারত এই আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ইতোমধ্যে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এই কার্যক্রমের আওতায় গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বেসিনের ৩৭টি নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এসব নদীর পানি ব্যাপকহারে প্রত্যাহার করে নেবে। এর ফলে ভাটির দেশ বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী পানিশূন্য হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের একাধিক পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন এ নিয়ে উদ্বেগ জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো প্রকাশিত হয়নি। নদীকেন্দ্রিক বৃহত্তম এই প্রকল্পের পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি রায় দিলে তা আবারো বিতর্কের ঝড় তোলে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে দেয়া এই রায়ে বিচারিক প্যানেলের প্রধান বিচারপতি এস. এইচ কাপাডিয়া বলেন, এই প্রকল্পটি জাতির উপকারের জন্য। কিন্তু এটি করতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগছে। এজন্য এটি শীঘ্রই বাস্তবায়ন করতে হবে। বলা হয়, এটি বিহারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। যেহেতু বেশিরভাগ নদীর বন্যা বিহারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এর মাধ্যমে নদীর অতিরিক্ত পানি সরিয়ে নেয়া সম্ভব হলে বিহারে বন্যার প্রকোপ কমবে। বিচারিক বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা ছিলেন বিচারপতি সাওয়াটানটার কুমার ও এ.কে পাটানিক। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিচারিক বেঞ্চ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, মন্ত্রণালয়, বিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মীদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে। পানিসম্পদ মন্ত্রী, এর সচিব, বন ও পরিবেশ সচিব এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের চারজন বিশেষজ্ঞ নিয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। এটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর একটি স্বপ্নের প্রকল্প। তিনি ২০০২ সালের অক্টোবরে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিলেন খরা থেকে ঐ এলাকা বাঁচাতে। আদালতের বেঞ্চ আরো বলেন, ‘আমরা সরকারকে এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছি। কমিটি এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।’ তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ভারত এই রায়ের আগেই এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে দেয়।

ভারতের ১২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরির কাজ আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের আওতায় ১৭ হাজার ৩শ’ কোটি ঘনমিটার পানি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র থেকে প্রত্যাহার করে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলের শুকনো এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতের এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর এই পানি প্রবাহ ব্যবহার করে ১২ হাজার ৫শ’ কিলোমিটার খাল খনন, ৩ কোটি ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান এবং ৩৪ হাজার মেগাওয়াট পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন। এছাড়া নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং খরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।

হিমালয়ান অঞ্চলের যেসব নদী এই সংযোগের আওতায় আসবে তার মধ্যে রয়েছে, কোসি-মেচি লিঙ্ক, কোসি-ঘাগরা লিঙ্ক, গন্ধক-গঙ্গা লিঙ্ক, ঘাগরা-যমুনা (ইয়ামুনা) লিঙ্ক, সারদা-যমুনা লিঙ্ক, যমুনা-রাজস্থান লিঙ্ক, রাজস্থান-সবরমতি লিঙ্ক, চুনার-সোন ব্যারাজ লিঙ্ক, সোন ব্যারাজ-গঙ্গার দক্ষিণাঞ্চলীয় উপনদীসমূহের সংযোগ, মানাস-সঙ্কোশ-তিস্তা-গঙ্গা (ফারাক্কা) লিঙ্ক, যোগীঘোপা-তিস্তা-ফারাক্কা লিঙ্ক, ফারাক্কা-সুন্দরবন লিঙ্ক, গঙ্গা-দামোদর-সুবর্ণরেখা লিঙ্ক, সুবর্ণরেখা-মহানদী লিঙ্ক প্রভৃতি। এই পরিকল্পনা প্রণয়নে ভারত দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্ক ফোর্সকে প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার অধিকার দেয়া হয়নি। কেবল কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। তবে সেখানকার সুশীল সমাজ, শিক্ষাজীবী ও গণমাধ্যম এর বিরোধিতা করে চলেছে বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ভারতের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়। ২০০৫ সালে সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিষয়টির প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের নদী সংযোগ প্রকল্প এ দেশের জন্য নানা সমস্যার সৃষ্টি করবে। বিপন্ন হবে কৃষি-অর্থনীতি, নদীর নাব্যতা, সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য। নদী ও প্লাবন-ভূমিতে বাড়বে লবণাক্ততার প্রকোপ।’ পানি সম্পদ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিধিতে বলা আছে, এক দেশের প্রকল্প যেন অন্য দেশের পরিবেশ ও আবাসন ব্যবস্থাকে ব্যাহত না করে। কিন্তু বাংলাদেশমুখি নদীগুলোতে ভারত নানা প্রকল্প তৈরি করে এই পরিবেশ ও জীবনযাত্রাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নীতির প্রতিও তাদের দায়বদ্ধতা দেখা যাচ্ছে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। অবশ্য বর্তমান বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেনি।

ভারতের মূল উদ্দেশ্য হলো তাদের ভূগর্ভের পানি সম্পদ ব্যবহারের পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানিকে কাজে লাগিয়ে ফসল ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। এজন্য তারা আন্তঃনদী সংযোগের মতো অতি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তা করতে গিয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশের মরুময়তার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার আশঙ্কাকেও তারা তোয়াক্কা করছেনা। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইতোমধ্যে ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে যে করুণ ও তিক্ত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের হয়েছে, এখন আন্তঃনদী সংযোগের মতো প্রকল্প বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে কোথায় নিয়ে যাবে- তা নিয়ে এখানকার জনগণের ভেতরে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি কেবল তাদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করে রায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের ফলে প্রতিবেশী দেশের যে বিপুল ক্ষতি হবে সে বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি বলে বিভিন্ন মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৩০০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

168615
২৭ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২২
বড়মামা লিখেছেন : ভারত বাংলাদৈশের শত্রু তারা আমাদের শন্তি চায় না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
168631
২৭ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৪১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভারতের বিরদ্ধে অবস্তানের প্রথম ও একমাত্র পদ্ধতি হলো আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File