ঘুরে এলাম শাহবাগ, দেখে এলাম যা.....

লিখেছেন লিখেছেন সাকিয়া ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:৩২:৫৭ রাত

অনেক শুনেছি শাহবাগ নিয়ে। গণমাধ্যমে দেখেছিও অনেক। আজ চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করলাম। যা দেখলাম তা ব্যক্ত করতেও বিব্রতবোধ করছি। এটাই কি তাদের আন্দোলন। এরকম আন্দোলনই কি গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হয়েছে। নাকি আগের আন্দোলন আজকের থেকে আলাদা ছিল। তবে শুনেছি এরকমই নাকি ছিল। তবে কেন গণমাধ্যমগুলো এভাবে প্রকাশ করছে? অনেক ভেবেছি, উত্তর পাইনি। আশা করছি পাঠকরা তাদের উর্বর মেধার মাধ্যমে আমাকে বোঝাতে সক্ষম হবেন।

শাহবাগে নেমেই দেখছি পুলিশগুলো রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে দাড়িয়ে আছে। দুরে অনেক মানুষের জটলা। কয়েকটি গণমাধ্যমের গাড়ি। চার হতে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত কিছু যুবক-যুবতী। তাদের হাতে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র। বাজছে বেসুরো গলায় গান। কয়েক যুবতীকে দেখলাম বিভিন্ন ভঙ্গিতে হেলে দুলে নৃত্য করতে। প্রাইমারী স্কুলে আমার বান্ধবী সঙ্গীতা তার বাড়িতে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল পুঁজা দেখতে। পুঁজার আরতি আমার দেখতে ভাল লেগেছিল। তারপর আমার আর আরতি দেখা হয়নি। শাহবাগের যুবক-যুবতীদের বিশেষ নৃত্য আমাকে আরতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। আরতির মতো করে অনেক আগ্রহ নিয়েই আন্দোলন দেখেছি। আন্দোলনে খুঁজে পেলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধুকে। সে আমাকে দেখেই উঠে এলো। তার সাথে অনেক কথা শেষে জিজ্ঞাসা করলাম আন্দোলন কেমন চলছে? সে যা উত্তর দিল তা এই যে, আন্দোলনকারী এক মেয়ে তার নজর কেড়েছে। তাকে খুব কাছ থেকে দেখার এছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিলনা। সে জানালো আন্দোলনে অংশ নেয়ায় তার সম্পর্কে অনেকটাই জানার সুযোগ হয়েছে।

যাই হোক, একজনের বাড়ি পোড়া যায় আর কেউ সেই আগুনে সিগারেটও ধরায়। সেকথা বলছিনা।

পাঠকরা আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না যে শাহবাগ নিয়ে দেশে বিদেশে কথা হচ্ছে সেই শাহবাগের আন্দোলনে আনুমানিক আন্দোলনকারীর সংখ্যা ৪০ হতে ৬০ জন। এরা ৫ হতে ৮টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আর এসব দৃশ্য ধারণ করবার জন্য রয়েছে ২৫০ হতে ৩০০ জন সাংবাদিক। আর আন্দোলনকারীদের কীর্তি দেখতে এসছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। আর এসব দর্শককে পুজি করেই মিডিয়া তৈরী করছে মুখরোচক সংবাদ। অদ্ভুদ! অদ্ভুদ চিত্র! সাংবাদিকদের কি সংবাদের অভাব? নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারা এ খেলায় মেতে উঠেছে? অবাক করা তথ্য হচ্ছে- একটি অনলাইন মিডিয়া আন্দোলনস্থলেই প্রজেক্টর টানিয়ে দিয়েছে। এখানে শুধু এ মিডিয়ারই প্রায় ৩৫ জন সাংবাদিক সারা রাত জেগে কাজ করছে বলে তারা প্রকাশ করেছে। আমাদের দেশে আনুমানিক ২০০ টি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিযা রয়েছে। এসব মিডিয়ার আনুমানিক ১০ হাজারেরও বেশী সাংবাদিক রয়েছেন। এসব সাংবাদিকরা যদি শাহবাগের মতো নিরলসভাবে কাজ করে যেত তবে দেশ থেকে দুর্নীতি, ধর্ষন, খুন, চোরাকারবারি, অর্থ কেলেঙ্কারী সবই দুর করা যেত। দু:খ এখানেই যে, যার কিছু টাকা হয় সে বনে যায় ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি আর সে ব্যবসা বা শিল্পকে বৈধ/ অবৈধভাবে রক্ষা করতে খুলে বসে পত্রিকা অথবা টিভি চ্যানেল। আসলে অর্ধশতাধিক মানুষের এ আন্দোলনকারীদের সংবাদ প্রচার করতে দুই শতাধিক সাংবাদিক কাজ করছে তাই এত কথা বলতে হলো।

আন্দোলন স্থলে ৩০ মিনিট সময় দিয়ে মিডিয়ার প্রতি লজ্জ্বায় ঘৃণায় স্থান ত্যাগ করেছি। আর ভাবছি, এই আন্দোলন নিয়ে সরকারের এত বাগাড়ম্বর।শাসকদলদের এসব নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। দেশে যেন আর কোন ইস্যু নেই। অথচ দেশের মানুষ আজ দিশেহারা। মরিচের দাম আবারও আকাশছোয়া। তেল ডিজেল বিদ্যুতের অভাবে মানুষের মাঠ ফেটে চৌচির। প্রতিদিন পিটিয়ে মারা হচ্ছে মানুষ, গুম হচ্ছে মানুষ। সরকারের কোন খেয়াল নেই।

শাহবাগ দেখে মনে হয়েছে আমাদের শাসক শুধু শাহবাগকে পুজি করেই আবারও ইলেকশনে যেতে চায়................

বিষয়: বিবিধ

১৩০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File