বাংলাদেশ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং আমাদের প্রত্যাশা
লিখেছেন লিখেছেন রুপসিবাংলা ১৩ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৫৩:১০ রাত
আমি আমার এ লেখাটি ৫ পারাগ্রাফ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখব | আমি মূল আলোচনায় যাবার আগে তিনটি বিষয় ব্যাখ্যা করে নিতে চাই; প্রথমত: বাংলাদেশ এর ভৌগলিক অবস্থান, এর স্বাধীনতার ইতিহাস, এর রাজনৈতিক ইতিহাস এবং বর্তমান বিশ্বায়নে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন সেটি খুব সংক্ষেপে আলোকপাত করা; দ্বিতীয়ত: যুদ্ধপরাধীদের বিচার এবং তৃতীয়ত: 'আমাদের" বলতে আমি কী বুঝতে চাই | দেমগ্রাফিকালি [Enter Post Title Here]
আমি আমার এ লেখাটি ৫ পারাগ্রাফ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখব | আমি মূল আলোচনায় যাবার আগে তিনটি বিষয় ব্যাখ্যা করে নিতে চাই; প্রথমত: বাংলাদেশ এর ভৌগলিক অবস্থান, এর স্বাধীনতার ইতিহাস, এর রাজনৈতিক ইতিহাস এবং বর্তমান বিশ্বায়নে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন সেটি খুব সংক্ষেপে আলোকপাত করা; দ্বিতীয়ত: যুদ্ধপরাধীদের বিচার এবং তৃতীয়ত: 'আমাদের" বলতে আমি কী বুঝতে চাই | দেমগ্রাফিকালি বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হলেও এর সার্বিক ভাবে বাংলদেশ এর সংস্কৃতি ইসলামভিত্তিক নয় | এর পেছনে কী কারণ সে আলোচনার স্থান এটি নয়, সে জন্য সে দিকে আলোচনা কে নিতে চাই না | বাংলাদেশ এর স্বাধীনতা প্রাপ্তি হচ্ছে যতটানা রাজনৈতিক বাস্তবতা, তার চেয়ে বেশি হলো গাণিতিক বাস্তবতা| গাণিতিক বাস্তবতা এ কারণে বলছি যে গনিতে যেমন লজিকাল সেকুএন্স মেনে চলা হয়, আর সেটি না মানা হলে ফলাফল হয় ভুল, তেমনি বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক কোনো লজিকাল নিয়ম-ই মানছিলো না , ফলত: এর অনিবার্য পরিনাম হলো বাংলাদেশ এর প্রাপ্তি; তবে এই প্রাপ্তির সমযপযোগীতা নিয়ে যে কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলতে পারেন | বাংলাদেশ এর রাজনৈতিক দর্শন বার বার ঘুরপাক খেয়েছে একটা বা দুইটা মৌলিক প্রশ্ন কে সামনে রেখে, এর প্রথমটি হলো রাজনৈতিক ন্যায়পরতা আর অন্যটি হলো অর্থনৈতিক ন্যায়পরতা কে কেন্দ্র করে| স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪০ বছরে যে কয়টি দল বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছিলো তারা সবাই এই দুইটি বিষয়ের সমাধানের জন্য প্রায় একই ধরনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক তত্ত্ব ব্যবহার করেছেন| তবে যে পার্থক্য এদের মধ্যে দেখা যায় সেটি হলো দৃষ্টি ভন্গিগত পার্থক্য | বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশ যে রাষ্ট্রগুলো দ্বারা বেষ্টিত সেই রাষ্ট্রগুলোর সাথে প্রধান যে পার্থক্য পরিলোখ্খিত হয় সেটি হলো প্রধানত আইডেনটিটি কেন্দ্রিক|যার ফলে বার বার-ই এ দেশের রাজনীতিতে মৌলিক সমস্যা সমাধানের বিষয় পাশ কাটিয়ে অন্য বিষয় গুলোর প্রধানত আদর্শিক দ্বন্দের প্রভাব খুব পরিলোখ্খিত হয়| ২য় যে বিষয়ীটির ব্যাখ্যা করা দরকার মনে করি সেটি হলো “যুদ্ধপরাধ”| এর যেমন রয়েছে আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য সংগা তেমনি রয়েছে দেশীয় সংগা, উভয় সংগা তেই এর connotation and denotation খুব পরিষ্কার|তারপরও দেখা যায় এর যথেচ্ছ ব্যবহার| সর্বশেষ আমাদের বলতে আমি বুঝিয়েছি বিবেকবান মানুষদেরকে|সেই মানুষরাই বিবেকবান যারা intentionally কোনো বিষয়ের গুনকে যৌক্তিক কারণে মেনে নিতে দ্বিধান্নিত হয় না | সেই সব লোকদের কে বিবেকবান বলছিনা যারা বিবেকের যৌক্তিকতাকে মেনে নিতে এখনো প্রস্তুত নয়| সুতরাং প্রত্যাশা বলতে সেই সকল বিবেকবান মানুষের প্রত্তাশাকেই গুরুত্ব দিচ্ছি| আমার সার্বিক আলোচনার বিষয় হলো তাহলে যুদ্ধপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত বিবেকবান মানুষের প্রত্যাশা এবং বাংলাদেশের ভবিশ্সত |
প্রথম কথা হলো গত ৪০ বছরে আমাদের অনেক অর্জন হয়েছে, যেটি পেতে আমাদের অনেক মেধা, শ্রম, সময় ব্যয় করতে হয়েছে| অবিবেচনা প্রসুত কাজের জন্য যদি আমাদের এই প্রাপ্তি বৃথা যায় তাহলে সেটি আমাদের কারো জন্য সুখের হবে না|অনেক দিন পর আমরা যুদ্ধপরাধীদের বিচারে ট্রাইবুনাল করতে পেরেছি|এই ট্রাইবুনাল গঠন করা বড় challenge নয় , বরং বড় challenge হলো একে স্বাধীন ভাবে আন্তর্জাতিক মানে কাজ করতে দেয়া| এখন যদি আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশের গ্রামের কোনো লোক দাবী করে যে আমার দাদা রাজাকার ছিলো এবং তিনি জোর করে তাদের ৫০ বিঘা জমি দখল করেছে এবং সেই কাজে সাহায্য করেছেন আমর একমাত্র জীবিত চাচা- তাহলে তাত্ক্ষণিক ভাবে আমার কী করার থাকতে পারে? আমি যেটা করতে পারি, সেটি হলো তার কাছে প্রমান চাওয়া এবং বিষয়টিকে আদালতের মাধ্যমে মিমাংসা করা | তার এই দাবীর পক্ষে যদি কোনো শুদ্ধ, গ্রহণযোগ্য প্রমান না পাওয়া যায়, এবং তার পরও যদি আমার দাদা কে দোষী গণ্য করা হয় তাহলে ব্যক্তি হিসাবে, একজন বিবেকবান মানুষ হিসাবে আমার কী করার থাকে, বা আমি তখন দেশকে নিয়ে কী ভাবতে পারি? দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার ধারণা কেমন হবে?
প্রভাবশালী হবার কারণে কিংবা অপরাজনীতি করার কারণে কিংবা প্রচুর অর্থ থাকার কারণের যদি এলাকার অনেক মানুষকে দাবিদার সংগ্রহ করে আমাদের বিরুদ্ধে দাড় করতেও পারে , তাহলেও কী একটা মিথ্যা সত্য হতে পারবে? অবশ্যই না! এখন যদি প্রভাবের কারণে আইন পরিবর্তন করে বলা হয়, যেহেতু এত সংখ্যক লোক , চাই তারা দেখুক আর না দেখুক, দাবী করছে যে আমার দাদা এবং চাচা অপরাধী, সেহেতু আইনের সার্বজনীন বিধান এদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না|সেই সার্বজনীন বিধানটি হলো প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত বিবাদী নিরপরাধ বলেই গণ্য হবেন, আর তাকে অপরাধী হিসাবে প্রমান করার দায়িত্ব যারা বাদী তাদের| এর মানে হলো আমার দাদা এবং চাচা বিচার ছাড়াই আদালতে অপরাধী হিসাবে উপস্থিত হবেন| এটি কী কখনো যৌক্তিক কোনো বিধান হতে পারে? মনে হয় পারে না |
আমি আমার দাদা বা চাচাকে অপরাধ করতে দেখি নাই|আমার কাছে তাদের পরিচয় একজন নিরপরাধ, কোমল র্হিদয়ধারী, rational, emotional, loving and caring মানুষ হিসাবে| এর পরও বিবেকের তাড়নায়, একজন শিক্ষিত মানুষ হিসাবে আমার অবস্থান কী হবে? আমি কী আমার দাদা বা চাচা হবার কারণে তাদের বিচারের পথ কে রুদ্ধ করবো? আমি কী অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিচার চারা-ই আমার চাচাকে নির্দোষ ঘোষণা করে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবো? একজন বিবেকবান মানুষ হিসাবে আমি সেটা করতে পারি না| আমিও তার বিচার চাই, কিন্তু তাই বলে কী প্রমান ছাড়া, proper witness ছাড়া, আমার চাচাকে defend সুযোগ দেয়া ছাড়া, হাজার মানুষের বিকৃত দাবীর কাছে হার মেনে দেয়া রায়কে আমি মেনে নিতে পারি? অবশ্যই পারি না | আমি যা চাই সেটি হচ্ছে Color blind justice | বিবাদী যে-ই হোক না কেন পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমান সাপেক্ষে তার সঠিক বিচার হতে হবে | ন্যায়পরতার দাবী-ই হচ্ছে একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে কোনো প্রকারে শাস্তি না পায়, সে যে দলের-ই হোক না কেন|
আমার শেষ অনুচ্ছেদে আমি বাংলাদেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে বলতে চাই যে, আজ যে ট্রাইবুনাল করে, বিচার করা হচ্ছে সেটি সময়ের দাবী হোক বা না হোক, সেটি যে মানুষের দাবী এ ব্যাপারে কারো দিমত নেই| দ্বিমত হচ্ছে এ আশংকা যে জামায়াতের নেতারা শুধু কেন বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে? যে দুইটি রায় হয়েছে সেই দুইটি রায় কেন প্রশ্নাতীত ভাবে জাতির কাছে গ্রহণ যোগ্য হলো না? কেন দেশের চিন্তাশীল লোকজন বলছেন যে কোনো রায়-ই সাক্ষ্য প্রমান থেকে নিসৃত নয়? কেন-ই বা যাদের নামে অভিযোগ দাখিল হলো, প্রমাণিত না হওয়ার আগেই তাদের কে দোষী হিসাবে গণ্য করা হলো? নিজেদের আবেগের প্রতিফলনের প্রয়োজনে কেন বিচারাধীন সময়ে আইন পরিবর্তন করা হলো? এগুলো কী বিবেকবান মানুষের প্রশ্ন নয়? এর মানে কী এটা নয় যে দেশের বিবেকবান মানুষদের প্রত্যাশা নিয়ে কিছু মানুষ খেলা করছেন? এ অবস্থায় দেশের Future নিয়ে কী এই মানুষগুলো চিন্তিত নয়? ধরা যাক পরবর্তী নির্বাচনে বর্তমান বিরোধী দল ক্ষমতায় গেলো, তারা যদি একই রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে বিরোধীদলকে কোনঠাসা করতে চায় তাহলে সেটি হবে দেশের জন্য খারাপ একটি অবস্থা, আর যদি বর্তমান সরকার আবার ক্ষমতায় যায় তাহলে তারা নিজের দলের সদস্য ছাড়া বাকিদের মানুষ তো দুরে থাক উন্নত মানের কোনো প্রাণী হিসাবে ও মনে করবে না, তখন অবস্থা যা হবে তাকে তুলনা করা চলে “ভয়ঙ্কর” নামক শব্দ দ্বারা| সেই ভয়ংকর অবস্থা থেকে দেশ কে রক্ষা করার দায়িত্ব দেশের বিবেকবান মানুষদের | আসুন আমরা দেশকে সমূহ ভয়ংকর অবস্থা থেকে রক্ষা করি, নিজের বিবেক বোধকে জাগিয়ে তুলি আর আওয়াজ তুলি, we don’t know parties, we want justice;
বিষয়: রাজনীতি
২৫৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন