আস্তিক ও নাস্তিকের জীবনের মূল্য

লিখেছেন লিখেছেন রুপসিবাংলা ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:২৪:০২ সন্ধ্যা

মানুষের জীবনের মূল্য কিসে নির্ধারিত হয়, এ প্রশ্ন নতুন নয়|দার্শনিক Aristotle থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রায় সকল মৌলিক চিন্তাবিদগণ মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে তাদের চিন্তা প্রসূত ব্যাখ্যা দিয়েছে|দর্শনিক্ভাবে শুধু মানুস নয়, যে কোনো কিছু টা সে material or immaterial হোক সেই বস্তুর[object]মূল্য বা মর্যাদা নির্ধারিত হয় তার defining characteristics এর উপর ভিত্তি করে|যেমন কোনো বস্তুতে যে মৌলিক গুনাবলী থাকা দরকার যাকে জন লক বলেছেন primary quality টা যদি না থাকে তাহলে তাকে ওই বস্তু বলা যাবে না|বস্তুর এই primary quality’র উপর নির্ভর করে বস্তুর পরিচয়|উদাহরণ স্বরূপ, আপনি বাজারে গেলেন কাঠের চেয়ার কিনতে কিন্তু আপনি দেখলেন দোকানি আপনাকে যে চেয়ার দেখাচ্ছেন সেটি হাত দিয়ে চাপ দিলে দেবে যায়| আপনি কী বলবেন বা মেনে নেবেন যে এটি একটি কাঠের চেয়ার|মনে হয় আপনার বুদ্ধি এতটা লোপ পায়নি যে আপনি কাঠের চেয়ার এর মৌলিক গুনাগুন ভুলে যাবেন|কাঠের একটা মৌলিক গুন হলো এর শক্তত্ত| কথা বলছিলাম মানুষের মর্যাদা নিয়ে|মানুষের মর্যাদা অন্য সকল জীবের উপরে থাকার মূল কারণ হলো মানুষের essence|কতটা শক্তিশালী হলে মানুষ নামক প্রাণীটি আসলে মানুষ হবে অথবা তার আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য কেমন হলে তাকে মানুষ বলা যাবে-এ বিষয়গুলো মানুষের মর্যাদা নির্ধারণে মোটেই ভুমিকা পালন করে না|ঠিক তেমনি ভাবে মানুষ কোন জাতি গোষ্ঠীতে জন্ম গ্রহণ করলো, কিংবা দৈব চক্রে [John Rawls এর ভাষায় ‘Luck’] পৃথিবীর কোন স্থানে জন্ম গ্রহণ করলো তার উপর মানুষের মৌলিক মর্যাদা নির্ভর করে না| মানুষের মৌলিক মর্যাদা নির্ভর করে মানুষের সত্তার উপর, Aristotle যাকে বলেছেন বুদ্ধি-বৃত্তি|উচু বংশে জন্ম গ্রহণ কারী কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কারণে তার rationality and consciousness loss করে ফেলে তখন তাকে আমরা মানুষ নামে না ডেকে অন্য নামে ডাকি, যেমন এ রকম একটি নাম পাগল|সুতরাং অন্য সকল বস্তুর মতো মানুষের মর্যাদা নির্ভর করছে মানুষের বুদ্ধি, কারো মতে মানুষের নৈতিকতা, এবং তার ব্যবহারের উপর| এ থেকে বুঝা যায় মানুষের মর্যাদা তার, নাম, বংশ, গোত্র, দল, ধর্ম, বর্ণ এ সকল বিষয়ের উপর নির্ভ্ভর করে না|

ফেসবুকে এক ভদ্রলোক প্রশ্ন তুলেছেন, একজন নাস্তিকের জীবনের মূল্য কী একজন আস্তিকের জীবনের মূল্য থেকে কম? যৌক্তিক প্রশ্ন ! অবশ্যই কম নয়|একজন আস্তিক তিনি যে ধর্মের-ই হন না কেন এ কথা অবশ্যই মানবেন যে স্রষ্টার কাছে মানুষের চেয়ে মর্যাদা পূর্ণ কোনো সৃষ্টি নেই| ইসলাম মনে করে প্রতিটি মানুস-ই Potentially Muslim| সে জন্য কোনো মানুষকে হত্যা করাকে পুরো মানব জাতিকে হত্যা করার শামিল করা হয়েছে| ইসলাম কয়েকটি সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রছাড়া মানুষ হত্যার বিষয়টিকে কোনো ভাবেই অনুমোদন করে না|এ কথাটি যেমন ইসলাম বেশ জোরের সাথে বলে ঠিক তেমনি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি অন্যায় ভাবে অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আঘাত করে তাহলে সেটি প্রতিরোধ করাকে ইসলাম আবশ্যক গণ্য করে|যেমন, কোনো একদল ডাকাত যদি অন্যায় ভাবে একদল পথচারীকে আক্রমণ করে তবে তাদেরকে প্রতিরোধ করা অপরিহার্য| সমভাবে একদল মানুষ যখন অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের পথের অন্যায়ভাবে বাধার সৃষ্টি করে সংস্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষতির কারণ হয় তবে তাকে প্রতিরোধ করা আবশ্যক|প্রতিরোধের ভাষা ও পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন রকম হতে পারে| এটি হতে পারে সরাসরি প্রতিরোধ অথবা আইনগত প্রতিরোধ, অথবা জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিরোধ, অথবা মন্দের বিপরীতে ভালো কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে প্রটিরোধ|প্রতিরোধের মাধ্যম কেমন হবে সেটি নির্ভর করবে প্রতিপক্ষের তথা আক্রমনকারীর প্রকৃতি, প্রস্তুতি, সময়, স্থান, সংস্কৃতি, এবং অবস্থার উপর|অন্যায়ের প্রতিরোধ করার চেতনাকে ইসলাম তার আদর্শিক বিশ্বাস ও রব তথা আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ এর মাত্রার সাথের সম্পৃক্ত করে দিয়েছে, সে জন্য অন্যায়ের প্রতিরোধের একটা চেতনা সত্যিকারের মুসলিমদের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য|অন্যায়ের প্রতিরোধ যেমন ইসলামে বিশ্বাসীদের অন্যতম গুন-বৈশিষ্ট্য তেমনি অন্যায়ভাবে অন্যায়ের প্রতিরোধের চেষ্টা করাও ইসলামে অননুমোদিত|সুতরাং একজন মুসলিমের কাছে অন্য একজন মুসলিমের জীবন যেমন মূল্যবান, একজন অমুসলিমের জীবন ও ঠিক তেমন-ই মূল্যবান|

ফেসবুকের সেই বন্ধুটি বললেন একজন নাস্তিকের প্রান হারানোর ঘটনা থেকে যারা ধর্মের কথা বলে তারা ফায়দা লুটছে|তিনি অবশ্য এ ইঙ্গিত ও দিয়েছেন যে সম্ভবত ধার্মিকদের কোনো গোষ্ঠী তাকে হত্যা করতে পারে| এ দুটি বচনকে যদি আমরা সত্যতার মানদন্ড দিয়ে বিচার করি তাহলে এ বিশেষ ব্যাপারে কথা বলার সময় বোধকরি এখনো আসেনি| এ বচন ২টি এখনো রয়েছে বিশ্বাস এর পর্যায়, সত্য বচনের পর্যায় আসতে হলে এ বচন দুটিকে আরো পথ অতিক্রম করতে হবে বলে মনে করি কারণ সত্য হতে হলে অথবা অর্থপূর্ণ হতে হলে এর পক্ষে evidence থাকতে হবে, এটিকে কোনো না কোনো ভাবে যাচাই যোগ্য হে হবে- আর তা না হলে এটিকে গ্রহণযোগ্য কোনো কথা বলা বেশ কঠিন|যৌক্তিক বা প্রত্যক্ষ যে কোনো ভাবেই হোক একে যাচাইযোগ্য হতেই হবে তা না হলে এটিকে সত্য বা মিথ্যা কোনটাই বলা যাবে না|উপরন্তু এই কথা যা আপাত সত্য মনে হচ্ছে সেটি Fallible ও হতে পারে|

এখন আমার প্রশ্ন একজন নাস্তিকের জীবনের মূল্য কতজন আস্তিকের জীবনের মূল্যের সমান? একজন নাস্তিকের হত্যার পর যদি তার জীবনের মূল্য নিয়ে কথা উঠতে পারে তাহলে গত কয়েক মাসে যে কয়েক ডজন আস্তিক মানুষের জীবন সংহার হলো সেটি নিয়ে কেন কোনো কথা আমার বন্ধুদের মনে আসে না? তাহলে কী আস্তিক মানুষরা মানুষ নয়? অথবা তাদের জীবনের মূল্য কী এতই নগন্য যে কয়েক ডজন আস্তিকের জীবনের মূল্য একজন নাস্তিকের জীবনের মূল্যের কাছে কিছুই না? যদি কিছু হত তাহলে একজন নাস্তিক হত্যার কারণে যে রকম মর্মবেদনা হয় তাহলে ডজন খানেক আস্তিক মারা যাবার পর ও তার কিছু বেদনা সৃষ্টি হতে কী শক্তি বাধার সৃষ্টি করলো? যদি মনে করা হয় একজন নাস্তিক তার চিন্তা কাঠামোর পরিবর্তন সাপেক্ষে নাস্তিক, আর এই পরিবর্তন-ই তাকে আস্তিকের চেয়ে মূল্যবান করে, তবে এটা চিন্তা করতে বাধা কোথায় যে একজন আস্তিক তার চিন্তা-চেতনার কাঠামোর একটি নির্দিষ্ট দিকের নির্দিষ্ট রকম পরিবর্তনের মাধ্যমের আস্তিক| সে ক্ষেত্রেও উভয়ের জীবনের মূল্যমান সমান বা সম-বৈপরিত্য মানের হওয়া টা কী একেবারে অযৌক্তিক? মনে হয় না|

বিষয়: বিবিধ

১২৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File