এ দেশ ভালোবাসা ও বন্ধনের

লিখেছেন লিখেছেন বিপ্লবী ২৩ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৩৭:০০ রাত

সব মানুষের স্ব্প্ন তোমার চোখের তারায় সত্যি হোক/ আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক/ ... এ মানচিত্র জ্বলছে জ্বলুক এই দাবানল পোড়াক চোখ / আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক’। যে দেশের কবির কলমে আসে এমন মানবিক ভাবনা, যে দেশের শিল্পীর কণ্ঠে ঢেউ তুলে এমন হৃদয়তন্ত্রী জাগানো গান সে দেশকে নিয়ে কোনো পরাশক্তির স্বপ্নই সফল হবে না। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও ুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ যুগ যুগ ধরে বসবাস করছে মমতা আর ভালোবাসার বন্ধনে, আমরা সবাই বাংলাদেশী এই পরিচয়কে ধারণ করে। এদেশ মমতার দেশ, এদেশ ভালোবাসার দেশ। রাষ্ট্রশক্তি কেন, পৃথিবীর কোনো শক্তিই দমন আর নির্মূল অভিযান চালিয়ে কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীকে নিঃশেষ করতে পারবে না। ওপরের উদার নীল আসমান আর নীচের সবুজ জমিনের মতোই দলমত নির্বিশেষে ঐক্যের বন্ধনে বাধা এদেশের মানুষের হৃদয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এদেশের প্রতিটি মানুষ। দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে চলে উদার গণতন্ত্রের চর্চা। পিতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের, ঐ পিতার পুত্ররাই কেউ ছাত্রশিবির, ছাত্রলীগ, ছাত্র দল কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। এ নিয়ে তাদের মাঝে মুক্ত মতবিনিময় হয়, কিন্তু পুত্র পিতার মাথায় কিংবা পিতা পুত্রের মাথায় লাঠি মেরেছে এমন ঘটনা কখনো ঘটে না। রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে অতীতে যারাই এমন অপচেষ্টা চালিয়েছে তারাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অবশেষে জনগণেরই জয় হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের এ চরিত্রকে সূর্যের মাঝে লুকানো সাতটি রঙের সাথে তুলনা করা যায়। আকাশে রঙধনু উঠলেই শুধু পৃথিবীবাসী দেখতে পায় সূর্যের সাতটি রঙ। অন্য সময় ঐক্যের প্রতীক সূর্যের সাদা রঙই তারা প্রত্য করে।

পলি কাদামাটির মতোই এদেশের মানুষের অন্তর। তারা নীরবে নিভৃতে অনেক অত্যাচার অনাচার সহ্য করে, কিন্তু যখন জেগে ওঠে পোড়া মাটির ইটের মতই শক্ত হয়ে যায়। বুলেট বোমাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানায়, ধ্বংসস্তুপের ওপর বিজয়নিশান উড়ায়। এর প্রমাণ তারা দিয়েছে ১৯৫২, ৫৪, ৬৯, ৭১-এ। সর্বশেষ প্রমাণ দিল গত ২৮ ফেব্র“য়ারি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়ে প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আন্তর্জাতিক মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর। সরকারের এই অন্যায়ের প্রতিবাদে এদেশের আপামর জনতা প্রতিবাদ বিােভে ফেটে পড়ে, তারা ফ্যাসিবাদী সরকারের আগ্রাসী পুলিশ বাহিনীর বুলেটকে উপো করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেইল্লা রাজাকারের অপরাধের দায়ে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইনকে দেয়া ফাঁসির রায় তারা মেনে নেয়নি। পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন প্রায় দুইশত তরুণ তাজাপ্রাণ। যাদের মাঝে আছেন মসজিদের ইমাম, হাফেজ, ছাত্র, শ্রমিক, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, কৃষক, বৃদ্ধ, তরুণ, মহিলা ও শিশু। এই রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এলাকা বৃহত্তর ফরিদপুরের অধিবাসী ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গ্রামের বাড়ি ঘুরে এসে এ প্রতিবেদকে জানান, গ্রামের হাটবাজারে দলমত নির্বিশেষে মানুষ মাওলানা সাঈদীর ক্যাসেট বাজিয়ে তাঁর ওয়াজ শুনছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই আওয়ামী লীগের সমর্থক। বার্তা সম্পাদক সাহেব তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনারা তো আওয়ামী লীগকেই ভোট দিয়েছিলেন, এখন সাঈদী সাহেবের ওয়াজ শুনছেন যে, ব্যাপার কি?’ উত্তরে তারা জানান, ‘ভাই, আমরা তো একাজের জন্য তাঁকে ভোট দেই নাই।’ অর্থাৎ মাওলানা সাঈদী সাহেবের ফাঁসির রায় তারা মেনে নিতে পারেনি। এ প্রতিবেদক তার আওয়ামী সমর্থক এক বন্ধুর কাছে দেশের খবর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনের ফলাফলই দেশের বর্তমানের আসল খবর। ১৪ জনের মধ্যে মাত্র একজন।’ তার এ উত্তর শুনে প্রতিবেদকের বুঝতে অসুবিধা হয় না, বন্ধুটি কি বোঝাতে চাচ্ছেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪টি পদের মধ্যে মাত্র একটি সদস্য পদ পেয়েছে, সভাপতি সেক্রেটারিসহ বাকী ১৩টিতে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি জামায়াত।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট মতা দখলের পর থেকেই বিরোধীদল দমনের নামে গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় কায়দায় দেশ শাসন করছে। নির্বাচনী অঙ্গীকারের দোহাই দিয়ে জাতীয় ঐক্যমত ছাড়াই বিরোধীদলহীন সংসদে সিদ্ধান্ত নিয়ে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেছে। এ বিচারের প্রধান টার্গেট দেশের প্রধান ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী এবং পরে সুযোগমত প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে নির্মূল করে আওয়ামী লীগের একক শাসন কায়েম করা। শাসকদল তাদের এ দুঃস্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। পুলিশ বাহিনী, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করছে। বুলেট আর গ্রেনেডের আওয়াজের এমন মচ্ছব শুরু করেছে যে, তারা প্রতিবাদী জনগণের কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে না।

শাসকদলের গণবিচ্ছিন্ন নেতারা দেশের প্রতিটি প্রান্তের জনগণ কী বলছে তা শুনার প্রয়োজন অনুভব করছেন না, তারা ভাবছেন, অত্যাচার নির্যাতন করেই তারা জনগণকে স্তদ্ধ করে মতায় আজীবন টিকে থাকবেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন সবচেয়ে বেশি মানুষকে ফাঁসি দিয়েছিলেন।’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশে-বিদেশে সমালোচিত এই মন্ত্রী তার অপকর্মকে বৈধতা দিতে, আব্রাহাম লিংকনের নামে এ মিথ্যাচার চালিয়েছেন। দেশের অনেক রাজনীতি বিশ্লেষক মনে করছেন, সরকারের এই মতালিপ্সা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ মতের পে বিশ্বের খ্যাতনামা ম্যাগাজিন ইকোনোমিস্টসহ একাধিক দেশী-বিদেশী পত্রিকা নিবন্ধ ছেপেছে। কিন্তু রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, গৃহযুদ্ধ নয়, রাষ্ট্র বনাম জনগণের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এমন যুদ্ধে সবসময় জনগণেরই জয় হয়। ফ্যাসিবাদী শাসকরা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে তারা প্রতিবাদী জনগণকে নির্মূল করে দেশ শাসন করবে, কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হয় না। নাগরিকদের চাওয়াকে গুরুত্ব না দিলে কোনো স্বৈরাচারী শক্তিই মতায় টিকে থাকতে পারে না। জনগণ এমন ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী শাসক দলকে সমর্থন দেয় না। ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এ প্রতিবেদককে বলেন, সম্প্রতি তিনি কয়েকদিনের সফরে কুয়াকাটা গিয়ে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। তিনি সড়ক পথে সফরের সময় রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করে জেনেছেন, দেশের মানুষ গৃহযুদ্ধ চায় না। তারা শান্তি চায়। তাকে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘আমি কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক, আমার মেয়ে জামাই শিবির, বেয়াই জামায়াতে ইসলামী, ছেলে বিএনপি, আমি কার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করবো?’

কুয়াকাটার একজন তরুণ তাকে জানান, ‘আমি কোনো দল বুঝি না মাওলানা সাঈদী সাহেবের কিছু হলে বসে থাকব না।’ এখন প্রশ্ন হলো, তিনি বসে থাকবেন না, কিন্তু কার বিরুদ্ধে লড়বেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে? অবশ্যই না। তার এ দ্রোহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে। একজনের অপরাধের দায়ে নিরাপরাধ সম্মানীত মুফাসসিরে কুরআনকে শাস্তি দেয়ার মতো চরম জুলুমের বিরুদ্ধে। শিকড় কাঁটার কাজে নিয়োজিত অনৈক্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে। দার্শনিকরা মনে করেন, প্রত্যেক মানুষের মাঝেই আরেকজন মানুষ বাস করে, যে মানুষটি জেগে উঠলে তার সব ভয়ের বাঁধন কেঁটে যায়। গোটা পৃথিবীর বিরুদ্ধে সে লড়াই করার সাহস দেখায়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’ মানুষের এমন জাগরণ ঘটে উৎপীড়িতের পক্ষে জালেমের বিরুদ্ধে। সে তখন দল মতের পার্থক্য ভুলে যায়। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার নির্মমতায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মুজাহিদ, ফয়সলসহ সারাদেশে ৫০ জনের বেশি রাজনৈতিক কর্মী শহীদ হন। তারা বর্তমান শাসকদলের বিপক্ষের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। যাদের সাথে তাদের ভালোবাসার বন্ধন তারা সবাই কি একই আদর্শের? অবশ্যই না। উদাহরণ তুলে ধরা হলো, মুজাহিদের পিতা দেলোয়ার হোসেন ছিলেন আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মুজাহিদের নানা মনসুর রহমানের ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের সেই সময় শহীদ হন ফয়সল। তিনি ছোট বেলায় পিতাকে হারিয়েছেন। চাচার আদরে লালিত পালিত হয়েছেন। চাচা আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। শহীদ ফয়সলের নামাজে জানাজায় তিনি ঘোষণা করেন, যারা তার আদরের ভাতিজাকে শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসের কারণে হত্যা করেছে, তিনি আর তাদের সাথে নেই। এর নামই মমতা আর ভালোবাসার বন্ধন। কোনো ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী শক্তি এ বন্ধন ছিন্ন করতে পারে না। বরং তারাই গণবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ( অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যেসব দেশ গৃহযুদ্ধের মধ্যে থেকেছে বা আছে, তাদের সার্বভৌমত্ব ব্যাপকভাবে তিগ্রস্ত ও খর্ব হয়েছে। আমি মনে করি না, আমাদের দেশে এখনো সে ধরনের কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তবে যা ঘটে চলেছে, তা অবশ্যই জাতীয় নিরাপত্তাকে দুর্বল করছে। দেশের রাজনৈতিক বিভাজন এখন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে নয়। আমাদের দেশের রাজনীতি এখন জেদাজেদি ও অহংবোধের মধ্যে রয়েছে। যার বলি হচ্ছে ব্যক্তি নিরাপত্তা ও মানবাধিকার।

প্রবীণ সাংবাদিক ও কবি এরশাদ মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, নাগরিক অধিকারকে গলা টিপে হত্যা করে, জনগণের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোনো শক্তি টিকে থাকতে পারে না। ১৯৪৭ সালে ভারত খণ্ড হয়েছে, মুসলিম জনগণের ন্যায্য অধিকারকে অস্বীকার করার কারণে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জনগণের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের প্রতি কর্ণপাত না করার কারণে। আজও যারা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার দুঃস্বপ্ন দেখছেন, তারাও ভুল করছে। তাদের উচিত কান পেতে জনগণের আওয়াজ শুনে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাই তার ফাঁসির কারণ। বিগত বছরগুলোতে ওয়াজ ও তাফসিরের মাধ্যমে তিনি একজন সম্মোহনী নেতা বা ক্যারিশম্যাটিক লিডারে পরিণত হয়েছেন। তিনি আওয়ামী রাজনীতি, ধর্মনিরপেতাবাদ এবং নাস্তিক্যবাদী বামদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মোম সুযোগটি গ্রহণ করে সরকার। জনৈক দেইল্লা রাজাকার, যিনি তার কুকর্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের পরপরই নিহত হন, তার সব দায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-প্রমাণে ’৭১-এ তার কোনোই সংশ্লিষ্টতা ছিল না। মানুষ যখন এসব ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করছে, তখন সরকার জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের নামে সাধারণ মানুষের প্রকাশিত এ সতত আবেগ-ভালোবাসাকে রাজনৈতিক লেবাসে নিষ্প্রভ করতে চাইছে।

তিনি আরো বলেন, আইনের শাসন নয় অথবা আলোচনা নয়, শক্তির দোর্দণ্ড দাপটে সাধারণ মানুষকে দমন করছে এ নিষ্ঠুর গণবিরোধী সরকার। গণগ্রেফতার, গণহামলা, গণমামলা দিয়ে গোটা দেশকে কয়েদখানায় পরিণত করেছে সরকার। গণতান্ত্রিক প্রথা-পদ্ধতি যখন ব্যর্থ, সরকার যখন দমন-পীড়নে অনমনীয়, তখন সম্মিলিত জনতার শক্তিই একমাত্র সম্বল।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, ভেবে আশ্চর্য হই, পতনের খাদপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আজ হাসিনা সরকার তার সমর্থকদের উস্কানি দিয়ে চলেছে। তাদেরকে সাহস জুগিয়ে নিজেদের ভয় দূর করছে। ফ্যাসিবাদের পুরোটা ঢেলে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই বুদ্ধিজীবীরা কি বুঝতে পারছেন না যে, চলমান ফ্যাসিবাদের দায় তাদের বহন করতে হবে? শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক জীবনের অন্তে দাঁড়িয়ে। নিরপে ভোটে তিনি জয়ী হবেন না, এটা নির্ঘাত সত্য। এও সত্য, যারা আওয়ামী লীগ বা সমধারার রাজনীতি ও সাহিত্যের চর্চা করেন, তাদের জন্য তো এ লড়াই ফাইনাল খেলা নয়। তাদের অধিকার আছে এবং থাকবে তাদের মত ও রাজনীতি অহিংসভাবে প্রচারের। তাদের সুশাসন ও মানবাধিকার প্রকল্পে দাতাদের ঠিকাদারি করতে হবে প্রশাসনের সহায়তায়। একটি ব্যর্থ, দেশবিনাশী দুর্নীতিবাজ, দানবাধিকারে বিশ্বাসী উন্মাদ সরকারের আগুন নিয়ে খেলায় সুস্থ চিন্তার লোকজন তো ঝাঁপ দিতে পারে না।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আরব বসন্তের নেতৃত্বে কোনো সংঘটিত সংগঠন ছিল না। শাসকগোষ্ঠীর বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে তারা অধিকার আদায় করেছে। ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের কোনো নির্যাতনই তাদের থামাতে পারেনি। তারা শিখিয়েছে জনতার মধ্যে মমতা আর ভালোবাসার বন্ধন থাকলে গুলি ও বোমার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব। গুলি করে রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করা যায়, কিন্তু আদর্শকে নিঃশেষ করা যায় না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হিসেবে এদেশের শতকরা ২৫ জন মানুষ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। তার মানে চারভাগের এক ভাগ। ছোট এদেশে সবাই সবার আত্মীয় কিংবা বন্ধুস্বজন। তাই দমন নির্মূলের দর্শন বাস্তবায়নের চিন্তা যারা করছেন, তাদের অবস্থান বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।

পরাশক্তিগুলো দেশে দেশে যুদ্ধ চায়, কারণ অস্ত্র বিক্রি করে তাকে টিকে থাকতে হয়। কিন্তু সবার সব ষড়যন্ত্র বাংলাদেশীরা ধরে ফেলেছে। তারা বুঝে ফেলেছে ‘রাইজিং টাইগারকে’ দুর্বল করার জন্যই সব ষড়যন্ত্রহ

হারুন ইবনে সাহাদত

বিষয়: বিবিধ

১১৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File