আ.লীগ-বিএনপির ছাড়ের সুবিধায় জামায়াত

লিখেছেন লিখেছেন বিপ্লবী ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১১:৪৬:১০ রাত



যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের মুখে ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলটি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ধর্মভিত্তিক অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক না রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া থেকে পিছিয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছাড়ের কারণে জামায়াতে ইসলামী অতীতের মতো আবারো সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণার পর থেকে দেশের তরুণ প্রজন্ম ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। শাহবাগসহ দেশের প্রায় সকল জেলায় গড়ে ওঠা প্রজন্ম চত্বর থেকে মানবতাবিরোধীদের ফাঁসি এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হয়। প্রজন্মের এই দাবি দেশের সীমা পেরিয়ে আছড়ে পড়ে প্রবাসেও। এরপর থেকেই প্রজন্ম মঞ্চ ঘিরে দলীয় রাজনীতির কূটকৌশল শুরু হয়। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য সরকার মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে অতি দ্রুত। এই আইন দিয়ে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা ঘোষণা দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনে সুনির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ নেই। এই আইন দিয়েই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হলে আবারো আইনে সংশোধনী আনার প্রয়োজন হতে পারে। অথচ বিদ্যমান একাধিক আইন রয়েছে যা দিয়ে সরকার জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারতো। এ ধরনের নজিরও আছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর ‘হিজবুত তাহরীর’ নামে একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা ১৮-এর উপধারা (২) এর ক্ষমতা বলে। এ আইনের ধারা ১৮ তে উল্লেখ আছে যে, ‘এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণ কল্পে, সরকার কোনো সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, আদেশ দ্বারা, তফসিলে তালিকাভুক্ত করিয়া, নিষিদ্ধ করিতে পারিবে।’ একইভাবে গত বিএনপি সরকারও ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘শাহাদাত-ই-আল হিকমা’, ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমবি)’, ‘জামাতুল মুজাহেদিন’ ও ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর ‘হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী’ নামের সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া 'দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮’ অনুসারে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার এখতিয়ার শুধুই সরকারের। বিলুপ্ত হওয়ার পরও কোনো দল কার্যক্রম চালালে একই বিধানবলে সরকার তার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। সর্বোপরি সংবিধানতো আছেই। কিন্তু সরকার সেদিকে না গিয়ে জটিল রাস্তায় হাঁটছে। সে কারণেই সবার মাঝে শংকা তৈরি হয়েছে যে, এবারও কি জামায়াতে ইসলামী পার পেয়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মঙ্গলবার দুপুরে টেলিফোনে প্রাইম খবরকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তদন্তের কাজ প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি গঠন করা হয়নি, তবে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী নামের সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এই আইনে সুষ্পষ্ট কিছু উল্লেখ করা নেই। তবে বিচারক চাইলে যে কোনো সাজা দিতে পারেন।

জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ অবস্থান হচ্ছে, ধর্মভিত্তিক কোনো দল সরকার নিষিদ্ধ করছে না। সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার গত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করা হচ্ছে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে এমনও বলা হয়েছে যে, ধর্মভিত্তিক কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার কথা সরকার এ মুহূর্তে ভাবছে না। কাজেই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আগাম বক্তব্য দেওয়ায় খোদ প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রজন্ম চত্বরসহ সারা দেশে গড়ে ওঠা জাগরণ মঞ্চের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামী যে চাপে পড়েছিল, খোদ সরকারের নীতিনির্ধারকদের মানসিকতা থেকে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে জামায়াত ইসলামী এবার পার পেয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রাইম খবরের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগ জামায়াতকে ছাড় দিচ্ছে না জানিয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য নূহ উল আলম লেনিন প্রাইম খবরকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দুই-তিনটি অপশন সরকারের হাতে রয়েছে। আশা করি সরকার উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি বলেন, এর আগে সন্ত্রাসবাদিতা এবং জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য জামায়াতুল মুজাহিদীন, হরতাকুল জিহাদ ও হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হলেও তারা কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছিলো না। কিন্তু জামায়াত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।

সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে কোনো তাড়াহুড়ো করতে চাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহাকারী মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রাইম খবরকে বলেন, আমরা কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না। শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের পক্ষে। সরকার জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়াগুলো খতিয়ে দেখছে।

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীনের পর বিএনপির শাসনামলেই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির পথে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই তাদের যাত্রা শুরু। এরপর থেকে যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে তাদের কাছেই পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯১ সালের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীকে কাছে টানার বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনেকটা প্রকাশ্যেই প্রতিযোগিতায় নামে। বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করে, তো আওয়ামী লীগও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামে। নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে। এভাবেই বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে জামায়াতে ইসলামী নামের ধর্মভিত্তিক এ সংগঠনটি।

অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে প্রাইম খবরের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল বিএনপি জামায়াতকে প্রশ্রয় দিয়ে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে কি না? দু’নেতার কেউ প্রশ্নের জবাব দেননি। তারা বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।

তবে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর নেতারা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নেই। তারাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। হেফাজতে ইসলাম-এর নেতারা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে মহাসমাবেশ করে তারা এ বক্তব্য দিয়েছেন। খেলাফতে মজলিসের নেতারাও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।

http://www.primekhobor.com/details.php?id=14354

বিষয়: বিবিধ

১০৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File