যতকাল ইসলাম থাকবে ততকাল ইসলামী দল থাকবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

লিখেছেন লিখেছেন বিপ্লবী ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৫২:০৯ রাত



কত বললাম যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর, দালাল, জামায়াত ত্যাগ করুন, কেউ শুনল না। আজ শাহবাগের গর্জনে তাদের কানে পানি গেছে, তাই আড়মোড়া ভেঙে জাগতে শুরু করেছে। সরকারপ্রধান বলেছেন, জনতার আওয়াজ সব শুনব, সব মানব। কবে, কীভাবে শুনবেন এবং মানবেন, কানে যে যন্ত্র লাগানো! আর ইসলামী দলগুলো যে সব বাতিল করবেন, আল্লাহর ইসলাম আর জামায়াতে ইসলামী কি এক?

জগৎ সৃষ্টির পর থেকেই যে যখন যা করেছে সবাই ঠিক মনে করেই করেছে। কত জল্লাদ রক্তের বন্যা বয়েছে, তার কাছে সেটা অন্যায় মনে হলে পারত না। চেঙ্গিস খান, হালাকু খান আর নাদির শাহ-ই বলি তারা সবাই সঠিক বিবেচনা করেই অন্যের রাজ্য গ্রাস করেছে। তাতে কাউকে বাধা হিসেবে মেনে নিতে চায়নি, কাউকে মর্যাদাও দেয়নি। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ভারত দখলের সময় শুধু একবার মিয়াপুরুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'শুনেছিলাম তুমি পণ্ডিত? আমার বাহিনীর সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে জেনেও যুদ্ধ করলে কেন? এখানে তোমার পাণ্ডিত্য কোথায়?' মিয়াপুরু বলেছিলেন, 'জন্ম থেকে যেখানে শ্বাস নিয়েছি, আমার সেই আকাশ, আমার বাতাস, যে মাটি আমায় খাদ্য দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট করেছে সেই মা মাটিকে শত্রুর মুখে ফেলে কাপুরুষের মতো পালিয়ে যাব, আমার বিবেক তাতে সায় দেয়নি। পরাজিত হব জেনেই আমি যুদ্ধ করেছি। আমার দুর্ভাগ্য বন্দী হওয়ার আগে মৃত্যু হয়নি_ এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ লজ্জা।' জিঞ্জির পরা বন্দী মিয়াপুরুকে আলেকজান্ডারের কাছে নেওয়া হয়েছিল, আলেকজান্ডার সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুক্তি দিয়ে ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, 'যে দেশে এমন দেশপ্রেমিক শাসক আছে সে দেশ দখল করেও জয় করা যাবে না। আমি শুধু শুধু দখল নয়, জয় করতে চাই। এ দেশ শাসনের অধিকার জন্মগতভাবে তোমার। তুমি নির্বিঘ্নে তোমার দেশ শাসন করে ফুলে-ফলে ভরে তোল।'

আজকাল কোথায় সেই মিয়াপুরু? এখন কি সব দেশপ্রেমহীন শাসক যারা নিজের কায়েমী স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়। এখন কিছু মানুষ টাকা-পয়সা হওয়ার পর অনেক দান-ধ্যান করে। মাদ্রাসা, মসজিদ করে, স্কুল করে না। শীতে মানুষকে বস্ত্র দেয় কিন্তু বাড়ির পাশে না খেয়ে থাকলেও সেদিকে তাকায় না। এ রকম মানুষকে দেখে মাঝেসাজে মনটা বিচলিত হয়। আজ কয়েকজন প্রিয় পাঠক বন্ধু নিয়ে আলোচনা করব। একজনের সঙ্গে দু-তিনবার কথা হয়েছে। আরেকজন প্রায় বন্ধুর মতো হয়ে গেছে, বজ ভাই সম্বোধনে ফোন করে। বেশ বিত্তশালী মানুষ, হয়তো সে চিত্তশালীও, তবে কোনো দিন দেখা হয়নি, গুলশানে থাকে। প্রথমজনের বরিশাল সার্কিট হাউসের সামনে কোথাও বাসাবাড়ি। কয়েক মাস আগে এক লেখা পড়ে উন্মাদের মতো হঠাৎ ফোন করেছিল। কথা হয় অনেকক্ষণ। আগে যেমন বলত, শেখ মুজিব এগিয়ে চল, বঙ্গবন্ধু এগিয়ে চল আমরা আছি তোমার সঙ্গে কিন্তু তার মৃত্যুর দিন কেউ একটু টুঁ-শব্দও করেনি বরং তাকে নমরুদ, ফেরাউন, এজিদ বলে গালাগাল করেছে। জীবন যৌবন ঝরিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। আজ তার কন্যা অনেক খুনিকে বগলে নিয়ে আছে। তাদের নিয়ে রাজনীতি করলেও না হয় মানতাম কিন্তু দেশের সর্বনাশ করছে। এটা আর মেনে নেওয়া যায় না। ঠিক সেই রকমই তিনি বলেছিলেন, আপনার মতো মানুষের দরকার, আমি আছি আপনার সঙ্গে, সারা জীবন পাশে থাকব। প্রথম দফায়ই দু-তিন মিনিট কথা বলেছিলেন। আমার আবার বেশি কথা ভালো লাগে না। ছেলেবেলায় প্রেম করিনি, তাই সে সময়ও কারও সঙ্গে বেশি কথা বলতে পারিনি। তবে মা'র সঙ্গে, ছোট-ভাইবোনদের সঙ্গে প্রাণ খুলে হাসাহাসি করতে, বিরামহীন কথা বলতে খুব ভালো লাগত। ভয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না। কিন্তু তার মজার মজার কথা শুনতে কি যে ভালো লাগত কাউকে তা বোঝানোর ক্ষমতা নেই। কেন জানি দয়া করে আল্লাহ আমাকে রাজপুত্রের মতো ছেলে, রাজকন্যার মতো মেয়ে দিয়েছে, পরীর মতো বুক ভরে কুশিমনি এসেছে। এত দিন ওকে যখন বলতাম, এক সকালে পাখা মেলে পরীর দল যখন যাচ্ছিল তখন দুই হাত মেলে আমি পরী মা'র কাছে তোমাকে চেয়েছিলাম। স্বপ্নপরী বলেছিল, তুমি কি ওকে আদর করবে, কোলে রাখবে, মাটিতে নামাবে না তো? আসলে ওকে কোলে কোলে নয়, ও এখন আমাদের বুকে বুকে থাকে। কিন্তু কেন যেন কুশি এখন আকাশ পরীতে খুশি না। সে নাকি কেমন এক জলপরী, ওরা সাত বোন কীভাবে কীভাবে এসেছে যখন বলে বিস্মিত হই। মা'র পেটে কি করেছে তার গলা ধরে যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করে সে এক স্বর্গীয় দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আমি যখনই ওকে কোলে নিয়ে দু-চার কথা বলার চেষ্টা করি তখনই ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। অনেক সময় বলে বসে, চুপ কর। মুখে আঙ্গুল দিয়ে আবার ইশারা করে। জীবনে কখনো কাউকে খুব একটা পরোয়া করিনি। কিন্তু আমার মায়ের প্রতিচ্ছবি, ছোট্ট মেয়ের ছোট্ট আঙ্গুল উপেক্ষা করতে পারি না। কেন যেন চুপ করে যাই। বছর দুই হলো প্রায় সব সময় এমনই হয়। কিন্তু বরিশালের ভদ্রলোক অনেক কথা বলেছিল। এক পর্যায়ে তাকে বলেছিলাম, 'অত কিছু করতে হবে না আমার দলকে ১০০ টাকা দিয়ে সাহায্য কইরেন। পারলে নিয়মিত প্রতি মাসে ১০০ টাকা চাঁদা দিয়েন। কষ্ট হলে ১০ টাকা পাঠিয়ে দিয়েন।' কিন্তু তিনি পাঠাতে পারেননি অথবা আমার কথাকে তিনি কথা মনে করেননি। এবার আসি গুলশানে।

হঠাৎই একদিন তার ফোন পেয়েছিলাম। তিনি আমায় বজ ভাই নামে সম্বোধন করেন। তার সম্বোধনে বুক জুড়িয়ে যায়। কণ্ঠে এক ধরনের চমৎকার মাদকতা আছে। মাঝে কিছুদিন তার ফোন না পেয়ে খুবই চিন্তায় পড়েছিলাম, প্রিয় পাঠকের কোনো অসুখ-বিসুখ হলো নাকি? ভদ্রলোক খুবই ধর্মপ্রাণ। নামাজ-রোজা করেন। স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা হজ করেছে। মক্কা থেকে খেজুর এনে আমাকে পাঠিয়েছেন। যদিও তার সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। মাঝে অনেক দিন তার ফোন পাইনি। আবার ভাবলাম কি হলো? কারণ মঙ্গলবার লেখা বেরুনোর পর আট-সাড়ে ৮টার বেশি বাজতে পারে না, ঝনঝন করে ফোন বাজে। আগে রেকর্ড করা ছিল না এখন করা আছে, তাই বুঝতে পারি। কিন্তু কয়েক মাস তার খবর নেই। কি হলো? কদিন আগে আমিই তাকে ফোন করেছিলাম। দু'বার রিং হতেই সাড়া পেলাম, বজ ভাই, কেমন আছেন?

- আমি তো ভালো আছি। কিন্তু আপনার কি হয়েছে? কোনো খারাপ কিছু নয়তো?

- না, না, আল্লাহর রহমতে খুবই ভালো আছি।

- তবে খবর নেই কেন?

- কি আর খবর নেই। লজ্জায় ফোন করি না। আপনার জন্য গরুর মাংস আর মলা, চেলা, বাইজা মাছ পাঠাতে চেয়েছিলাম। সেগুলো সংগ্রহ করতে পারিনি, তাই আর লজ্জায় ফোন করিনি। তবে লেখা পড়ি নিয়মিত। খুবই অবাক হয়ে বলেছিলাম, ওসব আপনার কাছে কে চেয়েছে? তিনি খুব গর্ব করে বলেছিলেন, আপনি চাননি কিন্তু আমি পাঠাতে চেয়েছিলাম, পারিনি বলেই এমন বিরতি। ভদ্রলোক প্রথম যে দিন ফোন করেছিলেন সে দিনই বলেছিলেন, আমি ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আপনার এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা থাকলে সেখানে সহায়তা করতে পারি। আসলে কোথায় মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা নেই? সব জায়গাতেই আছে। সারা জীবন মানুষের কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তে নিজের সব কিছু দিয়ে কলেজ করেছি, স্কুল করেছি, মসজিদ করেছি। কোথাও কোথাও সাহায্য পেয়েছি আবার কোথাও বিরোধিতাও পেয়েছি। প্রিয় পাঠকের কথা শুনে ভালো লেগেছে। কিন্তু তেমন বেশি এগুইনি। ৯ ফেব্রুয়ারি ছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে শাহবাগ চত্বরের মাত্র দু-তিনশ গজ দূরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আঙিনায় একটি সম্মেলন হয়েছে। যাদের দাওয়াত করেছিলাম, দয়া করে তারা প্রায় সবাই এসেছিলেন। বিকল্প ধারার সভাপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব, মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। জীবনে কত সম্মেলন করলাম। যখন ছাত্রলীগ করতাম, যখন আওয়ামী লীগ করতাম, তখন কোনো সময়ই দ্বিতীয় অধিবেশনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জায়গা হয় না_ এমনটা দেখিনি। সব কর্মীই হয়তো পাকাপোক্ত নয় কিন্তু যতজন সচেতন নেতা-কর্মী হলে একটা দল হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশি নেতা-কর্মী এই প্রতিকূল অবস্থায়ও হিমালয়ের মতো অবিচল আস্থা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ৯ ফেব্রুয়ারি একটি সফল সম্মেলন করায় নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ না দিয়ে পারি না। তবে যা নিয়ে শুরু করেছিলাম, আমার প্রিয় পাঠক বন্ধুকে সম্মেলন উপলক্ষে ফোন করেছিলাম। তিনি নিজেই বলেছিলেন, 'আপনার সম্মেলনে যাব, পোস্টার দেখেছি।' 'আমার সম্মেলনের জন্য সম্ভব হলে কিছু সহযোগিতা করবেন।' তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, কাউকে পাঠিয়ে দেবেন, তবে আমি তো সব সময় মাদ্রাসা, মসজিদ, এতিমখানায় সহযোগিতা করি। মানুষের ছেলেমেয়ের বিয়ে, কাফন-দাফনে সাহায্য করি। রাজনৈতিক কারণে খুব একটা করিনি। বজ ভাই, আপনাকে খুব পছন্দ করি। তাই কাউকে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি সাহায্য করেছেন। জানি না এটা তার ইচ্ছামতো অথবা সাধ্যমতো কিনা। এসব নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। আমার প্রশ্ন তার চেতনা নিয়ে। তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের জন্য প্রাণ উজাড় করে সহযোগিতা করেন কিন্তু যে মাটির ওপর মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং সেই মাটিই যদি না থাকে, সেই মাটিতে নিরাপদ বসবাসের যদি কোনো সুযোগ না থাকে, সামাজিক অরাজক পরিস্থিতিতে মানুষের চলাচল বা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে তখন তিনি কি লিল্লাহ করবেন? ভয়ঙ্কর সামাজিক অধঃপতন ঠেকাতে কোনো চেষ্টা না করে ঘরে বসে আল্লাবিল্লাহ দান-ধ্যান করে তিনি কি করবেন? তাহলে প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) তার সব সম্পদ যুদ্ধের জন্য রাসূলুল্লাহর হাতে তুলে দিয়েছিলেন কেন? তিনি তো লিল্লাহ বোর্ডিং বানাতে পারতেন। আসলে এখানে চেতনাই সব। কত রক্ত ঢেলে দেশ স্বাধীন করলাম, রক্তের মর্যাদা পেলাম না। আজও যদি আমরা পাকিস্তানে থাকতাম তাহলে কি বাংলা ভাষার এতটা বিকাশ হতো? পাকিস্তান থাকলে বাংলাদেশে এত বিত্তশালী হতো? আমি তো '৭২ সালে মোহাম্মদপুরে এসেছি, সেই পাঁচ কাঠা বাড়িতে অবৈধ আছি। যারা গুলশান, বনানী, বারিধারাতে বাস করেন তারা ওই সব জায়গাতে বাস করা তো দূরের কথা প্রবেশ করতে পারতেন? কেউ পারতেন না। এ যে মুক্তিযুদ্ধের দান। সে জন্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মনে হয় কেউ শুকরিয়াও জানান না। কেন যেন মনের ভেতর থেকে প্রশ্নগুলো আজ জোর করে বেরিয়ে আসতে চায়, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, ইসলাম থাকবে কিন্তু দেশে ইসলামী রাজনৈতিক দল থাকবে না, ইসলামী আন্দোলন থাকবে না_ এ আবার কেমন কথা? যদি সত্যিই ইসলামী দল নিষিদ্ধ হয়, শাড়ি, চুড়ি পরা মাওলানা সাহেবরা কি করবেন? পীরগিরি করে করে বড় বড় প্লেটে রানথান খাওয়া আর সাধারণ মানুষের জন্য জিহাদ করা এক কথা নয়। মা-বোনের মর্যাদাহানিকর কৌশলে নানা ফতোয়া দেওয়া যেমন সোজা, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিলে চুপ করে থাকা যত সোজা, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করা অত সোজা নয়। একমাত্র জামায়াত ছাড়া ইসলামী দলগুলো তাদের কোনো অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশে ডাকলে বড় আগ্রহ নিয়ে যেতাম। এখন আর যেতে ইচ্ছে করে না। খুব একটা যাইও না। আমি কোনো কাজ বিশ্বাস না করে করতে পারি না। গতকাল আমাদের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীককে বারান্দায় বসে একটা বাড়ি নির্মাণের কথা বলছিলাম, আচ্ছা, দেখ তো ওই যে সামনে একটা পানির পাইপ লাগাচ্ছে ওতে আমার কি আসে যায়। কিন্তু পাইপটা একটু বাঁকা করে লাগানো হচ্ছে। কেন সেটা আমার চোখে লাগছে? কেন যেন ওরকম সব কিছুতে লাগে। এই যে ইদানীং ধর্মভিত্তিক দল বাতিলের জিকির উঠেছে। সত্যিই যদি বাতিল করা হয় তাহলে মাদ্রাসার কি হবে? দুই দিন পরে যদি বলা হয় মসজিদে যাওয়া যাবে না। যে দেশে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস এত সহজে কেটে দেওয়া গেছে। কোনো প্রতিবাদ হয়নি। সেই দেশের মসজিদে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় কতক্ষণ? যাক, অনেক কথা হয়েছে পাঠকের সঙ্গে। তিনি আমার চেয়ে বয়সে নাকি একটু বেশি হতে পারেন। তবে ভদ্রলোককে আমার খুব ভালো লেগেছে। জীবন না থাকলে কিছুই থাকে না। দেশ না থাকলে, পরিবেশ না থাকলে কিছুই ভাবা যায় না। সবার আগে দরকার একটি সুষুম সামাজিক পরিবেশ। যারা ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের ঝিকির তুলেছেন তাদের মনে রাখতে হবে জামায়াতে ইসলামী আর ইসলাম এক নয়। যেমন নুরুল ইসলাম আর নজরুল ইসলাম এক নয়। যতকাল আল্লাহর দুনিয়ায় শান্তির ধর্ম ইসলাম থাকবে ততকাল ইসলামী রাজনীতি এবং ইসলামী আন্দোলন থাকবে, কেউ বন্ধ করতে পারবে না। ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে হঠাৎই এক ফোন পেলাম, আপনাকেই দরকার। আমি আমার সর্বস্ব আপনাকে দিয়ে আপনার কাফেলায় শরিক হব। ভদ্রলোক নাকি কোনো লায়ন গভর্নরের উপদেষ্টা। গ্রাম থেকে এসেছি, যুদ্ধ করতে করতে নিজেই বাঘের খেতাব পেয়েছিলাম। মানুষ যে রকম বাঘকে হিংস্র ভাবে, বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমি মাংস খাইনি, নিরামিষি বাঘের আবার দাম কি? বাঘ তার চরিত্র হারিয়ে ফেললে ছাগলেরও মর্যাদা থাকে না। তা না হলে এক সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের ভাই মনে করে জার জার হয়ে কাঁদতেন। আর আজ শত্রু ভেবে দিবানিশি জীবন সংহারের চেষ্টা করেন। এ সবই তো নিজের চোখে দেখে যাচ্ছি। জীবনের অনেকটা সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে হেলায় হারিয়েছি। আজ অনেকেই অর্থবিত্তের শক্তিতে বড় বেশি পোদ্দারি করছে। আল্লাহর ইচ্ছায় দেশের মানুষ যদি আমাদের এই সংগ্রামে হাত ঝেড়ে দু-চার দশ টাকা দেয় তাহলেই না এ অব্যবস্থা দূর করতে ধনবান চিত্তহীন ভিখারিদের কাছে হাত পাততে হবে না।

ইতোমধ্যে এক জাতীয় জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। '৯০-এ দেশে ফিরে যা করার চেষ্টা করেছিলাম। এ দেশের মানুষ পাকিস্তানের পক্ষের স্বাধীনতাবিরোধীদের চায় না। তারা তাদের দোষ স্বীকার করে নত হয়ে থাকলে কারও হয়তো কোনো আপত্তি থাকত না। কিন্তু এত মানুষ হত্যা করে, মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করে আবার শিনাজুরি_ এটা কেউ মেনে নেবে না। এরশাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের নামে শুরুতে আওয়ামী লীগ বিএনপি পাকিস্তানের কসাই জামায়াতকে রাস্তায় এনেছে। অদক্ষ নেতৃত্ব এরশাদবিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ার পর আবার খালেদা জিয়াকে সরাতে গিয়ে জামায়াতকে আওয়ামী লীগ কোলে তুলেছে। সে দিন আমি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির এক নম্বর সদস্য ছিলাম। যে দিন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জননেত্রী শেখ হাসিনা একসঙ্গে প্রেস কনফারেন্স করেন, সে দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় উপস্থিত ৩৪ জনের মধ্যে ৩১ জন আপত্তি তুলেছিলাম। কিন্তু সেদিন কারও কোনো আপত্তি না শুনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপির পতনের জন্য জামায়াতকে নিয়ে এক সঙ্গে আন্দোলন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিতবেন না জেনেও কি প্রয়োজন ছিল ঘাতক গোলাম আযমের পা ছুঁয়ে আওয়ামী লীগের দোয়া কামনা করার? এত গর্ব করে বলা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের দল বিএনপি, সেই বিএনপি জামায়াত নেতাদের গাড়িতে কেন বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দিল? এসব কথা এতকাল একা বলেছি, আজ সমগ্র দেশ বলছে। যুদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশে, মা-বাবা মারা গেছে আমাদের, কেন আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল করতে গেলেন? আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলতে গেলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন হবে। ছাগল দিয়ে ধান মাড়ানো যায় না_ এটা তো শুরুতেই বলেছিলাম। আর কোনো ভালো উকিল ছিল না, ব্যারিস্টার ছিল না? তাদের জিজ্ঞেস করা হলো না কেন? আর রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা বানানোর আপনারা কারা? যুদ্ধের সময় আপনারা কেউ ছিলেন? আমরা যারা যুদ্ধ করেছি এখনো তো সবাই মরিনি। কই, একবারও তো জিজ্ঞেস করলেন না? দোকান খুলে বসা ঘাতক দালাল বলুন আর যাই বলুন, তাদের ভূমিকা কি? যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা দিতে হলে, সাক্ষ্য দিতে হলে আমরা দেব। কলকাতা শহরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়া যায় না। কেন শুধু ফরিদপুর, পিরোজপুর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি? টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহের চেয়ে বেশি যুদ্ধ কোথাও হয়েছে? টাঙ্গাইলের তো একজন যুদ্ধাপরাধীও আসামি হলো না? নাকি তাতে সরকারি দলের লোকজনের নাম আসে? মৌলানা নুরুল ইসলাম একজন তালিকাভুক্ত রাজাকার কমান্ডার। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ হয়ে যাওয়ায় এবং একবার আমার কোনো জনসভায় কোরআন তেলাওয়াত করায় মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেল? তাকে কেন ধর্মমন্ত্রী বানানো হয়েছিল? রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে দেশ পাগল হয়ে উঠেছে। সেই রাজাকার যারা বানিয়েছে, রাজাকার দিয়ে লুটতরাজ করিয়েছে তাদের কথা বলতে হবে না? রাজাকাররা মা-বোনের সম্মান নষ্ট করেছে। আর সে সময়ের বাঙালি ডিসি, এসপি, ওসিরা সেই একই কাজ করছে সার্কিট হাউসে, তাদের বিচার হবে না? তাদের বিচার করতে হবে সবার আগে।

৯ তারিখ আমার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সম্মেলনের সময় শাহবাগ চত্বরের পাশ দিয়ে গেছি। ৮ তারিখ রাতেও সস্ত্রীক ঘুরে এসেছি। হ্যাঁ, মঞ্চে যাইনি। যেখানে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর মতো ভ্রষ্ট কমিউনিস্ট যখন পরিচালনা করে আর সেক্টর কমান্ডার শফিউল্যাহ বীরউত্তম, একে খোন্দকার বীরউত্তম, মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, মেজর জিয়া উদ্দিনের মতো মুক্তিযোদ্ধাকে এতিমের মতো পেছনে পড়ে থাকতে হয় সেখানে কি করে যাই? কি মর্যাদা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় নাসির উদ্দিন বাচ্চুর? আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শ্রেষ্ঠ নারী মুক্তিযোদ্ধা সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামী লীগ করে বলে তিনি কেন অবহেলা পাবেন? তার সঙ্গে এখন মতের মিল না থাকতে পারে কিন্তু নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাজেদা চৌধুরী, রাফেয়া আক্তার ডলি, কবরী_ এদের মতো অবদান আর কার আছে? রাজাকারের ফাঁসি চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো খবর নেই_ এ আবার কেমন কথা?

লেখক : রাজনীতিক

বিষয়: রাজনীতি

১১২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File