স্যার এক কোটি টাকার কম ঘুষ খান না!!!!!!!!!!!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন বিপ্লবী ০২ জুন, ২০১৩, ১০:০৮:০৩ রাত
এক ব্যবসায়ীকে আটক করে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ১ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোল্লা নজরুল ইসলাম। সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন তার টিমের এসআই হাসনাত। চাঞ্চল্যকর এমন অভিযোগ করেছেন নড়াইল থেকে নির্বাচিত সরকারি দলের সংসদ সদস্য কবিরুল হক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে দেখা করে সম্প্রতি তিনি এ অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগের সঙ্গে চাঁদা গ্রহণের প্রমাণস্বরূপ ভিডিও ফুটেজ, অডিও রেকর্ড ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবিদুল ইসলামও ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে পুলিশ বাহিনীর একটি বিশেষ ব্যাটালিয়নের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী যা বললেন
ব্যবসায়ী আবিদুল ইসলাম গত সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ৬ এপ্রিল রাত ৩ টায় ডিবির একটি দল তার ফ্ল্যাটে হানা দেয়। অভিযানে অংশ নেয়া ডিবির এসআই (উপ-পরিদর্শক) হাসনাত তার ফ্ল্যাটে ঢুকেই অস্ত্রের মুখে তাকে বলেন, দশ কোটি টাকার কালো ব্যাগটি কোথায়? তিনি তাকে বলেন এ ফ্ল্যাটে দশ কোটি টাকার ব্যাগ থাকার কথা নয়। তখন ডিবির লোকজন উত্তেজিত হয়ে তার স্ত্রীর গহনার বাঙ্ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং তার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দেয়। একপর্যায়ে আবিদুল ইসলাম জানতে চান, তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ? কে তাদের পাঠিয়েছে? তখন এসআই হাসনাত তাকে বলেন, ডিবির ডিসি মোল্লা নজরুল ইসলামের নির্দেশে তারা এ অভিযান চালাচ্ছেন। আবিদুল তখন এসআই হাসনাতকে বলেন, নজরুল ইসলামের বাড়ি আর তার বাড়ি একই এলাকায় এবং মোল্লা নজরুল তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। এ কথা শোনার পর এসআই হাসনাত তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে মোল্লা নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। কথা শেষ করে এসআই হাসনাত আবিদুল ইসলামকে বলেন ‘স্যার (মোল্লা নজরুল) বলেছেন ১০ কোটি টাকা দিলে তোকে ছেড়ে দিতে। স্যার ১ কোটি টাকার নিচে ঘুষ খান না।’ তা না হলে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে বলেছেন। আবিদুল ইসলাম বলেন, টাকা না দিলে তাকে হিজবুত তাহরির সাজিয়ে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয়। ওই অভিযানে ৭/৮ জন সাদা পোশাকের ডিবি সদস্য অংশ নেয়। তিনি জানান, তাদের মধ্যে এসআই হাসনাত, ইন্সপেক্টর আজাহারকে চিনতে পেরেছেন। অভিযানে একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার ছিলেন, যার নাম তিনি জানতে পারেননি তবে দেখলে চিনবেন। এছাড়া আরও কয়েকজন কনস্টেবল অভিযানে অংশ নেয়। তারা সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করে যেটির গায়ে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নাম লেখা ছিল। আটক হওয়ার পর ডিবি কার্যালয়ে তাকে একবার তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া হয়। তখন তিনি তার এলাকার এমপি কবিরুল হককে ফোন করে সাহায্য চান। কবিরুল হক ওই রাতেই মোল্লা নজরুলকে ফোনে অনুরোধ করেন যেন আবিদুলকে হয়রানি বা নির্যাতন করা না হয়। গতকাল বুধবার কবিরুল হক এমপি বলেন, তিনি অন্তত ১০ বার মোল্লা নজরুলকে ফোন করেছেন। কিন্তু তার ফোন পাওয়ার পরও নজরুল কোটি টাকা ঘুষ নিতে ভয় পাননি।
ভিডিও ফুটেজ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী যে ভিডিও ফুটেজ জমা দিয়েছেন তার একটি কপি সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৭ এপ্রিল বেলা ২টা ৩২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে ব্যবসায়ী আবিদুল ইসলামে সঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকে ঢুকছেন এসআই হাসনাত ও আজ্জাদুর রহমান মিঠু। আবিদুল ইসলাম চেক জমা দিচ্ছেন এবং কাউন্টার থেকে টাকা বুঝে নেয়ার সময় অনেক টাকার বান্ডিল আজ্জাদুর রহমান মিঠু ব্যাগে ভরে নিচ্ছেন। ব্যাগে টাকা ঢোকাতে তাকে সহায়তা করছেন এসআই হাসনাত। এরপর একইভাবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের শান্তিনগর শাখা থেকে দুই লাখ, ব্র্যাক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখা থেকে ৪৩ লাখ ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শান্তিনগর শাখা থেকে ৫ লাখ (মোট ৫০ লাখ) টাকা তোলার সময় ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় একই ব্যক্তিদের দেখা যায়। অভিযোগপত্রের সঙ্গে ওই সময় তিনটি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের ব্যাংক স্টেটমেন্টও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া এসআই হাসনাতের নির্দেশ অনুযায়ী আবিদুল ইসলামের স্ত্রী তার ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০ লাখ তুলে ডিবি কার্যালয়ে দিয়ে যান। আবিদুলের স্ত্রী ৭ এপ্রিল ওই টাকা তোলেন ইউসিবিএল ব্যাংকের মিরপুর শাখার ডিপিএস ভেঙে ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান-১ শাখা থেকে ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা (মোট ৫০ লাখ)। আবিদুল ইসলাম বলেন, টাকা বুঝে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা দু’জনই মোল্লা নজরুলকে মোবাইল ফোনে আপডেট জানান। এরপর আবিদুলকে আবারও ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এসআই হাসনাত ও মিঠু একটি ব্যাগে ও তোয়ালেতে জড়িয়ে টাকাগুলো মোল্লা নজরুলের কক্ষে দিয়ে আসেন। এরপর এসআই হাসনাত তাকে বলেন, ‘যে এক কোটি টাকা দিলেন তা তো স্যারের ভাগের। ওই টাকায় আমার কোন ভাগ নেই। আমাকে ৭ লাখ টাকা না দিলে ডিবির হাত থেকে ছাড়া পাবেন না।’ একদিন পর হাসনাতের কাছে ৫ লাখ টাকা পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পান। পরদিন এসআই হাসনাতকে তিনি আরও ৫ লাখ টাকা পৌঁছে দেন।
আরও তিন ব্যবসায়ীর ৪ কোটি টাকা
ওদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ডিবির একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে আরও ৪ কোটি টাকা চাঁদাবাজির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব ব্যবসায়ী এতদিন ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি। এদের মধ্যে রয়েছেন- মিরপুরের বাসিন্দা আবদুল কাইয়ুম, গুলশানের ব্যবসায়ী বিল্লাল ও বনানী এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জিয়া। বৃহস্পতিবার আবদুল কাইয়ুম বলেন, গত বছর ১৬ ডিসেম্বর রাতে তার মিরপুর ৬ নং সেকশনের ১১/১ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৭ তলা বাড়ির ৪ তলার ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় ডিবি। তার কাছেও ১০ কোটি চাঁদা চাওয়া হয়। টাকা না পেয়ে তাকে আটক করে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এরপর ওই প্রভাবশালী কর্মকর্তার কক্ষে ডেকে নিয়ে সরাসরি জানিয়ে দেন, ‘পুরো টাকা না দিলে তোকে প্রাণে বাঁচানো মুশকিল হবে’। একদিন ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে নগদ ৮৬ লাখ টাকা দেয়ার পর তিনি ছাড়া পান। আবদুল কাইয়ুমের সঙ্গে রিপন নামের এক ব্যবসায়ীকেও ওই রাতে আটক করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফোনে তাকে ছেড়ে দেয় ডিবি। আবদুল কাইয়ুম আরও জানিয়েছেন, ১০ কোটি টাকার নিচে ডিবির এই দাপটশালী কর্মকর্তা কোনভাবে তাকে ছাড়তে রাজি হচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে ঢাকা মহানগর যুবলীগের একজন শীর্ষ নেতার মধ্যস্থতায় তিনি ছাড়া পেতে সক্ষম হন।
এছাড়া সরব আইটি লিমিটেডের মালিক বিল্লাল হোসেনও ডিবির একই সদস্যদের হাতে জিম্মি হয়ে ৪১ লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি পান। তাকে ডিবি কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ১৭ এপ্রিল রাত ১টায়। এরপর তার কাছ থেকে নগদ ৩০ লাখ টাকা ও দুটি ২০ লাখ টাকার চেক নিয়ে ১৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টায় ছেড়ে দেয়া হয়। বিল্লাল হোসেন থাকেন ১৫২/১ তেজকুনি পাড়ায়। তিনি বলেন, কোন অভিযোগ ছাড়াই গভীররাতে তার বাসায় হানা দেয় ডিবি পুলিশ। ডিবির এসআই হাসনাত, মোখলেসুর রহমান তাকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তিনি জানান, ডিবি কার্যালয়ে তাকে হাজতখানায় রাখা হয়নি। তাকে রাখা হয় এসআই হাসনাতের কক্ষে। সেখানেই হাসনাত তাকে বলেন, ‘দ্রুত টাকা দে, স্যার কাল দুবাই চলে যাবেন। টাকা না পেলে স্যারের মাথা খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু’। পরদিন ১৮ এপ্রিল নগদ ৩০ লাখ টাকা ও ১০ লাখ করে দুটি ২০ লাখ টাকার চেক নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে যান বিল্লালের মামা আবদুল হাই হিরা। এরপর রাত সাড়ে ১২টায় তাকে ছাড়া হয়। ব্যবসায়ী বিল্লাল জানান, এসআই হাসনাত গত সপ্তাহে আবারও ৫ লাখ টাকা দাবি করে তাকে বলেন, ‘টাকা না দিলে আবারও ঝামেলায় পড়বি।’ এছাড়া মার্চ মাসে জিয়া নামের আরও এক ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে ৩ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ী জিয়া ডিজিটেক লিমিটেড নামের এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় বনানীতে। গতকাল জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, ঘটনার পর থেকে তিনি আতংকিত। যারা টাকা নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার সাহস তার নেই।Click this link
বিষয়: বিবিধ
২২৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন