বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

লিখেছেন লিখেছেন বিপ্লবী ২৬ মে, ২০১৩, ০২:১৩:০৩ দুপুর

(সংক্ষিপ্ত পরিচিতি)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মানুষের পরিচয়ঃ

আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাখলুকাত, মহান আল্লাহ্‌ অসংখ্য ছোট-বড় সৃষ্টির মধ্যে একমাত্র মানুষকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সব সৃষ্টিকেই তিনি একটি নিয়মের অধীন করে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষকে তিনি ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছেন। মানুষ যা চায় তাই করতে পারে। এত বড় মর্যাদার সাথে তিনি মানুষকে করেছেন খলীফা বা প্রতিনিধি। মানুষ সৃষ্টির আগে তিনি ফেরেস্তাদের ডেকে বললেন, “আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা বা প্রতিনিধি প্রেরণ করব”। (সূরা বাকারা-৩০) খলিফার কাজ হচ্ছে মনিবের প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করা এবং পরে যার প্রতিনিধি তাঁর কাছে হিসেব দেয়া।

জীবন বিধান ইসলামঃ

আল্লাহ্‌ মানুষকে দুনিয়ায় পাঠালেন। সাথে দিলেন তাঁর পক্ষ থেকে হেদায়েত। মানুষ যখনই তাঁর দেয়া হেদায়েত ভুলে পথভ্রষ্ট হয়েছে তখনই আল্লাহ্‌ পাঠিয়েছেন নবী বা রাসূল। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি খাতামুন্নাবিয়ীন, সাইয়েদুল মুরসালীন। তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না। তিনি মানুষের কাছে নিয়ে এসেছেন হেদায়েত গ্রন্থ আল-কোরআন। আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনব্যবস্থা ইসলামকে তিনি পরিপূর্ণতা দান করেছেন। আল্লাহ্‌ বলেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করলাম।”(সূরা মায়েদা-৩)

মুসলমানের পরিচয়ঃ

ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ। তাই মানুষের মধ্যে যারা এ ইসলামকে কবুল করে বা আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের আত্মসমর্পণ করে তাদের বলা হয় ‘মুসলিম’। কেবল মুসলমানের ঘরে জন্ম হলেই কেউ মুসলমান হয় না, বরং কাফের মুশরিকের ঘরে জন্ম নিয়েও কেউ যদি ঈমান আনে এবং ইসলামের সব বিধি-বিধান মেনে চলে তবে সেও মুসলিম। মানুষের মধ্যে মুসলিমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। কুরআনের ভাষায়, “তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও আর অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখ।”(সূরা আলে ইমরান-১১০) অন্যস্থানে বলা হয়েছে, “তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন তোমরা মানুষের জন্য সত্যের সাক্ষ্য হতে পারো।”(সূরা বাকারা-১৪৩)

কিন্তুঃ

আজ মানুষ ভুলে গেছে তার পরিচয়। মুসলমান বিস্মৃত হয়েছে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য। ফলে জলে-স্থলে সর্বত্র চলেছে অনাচার, অবিচার ও অশান্তির প্রবল স্রোত। মানুষে মানুষে চলছে হানাহানি, কাটাকাটি, হিংসা-বিদ্বেষ, অসাম্য ও দুর্ভোগ। অসংখ্য বনি আদম অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। অথচ লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য সমুদ্রে ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে, পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি ডলার। যাদের মুখে শোনা যায় শান্তির ললিত বাণী তারাই আবার অপরকে দেয় পারমানবিক বোমার হুমকি। অসহায় মানুষ আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে মুক্তির জন্য। মুসলমানদের অবস্থাতো আরো করূন; আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, কাশ্মীরসহ বিশ্বের অনেক স্থানে মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে বেদ্বীনরা। ইরাকের মুসলমানদের ওপর চলছে ইহূদিবাদের ক্রীড়নক মার্কিনীদের নেতৃত্বে বিশ্ব ইসলাম বিরোধী শক্তির ভয়াবহ নিষ্ঠুর নির্যাতন। এ ব্যাপারে মুসলমানদের কোন ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা নেই, নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ। তাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে দিন দিন ষড়যন্ত্র তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। অবশ্য ইসলামের বিজয়ের সম্ভাবনাও দিন দিন বাস্তবরূপ লাভ করছে।

একদিনঃ

সব মানুষকেই মরতে হবে। ফিরে যেতে হবে মহান স্রষ্টার কাছে। কিয়ামতের প্রবল প্রলয়ে সমস্ত কিছু ধ্বংসের পর মানুষের ভাল-মন্দের বিচারের সময় এসে যাবে। সেদিন যাদের ভাল কাজের পরিমাণ বেশি হবে তারাই মুক্তি পাবে, পুরস্কার হিসেবে পাবে চির শান্তির জান্নাত। আর যাদের মন্দ কাজের পাল্লা ভারি হবে তারা পাবে অবর্ণনীয় আজাবে ভরপুর চির দুঃখের জাহান্নাম। যে যেখানেই যাবে সেখানেই থাকবে চিরদিন, অনন্তকাল।

সেদিন অবশ্যই সকলকে দুনিয়ার বর্তমান অবস্থায় তাঁর ভূমিকা ও কাজ সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।

তাইঃ

আল্লাহ্‌ নিজেই সেদিনের মুক্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তাঁর কালামের ভাষায়, “তোমরা আল্লাহর রাস্তায় মাল ও জান দিয়ে লড়াই কর। এটিই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝ। তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করা হবে, আর তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে যার তলদেশে আছে ঝর্ণাধারা।”(সূরা আস সফ ১১-১২)

সুতরাং

আজকের এ অবস্থায় আমাদের উচিত ইসলাম সম্পর্কে জানা, কুরআন-হাদিস পড়া এবং মানুষের মুক্তির জন্য আল্লাহর পথে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালানো, সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ হতে বিরত রাখা। কিন্তু এ কাজটি একা একা করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা। হযরত ওমর (রাঃ) তাই বলেছেন, “দল ছাড়া ইসলাম হয় না”। আমাদের দেশের অবস্থা বড়ই নাজুক। পৃথিবীর অন্যতম একটি দরিদ্র জনপদ এই দেশ। শতকরা ৪৯ জন মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করছে। মানুষের জীবনে নেই কোন সুখ, নেই শান্তি, নেই কোন আদর্শের ছবি। শিশু-কিশোররাও বেড়ে উঠছে অনৈতিকতার মধ্য দিয়ে। এ অবস্থা চলতে দিলে জাতির ভবিষ্যৎ গাঢ় অন্ধকারময়। এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন একদল সচেতন লোকের। তাই এখানেও আল্লাহর পথে তরুণদের ডাকার জন্য, দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের আদর্শ ও চরিত্রবানরূপে গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তরুণ ও মেধাবী ছাত্রদের সংগঠন- “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির”।

শিবিরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ

আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল ( সাঃ) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।

কর্মসূচিঃ

উল্লেখিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির প্রণয়ন করেছে বিজ্ঞানসম্মত পাঁচ দফা কর্মসূচী।

একঃ দাওয়াত–

তরুন ছাত্র সমাজের কাছে ইসলামের আহবান পৌঁছিয়ে তাদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং বাস্তব জীবনে ইসলামের পুর্ণ অনুশীলনের দায়িত্তানুভূতি জাগ্রত করা।

দুইঃ সংগঠন-

যেসব ছাত্র ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিতে প্রস্তুত তাদেরকে এই সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ করা।

তিনঃ প্রশিক্ষণ-

এই সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ ছাত্রদেরকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান ও আদর্শ চরিত্রবানরুপে গড়ে তুলে জাহেলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ার কার্যকরী ব্যবস্থা করা।

চারঃ ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্রসমস্যা-

আদর্শ নাগরিক তৈরির উদ্দেশ্যে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধনের দাবিতে সংগ্রাম ও ছাত্র সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান।

পাঁচঃ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ-

অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক গোলামী হতে মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামী সমাজ বিনির্মানে সর্বাত্তক প্রচেষ্টা চালানো।

দেশের প্রতিটি জনপদ জুড়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কজ করে যাচ্ছে তার বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে। শিবির একজন তরুণকে একই সাথে একজন ভালো ছাত্র ও একজন ভালো মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। ব্যক্তিগত রিপোর্টে পাঠ্য বই পড়ার ও ক্লাশে উপস্থিতির হিসেব রাখার ব্যাবস্থা করে শিবির তাঁর কর্মীদের ভাল ছাত্র হতে আগ্রহী করে তুলে।

ইসলাম যেমন সকল মানুষের কল্যাণের জন্য তেমনি ইসলামী ছাত্রশিবিরও সকল মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সবার কাছে ইসলামকে সুন্দরভাবে তুলে ধরার কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এই সুন্দর কর্মসূচী ও চরিত্রবান কর্মীদের প্রতি দিন দিন জন সমর্থন বাড়ছে।

আসুন, আপনিও শিবিরের পতাকাতলে সমবেত হয়ে নিজেকে গড়ে তুলুন সুন্দর ও যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে। শরীক হোন ইহকাল ও পরকালের মুক্তিকামী মানুষের এই কাফেলায়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জানতে হলে পড়ুন

• • ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংবিধান

• • ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মপদ্ধতি

• • আমরা কি চাই, কেন চাই, কিভাবে চাই

• • এসো আলোর পথে

• • মুক্তির পয়গাম

• • ছাত্র সংবাদ

• • Perspective

বিষয়: বিবিধ

১৪৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File