তোমার-আমার বয়সের ব্যবধান প্রায় চল্লিশ বছর।

লিখেছেন লিখেছেন বিপ্লবী ১৩ মে, ২০১৩, ১২:২১:২৮ দুপুর

আসসালামু আলাইকুম।

তোমাকে নিয়ে মুস্কিলে পড়েছি। সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমার মতামত তোমাকে জানাতে হয়। বিষয়গুলো তুমি জানো না, তা নয়। তবু আমার কাছে জানতে চাও। কেন জানতে চাও, তাও হয়তো কম-বেশি অনুভব করতে পারি। তোমার জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটেছে এই শতকের প্রথমভাগে আর আমার জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটেছে বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে। তোমার-আমার বয়সের ব্যবধান প্রায় চল্লিশ বছর। সুতরাং দৃষ্টিভঙ্গী, মনন, মতামত বা অভিমতে আমরা এক মাত্রায় অবস্থান করবো, এটা ভাবা যায় না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। দৃশ্যতঃ বাংলাদেশের কিছু ব্লগার আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম সম্পর্কে যখন সীমাহীনভাবে কুৎসা রটনা করতে লাগলো, কুরুচিপূর্ণভাবে লেখালেখি করতে লাগলো, তখনই প্রতিবাদী হিসেবে এগিয়ে এলেন কওমী মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা। অনেকে বিস্মিত হলেন। বললেন, এরা আবার কি করে ব্লগ, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, টুইটার, স্কাইপি- এসব বুঝলো? আধুনিক এসব বিষয়ের সাথে তো এদের কোনো সম্পর্ক নেই। নিশ্চয়ই এসব জামায়াত-শিবিরের কাজ! কিন্তু যারা কওমী মাদরাসা বা এদের উৎস সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা, রাখেন তারা ভালো করেই জানেন, এদের উৎস বা জন্ম মহাপ্রতিবাদ থেকে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর মুসলমানদের মধ্যে আত্মজাগরণের যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, তার ফলে মুসলিম সমাজের স্থানে স্থানে নানা জলাশয়ের জন্ম হয়। তার মধ্যে একটি বড় জলাশয় হলো ১৮৬৬ সালে উত্তর প্রদেশে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা। মুসলিম সমাজের আত্মপরিচয়কে সমুন্নত করার মানসেই মাওলানা মুহম্মদ কাসিম নানুতুভি (১৮৩৩-১৮৭৭) এবং মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গোহী (১৮২৯-১৯০৫) এই মহান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠাতা এই দু’জনই সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করার কারণে তাদের মধ্যে যে মনন ও প্রতীতির উন্মেষ ঘটেছিল, তারই ফলশ্রুতি ছিল দেওবন্দ মাদরাসা। বলাবাহুল্য এটা ছিল রাজনীতি সচেতন রক্ষণশীল আলেমদের প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে মাওলানা মাহমুদ-উল হাসান (১৮৫১-১৯২০) যখন এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হন, তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জামিয়াতুল আনসার নামে এমন একটি সংগঠন, যা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সূচনা করেছিল। সুতরাং দেওবন্দের অনুসারী কওমী মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্ররা যে রাজনীতি সচেতন হবেন বা প্রতিবাদী হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এবার তারা হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে মাঠে নেমেছেন এবং ইতোমধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় ধারার জন্ম দিয়েছেন। এদের অবিসম্বাদিত নেতা আল্লামা শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রামের হাট-হাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান। গত ৬ই এপ্রিলে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করেন। সরকার ও সরকারি দলের সর্বাত্মক বাধা অতিক্রম করে লং-মার্চ তারা সফল করেন। তাঁদের সাংগঠনিক শক্তি ও শৃঙ্খলা দেখে সকল মহল বিস্ময় প্রকাশ করে। তাঁরা সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি পেশ করেন। এই দাবির পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে গত এক মাস তারা সারা দেশে সভা-সমাবেশ করেন। তাদের প্রতিটি সমাবেশ স্বার্থক ও সফল হয়। জনগণ তাদের সভা-সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। গত ৫ই মে ছিল তাদের ঢাকা অবরোধ। এই বিশাল ও ব্যাপক কর্মসূচিকেও তারা সফলভাবে অগ্রসর করে নেয়। রাজধানী ঢাকায় তারা ৫০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটায়। এ এক অভাবিত, বিস্ময়কর এবং তুলনাহীন ঘটনা। এই সাফল্যকে সহ্য করতে পারেনি বাংলাদেশের সেক্যুলার মহল। তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উস্কানি দিয়ে শান্ত এবং অবিচল সমাবেশকে অশান্ত করে তোলে। সমুদ্রের তরঙ্গের মতো ধেয়ে আসা মানুষগুলোকে বাধা প্রদান করে করে রাজধানীতে এক জঙ্গি পরিবেশ তৈরি করে। যার অংশীদার ছিল পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ সরকারি নানা গোয়েন্দা বাহিনী। তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই: এই মহাসমাবেশকে জঙ্গি সমাবেশ হিসেবে দুনিয়ার সামনে চিহ্নিত করা। যাতে দুনিয়ার মানুষ বর্তমান সরকারকে স্থায়ী সরকার হিসেবে টিকে যাওয়ার বিষয়ে সাহায্য করে। যেমনি ষড়যন্ত্র, তেমনি পরিকল্পনা এবং কূটকৌশল। শত শত দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে, গাড়ি ভাঙচুর করে এবং গোলাগুলি ও মারামারি করে সরকারি দলের লোকেরা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপায়। আপাততঃ অনেকটাই সফল হয়েছে সরকারি দল ও তাদের পোষ্য সেক্যুলার মহল। তারা দুনিয়াকে বোঝাতে চেষ্টা করছে গোলাগুলি, অগ্নিসংযোগ, মারামারি, লুটপাটÑ সবই করেছে হেফাজতের কর্মীরা। এরা জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী। এদেরকে এখনই ধ্বংস না করলে জনগণের জান ও মালের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না। সুতরাং মিডিয়া কর্মীদের হটিয়ে দিয়ে এবং লোডশেডিং তৈরি করে গভীর রাতে সমাবেশ ভণ্ডুল করার জন্য মিডনাইট ম্যাসাকার করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হতাহত হয়েছে বলে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। হেফাজত অভিযোগ করেছে তাদের আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ শাহাদাতবরণ করেছে। বিএনপিও একই অভিযোগ করেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।

ঘটনা যাই ঘটুক, বিশ্বের ইতিহাসে, ইসলামের ইতিহাসে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এ এক অতি বড় মর্মন্তুদ ঘটনা। ন্যক্কারজনক, ঘৃণ্য, নির্দয়, নিষ্ঠুর ও গণহত্যার ঘটনা। অনেকেই হিটলারের মর্মান্তিক গ্যাস চেম্বারের সাথে এর তুলনা করেছেন। সত্য-মিথ্যা আল্লাহই ভালো জানেন। সরকারি বা বেসরকারি, কোনো সূত্রই হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা বলছেন না। গণহত্যার ঘটনা এই আমলে এটাই প্রথম নয়। গত ৪ বছরে বিডিআর ট্রাজেডি, লঞ্চ ট্রাজেডি, গার্মেন্ট ট্রাজেডি ও রাজনৈতিক গণহত্যাসহ একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। কোনো হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রতিকার হয়নি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। দলীয় সন্ত্রাস এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সমানে চলছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্ট সব কাজই করা হচ্ছে।

তবে এর ফল সুদূরপ্রসারী। এই নির্মম ঘটনার পর কতিপয় মোনাফিক ছাড়া সকল ইসলামী দল অবশ্যই এককাতারে সামিল হয়ে যাবে। ইসলামের পক্ষে দারুণ এক গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। সেক্যুলারিজম পরাভূত হবে। আমার বিশ্বাস, আলেমদের এই ত্যাগের পর সেক্যুলারিজম এ দেশে আর মাথাচাড়া দিতে পারবে না। এখন দরকার জনগণের মহাঐক্য, শুধু ইসলামপন্থী বা মুসলিমের ঐক্য নয়। সাধারণ মানুষের মহাঐক্যই শুধু ফ্যাসিবাদের জগদ্দল পাথর থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে পারে। আমি এই মুহূর্তে কবির ওই কবিতাটি স্মরণ করছি : ‘ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকো বাদ। আজ এখানেই ইতি টানছি। ভালো থাকো। ইতি।

Click this link

বিষয়: বিবিধ

১১৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File