রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো মানবতাবিরোধী অপরাধ ন্য় কি???
লিখেছেন লিখেছেন বিপ্লবী ১২ মে, ২০১৩, ০১:২৩:৫২ দুপুর
গত ৫ই মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ শেষে রাতে ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে অবস্থান করছিলেন হেফাজতে ইসলামের লাখ লাখ নেতাকর্মী। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভাষায় কোনো দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এমন কর্মসূচির নাম অবস্থান ধর্মঘট। এমন অবস্থান বেআইনি নয়। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে রাস্তা অবরোধ করে চারমাস যাবৎ এমন কর্মসূচি পালন করছিল সরকার সমর্থক তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ। সরকার দিনের পর দিন তাদেরকে সহযোগিতা করেছে। এর আগে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর আমলা থাকা অবস্থায় বেআইনিভাবে জনতার মঞ্চ গড়ে মাসের পর মাস অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু গত ৫ই মে দিবাগত রাত ৩টা (ক্যালন্ডারের হিসেবে ৬ মে) দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে শাপলা চত্বরে অবস্থান ধর্মঘটকারী নিরস্ত্র নিরীহ আলেম ওলামা ও মাদরাসা ছাত্রদের ওপর পুলিশ,র্যাব, বর্ডার গার্ড সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য অর্তকিতে দুই দিক থেকে ক্র্যাক ডাউন চালিয়েছে। সারাদিনের ধকলের পর তাদের অনেকেই তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা সরল প্রাণ মানুষরা ভাবতে পারেননি তাদের জানমাল রার শপথ নেয়া একটি স্বাধীন দেশের সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে রাতের আঁধারে জনগণের প্রাণ সংহারের নির্দেশ দেবে। যারা জেগে ছিলেন তারা ইট পাইটকেল ছুঁড়ে আত্মরার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু শেষ রা হয়নি। হেফাজতে ইসলাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তিন হাজার নিরীহ আলেম এ সময় শাহাদাত বরণ করেছেন। সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র ঢাকা মহানগরী সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সহস্রাধিক নিরীহ আলেম ওলামা পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে শাহাদাত বরণ করেছেন। এটিকে তিনি ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর দাবি, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী যে অপরাধ হয়েছিল, রোববার দিবাগত রাতের ঘটনা তাকেও হার মানিয়েছে।
আমরা শাপলা চত্বর ট্রাজেডিতে নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। আমীন।
কথায় আছে, কাউকে হত্যা করার আগে তার চরিত্রহনন করো, তাহলে তোমাকে আর কেউ হত্যাকারী বলবে না, বীর আখ্যা দিয়ে পুরস্কৃত করবে। মতাসীন দল আওয়ামী লীগ একাজে বরাবরই চ্যাম্পিয়ন। এবারও তারা তাই করেছে। ঢাকা অবরোধ রাজধানীর ৬টি পয়েন্ট থেকে মিছিল নিয়ে আসা হেফাজত কর্মীদের সরকার দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলারাকারী বাহিনীর সদস্যরা পথে পথে বাাধা দিয়েছে। তারা বাধা অতিক্রম করতে গেলে সংঘর্ষ হয়েছে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারদলীয় ক্যাডাররা রাজধানী জুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সরকার সন্ধ্যার পর রাজধানীর অর্ধেক এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অন্ধকারে ডুবে যায় মালিবাগ, শান্তিনগর. বিজয় নগর, কাকরাইল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও মতিঝিল এলাকা। এই সুযোগে সরকারদলীয় ক্যাডাররা ব্যাপক লুটপাট চালায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এমন কি মিডিয়া-কর্মী ও পুলিশের ওপরও হামলা করে। সাদেক হোসেন খোকার বক্তব্য থেকেই জানা যায় এ কাজে নেতৃত্ব দেন দেবাশীষ নামের স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা। হেফাজতে ইসলাম আল্লাহ-রাসূল ও পবিত্র কুরআনের মর্যাদা রার জন্য আন্দোলন করছেন। মতা তাদের ল্য নয়। এটি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো,পবিত্র কুরআন শরীফ পুড়িয়ে তার দায়ও হেফাজতের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এর কারণ সচেতন দেশবাসীর নিকট পরিষ্কার, রাতের আঁধারে চালানো ক্র্যাকডাউনের পর জনগণকে দেখানো, ‘দেখ! এরা কত খারাপ। এরা দেশ ও জনগণের শত্রু এদের দমন করা সরকারের দায়িত্ব।’
ধর্মনিরপেতার নামে যারা ধর্মহীনতাকে লালন করেন, তারা যে কোনো মূল্যে মহান আদর্শ ইসলামকে উৎখাত করতে চান। এ দ্বন্দ্ব আজকের নয়। বাংলাদেশের গত ৪২ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী শাসনামলে সকল ইসলামী দল নিষিদ্ধ ছিল। এবার মতায় এসেই চরিত্রহননের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ৯ জন শীর্ষ নেতাকে রাজাকার, আলবদর, স্বাধীনতা বিরোধী, চোর,খুনী,ধর্ষকের ভিত্তিহীন অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি করেছে। বিশ্বখ্যাত আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আবুল কামাল আযাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে এই সরকারের ট্রাইব্যুনাল। এই ন্যায়ভ্রষ্ট রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী তৌহিদী জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছে সরকার। আমরা এর অবসান চাই। বিচারও চাই। কিন্তু কার কাছে চাইবো? রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা দেয়া। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব সরকারের। সেই সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শাস্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রাতের আঁধারে জনগণের টাকায় কেনা পুলিশের বুলেটে প্রাণ দিতে হচ্ছে।
আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হলো ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা। সকল মত ও পথের সহাবস্থান ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন। হত্যা সন্ত্রাস চালিয়ে সাময়িকভাবে নিজেকে বিজয়ী মনে করা হলেও এর কুফল সুদূরপ্রসারি। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো চরম মানবতা বিরোধী অপরাধ। আমরা মনে করি, সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে গণতান্ত্রিক সমাজ কায়েমে যথাযথ পদপে গ্রহণ করবে।Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৯৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন