পাথরের চোখে অশ্রু ঝরে বাংলাদেশে।

লিখেছেন লিখেছেন বিপ্লবী ০১ মে, ২০১৩, ১২:৫৪:২৫ দুপুর



দুর্যোগে, দুর্দশায়। বিশ্বাস হচ্ছে না? একবার চোখ মেলে দেখুন। নজরে পড়বে। সাভারে। ধসে পড়া রানাপ্লাজার উদ্ধার কাজে। শিশুর মতো অশ্রু ঝরছে পাথরের চোখে। কৌতূহলের বিষয় হতে পারে। কিন্তু পাথরের চোখে এমন অশ্রু দেখতে চায় না দেশের মানুষ।

ফেব্রুয়ারি ২০০৯। পিলখানার দরবার অনুষ্ঠানে। বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা সৃষ্টি করেছিল এক মর্মান্তিক ট্রাজেডি। সে ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫৭ জন উঁচু পর্যায়ের মেধাবী সেনা কর্মকর্তা। যাদের বেশির ভাগই ছিলেন পেশাগত উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের অধিকারী। তিনদিন পর পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল সেনাবাহিনী। সেদিন পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবস্থান করছিলাম পিলখানা গেটে। যে গেট দিয়ে পিলখানায় ঢুকেছিল সেনাবাহিনীর ট্যাংক। সেদিনই প্রথম নিজ চোখে দেখেছিলাম পাথরের চোখে অশ্রু। ট্যাংকে সওয়ার এক সেনা জওয়ান চোখ মুচছিলেন বারবার। সে দৃশ্য গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত।

এবার ট্রাজেডি ভিন্ন। মানুষরূপী কতিপয় লোভীর বহুতল পাপে সাভারে চাপা পড়েছে হাজারো মানুষ। প্রাণ হারিয়েছে চার শতাধিক শ্রমজীবী মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের পর এমন বিপুল মৃত্যু তো দেখেনি এ দেশের মানুষ। হাজারো আহতের আর্তচিৎকার যখন সাভার ছাড়িয়ে সারাদেশে, সারাবিশ্বে বাজছে তখনই। অতীতের মতোই মানতার ডাকে, রাষ্ট্রের নির্দেশে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেনাবাহিনী। ধসে পড়া ভবনের ভেতরে আহত অবস্থায় আটকে পড়া কিছু মানুষকে উদ্ধার করতে ঢুকেছিলেন তাদের ক’জন। সেখান থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেছেন অনেককেই। সে সময় আটকে পড়া কেউ কেউ তাদের কাছে করেছিলেন উদ্ধারের আহাজারি। কিন্তু জটিল পরিস্থিতির কারণে তাদের কাউকে কাউকে জীবিত উদ্ধার সম্ভব হয়নি। উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সেনা সদস্যরা চোখের সামনেই দেখেছেন তাদের করুন মৃত্যু।

পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই কঠোর প্রশিক্ষণে গড়ে তোলা হয় সামরিক বাহিনীকে। গড়ে তোলা হয় দেশপ্রেমে। তারা বেড়ে ওঠেন একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে, সুশৃঙ্খল জীবনে। তাদের বলা হয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বহির্শত্রুর আক্রমণ মোকাবিলায় তারাই থাকেন অগ্রভাগে। জীবনপণ লড়াই করেন, দেশমাতৃকার জন্য পেতে দেন বুক। এ জন্যই রাষ্ট্র তাদের হাতে তুলে দেয় অত্যাধুনিক অস্ত্র। কঠোর প্রশিক্ষণে, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে, মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তাদের হৃদয় হয়ে ওঠে পাথরের মতো কঠিন। মনোবল হয় ইস্পাতের মতো মজবুত। সাধারণ মানুষের মতো তারা আবেগপ্রবণ হলে চলবে কি করে। কি করে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে গুলি ছুড়বে শত্রুর বুকে? কি করে দেশমাতৃকার প্রয়োজনে পেতে দেবে বুক?

সাহস এবং মনোবলের জন্য সেনাবাহিনীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে মানুষ। ভয় পায় দুর্বৃত্ত। সাভারের ট্রাজেডির আকস্মিকতায় নির্বাক হয়ে পড়েছিল দেশবাসী। কিন্তু পাথরের চোখ অশ্রু দেখে ভেঙে পড়েছে তারা। বুঝে ফেলেছে, সকল আশাই শেষ। প্রাণ নিয়ে আর কেউ বুঝি ফিরে আসতে পারবে না। বুঝতে পেরেছে পাথরও পাথর থাকে না সবসময়। একে তো আবেগ সর্বদা সংক্রমণশীল। একের আবেগ সংক্রমিত হয় অন্যের আবেগে। সাভারের মতো এমন পরিস্থিতিতে আবেগ নিয়ন্ত্রণের উপায় কি। পারেননি সেনাসদস্যরাও। ধসে পড়া ভবনের ভেতরে চোখের সামনে আহত মানুষের করুণ মৃত্যু দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কেউ কেউ। সে অশ্রুপাতের দৃশ্য এখন ছড়িয়ে পড়েছে ইথারে। আর টেলিভিশনে সেনা সদস্যদের কান্না দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি অনেকেই। পারবেই বা কি করে। হাসপাতালে চিকিৎসক কাঁদলে রোগীর আত্মীয়-স্বজন কি স্থির থাকতে পারে। একবার খেয়াল করে দেখুন। আপনার চারপাশের মানুষজনকে। কারও চোখে অশ্রু, কারও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। কাঁদছে সবাই। কাঁদছে বাংলাদেশ।

Click this link

বিষয়: বিবিধ

৯৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File