ইসলামী ব্যাংকেই মাওলানা মাসউদের অ্যাকাউন্ট! : তাহলে তিনিও কি হারাম কাজ করছেন?
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ২৫ মার্চ, ২০১৩, ১২:৪৬:২০ রাত
শাহবাগি আলেম হিসেবে চিহ্নিত মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ ইসলামী ব্যাংকে টাকা লেনদেনকে হারাম ঘোষণা করলেও তার নিজেরই অ্যাকাউন্ট রয়েছে এই ব্যাংকটিতে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের আশকোনা হজক্যাম্প শাখায় অ্যাকাউন্ট রয়েছে কথিত এ মাওলানার। ইসলামী ব্যাংকের ওই শাখায় তিনি ২০০০ সালের নভেম্বরে (আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে) নিজ নামে এ অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা লেনদেন শুরু করেন। এছাড়া তার সম্পাদনায় প্রকাশিত মাসিক পাথেয় পত্রিকায় নিয়মিতভাবে ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছেন। পত্রিকাটির মালিক হিসেবেও তিনি ইসলামী ব্যাংকের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে কাজ করেন। প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে সরকারের আয়োজনে পুলিশ বেষ্টিত সমাবেশে মাওলানা মাসউদ ঘোষণা দেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করা হারাম, হারাম, হারাম। এই ব্যাংকে যারা অ্যাকাউন্ট করবে তারা শয়তানকেই সহায়তা করবে।’ ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে মাওলানা মাসউদের এ বিষোদ্গার আবার ওই ব্যাংকেই তার অ্যাকাউন্ট থাকার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রকৃত আলেমরা। তারা বলেন, মাওলানা মাসউদ নিজেই যে আপাদমস্তক একটা ভণ্ড এবং প্রতারক এই ঘটনা তারই নিকৃষ্ট নজির। নিজেকে মাওলানা পরিচয় দিয়ে অতীতেও তিনি বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। একদিকে তিনি শাহবাগিদের মঞ্চে চড়ে মহান আল্লাহ, মহানবী হজরত (সা.) ও ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনাকারী স্বঘোষিত নাস্তিক মুরতাদদের জন্য দোয়া করেছেন। আবার মতিঝিলে সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে শতশত পুলিশের বেষ্টনীর মধ্যে গুটিকয়েক অনুসারী নিয়ে সমাবেশ করে তাদের শাস্তি দাবি করেছেন। বিকৃত রুচির এ মাওলানা একদিকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা লেনদেনকে হারাম ঘোষণা করেছেন। আবার তিনিই ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এ ধরনের নির্লজ্জ মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড একমাত্র তার মতো লোকের পক্ষেই সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তারা। ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ আমার দেশ-কে বলেন, ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আবেগ অনুভূতির বিষয় চিন্তা করে ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করেছিলাম। পরে ২০০০ সালে বেতন-ভাতার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট করতে হয়েছে। তবে বিশ্বাসগত কারণে আমি অ্যাকাউন্টগুলো ক্লোজ করে ফেলেছি। তাছাড়া আমি নিজ থেকেই ইসলামী ব্যাংকে টাকা জমা রাখাকে হারাম ঘোষণা করিনি। এ ঘোষণা দেয়ার এখতিয়ারও আমার নেই। আমি শুধু বলেছি, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আলেম একটি যৌথ সিদ্ধান্ত দিয়ে বলেছেন, বর্তমানে যেসব ইসলামী ব্যাংক রয়েছে, এগুলোর সঙ্গে প্রচলিত অন্যান্য ব্যাংকের মৌলিক কোনো তফাত্ নেই। ইসলামী ব্যাংক শুধু ইসলামী পরিভাষাগুলোই ব্যবহার করে থাকে।
তারা ইসলামী বিধি-বিধান পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ করে না। শীর্ষস্থানীয় ওইসব আলেমের বক্তব্য উদ্ধৃত করে আমি কোনো দোষ করিনি।
তারা যেটা বলেছে, আমি সেটাই উল্লেখ করেছি। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ ২০০০ সালের ২৬ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের হজক্যাম্প ব্রাঞ্চে নিজ নামে নিজেই অ্যাকাউন্ট খোলেন। তার এ অ্যাকাউন্টটি এখনও সচল রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদের পাশাপাশি তার অন্য আত্মীয় স্বজনেরও ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তারাও নিয়মিত এই ব্যাংকে লেনদেন করছেন বলে তার আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন।
মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদের সাম্প্রতিক ভূমিকার বিষয়ে ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা হোসাইন আহমদ আড়াইহাজারী বলেন, সারাদেশের আলেম ওলামারা ইসলামবিদ্বেষী শাহবাগের নাস্তিক ব্লগারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার। তখন শাহবাগিদের দোসরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মাওলানা মাসউদ। শাহবাগিদের দাবি আর এই কথিত মাওলানার দাবির মধ্যে কোনো তফাত্ নেই। কাজেই মাওলানা মাসউদ আর শাহবাগি নাস্তিক ব্লগাররা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাদের উভয়ের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি একই। তিনি বলেন, শাহবাগের জনমানবহীন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশে সরকার শতশত পুলিশ ও র্যাব দিয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা, আর্চওয়ে ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা দেয়। ঠিক মাওলানা মাসউদের তিনশ’ লোকের মহাসমাবেশ করতেও একই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশাল এলাকায় অঘোষিত কার্ফ্যু জারি করে রেখেছে।
মাওলানা ফরিদ বরাবরই আওয়ামী লীগ সরকারের নাচের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছেন। একই বিষয়ে মুফতি আবু সালেহ মো. তাকিউল ইসলাম বলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর
নেতৃত্বে সারাদেশের সর্বস্তরের আলেম ওলামারা যখন ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে শামিল তখন মাওলানা মাসউদ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
তাকে দেশের মানুষ চরমভাবে ঘৃণা করে, শনিবারের কথিত মহাসমাবেশ তারই প্রমাণ রেখেছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি অস্বীকার করে মাওলানা সউদ আমার দেশ-কে বলেন, সরকারের সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই। বরং আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই আমার ক্ষতি করেছে। চাকরি ছেড়ে দেয়ার গত চার বছরেও এ সরকার আমার সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দেয়নি। কাজেই কেউ যদি বলে আমি সরকারের পক্ষে কাজ করছি, তারা চরম ভুল করবে।
কপি পেষ্ট: ফেইস বুক থেকে
বিষয়: রাজনীতি
১২৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন