ওমর ফারুক চৌধুরী ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা নন!
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ২১ আগস্ট, ২০১৬, ০১:০৪:৩৬ দুপুর
কাতারে একটি অনুষ্ঠানে কাতার আওয়ামীলীগের সভাপতি জনাব ওমর ফারুক চৌধুরীকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বলা নিয়ে যে লংকাকান্ড ঘটেছিল, অনলাইনে বিচরণকারী মাত্রই তার খবর রাখেন। আধা শিক্ষিত মানুষ এ সম্পর্কে "জন্ম ৩০ জানুয়ারী ১৯৬৫ঃ কাতারের ওমর ফারুক চৌধুরী কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা" শিরোনামে একটি লিখা লিখি। ওমর ফারুক চৌধুরী তার ফেইসবুক ওয়ালে এ সম্পর্কে "একজন মুক্তিযোদ্ধার ক্ষোভ" একটা বিবৃতি দিয়েছেন। আজকে লেখা তার সেই বিবৃতি সম্পর্কে।
১. জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেনঃ "আমি পঞ্চম শ্রেণীতে থেকে আমার শিশু কর্মী হিসাবে রাজনৈতিক কাজ শুরু"-এটা আমার বিবেচনায় একটা মিথ্যা কথা। কারণ সেই সময়ে ৫ম শ্রেণীর একজন ছাত্রের রাজনৈতিক জ্ঞান ছিল-এটা পাগলে বিশ্বাস করতে পারে। এখনকার যুগে মিডিয়ার কল্যাণে শিশুরাও অনেক অগ্রসর। তাই বলে ওমর ফারুক চৌধুরীর সময়েও? মিথ্যা কথা বলার জন্য দূঃখিত। যদি তা সত্য হয়, তাহলে তা হবে পৃথিবীর আশ্চর্য জিনিস গুলোর ১টি।
২. জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী ৫ম শ্রেণীতে রাজনীতি শুরু করেছেন বললেও কতুটুকু পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন, তার কোন উল্লেখ নেই। তার এই বিবৃতিতে মাত্র ২৪টি বানান বা ব্যাকরণগত ভূল রয়েছে বলেই এই প্রশ্ন।
৩. জনাব ওমর ফারুক চৌধুুরী "পাঁচ জানুয়ারি উনিশ চুয়ান্ন সালে জন্ম" বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বিশ্বাস করার মতো কোন ডকুমেন্ট উল্লেখ করেননি। আমরা জানি যে, বিশ্বব্যাপী বয়স প্রমাণের জন্য ৩টি বস্তুকে অথেনটিক মনে করা হয়। ১. এসএসসি সার্টিফিকেট। ২. জন্মনিবন্ধন সনদ। ৩. পাসপোর্টের কপি। তিনি বিবৃতির সাথে মাত্র ৪২টি ছবি সংযোজন করেছেন। কিন্তু এর মাঝে এই ধরণের কোন ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি।
৪. জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা একথা প্রমাণের জন্য তিনি একটি সংক্ষিত বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু এই বিবরণ প্রমাণ করেনা যে, তিনি মুক্তিযোদ্ধা। যেমন তিনি আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সাথে যুদ্ধ করেছেন বা ভারতের উত্তর প্রদেশে ট্রেনিং নিয়েছেন। এই দুইটি কথা আমিও বলতে পারি। আমার এই বলার মাধ্যমে আমি মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হয়না। কারণ আমার জন্ম ১৯৭১ সালের জানুয়ারীতে। আর আব্দুর রাজ্জাক সাহেব এখন করব থেকে উঠে এসে ওমর ফারুক চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষী দেবেন না। জনাব ওমর ফারুক চৌধুরীর ৪২টি ফটোর কোনটিতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কোন প্রমাণ নেই।
৫. জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী তার বিবৃতিতে বলেছেনঃ আমি ওমর ফারুক চৌধুরী একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে যেই তির্যক কঠোর ভাসায় আমাকে আক্রমণ করা হলো তাতে হতভম্ব হয়ে গেলাম। তিনি ১৫ আগষ্টে কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাসে সংঘটিত ঘটনার দিকে নজর দিয়ে একথা বলেন। কিন্তু আমরা যারা ফেইস বুকের কল্যাণে ঘটনার আদ্যোপান্ত দেখেছি তারা জানি যে, জনাব শফিকুল ইসলাম প্রধান ঐ দিন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম বলতে চাননি। কিন্তু আপনার অনুসারীরা তাকে উত্তেজিত করতে নাম বলতে বাধ্য করেছে। এমনকি সেদিন আপনার শারিরিক ল্যাংগুয়েজ যারা দেখেছেন, তারাও বলতে বাধ্য হবেন যে আপনার সরাসরি অনুপ্রেরণায়ই শফিকুল ইসলাম প্রধানের উপর হামলা করা হয়েছে।
৬. জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেনঃ "পনেরই আগস্টের আগে অথচ আমি স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার মুক্তি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সনদ,- উপ জিলা(থানা)- জিলা এবং সমগ্র বাংলাদেশ ব্যাপী ঢাকা থেকে চূড়ান্ত প্রকাশিত তিনটা সরকারী গেজেটে আমার নাম অন্তর্ভুক্তি সমেত এবং মুক্তি যোদ্ধা ভাতার প্রাপ্য রসিদ, পাস বুক, সোনালী ব্যাংকের চেক বই সহ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূতের হাতে হস্তান্তর করি ও কাউন্সিলর সচিব চারজন অফিসারের সম্মুখে হস্তান্তর করি"। আমার প্রশ্ন হলোঃ ১৫ আগষ্ট আপনাকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বলা হলো, আর আপনি এর আগেই ভূয়া নন এটা প্রমাণের দরকার কেন পড়েছিল। তাহলে পর্দার অন্তরালে আরো কি কি ঘটেছিল, যা আমাদের অজানা। সেই অজানা ঘটনা দলীয় কোন্দল নয়তো। দলীয় কোন্দল সামাল না দিতে পারা কাতার আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসাবে ওমর ফারুক চৌধুরীর আরেকটি ব্যার্থতা।
৭. জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী উপরে যে সব সনদপত্রের কথা বলেছেন, তার ১টি সনদপত্রও তিনি তার প্রকাশিত ৪২টি ছবির কোনটিতেই প্রদর্শন করেননি।
৮. জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী ১৫ আগষ্টের অনাকাংখিত ঘটনার জন্য দূতাবাস কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন। কিন্ত আমরা তো দূতাবাস কর্মকর্তাদের সব সময় দেখি আপনাদের পদলেহন করার জন্য। কই সেদিন অনুষ্ঠানে যারা ছিলেন অথবা দূতাবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যারা থাকেন, তারাতো আপনাদেরই লোক। মাত্র ১সপ্তাহ পূর্বে আপনারা যে, জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালালেন, সেই বিএনপি বা জামায়াতের কাউকেতো আমরা দেখিনি ১৫ আগষ্টের অনুষ্ঠানে। আপনি হলফ করতে বলতে পারবেন যে, দূতাবাসে এই পর্যন্ত যে সব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তা আপনার দলের লোক ছাড়া আর কে কে করেছে?
সবশেষে বলতে চাই, জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী! আপনি যে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা নন, তার প্রমাণ আপনি দিতে পারেননি। কেবলমাত্র মুক্তিযোদ্ধা সনদ কেউ মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রমাণ করেনা। আপনি যদি সত্যিই মুক্তিযোদ্ধা হন, তাহলে আপনার পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন সনদ এবং এসএসপি পাশ করে থাকলে তার সনদের কপি জাতির সামনে উপস্থাপন করুন। যাতে বুঝা যায় যে, আপনি ৭১ সালে কত বছর বয়সের ছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার উপযোগী ছিলেন কি না?
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে।
১.নম্বরে যা বলেছেন তা সঠিক মনে হয়না! আমি নিজেও ৪র্থ শ্রেণীতে থাকাকালে রাজনীতির খবর রাখতে শিখি বড় কাজিনরা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার সুবাদে! আর ৫ম শ্রেণীতে রীতিমত সক্রিয়!
কাজেই তাঁর ঐ দাবীটা সত্য (না হলেও) হওয়া সম্ভব, এটা এমন কোন সপ্তাশ্চর্য নয়!!
তবে আপনার অন্যান্য বক্তব্য ও যুক্তি যথার্থ!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
কারণ এখন তা সম্ভব। তখন তা সম্ভব ছিলনা।
আমার ১ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে এখন শিবির বুঝে।
======
আমার জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদিনা কলেজের পাশে, যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে স্নাকতোত্তর পর্যন্ত নিজ ঘরের পান্তা খেয়েই পার করে দেয়া যায়! সে গ্রামে এমন মানুষও ছিলেন যিনি যে ঘর থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছেন সেই ঘর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পূর্ণ অধ্যাপক হয়ে অবসর গ্রহন করেছেন! আমার পরিবেশটা বোঝানোর জন্য বললাম! লেখাপড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও খেলাধূলায় সামনের কাতারে থাকার কারণে এবং কাজিনদের সঙ্গ ও উৎসাহ পাওয়াতে সে পরিবেশই আমাকে রাজনীতিতে টেনে নিয়েছিল!
যাক্ গে, প্রসঙ্গে ইতি টানাই ভালো মনে করছি!
আল্লাহতায়ালা আমাদের নিঃস্বার্থ সম্পর্কটি আমরণ অটুট রাখুন, আমীন!
আওয়ামীলীগ নামক একটা মেশিন আছে, যার এক প্রান্ত দিয়ে রাজাকার ঢুকিয়ে দিলে অন্য প্রান্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বেরিয়ে আসে।
সো, হাইবিড নেতা মানে এরকম ই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন