বাবা, বাবা দিবস কি?
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ২০ জুন, ২০১৬, ১২:৫৯:০৯ দুপুর
আস্সালামু আলাইকুম।
বাবা, তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার আজ ৫বছর ১মাস ৩দিন। এই দীর্ঘ সময়ে তোমার সাথে আমার মাত্র একবার পত্র যোগাযোগ হয়েছে। এটি আমার দ্বিতীয় চিঠি। ই-মেইল, হোইটসআপ, ভাইবারের যুগে সেকেলে এই চিঠিপত্র এখন আর চলেনা বাবা। তাই তোমাকে লেখা হয়না।
গতকাল নাকি ছিল "বাবা দিবস"। আমার অনেক বন্ধু ফেইস বুকে তাদের বাবার ছবি পেষ্ট করে আবেগময় অনেক কথা লিখেছে। আমি অনেকটা পড়েছি। তোমার ছবিটা পেষ্ট করে আমি সকলের দোয়া চাইতে পারতাম। কিন্তু কেন জানি ইচ্ছে করলো না।
গতকাল থেকে একটা জিনিস জানতে ইচ্ছে করছে। বাবা, "বাবা দিবস" জিনিসটা কি? তুমি তো আমার শিক্ষা গুরু। জীবনে অনেক শিখিয়েছো, অনেক উপদেশ দিয়েছো, অনেক নসিহত করেছো। কিন্তু ঐ বাবা দিবস সম্পর্কে কিছু বলো নি? আমি তো কোন দিন তোমাকে দেখিনি বাবা দিবস পালন করতে হবে। তাহলে ওটা আসলো কেমনে।
তোমার বন্ধু আক্কেল চাচা বললেন, প্রতি বছর জুন মাসের ৩য় রবিবার নাকি "বাবা দিবস" পালন করা হয়ে থাকে।
বাবা দিবস সম্পর্কে আমাদের প্রিন্সিপাল হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ
বাবা দিবসের সূচনা হয়েছিলো গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটন নামের এক নারীর হাত ধরে। তিনিই প্রথম দিনটি পালনের জন্য আবেদন জানান।
ক্লেটনের মাথায় ধারণাটি আসে ১৯০৭ সালে। সে বছর ডিসেম্বরে ভার্জিনিয়ার মোনোংয়াতে ভয়াবহ খনি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান সাড়ে তিনশোর বেশি পুরুষ। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। ফলে প্রায় এক হাজার শিশু বাবা হারায়। এসব শিশুর বেদনা পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টবাসী ক্লেটনকেও পীড়া দেয়।
ক্লেটন স্থানীয় মেথোডিস্ট গির্জার যাজককে খনি বিস্ফোরণে শহীদ বাবাদের সম্মানে ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই (রোববার) বাবা দিবস হিসেবে উৎসর্গ করার অনুরোধ জানান। ৫ জুলাইকে বাবা দিবস করার দাবি জানানোর কারণ, সেদিন ছিলো ক্লেটনের বাবার জন্মদিন। তবে তার বাবা বেঁচে ছিলেন না।
১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপক্ষ একটি ঐতিহাসিক ফলক স্থাপনের মাধ্যমে ফেয়ারমন্টকে বাবা দিবসের জন্মস্থান হিসেবে ঘোষণা করে। ওই সময় থেকে প্রতি বাবা দিবসে গির্জায় দিনটির মাহাত্ম বর্ণনা করা হতো।
প্রিন্সিপাল হুজুরের দীর্ঘ বয়ান থেকে জানলাম যে, বাবা দিবসের মাঝে মুসলমানদের কোন কিছু নাই। তাই এই দিবসের প্রতি আমি আগ্রহ রাখছিনা। কিন্তু আমার হঠাৎ কেন জানি মনে হলো, যদি তুমি ফেইসবুকে বাবা দিবসে বিভিন্ন জনের স্ট্যাটাস দেখো, আর সেখানে আমাকে নিরব দেখো, তাহলে আহত হতো পারো। তাই ব্যাক ডেটে তোমার উদ্দেশ্যে এই চিঠি।
বাবা,
ইদানিং স্বপ্নে তোমাকে আর দেখা হয়না। কারণ কি? মাঝে মাঝে স্বপনে দেখা না হলে ভাল লাগেনা। মাঝে মাঝে এসো, দূ'জনে অনেক কথা বলবো।
বাবা,
ইতিমধ্যে অনেক কাহিনী ঘটে গেছে। তোমার শ্রদ্ধাভাজন অনেক মানুষ এ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। তার মধ্যে ১জন অধ্যাপক গোলাম আযম আর দ্বিতীয় জন মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ অসুস্থ হয়ে কারাগারে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেছেন। বাবা গোলাম আযমের জানাযাতে লক্ষাধিক লোক উপস্থিত হয়েছিল। একজন রাজাকারের জানাযাতে এতো মানুষ। কোন মুক্তিযোদ্ধার জানাযায় এতো মানুষ হাজির হয়েছে বলে আমার জানা নাই।
ওদিকে তোমার প্রিয় সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রাহমান নিজামী, সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী জেনারেল কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা । উনারা সবাই শাহাদাতের পেয়ালা পান করে চলে গেছেন ওপারের সুন্দর জীবনে। আর মাওলানা সাঈদী এখনো জালিমের বন্দিশালে বন্দী আছেন।
বাবা,
দেশের অবস্থা এখন সাংঘাতিক।
-ওখানে বিল্ডিং বানাতে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা হয়।
- পাকা সড়কে এখন ধান ক্ষেত হয়।
- বাবাকে না পেয়ে পুলিশ এখন মেয়েকে গ্রেফতার করছে।
- হাতকড়া অবস্থায় বন্দুক যুদ্ধে আসামীর মৃত্যু হয়।
- জিপিএ ৫ পাওয়া বাচ্ছারা জানেনা স্বাধীনতা দিবস কত তারিখে।
- প্রধানমন্ত্রী যাবেন বলে সেনানিবাসে আজান বন্ধ থাকে।
আরো কতকিছু আছে বাবা, যদি থাকতে তাহলে দেখতে আর অবাক হতে।
বাবা,
তোমার জন্য দোয়া করি, দোয়া করি মায়ের জন্যও। এই দোয়াটা সাধারণতঃ আমি ভূলিনা। রাব্বি ইরহামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী ছাগিরা।
তুমি ভাল থেকো। আজ এপর্যন্ত। তোমার জন্য শুভ কামানা।
বিষয়: বিবিধ
২১৭৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাই বাবা দিবস খারাপ না ------ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন