কাতারে সন্ধিপ এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিল ও কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ১৩ জুন, ২০১৬, ১২:৩৫:০৬ দুপুর
প্রবাসের এই জীবনে নিজ দল আর ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া সাধারণতঃ আমি অন্য কোন ইফতার মাহফিলে যাইনা। কিন্তু ইদানিং একজন মানুষের সাথে কেন জানি মনের একটু টান তৈরী হয়ে গেলো। আর তাই হাজির হলাম তার দাওয়াত রক্ষা করতে কাতারস্ত সন্ধিপ এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিলে।
১০ই জুন ২০১৬। কাতারের গ্র্যান্ড কাতার প্যালেস হোটেলের ফেলকন হলে অনুষ্ঠিত হলো কাতারের সন্ধিপ এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিল। সেখানে কাতারের কুরআন সুন্নাহ পরিষদ ছাড়া আর সকল দলের নেতাদেরকে দেখা গেছে। প্রধান অতিথি ছিলেন কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্টদূত জনাব আসুদ আহমদ।
সন্ধিপ এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিলে গিয়ে প্রথম সারির চেয়ার গুলো যারা দখল করে রেখেছেন, তাদের দেখে মনে হলো সন্ধিপ এসোসিয়েশন নামক আলাদা আরেকটি সংগঠনের কোন প্রয়োজন নাই। ইফতার মাহিফিলের পরিবেশ দেখে আমার কাছে খুব উপাদেয় মনে হয়নি বলে আমি অবশ্য ইফতারের বেশ কিছু আগে আমাকে যিনি দাওয়াত করেছিলেন, তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে এসে বাচ্ছাদের সাথে বাসায় ইফতার করলাম। সেই সুযোগে আমার ছেলের ফেবারেট খাবার "জিলাপী" মানিকপুর হোটেল থেকে নিয়ে আসলাম।
ইফতার মাহফিলে গিয়ে আমি দেখলাম মঞ্চের সামনের প্রধান চেয়ার গুলোতে বসে আছেন কাতার আওয়ামীলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী তার দলবল নিয়ে বিশাল আয়োজনে। ও দিকে মাইকে মাওলানা সাহেব ওয়াজ করছেন, এদিকে তাদের গুঞ্জরণে মুখরিত মিলনায়তন। কে কার ওয়াজ শুনে।দেখে মনে হলোঃ উনারাতো বক্তব্য দিতে এসেছেন, মুল্লাদের বক্তব্য শুনতে আসেননি বা ইফতার করতে এসেছেন, ওয়াজ শুনতে আসেননি।
এই অবস্থাটা আরো বিষাক্ত হয়ে উঠলো, যখন বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপ এক এক করে হাজির হয়ে আসন দখল আর হ্যান্ডশেক করার মহড়া শুরু করলেন। এরই মাঝে হাজির হলেন আওয়ামীলীগের আরেকগ্রুপ জালালাবাদ এসোসিয়েশন পরিচয় নিয়ে। তাদের গুঞ্জরণে মাওলানা সাহেব বেচারা কাহিল। কে শুনে দ্বীনের কথা, সবাই যেন পিকনিকে এসেছেন।
বলেছিলাম সন্ধিপ এসোসিয়েশনের প্রয়োজন নাই। আসলে আমি সন্ধিপ বুঝাতে চাচ্ছি না। আমি মনে করি এই অবস্থা চলতে থাকলে আঞ্চলিক বা সামাজিক সংগঠনের কি প্রয়োজন? তা হতে পারে সন্ধিপ এসোসিয়েশন বা নোয়াখালি সমিতি বা জালালাবাদ এসোসিয়েশন। সামাজিক সংগঠনে অতিথি হয়ে কেন আসবেন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ? কাতারে কি লোকের এতো অভাব পড়েছে যে, তাদেরকে হাজির করে সামাজিক সংগঠনের হল ভর্তি করতে হবে।
আমি অত্যন্ত দূঃখের সাথে লক্ষ করি যে, একই ব্যক্তি যিনি একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান, তিনি আবার সামাজিক সংগঠনের প্রধান। বিশেষ করে যখন কোন ব্যক্তি রাজনৈতিক সংগঠনে পদবী দখল করতে ব্যর্থ হন, তখন তিনি সামাজিক সংগঠনের বড় চেয়ার দখল করার সুযোগ নেন। কিন্তু কেন তারা একজন একটা পরিচয় নিয়ে চলেন না। কাতারে ঐ সব রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার খোঁজ নিলে আমরা রীতিমতো চমকে উঠবো-অথচ হাজার হাজার উচ্চ শিক্ষিত জন রয়েছেন কাতারে-যারা অবমূল্যায়িত কেবলমাত্র ঐসব মানুষ গুলোর পদলোভের কারণে।
আমি চলে এসেছিলাম, তখন মনে মনে লজ্জা লাগছিল। কিন্তু গতকাল যখন খবর নিতে গেলাম, তখন রীতি মতো খুশী হয়েছি। কারণ অঘটন যা ঘটেছে ওখানে, অথবা অঘটন যা ঘটিয়েছে ঐ দূষ্টু লোক গুলো ওখানে, যা আমাকে চোখে দেখতে হয়নি।
সন্ধিপের সন্তান হলেও মাওলানা ইরফানুল হক কাতারের বাংলাদেশ কমিউনিটির ৫জন বড় আলেমের একজন। তার উপস্থিতি ইফতার মাহফিলকে করেছিল গুরুত্ববহ। বাংলাদেশ কমিউনিটির একজন বরেন্য আলেম হচ্ছেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ। মাওলানা ওবায়দুল্লাহকে যদি বাংলাদেশ কমিউনিটির বলা হয়, তাহলে কার্পন্য করা হবে। তিনি কাতারের সর্ব মহলে একজন বরেন্য আলেম। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিমাপ করার যোগ্যতা কাতারে কোন বাংলাদেশীর আছে বলে আমার ধারণায় নাই। সন্ধিপ সমিতির ইফতার মাহফিলে তার উপস্থিতি মাহফিলকে কতটুকু ওজনদার করেছে, তা ভাষায় বুঝানো মুশকিল। আর সেই দুষ্টু লোক গুলো তো তার জুতা বহনের ও যোগ্যতা রাখেনা। অথচ সেদিন তার বক্তব্যে তারা যে পরিবেশ তৈরী করেছিল, তা কেবল বেয়াদবেরাই পারে।
তাই বলি,
সামাজিক সংগঠনে আসবে অতিথি হয়ে সামাজিক সংগঠনের নেতারা। যেমনঃ সন্ধিপ সমিতি দাওয়াত দেবে নোয়াখালী সমিতি, চট্টগ্রাম সমিতি বা সিলেট সমিতির নেতাদের। তারা কখনো আওয়ামীলীগ, বিএনপি বা জামায়াতের নেতাদের দাওয়াত দিয়ে নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ বানানোর চেষ্ঠা করবেনা। অপরদিকে রাজনৈতিক দলের মিটিংএ সামাজিক সংগঠন আসবেনা। এভাবেই হওয়া উচিত। কিন্তু কখন সে অবস্থা দেখবে বাংলাদেশ।
বিষয়: বিবিধ
১৮৯২ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর বাংলাদেশীরা যেখানেই দলবদ্ধ হয় সেখানেই দেশের রাজনীতি আমদানী করে । অন্ত/আন্ত প্রতিপক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করে বিদেশের মাটিতেই ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন