হায় মীর কাশেম আলীঃ মাত্র এক বোতল পানির জন্য কি না করলেন

লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ০৫ মে, ২০১৪, ০৩:২০:৪১ রাত



মাত্র এক বোতল পানির জন্য ইনসান এমন করতে পারে, তা আপনি না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু এই কাজটি ঘটেছে মীর কাশেম আলীর বেলায়। আমার এই এজহারের সাক্ষী হবেন শিবিরের এক জামানার কেন্দ্রীয় সভাপতি, যিনি এখন দিগন্ত টেলিভিশনের বড় কর্মকর্তা। আমার বিশ্বাস তিনি তিনি সাক্ষী দেবেন।

মীর কাশেম আলী মানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা। তিনি-

১. জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ বডি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য।

২. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম।

৩. ইবনে সিনার ডাইরেক্টর ও সর্বোচ্চ নির্বাহী।

৪. দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশন-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান।

৫. মেসার্স কেয়ারী ইন্টারন্যাশনাল এর চেয়ারম্যান।


২০১০ এ তিনি দেশ থেকে বিদেশে গেলেন বা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেলেন।পালিয়ে গেলেন ঢাকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে। বিভিন্ন দেশ ঘুরে আসলেন মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে। উদ্দেশ্য আল জাজিরা টেলিভিশনের সাথে দিগন্ত টেলিভিশনের অনুষ্ঠান সম্পর্কিত চূক্তি করা। সাথে দিগন্ত মিডিয়া কপোরেশনের শেয়ার বিক্রি। দেশের প্রায় সকল পত্রিকায় মোটা হরফে নিউজঃ মীর কাশেম আলী দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তিনি অবশ্য বিবৃতি দিলেন যে, তিনি পালিয়ে যাননি, কাজে এসেছেন এবং কাজ শেষে আবার দেশে ফিরবেন সহসাই। তার সফর সংগী ছিলেন শিবিরের এক সময়ের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজিবুর রাহমান মনজু।

তার সেই সফরেই তিনি মাত্র এক বোতল পানির জন্য যে কান্ডটাই না ঘটালেন, তা শুনলে বিশ্বাস করবেন না।

মীর কাশেম আলীকে বলা হয় জামায়াতের শিল্পপতি। কথিত আছে যে, তার ব্যবসা কোটি টাকার অংক ছাড়া নেই নাকি। দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের শেয়ার হোল্ডার কাতারে আছে প্রায় এক কোটি টাকার কাছাকাছি। আর তিনি সেই কোটি কোটি টাকার ব্যবসার নির্বাহী। কাতারে এসে উঠেছেন স্থানীয় সফিটেল হোটেলে। সফিটেল হোটেল থেকে তিনি গেলেন কমিউনিটির এক মতবিনিময় সভায়। আমি সেই সভায় হাজির থাকার সুযোগ হয়েছিল। সভার শেষে আয়োজকরা তার সম্মানে রাতের খাবারের আয়োজন করেন। আমিও সেদিন খেয়েছি পেট পুরে। কিন্তু খাবার শেষ হতে না হতেই তিনি মাত্র এক বোতল পানি নিয়ে ঘটালেন বিরাট কান্ড। পাঠক ধৈর্য্য ধরুন আসছি সেই প্রসংগে। তার আগে আরেকটি বিষয়।

সেদিনের অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, জামায়াতে বিরুদ্ধে এতো এতো ষড়যন্ত্র। কিন্তু কেন। তিনি জবাবে বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী এখন বালেগ হয়ে গেছে। অর্থাৎ কৈশোর পেরিয়ে এখন জামায়াত যৌবনে। তাই জামায়াতের উপর এই জুলুম নির্যাতন ইত্যাদি আসবে, এটাই নিয়ম। তিনি আরো বললেনঃ

১. সারা জীবন আমরা (জামায়াতের নেতারা) শাহাদাতের মর্যাদা, ইসলামী আন্দোলনে জুলুম নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। এখন সময় এসেছে সেই সব বক্তব্যের উপর আমল করে দেখিয়ে দেয়ার। এই কাফেলায় শত শত কর্মী শাহাদাত বরণ করেছে। নেতারা কি শাহাদাত বরণ করার প্রয়োজন নেই।

২. বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে সকল দেশের সকল ইসলামী আন্দোলনে শীর্ষ নেতারা সর্বোচ্চ ত্যাগ প্রদর্শন করেছেন। এমন কি তাদেরকে শহীদ করে দেয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী যদি সেই ইসলামী আন্দোলন হয়, তাহলে একই ধারাবাহিকতায় নেতাদেরকে শহীদ হতে হবে।


চলে আসি মীর কাশেম আলীর পানির বোতল প্রসংগে। মীর কাশেম আলী যথারীতি খাওয়া শেষ করলেন। খাওয়া শেষ করেই তিনি পাশে রাখা দেড় লিটারের একটি পানির বোতল বগল দাবা করলেন। এর পর তিনি অনুষ্ঠানে ছিলেন কমপক্ষে আধা ঘন্টা। কিন্তু পানির বোতল তার বগলে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত তার শুভাকাংখির কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন বোতলটা নিয়ে নেবার। কিন্তু এমন শক্ত করে ধরেছেন যে, তার একটি মনযোগ এই বোতলের দিকে। অনুষ্ঠান ছেড়ে যখন চলে যাচ্ছেন, তখন একজন বলেই বসলেনঃ পানির বোতল নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন। উত্তরে মীর কাশেম আলী বললেন, এসেছি দিগন্ত মিডিয়ার কাজে। থাকছি দিগন্ত মিডিয়ার খরচে। খাচ্ছি দিগন্তের ফান্ড থেকে। যে হোটেলে আছি, সেখানে এই এক বোতল পানির দাম মাত্র ২০ রিয়াল (হোটেলের বাহিরে মাত্র ১ রিয়াল)। তাই ২০ রিয়াল বাঁচানোর জন্য এক বোতল পানি নিয়ে যাচ্ছি। দিগন্তে টাকা আমার কাছে বলে যেমনে খুশি তেমনে তো খরচ করতে পারিনা।

তার এ বক্তব্য শুনে উপস্থি সবাই থ হয়ে গেলেন। দিগন্তের শেয়ার হোল্ডার যারা ছিলেন তারা সাংঘাতিক রকমের তৃপ্তি পেলেন। আশ্বস্ত হলেন এই ভেবে যে, যে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী এমন মিতব্যয়ী, সেখানে আমাদের টাকার ব্যাপারে কোন টেনশন নেই।

পাঠক! মীর কাশেম আলীর একটা বক্তব্য দিয়েই শেষ করতে চাই। তিনি বলেছিলেন "জামায়াত এখন বালেগ হয়ে গেছে"। কিন্তু অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক প্রাক্তণ শিবির তার এ বক্তব্যে পুরো আশ্বস্থ হতে না পেরে তাকে প্রশ্ন করার জন্য সুযোগ খুজছিলেন। এক সময়ে সুযোগ পেয়ে প্রশ্ন করলেন "যে জামায়াতকে বালেগ হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করলেন, সেই জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় দায়িত্বশীলগন যদি জেলে চলে যান, তাহলে যাদের উপর জামায়াত পরিচালনার দায়িত্ব আসেব-তারা কি দায়িত্বশীল হিসাবে বালেগ হয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?"উত্তরে মীর কাশেম আলী বললেনঃ ওরা আমাদের চেয়ে অনেক যোগ্য অনেক অনেক পারদশী।

আজ যখন রাজপথে সমাবেশে দেখি হামীদুর রাহমান আযাদ, সেলিমুদ্দিন আর শফিকুল ইসলাম মাসুদরা জামায়াতের পক্ষে প্রতিনিধিত্ত্ব করছে। যখন দেখি সামান্য একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে সারা দেশ থেকে জামায়াত শিবিরের মিছিলের ছবি। তখন আশ্বস্থ হই, ভাবি "হ্যাঁ! জামায়াত সত্যিই বালিগ হয়ে গেছে।"

এক বোতল পানির জন্য যে সিনিয়র এমন করতে পারে, তার জুনিয়ররা তারই রঙে হবে রঙিন এইতো নিয়ম এইতো বিধান।

জ্ঞাতব্যঃ লেখাটি অনেক দিন আগে সোনার বাংলাদেশ ব্লগে লিখেছিলাম। ব্লগ হারিয়ে যাওয়াতে আমার লেখাটি হারিয়ে যায়। কৃতজ্ঞ প্রবাসী ব্লগার আব্দুল্লাহ শাহীনের কাছে। যিনি বয়সে একদম নবীন। আর কাজে একদম বালেগ। তাই তার টেকনলজি দিয়ে লেখাটা উদ্ধার করেছেন। আমি ঐ লেখাটিকে হেফাজত করার জন্য নোট আকারে পত্রস্ত করলাম মাত্র।

.

বিষয়: বিবিধ

৪৩৫৭৫ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

217593
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৪:৩২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : হা,সোনার বাংলাতেও পড়েছিলাম, আজও পড়লাম মনযোগ দিয়ে।
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:০৭
166880
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : ধন্যবাদ
217595
০৫ মে ২০১৪ সকাল ০৫:১৩
বিভীষিকা লিখেছেন : অনুষ্ঠান ছেড়ে যখন চলে যাচ্ছেন, তখন একজন বলেই বসলেনঃ পানির বোতল নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন। উত্তরে মীর কাশেম আলী বললেন, এসেছি দিগন্ত মিডিয়ার কাজে। থাকছি দিগন্ত মিডিয়ার খরচে। খাচ্ছি দিগন্তের ফান্ড থেকে। যে হোটেলে আছি, সেখানে এই এক বোতল পানির দাম মাত্র ২০ রিয়াল (হোটেলের বাহিরে মাত্র ১ রিয়াল)। তাই ২০ রিয়াল বাঁচানোর জন্য এক বোতল পানি নিয়ে যাচ্ছি। দিগন্তে টাকা আমার কাছে বলে যেমনে খুশি তেমনে তো খরচ করতে পারিনা।
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:০৭
166882
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
217598
০৫ মে ২০১৪ সকাল ০৬:২১
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : হুমমমমমম ।
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:০৮
166884
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : হু-------------------------ম।
০৯ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৮:২৪
299907
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : বিষয়টা কি, আমি আবার কখন মন্তব্যে আসলাম । মনে করতে পারছিনা কেন !!
০৯ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৮:২৬
299908
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : বিষয়টা কি, আমি আবার কখন মন্তব্যে আসলাম । মনে করতে পারছিনা কেন !! হ ! অহন বুচ্ছি ! ৫মে ২০১৪ !
217655
০৫ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : লেখাটি আগেও পড়েছিলাম এসবি তে।

মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় এ বান্দার সহায় হোন। আমিন।
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:০৮
166886
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : আমীন ইয়া রব।
217657
০৫ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪
তানজিমুল হাসান মায়াজ লিখেছেন : মনে পড়ে গেলো পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতঃনিশ্চই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।জামায়াত এবং ইসলামি ছাত্রশিবির কে নিয়ে ই গর্ব করা যায়।
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:১০
166887
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : সত্য বলেছেন।
217904
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৯:৫০
পাহারা লিখেছেন : ভালো লাগল। অনেক ধন্যবাদ।
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:১০
166888
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।
218639
০৭ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৩০
মাজহার১৩ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:১০
166889
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : শুকরিয়া
218655
০৭ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০০
ইবনে হাসেম লিখেছেন : মহান আল্লাহর দরবারে আমাদের এইসব পরিক্ষীত নেতাদের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছি কায়মনোবাক্যে।
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:১০
166891
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : আমীন
218842
০৮ মে ২০১৪ রাত ০২:৪৬
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আহারে ,আজ এমন নেতাকে জেলে রেখে দেশের অনেক ক্ষতি করা হচ্ছে।
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:১০
166890
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : সেই ক্ষতি পুষাতে এগিয়ে আসতে হবে তোমাকে আমাকে সকলকে তাদের মতো মানুষ হয়ে।
১০
218999
০৮ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:১৮
মাজহার১৩ লিখেছেন : মীর কাশেম আলী বাংলার নাজিমুদ্দিন আরবাকান।
১১
220592
১২ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:১৮
অমেদুল ইসলাম লিখেছেন : জানিনা অামাদের সুদিন অাবার কবে অাসবে.......
২১ মে ২০১৪ দুপুর ০২:৩৪
171425
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : দূঃখে পড়েনা ভেঙে যে বীর পুরুষ,
বাঁধার প্রাচীর দেখে হয়না বেহুশ,
এমন মানুষ কই বীর মুজাহিদ,
দূর্জয়, দূঃখে সুখে তাকে খুজি আজ।
১২
361961
০৯ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৫:২৪
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় ভাই আপনার মূল্যবান লিখাটি পড়ে চোখের পানি চলে আসলো।
সোনার পাখিরা একে একে উড়ে যায়..
ভেংগে ভেংগে রিদয়ের সকল বাধন..।
ইনশাআল্লাই এই রক্ত বাংলার জমিনে একদিন কথা বলবে।
ধন্যবাদ আপনাকে
১৩ মার্চ ২০১৬ দুপুর ১২:২১
300233
আধা শিক্ষিত মানুষ লিখেছেন : ইনশা আল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File