দেখে এলাম নবীর দেশঃছবি ব্লগ-০৫ ((বেদনার স্মৃতি আঁকা তায়েফ-১))
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ০৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:৫০:১৭ বিকাল
আস্সালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় ভাই ও বোনেরা! আমরা এখন তায়েফের উদ্দেশ্যে। এতক্ষণ ছিলাম দুই পবিত্র মসজিদের স্থাপনা বিষয়ক প্রদর্শনী দেখতে। ওখানকার কাজ শেষ করার পর আমাদের রাহবার জুবায়ের আবরার জানালেন যে, আর দেরী করা যাবেনা। তাই আমাদের গাড়ী এগিয়ে চললো তায়েফের দিকে।
তায়েফ নামটা যখন কানে ভাসে তখনই মনের পর্দায় ভেসে উঠে আল্লামাহ দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদীর বর্ণিত ওয়াজ মাহফিলের বর্ণনা। কিভাবে আল্লাহর রাসূল দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে তায়েফে গেলেন। কিভাবে কাফেররা তাদের বালকদের লেলিয়ে দিলে রাসূলের দিকে। ওরা কিভাবে প্রচন্ড আক্রমন করলো রাসূলের উপর। প্রচন্ড শিলা বৃষ্টিতে রাসূল সা। এর পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়ে উঠলো। রাসূল বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন। ইত্যাদি বর্ণনা মানুষ শুনছে আর চোঁখের জলে বুক ভাসাচ্ছে।
দীর্ঘ দিন থেকে শখঃ রাসূলের সেই স্মৃতিময় স্থানটা দেখা। কিন্তু সময় হয়ে উঠেনা। ইতিমধ্যে ৫বার তায়েফের উপর দিয়ে অতিক্রম করা হয়েছে। কিন্তু একটি বারের জন্য ওখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি স্থানীয় আইনগত বাধ্যবাধকতা কারণে। আজ সেই আশা পুরণের দিকে। আমাদের গাড়ী এগিয়ে চলছে তীব্র গতিতে।
আমাদের রাহবার জানালেন যে, আমাদের গাড়ী নাকি আঁকাবাকা পথ ফাঁড়ি দিয়ে মাত্র ২ মাইল উঁচু পাহাড়ে উঠবে।
জুবায়েরের এই কথা শুনে হঠাৎ করে চমকে উঠলাম। ২০০৭ মডেলের গাড়ী। ওটাকি এই পথ ফাঁড়ি দিতে পারবে। যদি কোন অবস্থায় ব্রেক ফেইল করে। কিন্তু প্রত্যাশা যে অনেক। থামার বা পিছে ফিরার উপায় নেই। হঠাৎ কেন জানি মনে হলোঃ প্রিয় রাসূল এই উঁচু পাহাড় তো অতিক্রম করেছেন পায়ে হেটে। তাহলে গাড়ী নিযে কেন ফাঁড়ি দেয়া যাবনা?
তাই তীব্র আকাংখা নিয়ে আমাদের গাড়ী সামনে অগ্রসর হলো এবং এক সময় আমাদের গাড়ী পৌছে গেলো মেঘের সীমানায়। মাঝপথে আমরা গাড়ী ব্রেক করলাম ঐ দৃশ্যটা ক্যামেরাবন্দী করতেঃ
জুবায়ের আবরারের ছবি ধারণের পর আমার সংগীদের ছবি নেয়া হলো। এখন আমরা মেঘের উচ্চতায়। সেখান থেকে আমরা পাহাড়ের পাদদেশ ধারণের চেষ্টা করলামঃ
পিছনে যে পিছঢালা মনোরম রাস্তা দেখা যাচ্ছে, আমরা ইতিমধ্যে সেই রাস্তা অতিক্রম করে পাহাড়ের গা চক্কর দিতে দিতে এখানে এসে দাড়িয়েছি।
এক সময় উচ্চতার সিঁড়ি মেড়ে আমরা হাজির হলাম পাহাড়ের একদম শীর্ষে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি বিশাল আর মানোরম এক শহর। তায়েফ সিটি। সমতল থেকে ২মাইল উপরে এতো বিশাল সিটি। যতটুকু চলেছি, তাতে মনে হলো দোহা সিটির চেয়ে ছোট হবেনা।
এখন আমাদের গন্তব্য আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস মসজিদ।
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বিশিষ্ট মুফাস্সির। ইসলামের ৪ পন্ডিত আব্দুল্লাহদের একজন। রাসূল সাঃ এর চাচাত ভাই এবং হযরত আব্বাস রা এবং লুবাব বিনতে হারিস রা। এর পুত্র। তাকে ইলমের সাগর বলা হলেও তিনি উম্মতের কালি নামে প্রসিদ্ধ। তার যখন বয়স ১৩ তখন আল্লাহর রাসূল সাঃ ইনতিকাল করেন। আল্লাহর রাসূল তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন اللهم علمه الحكمة
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাঃ এর শাসনামলে তিনি স্বপরিবারে তায়েফ গমন করেন। সেখানেই তিনি অসুস্থ হন এবং ৭০ বছর বয়সে ইনতিকাল করেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে একটি কমপ্লেক্স। ১। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস জামে মসজিদ। ২। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস লাইব্রেরী। ৩। আব্দুল্রাহ ইবনে আব্বাসের কবর।
আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস সড়কে পৌছলাম।
সড়ক থেকেই নজরে আসলো আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস মসজিদের মিনারঃ
আমরা এগিয়ে চললাম মসজিদের দিকেঃ
অগনিত খুটি দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছেঃ
মসজিদের খুটি সংখ্যা নাকি ১৬০টি। কিন্তু কেউ হিসাবটা মিলাতে পারেন না। গননা করতে গেলেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেনঃ
আমার দেখা সকল মসজিদের কিবলার দিক বন্ধ থাকলেও অন্যান্য দিক গুলোতে দরজা দেখেছি। কিন্তু এই মসজিদের কিবলার বিপরীত দিকটিতে কোন দরজা বা দেয়াল নেই। সম্পূর্ণ উম্মুক্তঃ
আমরা মসজিদের ভিতর চলে গেলামঃ
মসজিদের একদম ভিতরে, যেখানে জুমুয়াবারে ইমাম সাহেব দাড়ান-সেই মেহরাবঃ
মসজিদের মিম্বর-যেখানে দাড়িয়ে ইমাম সাহেব খুতবা দেনঃ
আমরা এই মসজিদে জোহরের নামায আদায় করলাম। ইমামের দায়িত্বটা আমাকে পালন করতে হলো। এর পর আমরা ছুটে চললাম পাশে অবস্থিত লাইব্রেরীর দিকেঃ
লাইব্রেরীর বিস্তারিত আর নবী সাঃকে যে স্থানে নির্যাতন করা হয়েছে, তার চিত্র নিয়ে ইনশাআল্লাহ লিখবো আগামী পর্বে।
বিষয়: বিবিধ
১৯১০ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ খাইরান!
মন্তব্য করতে লগইন করুন