একজন ব্লগারের প্রতি ভালবাসাঃ যদি আমি পুরো শিক্ষিত মানুষ হতাম
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ১৭ মার্চ, ২০১৪, ০৪:২১:৩৩ বিকাল
উমরাহ পালনের জন্য মক্কা যাবো। মদীনা যাবো নবীজিকে সালাম দিকে তাঁর কবরের পাশে দাড়িয়ে। ব্লগারদের সাথে বিষয়টা শেয়ার করলাম। সহযোগিতা চাইলাম সৌদী আরব প্রবাসী ব্লগারদের।
আমি একজন আধা শিক্ষিত মানুষ হিসাবে আমার লেখা কাউকে পড়ানোর জন্য লিখিনা। আমি আমার মনের অনুভূতি গুলোকে স্টোর করে রাখার মানসেই লিখি। কিন্তু আধা শিক্ষিত এই মানুষটার প্রতি সৌদী আরব প্রবাসী কয়েকজন ব্লগারদের আন্তরিক ভালবাসা দেখে আমি আবেগাফ্লুত। যদি আমি পুরো শিক্ষিত মানুষ হতাম-তাহলে সেই অনুভূতি মনের মাধুরী দিয়ে কলমের আঁচর দিয়ে তা উপস্থাপন করতাম।
সহযোগিতা বলতে যেই সেই না। গাটের পয়সা খরচ করে ব্লগার আব্দুল গাফ্ফার ফোন করলেন মদীনা প্রবাসী ব্লগার শাহাদাত হোসাঈন নবীনগরীকে। আমাকে সহযোগিতা করতে বললেন। আব্দুল গাফ্ফার-এর সাথে দেখা হয়নি, তবে কথা হয়েছে।
সুখ্যাত ব্লগার আবু জারীর সৌদী আরবের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত বিভিন্ন ব্লগারদের টেলিফোন নম্বর প্রদান করলেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে।
ব্লগার ইবনে আহমাদ (আযাদ সুবহান নামেই উনি বেশী পরিচিত)। ফোন করলেন জেদ্দা থেকে। বিষম ব্যস্ত মানুষ। মক্কার অধিবাসী হারুন ভাই নামক লাগিয়ে দিলেন আমার পিছনে। মাত্র একনজর এই আধা শিক্ষিত মানুষের চেহারাটা দেখতে চাইলেন।
ব্লগার বুলবুল। যাতে সিলেটী আর তালে আমার নাকি শৈশবের পরিচিত। সময় দিলেন পাক্কা ঘন্টা। উনাকে সংগে নিয়ে জেদ্দাতে আমার ২০ বছরের পুরাতন বন্ধুটির সাথে দেখা হয়ে গেলো।
আর ব্লগার শাহাদাত হোসাঈন নবীনগরী-নিকে দেয়া ছবির চেয়ে আরো সুন্দর সুপুরুষ। কথা বলার সময় মুচকি হাসির ঝিলিক মন কাড়ে সবাইকে। পরম আদরে আলিঙ্গন করলেন মসজিদে নব্বীর আঙ্গিনায়। মসজিদে নব্বীতে বসেই তার সাথে কথা হলো। পূর্বেই রাতের খাবারের দাওয়াত দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সময়ের কার্পন্যের কারণে রক্ষা করতে পারিনি। কথা হলো অনেক বিষয় নিয়েঃ ব্লগের লেখার বিষয়, উলামায়ে কিরামদের ব্লগের দুনিয়াতে পদচারণা, মন্তব্যের সময় ভাষার ব্যবহার আর ব্লগকে ব্যবহার করে সত্য ও সুন্দরের পক্ষে কাজ করা ইত্যাদি নিয়ে মতবিনিময়।
মক্কাতে থাকাকালীন সময়ে যাচ্ছি আরাফাতের ময়দান পার হয়ে জবলে রাহমাতের দিকে। ফ্রান্সের বিখ্যাত ব্লগার প্যারিস থেকে আমি ফোন দিলেন। বিয়ের অনেক দিন পরও কোন সন্তান রিযেকে আসেনি। দোয়া চাইলেন-যা আগেও চেয়েছিলেন। তার জন্য একটা মেয়ে সন্তানের দোয়া করেছিলাম আগেই। আরাফাত থেকে ফিরে এসে আবার মেয়ে সন্তান পাওয়ার জন্য দোয়া করে দিলাম। তবে দ্বিতীয় বারের দোয়াটা করলাম চূক্তি ভিত্তিক। শর্ত হলোঃ মেয়ে সন্তানের জন্য দোয়া করবো। বললেন কেন? বললামঃ যাতে তোমাকে বিয়াই বানাতে পারি। উল্লেখ্য যে, আধা শিক্ষিত মানুষেরও প্রথম সন্তান মেয়ে। আর প্যারিস থেকে আমি-কে বিয়াই বানাতে হলে যাকে নায়ক হতে হবে তার বয়স চার বছর।
জুবায়ের আবরার থাকেন মক্কা নগরীর শুহাদা স্ট্রীটে। নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে নাস্তা করালেন। যেই সেই নাস্তা নয়-বাহারী নাস্তা। এর পর হযরত উমর রা. এর বাড়ী, আব্দুল্লাহ বিন উমর এর কবর, হুদাইবিয়া, রাবেতা আলম আল ইসলামী হেড কোয়ার্টার, মক্কার হারামাইন শরীফাইনের আর্কিটাকচার প্রদর্শণী, তায়েফের মসজিদে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস এবং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের কবর, রাসূলের ইসলাম প্রচারের সময় কাফেরদের কর্তৃক জুলুমের শিকার হওয়ার স্থান ইত্যাদি সব দেখে নিলাম জুবায়ের আবরারকে সাথে নিয়ে। জুবায়ের আবরারের আন্তরিকতা অতুলনীয়।
মদীনাতে শুরু অনলাইন এক্টিভিস্ট আব্দুর রাহমান কে দিয়ে। তিনি মদীনাতে একটি আবাসিক ইমারতের তত্বাবধায়ক ও ব্যবসায়ী। পূর্ব থেকে তার সাথে পরিচিতি নাই। অন্য এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে তার সাথে পরিচয়, তার ওখানে থাকার ব্যবস্থা। নিজ হাতে পাক করে খাওয়ালেন। যখন জানলেন আমি আধা শিক্ষিত মানুষ তখন তার আগ্রহ আরো বেড়ে গেলো। নিজের মূল্যবান সময়কে ব্যয় করে নিয়ে গেলেন বদরের প্রান্তরে। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখালেন সব কিছু, তার পর মসজিদ জুলকিবলাতাইন, আহযাবের যুদ্ধের স্থান, ওহুদের প্রান্তর সব দেখালেন আপন করে।সংগ দিলেন এমন ভাবে যেন হাজার বছরের পুরনো। ডাকলেন আংকেল বলে।আমিও তাকে সম্বোধন করলাম ভাইফুত (ভ্রাতুষ্পুত্র) বলে। বিদায় বেলা আবার নিজ হাতে পাক করে খাওয়ালেন। অনেক জোর করেও বাসা ভাড়াটা দিতে পারলাম না। শেষ সময়ে একটা প্রশ্ন করলেন, যে প্রশ্নের সম্মুখীন আর কখনো হইনি।
ব্লগার বড়মামাকে তার দেয়া টেলিফোনে অনেক খুজেছি। কিন্তু পাইনি। মামা ক্ষমা করে দিও। ক্ষমা চাই ব্লগার শাহাদাত হোসাইন নবীনগরীর কাছে, তার রাতের খাবারের দাওয়াত কবুল করতে পারিনি বলে।
পবিত্র এই ভূমি মক্কা আর মদীনাতে যাওয়া হয়েছে আরো অনেক বার। কিন্তু এলান করে যাওয়া হয়নি। এবার এলান করে যাওয়াতে ব্লগারদের জানা হয়েছে। আর তার ফলে যে আন্তুরিকতা আর ভালবাসা পেলাম তা ভূলতে পারবোনা। এই ভালবাসা যেন হয়ে আমাদের জান্নাতের আঙ্গিনাতে বসে একসাথে আড্ডা দেয়ার ওসিলা।
শেষ করবো মদীনা প্রবাসী ভাতিজার প্রশ্ন দিয়ে। ভাতিজা সারা দিন আমার সাথে সংগ দিলেন।বদর ওহুদ খন্দক ঘুরে বিদায় বেলা প্রশ্ন করলেনঃ আংকেল! এতো কিছুর পরও কেন আপনি “আধা শিক্ষিত মানুষ?”
আধা শিক্ষিত মানুষের উমরা বিষয়ে পড়ালেখার নোট নিয়ে লিখা পড়তে ক্লিক করুন।
বিষয়: বিবিধ
২৫৯১ বার পঠিত, ৫৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তার জ্বালায় না বাঁচি।
ওর গালি আর মত,
যেন আসমানী শরবত।
আমরাও দুআ করি- ''এই ভালবাসা যেন হয়ে আমাদের জান্নাতের আঙ্গিনাতে বসে একসাথে আড্ডা দেয়ার ওসিলা।''
আল্লাহ আপনার ওমরা পালন এবং মাদিনা যিয়ারাহ সহ সকল নেক আ'মাল কবুল করুন। আমীন।
আপনার পক্ষ থেকে দেখা করার যে আহব্বান করেছিলেন - মোবাইলে (আব্দুশ শাকুর ভাই)- তা রক্ষা করা মোটেই সম্ভব হবে না।কারন আমি 'কম পয়সার মালিক'।
লেখালেখি করেন অনেকদিন থেকে। কখনো মন্তব্য করতে দেখিনা।বা করলে হয়তো আমার চোখে পড়ে না।
লেখালেখি করার যে কারন টা আপনি লিখেছেন -সেটা সত্য।
কিন্তু আপনার একটি মন্তব্য হতে পারে একজন নতুন ব্লগারের জন্য বিরাট কিছু। হয়তো আপনার মত শেওলাপড়া (শক্তিমান ব্লগার) লেখকদের থেকে নতুনরা শিখবে। মন্তব্য না করলে কেমন করে এই জগতের মধ্যে আপনাদের মত যোগ্য লোক তৈরী করবেন।
আশা করি ক্ষমা করবেন।
তোমাকে কেন "তুমি" বলেছি-তা বুঝতে পেরেছো? কি বুঝলে তা ফেইস বুকে ম্যাসেজ করবে।
কিন্তু ভাই আপনার অভিজ্হতার কথা লিখলেননা।
আপনার মত মহান ব্যক্তিরা যেভাবে নিজেকে বিনীতভাবে ছোট্ট করে প্রকাশ করতে পারেন তা দেখে আমার ইর্ষা হয়। ব্যাংকের চেকে এক কোটি টাকা লেখার পরেও যেখানে আপনাদের ক্ষেত্রে শেষে "মাত্র" লিখতে হয় তবে আমার নালায়েক মূর্খদের তো পাঁচ টাকা "কিছুই না" লিখে নিজের আসল পরিচয় জাহির করতে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেয়ার জন্য। আপনার ওমরাহ মহান আল্লাহ কবুল করুক।
আপনার সিরিজের পড়ার মধ্য দিয়ে পবিত্রভূমি সমূহে আমাদেরও এক ডিজিটাল ভ্রমণ হয়ে গেল। আলহামদুলিল্লাহ। ভালো থাকুন।
ভাতিজার প্রশ্নটি অতীব গুরুত্বপূর্ণঃ
এতো কিছুর পরও কেন আপনি “আধা শিক্ষিত মানুষ?”
আল্লাহ আপনার শক্তি ও সামর্থ্য আরো বাড়িয়ে দিক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন