একজন উমরাহ যাত্রীর জন্য প্রয়োজনঃ০৮ (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ০৬ মার্চ, ২০১৪, ১২:০২:৫৩ দুপুর
একজন উমরাহ যাত্রীর জন্য প্রয়োজনঃ ০৭
((আধা শিক্ষিত মানুষের উমরাহ পালনের জন্য পড়াশুনা))
সায়ীঃ
আধা শিক্ষিত মানুষ আজ কাতার সময় দুপুর ১টায় উমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। আর আজই আমরা একজন উমরারহ যাত্রীর জন্য প্রয়োজন-এর শেষ পর্ব উপস্থাপন করবো। প্রত্যাশা থাকবে-ফিরি এসে বিস্তারিত করে কিছু লিখার।
উমরার জন্য আপনাকে এখন সায়ী করতে হবে। সায়ী মানে হাটাহাটি। আপনাকে সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে ৭বার হাটতে হবে। আর তহার শুরু হবে সাফা পাহাড় থেকে। আমরা আশা মনে করি আপনি সায়ী করার জন্য সাফা পাহাড়ের নিকট পৌছেছেন। অতএব আপনি পড়ুনঃ
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ
“নিঃসন্দেরহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ নিশানী সমূহের অন্তর্ভূক্ত। কাজেই যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর হজ্জ বা উমরাহ করে তার জন্য ঐ দুই পাহাড়ের মাঝখানে সাঈ করায় কোন গোনাহ নাই। আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে কোন সৎ ও কল্যাণের কাজ করে, আল্লাহ তা জানেন এবং তার যথার্থ মর্যাদা ও মূল্য দান করবেন।”
উপরে উল্লেখিত “ঐ দুই পাহাড়ের মাঝখানে সাঈ করায় কোন গোনাহ নাই” শব্দাবলীর পীটে সাফা মারওয়া পাহাড় নিয়ে একটি কাহিনী আছে, তা এই মুহুর্তে উল্লেখ্যের সময় নাই। তাই পরে কোন এক সুযোগে লিখবো আশা করলাম। এখন কেবল এতো টুকু জেনে নিন যে, আপনাকে আপনাকে এই দুই পাহাড়ের মধ্যে হাটতে হবে এজন্য যে, হযরত ইব্রাহীম আঃ এর স্ত্রী হযরত হাজরা শিশু ইসমাঈল আ. এর জন্য পানি খোঁজতে এই দুই পাহাড়ের মাঝে বার বার দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। মাতৃত্বের সেই পরম প্রকাশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে খুবই পছন্দনীয় হয়েছিল বলে তিনি আমাদের জন্য তা করণীয় করে দিয়েছেন।
আপনি সাফা বা মারওয়া পাহাড়ের যে অংশ দেখার সুযোগ পাবেন, তা পাহাড় গুলোর একদম চূড়া। আর আপনি যে স্থান দিয়ে হাটবেন তাকে আপনি সমতল ভূমি ভাববেন না। বরং তা হচ্ছে দুই পাহাড়ের মাঝে সংযোগ ব্রীজ। ঐ ব্রীজের নিচে পাহাড়ের বিরাট অংশ রয়েছে।এই পাহাড়টি এক সময় উম্মুক্ত ছিল। কিন্তু সৌদি সরকার বর্তমানে তা গ্লাস দিয়ে আবৃত্ত করে রেখেছেন। কারণ আমার মতো আধা শিক্ষিতরা এই পাহাড়ের পাথর মাটি ইত্যাদি নিতে নিতে তাকে একদম সাবাড় করে দিচ্ছিলেন। অথচ এই পাহাড়ের মাটিতে কোন বরকত আছে বলে আমার পড়া শুনাতে পাইনি।
আপনি সাফা পাহাড়ে আরোহন করে আপনি কাবাঘরের দিকে মুখ করে আল্লাহর গুনগান করুন, তসবিহ পড়ুন, দোয়া করুন। আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. এই স্থানে নিম্নের দোয়া করেছেনঃ
لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير. لا إله إلا الله وحده أنجز وعده ونصر عبده وهزم الأحزاب وحده.
“আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মাবুদ নাই। তিনি একা তাঁর কোন শরীক নাই। রাজত্ব তারই এবং তারই জন্য সকল প্রশংসা। এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মাবুদ নাই। তিনি একা। তিনি কাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন। তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং সবকটি দলকে একাই পরাজিত করেছেন।”
উপরের এই দোয়াটি ৩বার পড়তে হবে। সাথে অন্য দোয়াও করা যাবে।
দোয়া পড়ার পর সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের দিকে হাটতে হবে। এক জায়গায় গিয়ে দেখা হবে সবুজ বাতির। দুই স্থান্ সবুজ বাতি রয়েছে। সেই দুই সবুজ বাতির মধ্যখানে দৌড়াতে হবে। এর পর আবার স্বাভাবিক ভাবে হাটতে হবে। উল্লেখ্য যে, সবুজ বাতি আপনাকে খোঁজে বের করতে হবেনা, বরং সবুজ বাতিই আপনাকে খোঁজে নেবে। মানেঃ আপনি হঠাৎ দেখবেন যে, আপনার সামনের পিছনের এবং ডান বামের লোক দৌড়ানো শুরু করেছে। আপনিও তাদের সাথে দৌড়াতে থাকুন।
এক সময় আপনি পৌছবেন মারওয়া পাহাড়ে।ছাফা পাহাড়ে দাড়িয়ে আপনি কাবাঘরের দিকে তাকিয়ে দু হাত উপরে উঠায়ে সেই দোয়া গুলো পড়ুন, যা আপনি সাফা পাহাড়ে পড়েছিলেন। এবং এক সময় আপনি হাটা শুরু করুন সাফা পাহাড়ের দিকে। ওখানে এসে সেই আগের মতো দোয়া করুন এবং ফিরে যান মারওয়া পাহাড়ের দিকে। মাঝ খানে সবুজ বাতির স্থানে দৌড়ান। এই ভাবে আপনি ৭বার ছাফা আর মারওয়ার মাঝে হাটুন। মনে রাখবেনঃ ছাফা থেকে মারওয়া পৌছলে ১বার হবে। আবার মারওয়া থেকে ছাফা আসলে ২বার হয়ে যাবে। মানেঃ ৭নম্বরের হাটা গিয়ে শেষ হবে মারওয়া পাহাড়ে।
সাফা থেকে মারওয়া যেতে তথা ৭বার চক্কর দেয়া কম পরিশ্রমের কাজ নয়। বিশেষ করে আধা শিক্ষিত মানুষের মতো ভপুধারীদেরকে রীতি মতো ধরা খেতে হবে। তাই ধীরে ধীরে চলতে হবে। হাটার সময় নানাবিধ দোয়া এবং কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে।
৭নং চক্কর শেষ হলে আপনি থাকবেন মারওয়া পাহাড়ে। আপনার হিসাব অনুযায়ী ৭চক্কর শেষ হওয়ার পর যদি আপনি আপনাকে সাফা পাহাড়ে দেখেন, তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনি হিসাবে ভূল করেছেন। আপনি ৬ চক্কর দিয়েছেন অথবা ৮ চক্কর দিয়েছেন। অতএব সন্দেহ দূর করতে আপনি সাফা থেকে মারওয়া পাহাড়ে গমন করুন। ওখানে গিয়ে আপনার সায়ী-এর কাজ শেষ হবে। আর মাত্র ১টা কাজ বাকী। তাহলেই শেষ হবে আপনার পবিত্র উমরার সকল কারযক্রম।
মাথা মুন্ডনঃ
মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে সায়ী শেষ হলে আপনি এখন সেলুনের খোজ করুন। মাত্র ক’বছর আগে মারওয়া পাহাড়ের সর্বত্র হাজার হাজার সেলুন ছিল। কিন্তু এখন সব ভেঙে নতুন করে গড়া হচ্ছে বলে তা এখন আর ইতিহাস। অতএব আপনি নিজেই খোঁজে বের করতে হবে সেলুন কোথায়। সবচেয়ে ভাল হয় আপনি সেলুনের চিন্থা না করে আপনার বাসার দিকে হাটা শুরু করুন। পথে কোন এক স্থানে আপনার সেলুনের সাথে দেখা হয়ে যাবে। অতএব মাত্র ১০ রিয়াল দিয়ে আপনি মাথা মুন্ডন করে নিন। মাথা মুন্ডন না করে মাথার সমস্ত চুল ছোট করারও বিধান আছে। তবে মুন্ডন করার মাঝে সওয়াব বেশী। এখন আপনি আপনার সংগী বোনের চুল থেকে অগ্রভাগের সামান্য কেটে দিন।
আল হামদু লিল্লাহ। মাথা মুন্ডনের মধ্য দিয়ে আপনার উমরার সকল কাজ শেষ হয়ে গেলো। এখন আপনি ইহরামের পোষাক খোলে নিন। আপনি এখন ইহরাম কালীন সময়ে নিষিদ্ধ সকল কাজ করতে পারবেন। আপনি সাধারণ পোষাক পরে নিন। আপনিঃ
১. এখন আর উমরার চিন্থা না করে নিয়মিত সাধারণ পোষাকে তাওয়াফ করুন।
২. বেশীর ভাগ সময়ে মসজিদুল হারামে অবস্থান করুন। এবং প্রাণ ভরে কাবাঘরকে দেখুন।
৩. নিয়মিত মসজিদুল হারামের নামাযের জামাতে শামীল হোন।
৪. মসজিদুল হারামের নয়নাভিরাম স্থাপত্য ঘুরে ঘুরে দেখুন।
৫. পেট ভরে জমজমের পানি পান করতে থাকুন।
৬. মক্কার নিকটবর্তী ঐতিহাসিক স্থান গুলো দেখুন। যেমনঃ
- মুহাম্মদ সা. এর জন্ম স্থান।
- শিয়াবে আবি তালিব।
- আবু জেহেলের বাড়ী।
- হযরত উমর রা. এর ইসলাম গ্রহণের স্থান।
- হযরত খাদিজার কবর।
- গারে হেরা।
- গারে ছুর।
- আরাফাতের ময়দান।
- মুজদালিফার প্রান্তর।
- মীনার আবাস স্থল।
- ৩টি জামারাত।
[b]ইনশা আল্লাহ হাজ্জাম মাবরুর, সাইয়ান মশকুর, যানবান মাগফুর। তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।[/b
বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ
১. আধা শিক্ষিত মানুষ উমরা যাবেন। শুরু করলেন এই বিষয়ে লেখাপড়া। তারই নির্যাস নিয়ে এই ৮পর্বের রচনা "একজন উমরাহ যাত্রীর জন্য প্রয়োজন"।
২. আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর ৩সংগী সহ আধা শিক্ষিত মানুষ রওয়ানা হবেন মদীনা মুনাওয়ারার উদ্দেশ্যে। সেখানে ২দিন অবস্থান করে মক্কা। উদ্দেশ্য উমরাহ এবং যিয়ারাহ। সবাই দোয়া করবেন।
৩. ফিরে এসে যাতে লিখতে পারি এই বিষয়ে বিস্তারিত, সে জন্য সহযোগিতা কামনা করছি।
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৬ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহতায়লা আপনার উমরাহ ও দোয়া কবুল করুন।
হাজ্জাম মাবরুর, সাইয়ান মশকুর, যানবান মাগফুর। তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন