একজন উমরাহ যাত্রীর জন্য প্রয়োজনঃ ০৬
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ০৪ মার্চ, ২০১৪, ০১:০৭:৪৩ দুপুর
একজন উমরাহ যাত্রীর জন্য প্রয়োজনঃ ০৫
((আধা শিক্ষিত মানুষের উমরাহ পালনের জন্য পড়াশুনা))
তাওয়াফঃ
তাওয়াফ মানে চক্কর দেয়া। কোন কিছুকে কেন্দ্র করে তার চতূর্দিকে চক্কর দেয়ার নাম তাওয়াফ। উমরাতে তাওয়াফ মানে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে চক্কর দেয়া। আর এই তাওয়াফ হলো উমরার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। অপরটি কি আমরা পরে জানতে পারবো।
ইসলামে সকল আনুষ্ঠানিক ইবাদতের একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। তেমনি উমরার জন্য তাওয়াফেরও একটি নিয়ম আছে। আজ আমরা সেই নিয়মের যা শিখেছি, তা আলোচনা করবো। অতএব, তাওয়াফ করার জন্য আপনি তৈরী হোন। আপনি ইতিমধ্যে হাজারে আসওয়াদের নিকটে পৌছেন এজন্য যে, আপানি জানেন-ওখান থেকেই তাওয়াফ শুরু করতে হয়। তাই চলে আসুন হাজারে আসওয়াদের নিকটে। ডান হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদকে স্পর্শ করুন এবং চুম্বন করুন। আর দোয়া পড়ুনঃ
بسم الله والله أكبر. اللهم إيمانا بك وتصديقا بكتابك ووفاء بعهدك وإتباعا لسنة نبيك محمد صلى الله عليه وسلم.
“আল্লাহর নামে। আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! তোমার উপর ঈমান রেখে, তোমার কিতাবকে সত্যায়ন করে, তোমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সা. এর আদর্শের অনুসরণ করে (তাওয়াফ আদায় করছি)।”
আপনি হাজারে আসওয়াদে আসতে গিয়ে থমকে দাড়িয়েছেন? প্রচন্ড ভীড়? কোন টেনশন নেই। ইসলাম আপনার জন্য সহজ করে দিয়েছে।তাই আপনি হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করতে কষ্টকর হলে আপনি হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদের দিকে ইশরা করে উপরে বর্ণিত দোয়াটি পড়ে নিন। মনে রাখবেন হাজারে আসওয়াদে চুমু দিতে গিয়ে ঠেলাঠেলি করা এবং এর মাধ্যমে অন্য মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেয়ার সুযোগ নাই।
আপনাকে আরো মনে রাখা উচিত যে, হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করলে চুম্বন দিতে হবে। কিন্তু যদি হাত দিয়ে ইশারা করেন, তাহলে চুমু দেয়ার দরকার নাই।
আপনি পুরুষ হলে আপনার ইহরামের কাপড়ের যেটি গায়ে জড়িয়েছেন তা মধ্যখান আপনার ডান বগলের নিচ দিয়ে উভয় প্রান্ত বাম কাধের উপরে নিয়ে পরিধান করুন। এই কাজটার নাম ইজতিবা।
এখন আপনাকে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। মানে আপনি হাজারে আসওয়াদ বরাবর জায়গা থেকে বাইতুল্লাহকে বামে রেখে হাটা শুরু করবেন।হাটতে থাকবেন ক্বাবাঘরকে কেন্দ্র করে। ক্বাবার দরজা পেরিয়ে হাতিম পেরিয়ে আপনি যখন ক্বাবা ঘরের আরো দুইটি কোন অতিক্রম করবেন, তখন দেখবেন সবাই ক্বাবা ঘরের নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করছে। ওটা আপনি যে স্থান থেকে তাওয়াফ শুরু করেছিলেন, ঠিক তার আগের কোন।
ক্বাবা ঘরের এই কোনকে বলে ‘রুকনে ইয়ামানী’। আপনি রুকনে ইয়ামানীতে পৌছে আপনি দেখবেন যে, সম্পূর্ণ ক্বাবা ঘরকে গিলাফ দিয়ে ঢাকা হলেও ওখানে সামান্য জায়গাকে খোলা রাখা হয়েছে। আপনি আপনার হাত দিয়ে সেই জায়গাটাকে স্পর্শ করুন। ওটা স্পর্শ করা সুন্নাত। আপনি কখনও ঐ কোনে চুমু দেয়ার চেষ্টা করবেন না বা কাবা ঘরের কোন স্থানে চুমু দেয়ার চেষ্টা করবেন না।
রুকনে ইয়ামানীতে স্পর্শ করার পর আপনি দেখবেন ক্বাবা ঘরের দিকে প্রচন্ড ভীড়। কারণ সামনে হাজারে আসওয়াদ। ওখানে চুমু দেয়ার জন্য লোকজন প্রতিযোগিতা করছে। হাজারে আসওয়াদ যে কোনে অবস্থিত আপনি সেখান থেকেই তাওয়াফ শুরু করেছিলেন। আপনি রুকনে ইয়ামানী হতে হাজারে আদওয়াদ বরাবর কোনের মাঝে হাটার সময় পড়ুনঃ
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ. اللهم إني أسألك العفو والعافية في الدنيا والآخرة.
“হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের আযাব হতে মুক্তি দান করো। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ ও নিরাপত্তা ভিক্ষা চাই।”
হাজারে আসওয়াদে পৌছার পর আপনার ১টি তাওয়াফ শেষ হবে। এবার পূর্বের ন্যায় দোয়া পড়ে দ্বিতীয় তাওয়াফ শুরু করতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে, তাওয়াফ চলাকালীন সময়ে সংগীর সাথে কথাবার্তা না বলে এবং চুপ না থেকে বিভিন্ন সুরা কিরাত তেলাওয়াত করতে হবে। বিভিন্ন দোয়া উচ্চারণ করতে হবে। দোয়া হবে নিজের গুনাহ মাফের জন্য, আপনার কাছে বলে দেয়া সকল মানুষের জন্য, সকল মুমিন মুসলমানের জন্য, তামাম পৃথিবীর সকল মুসলমানের জন্য, নির্যাতি বিশ্ব মানবতার জন্য, আপনার প্রিয় জন্মভূমির জন্য, দেশের ইসলাম আর মুসলমানদের জন্য, আপনার স্ত্রী সন্তান আর পরিবারের জন্য। বিশেষ করে আব্বু আর আমু্মর জন্য।
এভাবেই আপনাকে মোট ৭টি চক্কর দিতে হবে। যার শুরু কাবা ঘরের হাজারে আসওয়াদ বরাবর কোন থেকে এবং সকল কোন ঘুরে এসে শেষ হবে ঠিক ওখানেই।
মনে রাখতে হবে যে, ৭টি চক্করের প্রথম ৩টি চক্কর হবে ছোট ছোট পায়ে তুলনামূলক ভাবে দ্রুত আর শেষ ৪টি তাওয়াফ হবে স্বাভাবিক গতিতে।
আপনি তাওয়াফ করছেন। এখন আপনাকে একটা প্রশ্ন করি! আপনি কেন একটি নিদিষ্ট ঘরকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করছেন? আপনি বলবেনঃ এটা আল্লাহর ঘর-বাইতুল্লাহ। তাই আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে চক্কর দিচ্ছি-তাওয়াফ করছি। যদি তা-ই হয়, তাহলে আপনার প্রতি জিজ্ঞাসাঃ আপনার আমার জীবনের এমন হাজারো চক্কর আছে, জীবনের পথ চলা শুরু থেকে আজ অবধি আমি আপনি সবাই চক্করের মধ্যেই আছি। সেই সব চক্কর কোন জিনিসটাকে কেন্দ্র করে হবে? সহজ উত্তরঃ আল্লাহ নির্দেশকে কেন্দ্র করে। অতএব, আপনি তাওয়াফ করার সময় মনের মাঝে এই অনুভূতি সৃষ্টি করতে হবে যে, জীবনের আগামীর সময় গুলোতে যত চক্কর আছে, সকল চক্করে আমি আপনি আল্লাহর নির্দেশকে কেন্দ্র করে চক্কর দেবো।আমার পরিবার, আমার সমাজ, আমার ব্যবসা, আমার রাজনীতি, আমার সামাজিকতা-সকল ক্ষেত্রে আমার চক্কর নিয়ন্ত্রিত হবে আল্লাহর নির্দেশকে কেন্দ্র করে। বাইতুল্লাহ (আল্লাহর ঘর) ছেড়ে যখন আরদুল্লাহ (আল্লাহর জমীনে-সাম্রাজ্যে)প্রত্যাবর্তন করবো, তখন আমার চক্করের কেন্দ্র বদল হবেনা। আপনি আপনার তাওয়াফে এই অঙ্গিকার করুন। ফেলে আসা দিন গুলোতে যে সব চক্বর আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত করা হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন এই চক্বর গুলো দিতে দিতে।
৭টি তাওয়াফ শেষ হয়েছে? এখন আপনার গায়ে ইহরামের কাপড় ডান বগলের নিচে থেকে বের করে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে পরে নিন। এবং পড়ুনঃ
وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى
“এবং তোমরা মাক্বামে ইব্রাহীমকে নামাযের স্থান বানাও”।
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার সব পর্বগুলোই প্রিন্ট করে রাখছি। মে'তে যাব ইনশাল্লাহ। এটি ভীষণ উপকারে আসবে নি:সন্দেহে। আর কিছু ফ্রেন্ডরাও যাবে। তাদেরকেও দিব।
চালিয়ে যান..
এছাড়া বিভিন্ন দোয়া ঠিকমত মুখস্ত না থাকায় অনেকে ঐ মূল্যবান সময়গুলোতে তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন! অথচ যে আয়াত এবং দোয়াগুলো অর্থসহ ভালো করে জানা আছে - সেগুলোই খুব মন দিয়ে আল্লাহর ঘরের চারদিকে চোখে পানি নিয়ে অন্তর থেকে পড়তে থাকলে অনেক অনেক ভালো লাগে! ধন্যবাদ!
দ্বিতীয়তঃ কাবা ঘরের দিকে থাকানোর মাঝে সওয়াব আছে জানি। কিন্তু তাওয়াফের সময় আমার মতে সামনের দিকে তাকানোই উত্তম। কারণ আপনি তাওয়াফ রত যেকোন নারী বা পুরুষের সাথে ধাক্কা খেতে পারেন। তাই সতর্ক থাকা ভাল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন