একজন উমরাহ যাত্রীর জন্য প্রয়োজনঃ ০৫
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ০৩ মার্চ, ২০১৪, ০২:২৭:১৬ দুপুর
একজন উমরাহ যাত্রীর জন্য প্রয়োজনঃ ০৪
((আধা শিক্ষিত মানুষের উমরাহ পালনের জন্য পড়াশুনা))
হাজারে আসওয়াদঃ
হে বোন! আপনাকে বলছি!! আপনি যদি মাসিক অসুখে থাকেন। তাহলে আপনাকে আপনার আবাস স্থলে অবস্থান করতে হবে। আপাততঃ আপনি উমরা পালনের জন্য শারিরিক ভাবে ফিট নন-শরয়ী ভাবে এক্সেপ্টেড নন। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে অসুখটা শেষ হওয়া অবধি।
হে ভাই! আপনাকে বলছি!! আপাততঃ আমাদের বোনকে বাসায় রেখে আপনাকে উমরার কাজটা সেরে নিতে হবে। তাহলে চলুন বাইতুল্লাহর দিকে। তালিবিয়া পড়তে পড়তে আসুন বাইতুল্লাহর দিকে অগ্রসর হই। আল্লাহর ঘর দর্শন পর্যন্ত এই তালিবিয়া পাঠ চলবে।
لبيك اللهم لبيك لبيك لا شريك لك لبيك. إن الحمد والنعمة لك والملك. لا شريك لك.
“হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির তোমার সমীপে।আমি হাজির তোমার সমীপে-তোমার কোন অংশীদার নাই। আমি তোমার দরবারে হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রসংশা তোমার জন্য, সকল নিয়ামত তোমার জন্য এবং সকল রাজত্বও তোমারই। তোমার কোন অংশীদার নাই।”
আপনার পরনের জুতাটা খুলে নির্দিষ্ট বক্সে রেখে প্রবেশ করুন মসজিদুল হারামে। ডান পা প্রথমে প্রবেশ করান আর দোয়া পড়ুন। ঐ দোয়া যা মসজিদে প্রবেশের সময় পড়তে হয়।
بسم الله والصلوة والسلام على رسول الله اللهم اغفرلي ذنوبي وافتح لي أبواب رحمتك أعوذ بالله العظيم وبوجهه الكريم وبسلطاننه القديم من الشيطان الرجيم.
“আল্লাহর নামে। সালাত ও সালাম আল্লাহর রাসূলের উপরে।হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ সমূহ মাফ করো। আর তোমার রহমতের দরজা সমূহ আমার জন্য খুলে দাও। আর আমি বিতাড়িত শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি মহান আল্লাহর নিকট তার মহিয়ান সত্তা ও সনাতন রাজত্বের ওসিলায়।”
মসজিদুল হারামে প্রবেশের জন্য কোন গেইট বা দরজা সুনির্দিষ্ট নেই। আপনি যে গেইট দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারেন। আপনি যদি বাব ইসমাঈল দিয়ে প্রবেশ করেন, তাহলে আপনি সরাসরি পৌছে যাবেন হাজারে আসওয়াদ বরারব। আর যদি আপনি বাব আস সালাম দিয়ে প্রবেশ করেন, তাহলে আপনি সেই বাব দিয়ে প্রবেশ করলেন, যে বাব দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন নবী মুহাম্মদ সা.। (বাব মানেঃ গেইট বা দরজা)
মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে আপনি সরাসরি চলে যান বাইতুল্লাহর দিকে। বাইতুল্লাহ দেখা মাত্র আপনি তালবিয়া পাঠ বন্ধ করুন। বাইতুল্লাহর ৪টি কোন রয়েছে। আপনি আসুন ঐ কোনে, যেখানে স্থাপিত রয়েছে হাজারে আসওয়াদ বা কালো পাতর।
আপনি লক্ষ করতেই দেখবেন ওই কোনেই মানুষের ভীড়। কারণ ওখান থেকেই তাওয়াফ শুরু করতে হয়। আবার প্রতিটি তাওয়াফের শুরুতেই হাজীগন এখানে একবার দাড়িয়ে কাবার দিকে হাত উঁচু করে ধরছেন এবং বিসমিল্লাহি আল্লাহু ওয়া আকবার বলছেন।
আপনি সরাসরি চলে আসুন হাজারে আসওয়াদের নিকটে। ডান হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদকে স্পর্শ করুন এবং চুম্বন করুন। আর দোয়া পড়ুনঃ
بسم الله والله أكبر. اللهم إيمانا بك وتصديقا بكتابك ووفاء بعهدك وإتباعا لسنة نبيك محمد صلى الله عليه وسلم.
“আল্লাহর নামে। আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! তোমার উপর ঈমান রেখে, তোমার কিতাবকে সত্যায়ন করে, তোমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সা. এর আদর্শের অনুসরণ করে (তাওয়াফ আদায় করছি)।”
হাজারে আসওয়াদ নিয়ে একটা মজার ঘটনা আছে, তা কি পাঠকের মনে আছে। ওটা পড়েছিলাম সেই শৈশবে। হাজারে আসওয়াদকে বলা হয়ে থাকে বেহেশতের পাথর গুলোর একটি। ওটা অনাদিকাল থেকে কাবাঘরের সাথে সংযুক্ত আছে। নবী সা. যখন যুবক, তখন একবার ঢলের পানিতে কাবাঘরের ম্যান্টেনেন্স-এর প্রয়োজন পড়ে গেল। হাজারে আসওয়াদকে সরিয়ে রেখে কাজটা সম্পাদিত হলো। এক সময় হাজারে আসওয়াদকে পূণস্থাপনের পর্যায় এসে গেলো। আরবের প্রসিদ্ধ ৪টি গোত্রের মধ্যে বিবাদ লেগে গেলো। সবাই চাচ্ছে এই রবকতময় কাজটা একা নিজেরা করতে।এবং কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। বিষয়টা অস্র টানাটানির পর্য্যায়ে চলে গেলো। অবশেষে মুরব্বীরা সিদ্ধান্তে পৌছলেন এই মর্মে যে, আগামী কাল প্রত্যুষে যে ব্যক্তি সবার আগে কাবাঘরের সামনে পৌছবে, সেই এই বিষয়ে ফায়সালা দেবে। আর সবাই তার ফায়সালা মেনে নিতে বাধ্য থাকবে।
দিনটা ছিল শীতকাল। স্বাভাবসুলভ ভাবেই যুবক মুহাম্মদ প্রত্যুষে উঠে গায়ে চাদর জড়িয়ে পায়চারির উদ্দেশ্যে বাড়ীর পাশে কাবা ঘরের সামনে হাজির। এর পর সবাই এসে দেখলো যে, মুহাম্মদ সা. ই সবার আগে এসেছেন। তাই সবাই টেনশন মুক্ত হলো এই ভেবে যে, কোন গোত্রবাজই আগে আসতে পারেনি। বরং নগরীর সবচেয়ে ভাল আর আস্তাভাজন মানুষটাই প্রথমে এসেছে। তার সিদ্ধান্ত হবে পক্ষপাতিত্বহীন। কারণ তিনি তার আচরণ, ব্যবহার ইত্যাদি দিয়ে ইতিমধ্যে জনতার মন জয় করে আল আমীন উপাধি ধারণ করেছিলেন।
মুহাম্মদ সা. সকলের কথা শুনে নিজের গায়ের চাদরটা জমিনের উপর বিছিয়ে দিয়ে পাথরটাকে সেই চাদরের উপর রাখলেন। আর সেই গোত্রবাজ ৪ গোত্রের ৪জন লিডারকে চাদরের ৪টি কোনে ধরতে বললেন। ৪জন চাদরের চার কোনায় ধরলেন এবং পথরটাকে নিয়ে গেলেন কাবাঘরের সেই স্থানে যেখানে পাথরটা স্থাপন করা হবে। নবী সা. নিজ হাতে পাথরটা উঠিয়ে সেই স্থানে স্থাপন করলেন। আর এভাবেই মিমাংসা হলে গেলো বিষয়টি। জাতি সংঘাত একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে মুক্তি পেলো।
পাঠক!
শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, এই যে নবীর প্রতি মানুষের এতো আস্থা আর ভালবাসা ছিল-সেই নবী যখন মানুষকে সত্য আর কল্যাণের পথে ডাকলেন, জাহেলী সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী ন্যায় বিচারপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার ডাক দিলেন, তখন সেই ওরাই তার প্রতি শত্রুর মতো আচরণ করলো। সমাজের এই ভাল মানুষটাকে তার গোষ্ঠী সহ কারাগারে নিক্ষেপ করলো, তাকে পাগল যাদুকর, কবি ইত্যাদি উপাধি প্রদান করলো, তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলো, তাকে আর তার অনুসারীদের মক্কা থেকে বহিষ্কার করলো।
পাঠক!
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি যখন দূর্নীতির রসাতলে, তখন দেখি একদল মানুষ ক্ষমতা ত্যাগের পর আত্ম বিশ্বাসের সাথে বলে “২টাকার দূর্নীতি করিনি”। মানুষের ভালবাসায় যখন তারা হয় সিক্ত। ঠিক সেই ক্ষণে তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়ে রিমান্ডের নামে করা হয় নির্যাতন। তাদের নামে ইতিহাসের মামলা দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে সাক্ষ্য নিয়ে দেয়া হয় ফাঁসির আদেশ। তখন বুঝতে বাকী থাকেনা যে, কেন তাদের প্রতি এই ব্যবহার।
চলবে-----------------
বিষয়: বিবিধ
১৫৭০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
“আল্লাহর নামে। সালাত ও সালাম আল্লাহর রাসূলের উপরে।হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ সমূহ মাফ করো। আর তোমার রহমতের দরজা সমূহ আমার জন্য খুলে দাও। আর আমি বিতাড়িত শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি মহান আল্লাহর নিকট তার মহিয়ান সত্তা ও সনাতন রাজত্বের ওসিলায়।”
মন্তব্য করতে লগইন করুন