জামাতের প্রয়োজনে বিএনপি বনাম বিএনপির প্রয়োজনে জামায়াত

লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ২৬ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:০২:৩৯ রাত



বিএনপির আদর্শ আর জামায়াতের আদর্শ এক নয় বলে জামায়াত বিএনপি আলাদা আলাদা দূ’টি দল। সাময়িক সময়ের জন্য দল দূ’টি রাজনৈতিক সমঝোতায় একই জোটে অবস্থান করছে। এই অবস্থান যে কোন সময় ভাঙতে পারে।

বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তারা যুদ্ধারাধীদেরকে আঁচলের নিচে আশ্রয় দিয়েছে। মিডিয়া আর রাজনীতির মাঠে হাজার ধরণের কথা থাকলেও মেডাম ওদের ভালবাসা ছাড়তে পারছেন না বলে ওদেরকে ছাড়া জোট গঠনের চিন্থা করতে পারছেন না। কিন্তু আন্দরের কথা হলো যে, মেডাম জামায়াতের মতো বিস্বস্থ এবং ত্যাগী দল আর কাউকে চিন্থা করতে পারছেন না বলেই ওদেরকে আঁচলের নিচে রাখাই শ্রেয় মনে করছেন।

এই সুযোগে বিএনপির কিছু নেতার হাবভাব এমন যে, তাদের আশ্রয়েই জামায়াত বেঁচে আছে। কিন্তু ইতিহাস কি বলে?

- ১৯৯১ সালে এবং ২০০০ সালে জামায়াতের সহযোগিতায় বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েছে। এই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা জাহাঙীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ে ছাত্রদল শিবিরকে মাত্র ১টি মিনিটের জন্য সহ অবস্থানের সুযোগ দেয়নি। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ সহ নাস্তিক দল সমূহ আর ছাত্রদলের ভূমিকা একই ছিল।

- বিএনপি ক্ষমতায় থাকা বা না থাকার সময়ে ছাত্রদলের হাতে নিহত শিবির কর্মীর সংখ্যা একদম সামান্য নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়ে এ যাবত কাল পরযন্ত শিবির জামাতের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ সময় হলো মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সময়কাল।এই সময়ে জামায়াত শিবিরের কেউ মারা গেছে বলে আমার স্মৃতি বলেনা।

- বর্তমান কালে বাকশালী আওয়ামী শাসনে জামায়াত শিবির যে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে, তাতে বিএনপি নামমাত্র কোন ধরণের কোন সহযোগিতা করেনি।

এমন অবস্থায় জামায়াত শিবির কারো করুণা বা দয়াতে নয়, বরং নিজ শক্তির উপর আস্থা রেখে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে টিকে থাকার চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছে এবং বিস্ময়করভাবে ঠিকে আছে। এবং পরিসংখ্যান বলছে যে, যে কোন সময়ের চেয়ে শক্ত অবস্থানে আছে। জামায়াত প্রমাণ করেছে যে, কোন অবস্থায়ই জামায়াতকে ধমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। হামলা-মামলা, রিমান্ড-গুম, লোভ-লালসা সকল অস্রই বুমেরাং হয়েছে।

জামায়াতে তিন শীর্ষ নেতা নিজামী-সাঈদী-মুজাহিদকে এক সাথে গ্রেফতারের পরপর শিবিরের একজন প্রাক্তণ সভাপতি কাতার সফর করেন। তখন কাতারে অবস্থানকারী জামায়াত সমর্থকরা রীতিমতো হৃদয় ভারাক্রান্ত। তাদেরই এক সমাবেশে তিনি প্রশ্ন রাখেনঃ ৭১ সালের আওয়ামীলীগ বেশী শক্তিশালী ছিল না বর্তমানের আওয়ামীলীগ বেশী শক্তিশালী? সবাই উত্তর দিয়েছিলঃ ৭১ এর আওয়ামীলীগ বেশী শক্তিশালী ছিল। তিনি প্রশ্ন করেনঃ ৭১সালে জামায়াত বেশী শক্তিশালী ছিল না বর্তমানের জামায়াত বেশী শক্তিশালী? সবাই উত্তর দিলেনঃ বর্তমানের জামায়াত বেশী শক্তিশালী। উপসংহারে ঐ নেতা বলেছিলেনঃ অতএব ৭১-এ আমরা দূর্বল অবস্থায় যখন শক্তিশালী আওয়ামীলীগ কিছু করতে পারিনি, সেহেতু বর্তমানের শক্তিশালী জামায়াতকে দূর্বল আওয়ামীলীগ করার কিছু নাই।

দীর্ঘ ৫ বছরের সীমাহীন নিপীড়ন জামায়াতকে পরিস্থিতি মোকাবেলা কিভাবে করতে হয়, তা শিখিয়ে দিয়েছে। বিএনপির কোন ধরণের সহযোগিতা ছাড়াই জামায়াত বটবৃক্ষের ন্যায় ঠিকে আছে। শুধু তাই নয়, এমন দূর্যোগেও বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে জামায়াত বিজয়ী হয়েছে। বিগত দিন সমূহের হরতাল গুলো থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাজনীতির ময়দানে বিএনপি কত দূর্বল একটি দল, আর জামায়াত কত শক্তিশালী।

ইদানিং কালে কিছু মিডিয়ার উপস্থাপনায় এমন মনে হয় যে, জামায়াতকে বাঁচতে হলে বিএনপির আঁচলেই থাকতে হবে। তাদের সেই উপস্থাপনার জবাবে বলতে হয় যে, বিএনপি নিজেদের রক্ষার জন্যই যেখানে হিমশিম খায়, সেখানে জামায়াতকে আর কি রক্ষা করবে। সামান্য পুলিশের গ্রেফতার অভিযান যেখানে বিএনপি নেতাদের হারিকেন জ্বালিয়েও পাওয়া যায়না, সেখানে জামায়াত অফিস ছাড়া, বাড়ী ছাড়া অবস্থায় ময়দানকে মাতিয়ে রাখে। তাই বলিঃ গত ৫ বছরে এটা প্রমাণিত হয়েছে, জামায়াতের জন্য বিএনপির কোন প্রয়োজন নাই, তবে বিএনপির জন্য জামায়াত প্রয়োজন আছে।

1996 সালে একা নির্বাচন করে জামায়াত 2টি আসন পেয়েছিলো। আবার 2006 জোটগত নির্বাচন করে ২আসন পায়। এর মানে কি? এর মানে হলোঃ জামায়াত যদি নিজস্ব শক্তি নিয়ে দাড়ায়, তাহলে জোট আর একা একই কথা। তার বাস্তব প্রমাণ সাতকানিয়াতে জনাব শামসুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরীর একক নির্বাচন। আর এই জোটগত নির্বাচনের রেজাল্ট জামায়াতকে ক্ষমতায় নিয়ে যায়না, বরং জামায়াত কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাই জামায়াতকে নিজ অস্তিত্ব রক্ষার লক্ষ্যে, নিজ আদর্শের লক্ষ্যে পৌছার উদ্দেশ্যে, তৃতীয় একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশের জন্য জ্বলে উঠতে হবে আপন শক্তিতে।

আজকে দুই নেত্রীর চুলাচুলিতে সারা বাংলাদেশ ক্ষোব্দ। এমন অবস্থায় তৃতীয় একটি শক্তির উত্থান চায় বাংলাদেশ। তৃতীয় এই শক্তি হিসাবে উত্থানের বহু চেষ্টা করে এরশাদ সাহেব “বিশ্ব বেহায়া”, “স্বঘোষিত বেইমান”, “থুতু বাবা” ইত্যাদি উপাধি ধারণ করে বিবেকবানদের কাছে হাসির পাত্রতে পরিণত হয়েছেন। এমন অবস্থায় হাসিনা বা খালেদার আঁচলের বাহিরে নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে ময়দানে স্বাগত জানাতে চায় বাংলাদেশ তৃতীয় অন্য কোন শক্তিকে। যারা বিশ্বের অগ্রগতির সাথে তাল মিয়ে সাজিয়ে রেখেছে নিজেদের। যারা বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে খাপ খাওয়া মানুষ আর সাথে নৈতিকতার গুণে গুণান্বিত। বাংলাদেশের এমন প্রয়োজনে জামায়াতে নতুন নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতে হবে। জামায়াতকে উপস্থিত হতে হবে তৃতীয় শক্তি হিসাবে। সম্পূর্ণ নিজস্ব কর্মসূচী নিয়ে হাজির হতে হবে ময়দানে।

মনে রাখতে হবেঃ আওয়ামী নির্যাতন কতটুকু হতে পারে, তার একটা সীমা আমাদের জানা হয়েছে গেছে। আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে জেল, জুলুম, হুলিয়া, হত্যা, গুম ইত্যাদি। বাড়ীর বাহিরে অবস্থান, মশার কামড়, পুলিশের টেংগানী আর পেটের ক্ষীধা নিয়ে পথ চলা আমাদের রুটিন হয়ে গেছে। বিধায় আর কিইবা করার আছে আমাদের। আমাদের টিকে থাকার জন্য আমরাই যথেষ্ট-আল্লাহ সাহায্যই একমাত্র আমাদের সম্বল।অতএব----------------------।

বিষয়: বিবিধ

২১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File