কে বেহায়া? এরশাদ না আমরা

লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ২০ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৪১:৪১ দুপুর

থুতুবাবা আখ্যা নিয়ে এরশাদ এখন প্রতীকি থুতু গ্রহণ করছেন সারা দেশে ব্যাপী। এই সুযোগে এরশাদের বেহায়া উপাধিটা স্মরণ করে অনেকেই ফেইস বুকে স্টেটাস দিচ্ছেন বা নানাবিধ প্রকাশনা ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আধা শিক্ষিত মানুষ হিসাবে আমার উপলব্দির মাঝে আসছেনা যে, কে বেহায়া? এরশাদ বেহায়া, না আমরা বেহায়া?

মনে পড়ে ১৯৯০ সালের কথা। এরশাদ তখন পদত্যাগ করেছেন। সেই সময়ে সুগন্ধা নামে একটা সাপ্তাহিক ছিল। যেখানে গেদুচাচা খোলা চিঠি লিখতেন হরদম। আর সেই চিঠি পড়ার জন্য আমার মতো অনেক ভাতজারা পকেটের পয়সা দিয়ে সুগন্ধা কিনতেন। কিন্তু কোন দিন এরশাদ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি। কিন্তু যখন এরশাদ বিদায় নিলেন, তখন এই সুগন্ধার প্রচ্ছদের বিশ্ব বেহায়া বলে বিরাট কার্টূন।বীর সাংবাদিকরা কেউ গর্তে পড়ার পর তাদের বিরত্বপূর্ণ লিখনি লিখতে সিদ্ধহস্ত। একই অবস্থা হয়েছে সব সময়ে। যেমন তারেক রহমানের হাওয়া ভবন, খালেদা জিয়ার দূর্নীতি, মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অসাংবিধানিকতা ইত্যাদি নিয়ে তাদের সু-সময়ে কেউ বিরত্বপূর্ণ কলম ধরেননি।

এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বলবো ২জন মানুষকে। তাদেরকে পুস্পিত শুভেচ্ছা মরণের আগে ও পরে। একজন সাহসী সাংবাদিক মাহমুদুর রাহমান (যিনি হাসিনার এই শাসনামলে সাহসী কলম সৈনিক হয়ে অদ্যাবধি কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্টে)। আর আরেকজন মতিউর রাহমান রিন্টু (যিনি হাসিনার সেই শাসনামলে হাসিনার আন্দর মহলের আমলনামা নিয়ে ‘আমার ফাঁসি চাই’ বই লিখেছিলেন)।

বলছিলাম বেহায়া এরশাদ প্রসংগে। এরশাদ বেহায়া এই কথা আমরা সবাই জানি। সেই অনুযায়ী এরশাদের নিকট আমরা না যাওয়ার কথা, এরশাদকে প্রশ্রয় না দেয়ার কথা। এরশাদ কথা বদলাতে, নারী পটাতে, সুবিধা নিতে সিদ্ধহস্ত এমন কথা কে না জানে। কিন্তু তাই বলে আমরা কি তাকে সমাদর করতে কুন্ঠিত হয়েছি?

এরশাদ ঘৃনিত স্বৈরাচার। তার মাঝে বেহায়ামী থাকবেনা এমনতো হওয়ার কথা না। খারাপ পল্লী থেকেই দূর্গন্ধ বেরুবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা সেই দূর্গন্ধমাখা বস্তিতে নিজেরাই গিয়েছি। যেমনঃ

১. এরশাদকে নিয়ে হাসিনা বিরুধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া, এরশাদ এবং গোলাম আযমের চুক্তিনামা হয়েছে। চূক্তিকালীন সময়ে আমরা এরশাদ “স্বৈরাচার” এবং “বেহায়া” এটা আমরা ভুলে গেছি। কেন? কেবলমাত্র ক্ষমতার স্বার্থে।

২. মহাজোট গঠনের সময়ে হাসিনা “চোর” এরশাদের সাথে হাত মিলালেন। মহাজোট গঠন করলেন। এরশাদ হাসিনাকে ”বোন” হিসাবে গ্রহণ করলেন। তখন আমরা ভূলে গেলাম যে, এরশাদ “স্বৈরাচার”,“চোর” অথবা “বেহায়া”। কেন? কেবলমাত্র ক্ষমতার স্বার্থে।

৩. তারেক জিয়া একদা প্রভাতে হাজির হলেন এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কের বাড়ীতে। এরশাদকে “আংকেল” বলে ডাকলেন। এরশাদ খুব খুশী। তারেক আর বিএনপি ওয়ালারাও খুশী। অবশেষে এরশাদ ভাতিজার দিকে না এসে বোনের দিকে গেলেন। কিন্তু ভাতিজা তারেক কেন সেই “স্বৈরাচার” এবং “বেহায়া” এরশাদের কাছে গেলেন? উত্তর একটাই। কেবলমাত্র ক্ষমতার স্বার্থে।

৪. জামায়াতের একসময়ের ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব আব্বাস আলী খান ইনতিকাল করলেন। আল ফালাহ মিলনায়তনে শোক সভা। হাজির হলেন “স্বৈরাচারী” এরশাদ সাহেব। আব্বাস আলী খানে মাগফিরাতের জন্য “বেহায়া” এরশাদের দোয়া কি খুবই দরকার ছিল? কেন? রাজনৈতিক স্বার্থে।

৫. সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম এরশাদের সাথে একান্ত বৈঠকে মিলিত হলেন। বিষয় একটাই। আসুন আমাদের সাথে।

এখন জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্নঃ এরশাদ কি কখনো বলেছে যে, আমি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা? এরশাদকে যখন স্বৈরাচার বলে ডাকা হয়, তখন কি এরশাদ তা অস্বীকার করে? এরশাদকে যখন তখন বিশ্ব বেহায়া বলে গালি দেয়া হয়-কিন্তু এরশাদ কি একটি বারের জন্য তার প্রতিবাদ করেছে?

তাহলে কেন আমরা বারে বারে যাই সেই নিষিদ্ধ পল্লীতে? এরশাদ নিষিদ্ধ পল্লীর বাসিন্দা বলে সে বেহায়া। কিন্তু আমরা যারা সুযোগ পেলেই নিষিদ্ধ পল্লীতে গমন করছি, তারা কারা? কে বেহায়া? এরশাদ? না আমরা?

বিষয়: রাজনীতি

১৭৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File