স্বেচ্ছা নির্বাসনের ১৪ বছর একটু খানি পিছন ফিরে দেখা-০১
লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ৩১ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৫৬:৫৬ রাত
মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে প্রবাসীরা বছরের পর বছর বিদেশে বা প্রবাসে অবস্থান করেন নির্বাসিত অবস্থায়। অবশ্য কেউ তাদেরকে নির্বাসন দেয়না। প্রবাসীরা নিজের অথবা পরিজনের একটু খানি সুখের আশায় অথবা কোন রঙিন স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যাশায়, নতুবা আরো চাই আরো চাই মানসিক উম্মাদনায় প্রবাসে অবস্থান করেন নিজ ইচ্ছায়। যাকে বলা যায় স্বেচ্ছা নির্বাসন।
আমি সেই স্বেচ্চা নির্বাসিত বিশাল জনগোষ্ঠীর এক সদস্য। নির্বাসিত জীবনে মেয়াদ মাত্র ১৪ বছর। যার শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালের ১৯শে মার্চ।
প্রবাসী হওয়া তথা দেশ ত্যাগের বেদনা বিদুর অভিজ্ঞতাঃ
১৮মার্চ ১৯৯৯ এর মাগরিব নামাযের পরপর। নিজ বাড়ী থেকে বিদায় হবো মধ্যপ্রাচ্যের কাতারের উদ্দেশ্যে। ইতিমধ্যে লাগেজ ব্যাগেজ রেডি হয়ে গেছে। একগাদা চিঠি-পত্র, বিভিন্ন ধরণের খাবার দ্রব্য, নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য্য জিনিস দিয়ে ব্যাগ ভর্তি। এগুলো গ্রামের কাতার প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তাদের আপন জনের ভালবাসার নিদর্শন। আমি বাহক মাত্র। আত্মীয় স্বজনের মাঝে প্রায় সকলেই উপস্থিত আছেন। বোনদের মাঝে যাদের বিয়ে হয়ে গেছে সবাই হাজির। সকলের মন ভাংগা ভাব। কিন্তু আমি বেশ শক্ত সামর্থ। মানসিক ভাবে খুবই শক্ত থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু নাহ! পারা গেলো না। মাগরিবের নামায পড়ে যখন বিদায় নিতে যাচ্ছি তখন কি যে কান্না। আম্মা, বোন, স্বজনকে নিয়ে অশ্রু বিসর্জনের মহাউৎসব। বাদ পড়েননি আমার শক্ত সামর্থ মনে অধিকারী বজ্র কঠোর আব্বাও।
নুরু পুশি আয়েশা শফিদের বিদায় বেলাতেঃ
দেশে থাকা বন্ধু, যাদের সাথে সব সময়ের আড্ডা। যাদের নিয়ে কাটতো বেশীর ভাগ সময়। ক্লাশমেট, রুমমেট, আড্ডামেট ইত্যাদি নানান পরিচয়ে সাথে সাথে যারা রাজপথের সাথী, যারা সুখ দূঃখের সাথী, যারা অত্যাচারীর জনপদে সত্য আর সুন্দরের প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাথী। ওদের থেকে বিদায় নেয়ার পালা। বাড়ী থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে ওদের থেকে বিদায় নেয়ার সময়সূচী বাদ এশা। স্থানীয় ডাক বাংলো মসজিদের এশার নামায পড়ে যখন বিদায় নিতে যাবো, তখন দেখতে দেখতে নুরু পুশি আয়েশা শফি সবাই মিল শতাধিক।ওদের স্বতস্ফূর্ত অশ্রু সজল উপস্থিতি আজও ভূলতে পারিনি। থানা শহরের সেই রুপসী বাংলা বাস কাউন্টারে বিশাল সমাবেশ। উপস্থিতি এতো যে, সবার সাথে হাত মিলানোর মতো সময় নাই। অবশেষে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা, ক্ষমা প্রার্থনা এবং দোয়া চেয়ে হাত নেড়ে বিদায়। সেই সময়ে মিফতা আর আলী হোসেনের অশ্রু মাখা চোখটা ১৪ বছর পর আজও ভেসে আসে স্মৃতির আয়নাতে। কোন ধরণের স্বার্থ ছাড়া এতো মানুষের অশ্রু সজল চোখ ভাবিয়ে তুলে আজও। এক মুমিনের প্রতি আরেক মুমিনের ভালবাসার স্মরণে হই অভিভূত। আল্লাহ রাসূল সা. বলেছেনঃ যে আল্লাহর জন্য ভালবাসলো, আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষন করলো, আল্লাহর জন্য কাউকে কিছু প্রদান করলো এবং আল্লাহর জন্য কাউকে কিছু দেয়া থেকে বিরত থাকলো। (এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সে ব্যক্তি) তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করলো।
রুপসী বাংলা বাস সার্ভিসে মৌলভী বাজার জেলার বড়লেখা থানা সদর থেকে চললাম রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে। উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে স্বেচ্ছা নির্বাসন।
((বাকীটুকু দ্বিতীয় পর্বে, চোঁখ রাখুন টুডে ব্লগে))
বিষয়: বিবিধ
২১৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন