বাবার কবরের ঠিকানায় পুত্রের চিঠি

লিখেছেন লিখেছেন আধা শিক্ষিত মানুষ ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৪৫:১০ দুপুর

আস্সালামু আলাইকুম।

বাবা,[/b

আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমি খুবই ভাল আছো। তোমার মালিক তোমাকে পরম আদরে, সুন্দর ব্যবস্থাপনায়, আরাম দায়ক নিবাসে রেখেছেন বলে মন সাক্ষী দিচ্ছে। কারণ তুমি যখন আমাদের মাঝে ছিলে, এবং যখন তুমি ছিলে জীবন সায়াহ্নে-তখন তোমাকে দেখেছি তোমার মালিকের নির্দেশের প্রতি সীমাহীন অনুগত। তুমি দূঃখী জনের সমস্যা দূরীকরণে ছিলে তৎপর, তুমি দূপক্ষের মাঝে বিরজমান সমস্যা দূরীকরণে ছিলে অগ্রগামী, তুমি তোমার মসজিদ আর সমাজে ছিলে এক অনুকরণীয় নেতা।

[b]বাবা,


তুমি হঠাত্ করে একদিন যখন চলে গেলে, তখন মনে করেছিলাম মাথার উপরের একটা ছায়া চলে গেলেও মা নামক ছায়াটা এখনো বাকী আছে। কিন্তু তোমার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মায়ের প্রতি তোমার যে ভালবাসা দেখেছিলাম, তখন কেন জানি মনে করেছিলামঃ তুমি তোমার মালিককে বলবে সহসাই মাকে তোমার কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তুমি আমাদেরকে ১০০ভাগ এতিম করে মাকে আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে নিষ্ঠুরের মতো তা ভাবিনি। এখন আমরা তোমার ৮টি সন্তান মা-বাবাহীন সময় অতিক্রম করছি।

বাবা,

এখন আর তোমার সেই মসজিদে যাওয়া হয়না। তুমিও নাই, মাও নাই। তাই গ্রামের বাড়ীতে যাওয়া হয়না বলে তোমার মসজিদে যাওয়া হয়নি। অনেক দিন পর মসজিদে গেলাম। তোমার রেখে যাওয়া মসজিদের অসমাপ্ত কাজ এখনও সমাপ্ত হয়নি। ঝকঝকে টাইলস দিয়ে দেয়ালকে মনোরম করে গড়ে তোলা হচ্ছে।

বাবা,

মসজিদে দেখলাম নতুন ইমাম এসেছেন। আমার সাথে পরিচয় হয়নি। নামাযের পর অনেকেই আমার সাথে কুশল বিনিময় করলেন। হঠাৎ করে ইমাম সাহেব এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং কাঁদলেনও। আমাকেও কাঁদালেন। ভদ্রলোকের আচরণে হঠাৎ ভড়কে গিয়েছিলাম। যিনি আমাকে চিনেন না, তিনি হঠাৎ করে এমন করে আমাকে জড়িয়ে ধরবেন কেন? পরে ইমাম সাহেব বললেনঃ ভাই, আপনার সাথে পরিচয় নাই। আপনি গ্রাম সরকার সাহেবের ছেলে জানতে পেরে জড়িয়ে ধরলাম। আপনার বাবার সাথে দেখা হয়নি পরিচয় হয়নি, কিন্তু মসজিদের মুসল্লিদের মাধ্যমে আপনার বাবাকে চিনতে পেরেছি। মসজিদে আপনার বাবাকে নিয়ে এতো আলোচনা হয়-এতো প্রশংসা করা হয় যে, তাকে চিনতে আমার অসুবিধা হয়নি। আপনি সেই বাবার সন্তান বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে জড়িয়ে ধরলাম। শত শত মানুষের এই সাক্ষ্য প্রমান করে আপনার বাবা জান্নাতে আছে।

বাবা,

সেদিন মসজিদ থেকে ফিরে মনটা কেমন হয়ে আছে। একদিকে দারুন তৃপ্তিতে আছি যে, তুমি জান্নাতে আছো। কিন্তু অন্য দিক দিয়ে খুবই টেনশনে আছি এই কথা মনে করে যে, আমরা তো তোমার মতো হতে পারিনি। আমাদের আচরণে তুমি ওখানে লজ্জিত হচ্ছো কি না। তোমার সেই সম্মানী আসনের উপযুক্ত কাজ আমরা তো করতে পারছিনা।

বাবা,

তোমাকে বলাই হয়নি যে, ক’দিন আগে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। তুমি মসজিদের উত্তর পাশের অংশে অনেক মুসল্লি নিয়ে বসে আছো। সবাই তোমাকে ঘিরে বসে পরামর্শ করছে যে, কিভাবে মসজিদের কাজটা পুরা করা যায়। তুমি নাকি ওদের দাবী পুরণে কিছু দিনের জন্য এসেছো। মসজিদের কাজ পুরা করেই তুমি চলে যাবে তোমার মালিকের কাছে। স্বপ্নটা দেখার পর ভাবতে ভালই লাগছে যে, তুমি মসজিদে আছো। আর আমি জানি মসজিদ জান্নাতে যাবেই।

বাবা,

এখন একটু নিজের কথায় আসি। ৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধের সময়ে তুমি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য থাকা খাওয়ার যে কাজটা করে হানাদার বাহিনীর বিরাগবাজন হয়েছিলে, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের একজন সম্প্রতি রাজাকার উপাধি পেয়েছেন। তিনি হলেন তাজির চাচা। সেদিন বাজারে কি কারণে ঝগড়া লেগে গিয়েছিলো। আইনুদ্দিন ভাইকে লোকজন রাজাকার বলে গালি দেয়। তখন তাজির চাচা বলেন, ও রাজাকার কেমনে হবে? ৭১এ ওরতো জন্মই হয়নি। ওর বাবাতো আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছিলো। তখন ঝগড়াটে আবুলেরা তাজির চাচাকে রাজাকার গালি দেয় এবং বাজারে তার নাম নিয়ে মিছিলও করেছে। বাবা, তুমি যদি আজ বেঁচে থাকতে, তাহলে তুমিও এই ডিগ্রিটা পেতেই।

বাবা,

জীবন সায়াহ্নে এসে তুমি যে, জীবনের গতি বদলিয়ে নতুন বন্ধুদের সাথে উঠাবসা করতে, সেই বন্ধুদের এখন আর দেখা যায়না। আমি মাঝে মাঝে ওদের সাথে বরই তলীতে বসতাম। কিন্তু এখন আর ওরা নেই। এবার দেশে গিয়ে ওদের কাউকে পাওয়া যায়নি। খবর নিয়ে জানতে পারলাম “ওরা প্রায় আড়াই বছর থেকে বাড়ীতে ঘুমানোর সুযোগ পায়না। ওরা ওদের বৈঠক নিয়মিত করে। কিন্তু কোথায় করে তা তাদের নির্দিষ্ট লোক ছাড়া কেউ জানতে পারেনা। আপনার প্রিয় ভাগনা হেলাল ওদেরই একজন ছিল। মাত্র ৯দিন আগে তাকে গভীর রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।”

বাবা,

আমাদের এই প্রিয় জন্ম ভূমির জন্য তোমার মালিককে একটু বলবে কি? ওখানে আজ রক্তের বন্যা বইছে। মাত্র এক সপ্তাহে প্রায় ২০০শত লোক মারা গেছে। সরি ২০০ লোককে মেরে ফেলা হয়েছে। ওখানে ব্লগার নামে কিছু লোক আছে-যারা তোমার মালিককে গালি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনা। ওরা আল্লাহ রাসূল সাহাবী এবং ইসলাম কে নিয়ে এমন অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করছে যে, তা মুখে কোনদিন উচ্চারণ করা শিখিনি। কিন্তু সরকার তাদের যাবতীয় পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ফলে তাদের আস্ফালনের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

বাবা,

ফরিদ উদ্দিন মাসউদ নামে তোমার এক পুরনো বন্ধুর কথা মনে আছ নাকি? যে এক সময় তোমার জানে জিগর দোস্ত ছিল। পরে কি এক অজ্ঞাত কারণে তুমি তার সংগ ছাড়ো। মাঝে মাঝে তার প্রসংগ উঠলে তুমি তাকে আলেম নামের কলংক বলতে। সেই ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে নিয়ে মজার একটি ঘটনা ঘটে গেছে। বেচার আওয়ামী ঘরণার আলেম বলে আগে থেকেই পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি হঠাত করে জামাত শিবির নির্মূলের ঘোষনা দিয়ে মাঠে নামলেন। শুক্রবারে উনি শাপলা চত্তরে বিশাল মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। সরকার তার সমাবেশ বাস্তবায়নের জন্য ইত্তেফাক থেকে ফকিরাপুল এবং ওদিকে পল্টন পর্যন্ত মতিঝিল মুখী রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ঐ সমাবেশে লোক হয়েছিলে সর্ব সাকুল্যে ১হাজার জন। আর তুমি যাদেরকে পছন্দের তালিকায় নিয়ে যেতে পারনি সেই চরমোহনাইরা সেদিন একই স্থানে সমাবেশ করে, তার উপস্থিতি কত ছিল তা বুঝানো মুশকিল। পত্রিকা ওয়ালারা যে ছবি দিয়েছে, তাতে দেখা যায় তিল ধারণের ঠাই নাই। তো সেই ফরিদ উদ্দিন মাসউদ সেদিনকার সমাবেশে ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলা হারাম ফতোয়া দিয়ে বলেছেন, যারা ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট করবে, তারা জাহান্নামে যাবে। পরদিন পত্রিকা আর ফেইস বুকে খবর আসে যে, স্বয়ং ফরিদ উদ্দিন মাসউদের ব্যাং একাউন্ট আছে ইসলামী ব্যাংকে।

বাবা,

তোমার মনে পড়ে মাওলানা সাঈদীর কথা! ৯০এর দশকে তিনি আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন। যৌতুক প্রসংগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি হাত উঠিয়ে ওয়াদা নিয়ে ছিলেন যৌতুক না নেয়া এবং না দেয়ার। তুমি মঞ্চের নিচে আর আমি উপস্থাপক হিসাবে মঞ্চের উপর ছিলাম। তুমি আমি দূ’জনে হাত উঠিয়ে ছিলাম এসাথে। আর সে জন্য তুমি আমার বিয়েকে যৌতুক বিহীন বিয়ে বানিয়েছিলে। সেই মাওলানার ফাঁসি হবে। একটা রায় হয়ে গেছে। আর মাত্র ১টা রায় বাকী। উনার রায় ঘোষনার পর মাত্র ৪ঘন্টায় ৬৯জন মানুষ মারা গেছে, এবং পরে আরো প্রায় দেডশত। যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। লোকে বলাবলি করছে যে, মাত্র ১টা লোককে মারতে গিয়ে এতো লোককে কেন মারা হবে? আবার বলছে যে, শেখ মুজিব বিশ্বের একজন অন্যতম জনপ্রিয় নেতা হওয়ার পরও তার মৃত্যুতে ১জন মানুষও প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু সাঈদীর জন্য ১দিনে এতো লোক প্রাণ দিলো।

বাবা,

চিঠিখানার এই পর্যন্ত লিখে পোষ্ট করতে করতে আর পোষ্ট করা হলোনা। এর মাঝে গতকাল ঘটে গেছে বড় এক ঘটনা। শুনবে? তোমার পুরাতন সিলসিলার প্রসিদ্ধ আলেম হাজীপুরী হুজুরের কথা মনে পড়ে? তিনি এখন আর এখানে নেই। তুমি যেখানে আছো, সেখানে তিনিও চলে গেছেন-সেই না ফেরার দেশে। তিনির মাযহাবের আলেমরা আজকাল জেগে উঠেছে। ঐ নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে তারা ডাক দিয়েছিলেন লং মার্চের ঢাকা অভিমুখে। সরকার তাদেরকে শাপলা চত্বরে মিটিং-এর অনুমতি দিলেও সারা দেশ থেকে যাবতীয় পরিবহণ বন্ধ করে দেয়। ঐ দিন বাস, রেল, লঞ্চ কিছুই চলেনি। তারপরও লক্ষ লক্ষ মানুষ হাজির হয়েছিল গতকাল শাপলা চত্বরে। সাংবাদিকরা বলেছে যে, বাংলাদেশের সর্ববৃহত সমাবেশ। আমার মতে তাবলীগ জামায়াতের ইজতিমার পর বড় সমাবেশ হবে। মিটিংটা ছিল শাপলা চত্বরের গা ঘেসে। কিন্তু বিস্তৃতি ছিল ওদিকে টিকাটুলী হয়ে সায়দাবাদ, ডানদিকে ফকিরাপুল হয়ে কাকরাইল আর সামনের দিকে হাইকোর্ট এবং গুলিস্তানের পুরো এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। সমাবেশ হয়েছে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে। তাদের ভাষায় অধিকাংশ লোক আসতে পারেনি বাঁধার কারণে। আসলে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ হতো। অবশ্য যারা আসতে পারেনি, তারা একই সময়ে সারা দেশে বিক্ষোভ করেছে। ইসলামী মঞ্চ ঘোষনা করে অবস্থান করছে।

বাবা,

মাকে সালাম দিও। আমাদের জন্য তোমার মালিকের কাছে বলো যেন সব সময় তোমার মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী চলতে পারি এবং এর মাধ্যমে তোমার কাছে যেতে পারি। আল্লাহ হাফিজ

বিষয়: বিবিধ

১৩৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File