সবই কি ভুল ছিল?
লিখেছেন লিখেছেন শিখা ১১ জুলাই, ২০১৩, ০১:৩৩:৫৫ রাত
ছোটবেলায় মায়ের বাহুতে মাথা রেখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে শুনে ঘুমিয়ে পড়তাম। মায়ের বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল ৯ বা ১০ বছর। মায়ের মুক্তিযুদ্ধ অনুভূতি আমাকে নাড়া দিত। প্রাই মা আমাকে শোনাতেন নানাবাড়ির গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের কথা। মায়ের দুইজন মামাকে পাকিস্তানীরা ধরে নিয়ে স্কুলে আটকে রেখেছিল। ক্যাম্পের একজনের সহায়তায় দুজনই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। ক্যাম্পের অনেককেই মেরে ফেলা হয়েছিল। মায়ের মামা সারা যুদ্ধকালে বাড়ি ফেরেনি। মা সহ সকলেই ভেবেছিলেন যে তার মামা মারা গেছে। কিন্তু যুদ্ধের পর ফিরে আসেন তিনি। গ্রামের অনেকের সাথে আমার বাবা এবং চাচাকেও পাকিস্তানী সেনারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল।অবশ্য তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছিল। এমন অনেক ঘটনা মা আমাকে শুনাতেন। কোনোকোনো দিন মা জাতীয় সংগীত গেয়ে শুনাতেন। মা যুদ্ধের পর স্কুলে এ্যাসেম্বিলিতে সামনে দাড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইতেন। আমিও সাত ক্লাস থেকে বারো ক্লাস পরযন্ত, এ্যাসেম্বিলির সামনে দাড়িয়ে আমার সোনার বাংলা গা্ওয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ , মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ,শ্রদ্ধা জন্মাতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে পড়াশোনা করে অন্তত এটুকু জানতে পেরেছি যে, একটি বৈষ্যম্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধকে ,মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হৃদয়ের অনেক উচু স্থানে স্থান দিয়েছিলাম। কিন্তু, দেশের আজকের এই অবস্থা দেখে শুধু একটি কথাই মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা সবই কি ভুল ছিল??? কোথায় মুক্তিযুদ্ধের সেই বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার চেতনা?? যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে নিজেদেরকে জাহির করছে তাদের আমলনামা সে কথা বলে কি? মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা দেয়ার ও যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের নামে চলছে ভোটের রাজনীতির খেলা। আমার মনে হয়, একজন নব্য জামায়াত বা শিবির সদস্যও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ঘৃণা করেনা, কিন্ত, যারা মদ্রাসায় পড়ে বা শিবির করে তারা সকলেই মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধী এই কথা মুক্তিযুদ্ধের কথিত পক্ষের শক্তির লোকদের হতে বেশি বেশি বলার কারণে তারা এ দুটি বিষয়ের প্রতি বেশি ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। এখন মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান... প্রভৃতি কথাগুলো আমার কাছে বড় বেশি করে বৈষম্যের প্রতীক বলে মনে হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন