মিয়ানমারে মুসলিম নিধনযজ্ঞ কি আন্তর্জাতিক মহাষড়যন্ত্রের অংশ?
লিখেছেন লিখেছেন শরীফযিকাওসার ২৪ মার্চ, ২০১৩, ১০:০০:৪৬ সকাল
মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর উগ্র বৌদ্ধদের হামলা অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতিক দাঙ্গায় নিহত মুসলমানদের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গেছে বলে কোনো কোনো সংবাদ সূত্র জানিয়েছে।
দাঙ্গা-কবলিত মেইকতিলা শহরের মুসলমানরা প্রাণভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না বলে জানা গেছে। উগ্র বৌদ্ধরা সেখানে গত কয়েকদিনে ৫টি মসজিদ জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে বহু মুসলমানের ঘরবাড়ী ।বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে মেইকতিলা শহরের হাজার হাজার মুসলমান নিহত ও গৃহহারা বা শরণার্থী হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার ফলে এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান ঘরবাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সান্ধ্য আইন বা কারফিউ জারি করা সত্ত্বেও সেখানে সংঘর্ষ বন্ধ হয়নি। অবশ্য রাজধানী নেইপেইদাও থেকে ১৩০ কিলোমিটার উত্তরের ওই শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে বলেও খবর এসেছে।মেইকতিইলা শহরে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় অন্ততঃ বিশ জন নিহত ও ত্রিশ জনেরও বেশি আহত হওয়ার পর সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এই শহরের ৮০ হাজার অধিবাসীর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। গোটা মিয়ানমারে মুসলমানদের সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার চার শতাংশ মাত্র।মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মুসলমান ও বৌদ্ধদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয় গত বছরের জুন মাসে। এইসব দাঙ্গায় শত শত বা হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয়েছে বলে মনে করা হয়। বিশ্ব সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অপর্যাপ্ত বা প্রায় নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে দেশটির রোহিঙ্গা মুসলমানরা মানবতের ও অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ভয়াবহ আতঙ্কের এই দিনগুলোতে কেউই তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে না। এমনকি প্রতিবেশী বাংলাদেশেও তারা আশ্রয় নিতে পারছে না। নৌকাযোগে সাগরপথে দূরের কোনো দেশে আশ্রয় নিতে গিয়েও জেল-জুলুমসহ নানা বিপত্তি বা মৃত্যুর শিকার হচ্ছে তারা।রোহিঙ্গারা প্রায় বার'শ বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসলেও গত কয়েক দশক ধরে দেশটির সরকার তাদেরকে বহিরাগত বলে প্রচার করছে এবং মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য স্বীকৃত অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করছে। মুসলিম বিরোধী দাঙ্গাবাজরা সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা পাচ্ছে বলে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে।এটা স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সাম্রাজ্যবাদী ও পশ্চিমা শক্তিগুলো মিয়ানমারের মুসলমানদের নির্মূল করার গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। বাংলাদেশের মত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অঞ্চলের পাশে এ ধরনের জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বা গণহত্যা বড় ধরনের কোনো আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বা নীলনকশার অংশ বলে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতে জাতিগত সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়ে এই দেশগুলোর মানচিত্রে পরিবর্তন আনতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।জাতিসংঘ মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এ পর্যন্ত সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে দেশটির সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসি বা ইসলামী সহযোগিতা সংস্থাও এক্ষেত্রে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে
এদিকে মিয়ানমারে গত কয়েক দিনের প্রাণঘাতী সহিংসতার জন্য বাইরের শক্তিকে দায়ী করেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলমান সহিংসতা মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন তেহরান। ২৩ মার্চ (রেডিও তেহরান )
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন